৪
ফাহাদের ফর্সা সুন্দর মুখটা নীল হয়ে আছে ।
খালি গা । ছোট বুকটা দ্রুত ওঠানামা করছে । ওকে কোলে নিয়ে মা কাঁদছে । বাবা অস্থির হয়ে ঘরে পায়চারি করছে । পাশের বাসার খালাম্মা এসেছেন । হাদির মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন । হাদিকে দেখে এগিয়ে এলেন, বললেন, এখনই হাসপাতালে নেওয়া দরকার ।
হাদির বাবা এগিয়ে আসে, বলেন, আপা, আজ কি হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যাবে ?
‘তা ঠিক, তবে ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে ডাক্তার পেতে পারেন ।’
হাদি বলে, বাবা, একটা কিছু তো এখনই করতে হবে । ওখানে যেয়ে দেখি । মা, আমি বেবী ট্যাক্সি ডাকতে গেলাম ।
পিছন ফিরে দেখে ফখরুল সবাইকে নিয়ে হাজির । ফখরুল ওদের কথা শুনছিল । ও বললো, হাদি, তুই খালাম্মার কাছে থাক । আমি আর নিজাম ট্যাক্সি ডাকতে গেলাম ।
ডি. এম. সির. ইমার্জেন্সি । ফাহাদের চোখ উল্টে গেছে । আতিয়া ছেলেকে কোলে নিয়ে বিলাপ করে কাঁদছে । তোহা সাহেব ছুটে ডাক্তার ডাকতে গেলেন । হাদি খুব শক্ত ধাতের ছেলে । তবু এই পরিস্থিতিতে ওর কান্না পাচ্ছে । এমন সময় চশমা চোখে সাদা এপ্রোন পরা একটা ছেলেকে দেখে হাদি ছুটে যায় ।
কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, ডাক্তার সাহেব, আমার ভাইটাকে একটু দেখবেন ।
তরুণ ডাক্তারের মায়া হলো । উনি ফাহাদের দিকে এগিয়ে গেলেন ।
আতিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন, বাবা, তুমি আমার ছেলেটাকে বাঁচাও ।
ডাক্তার বললেন, আপনি শান্ত হন । আমি দেখছি ।
উনি ফাহাদকে খুব ভাল করে দেখলেন । সিস্টারকে ডেকে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। ফাহাদের অবস্থা আগের চেয়ে ভাল । ডাক্তার হাদির বাবা ও হাদিকে সিস্টারের মাধ্যমে তাঁর রুমে ডেকে পাঠালেন ।
ওদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডাক্তার বললেন, ‘বসুন ।’
ডাক্তারের সামনের দুটো চেয়ারে ওরা বসলো ।
উনি তোহা সাহেবকে বললেন, ‘আপনার ছেলের শ্বাসকষ্ট কবে থেকে ?’
‘জন্মের কিছুদিন পর থেকেই ।’
‘কোন ডাক্তার দেখিয়েছেন ?’
‘না, কারণ আগে যে কয়বার হয়েছে, এমনি ভাল হয়ে গেছে ।’
‘হুম ।’ বলে ডাক্তার কী যেন ভাবলেন । বোধহয় কী বলবেন সেটা গুছিয়ে নিলেন । তারপর বললেন, আপনি কি ছেলেকে এখানে ভর্তি করাতে চান ?
‘জ্বি চাই, আপনি যদি দয়া করে একটা ব্যবস্থা করতেন ।’
‘ঠিক আছে । আমি লিখে দিচ্ছি । কাগজটা নিয়ে যান, ভর্তি হয়ে যাবে । প্রফেসর স্যার আগামীকাল রাউন্ডে আসলে আপনার ছেলেকে দেখবে । তারপর চিকিৎসা শুরু হবে ।’
উনি খস খস করে লিখলেন । হাদির বাবার দিকে কাগজটা বাড়িয়ে দিলেন । কাগজটা হাতে নিয়ে তোহা সাহেব ধরা গলায় বললেন, বাবা, তুমি আমার বড় উপকার করলে ।
তরুণ ডাক্তার একটু লজ্জ্বা পেয়ে গেল । ব্যাপারটা হালকা করার জন্য বললো, কি যে বলেন । এটা তো আমার দায়িত্ব ।
‘তা ঠিক । কিন্তু এই দায়িত্বটা কয়জন পালন করছে ?’
মৃদু হেসে ডাক্তার প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে, আমি বিকেল পর্যন্ত ডিউটিতে আছি । ভর্তি নিয়ে কোন সমস্যা হলে আসবেন ।
পরদিন সকালে প্রফেসর সাহেব রাউন্ড এসে ফাহাদকে দেখলেন । কিছু ওষুধ লিখে দিলেন আর বুকের কয়েকটা টেস্ট করতে বললেন ।
টেস্ট রিপোর্ট পেতে দুদিন লেগে গেল । সব রিপোর্ট দেখে প্রফেসর সাহেব জানালেন, জন্ম থেকেই ফাহাদের হার্টে ছিদ্র । একটু বড় হলে অপারেশন করতে হবে । অপারেশন বেশ ব্যয়বহুল । বাচ্চার যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে মাকে সতর্ক থাকতে বললেন ।
হাদিদের পরিবারের ওপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো । ভগ্ন হৃদয়ে ওরা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলো
চলবে...
০৫/০৪/২০১৭ ইং
আগের পর্ব গুলোঃ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৫২