somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: বেয়ারা (৫ম পর্ব)

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফাহাদ অসুস্থ ।
তাকে দেখতে পাড়া-প্রতিবেশীরা প্রায়ই আসেন । কেউ কেউ ভরসা দেন । কারো কারো কথায় মনে আরো ভয় ঢ়ুকে যায় । দিন যায় । প্রতিবেশীদের যাতায়াত কমে আসে । তবে এখন সন্ধ্যা হলেই তোহা সাহেব বাসায় ফিরছেন । আতিয়া খুশি । দুজনে চা খেতে খেতে গল্প করে । ফাহাদের সমস্যা হবে, তাই তোহা সাহেব বাইরে গিয়ে সিগারেট খান । আতিয়ার কড়া হুকুম ।
ফাহাদের অপারেশন করতে অনেক খরচ হবে । সেই টাকা কীভাবে জোগাড় করা যায় তাই নিয়ে আতিয়া স্বামীর সাথে আলাপ করেন । কোনো ভাবেই হিসাব মিলে না । হঠাৎ আতিয়ার মনে পড়ে যায়, একসময় গেন্ডারিয়ায় একটা বাড়ি ও মিরপুরে কিছু জমি কিনেছিল হাদির বাবা । তখন তাদের সংসার ছোট ছিল আর তোহার হাউজির নেশাও ছিল না । আতিয়া সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে কথাটা তোলে, বলে, এই, একটা কথা মনে পড়েছে ।
‘কী কথা ।’
‘গেন্ডারিয়ার বাড়িটার যে ভাড়া পাও তা এখন থেকে আমাকে দিবা ?’
তোহার কাপের গরম চা মুখে না যেয়ে জামায় পড়ে । উনি দাঁড়িয়ে জামার চা ঝাড়েন ।
আতিয়া বললো, জামাটা খুলে দাও । ভিজিয়ে দি । না হলে চায়ের রং ওঠবে না ।
আতিয়া একটা জামা নিয়ে এসে স্বামীকে পরতে দেন । তারপর আবার আগের কথায় ফিরে আসে, আগামী মাস থেকে ভাড়াটা আমি চাই ।
তোহা নিশ্চুপ ।
আতিয়া বলেই চলেছে, তোমার স্যুটকেসের ভিতর থেকে বাড়ি আর জমির দলিলটা বের কর । ফাহাদের চিকিৎসার জন্য দরকার হলে জমিটা বেচব । জমির দামটা তোমার মনে আছে ?
‘না, মনে নেই ।’
‘ঠিক আছে । চাবিটা দাও । খুলে দেখি ।’
তোহা সাহেব ওঠে যান । কিছুক্ষণ খুঁজে এসে বলেন, চাবিটা পাচ্ছি না । মনে হয়, অফিসে রেখে এসেছি ।
আতিয়া স্বামীর ওপর খুব বিরক্ত হন । কিন্তু নিজেকে শান্ত রেখে বলেন, কাল অফিস থেকে চাবি নিয়ে আসবে ।
এরপর থেকেই তোহা সাহেব অনেক রাত করে বাড়ি ফিরতে লাগলেন । আতিয়া ওর সাথে চাবির প্রসঙ্গ তুললেই কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয় ।
ছুটির দিন । আতিয়া মনে মনে ঠিক করেছে, আজ স্যুটকেসটা খুলতেই হবে । সকালের নাস্তা করে স্বামীকে চা দিল । তারপর কোনোরকম ভূমিকা না করে সরাসরি তোহাকে বললো, চাবিটা পেয়েছো ?
তোহা জবাব দেয় না ।
‘ঠিক আছে, তাহলে আমি একটা চাবি বানিয়ে নেব তালাওয়ালা আসলে।’
চায়ের কাপটা টেবিলের ওপর ওল্টে দিয়ে তোহা সাহেব গট গট করে হেঁটে ঘরে গেলেন । আতিয়া হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো । ঘোর না কাটতেই আতিয়ার সামনের টেবিলে চাবিটা ছুঁড়ে ফেলে তোহা দরজা খুলে বাইরে চলে গেল ।
একটা অজানা আশঙ্কায় আতিয়ার হাত-পা অবশ হয়ে গেল । বড় ছেলেকে ডাকলেন । হাদি সামনে এসে দাঁড়ালো । চাবিটা হাতে নিয়ে অন্য হাতে ছেলের একটা হাত ধরে ঘরের দিকে গেলেন । খাটের নিচ থেকে স্যুটকেসটা হাদিকে বের করতে বললেন ।
স্যুটকেস খোলা হলো । তোহার বিভিন্ন রকম ফাইল-পত্রে ঠাঁসা । এক এক করে সব মেঝেতে নামানো হলো । সমস্ত ফাইল তন্ন তন্ন করে খোঁজা হলো । কোথাও নেই দলিল দুটো । আতিয়ার মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । ফাইলগুলোকে এদিক-সেদিক ছুঁড়তে লাগলেন পাগলের মত । হাদি ভয় পেয়ে গেল ।
‘মা, তোমার কী হয়েছে ?’ বলে ও ভয়ে চেঁচাতে থাকে । টিপু, ফয়েজ, জামাল, মুন্নী সবাই ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে ।
হাদির মা মেঝেতে বসে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বিলাপের সুরে বলে, তোর বাবা তোদের সর্বনাশ করেছে । বাড়ি, জমি সব বিক্রি করে দিয়েছে । জুয়া খেলে সব উড়িয়ে দিয়েছে ।
মুন্নী মার গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে । সবার চোখে পানি, হাদি ছাড়া । ওর বুকটা ফেটে যায়, কিন্তু চোখে পানি আসে না । আহ্, কী কষ্ট !!!
কান্নাকাটির শব্দে পাশের ঘরে ফাহাদের ঘুম ভেঙ্গে গেছে । সেও গলা ছেড়ে কাঁদছে ।
হাদি ওকে কোলে করে এ ঘরে নিয়ে আসে ।
ছেলেকে দেখে আতিয়ার শোক আরো বেড়ে যায় । ‘হায়, আমার ফাহাদের কী হবে ?’ বলে আতিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ।
হাদি ছুটে পাশের বাসার খালাম্মা ডেকে আনে । উনি চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে আতিয়ার জ্ঞান ফেরান ।

আতিয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে । আর কিছুক্ষণ পর পর বলে, আমার ফাহাদের কী হবে ।

চলবে....

০৬/০৪/২০১৭ ইং

আগের পর্ব গুলোর লিংকঃ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:০৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×