শহীদ রাষ্ট্রপতির জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমানের অকাল মৃত্যুর পরে পুত্রশোকে যখন অচেতন বেগম খালেদা জিয়া, ঠিক সেই মুহূর্তে দেশের বর্তমান ম্যান্ডেটহীন প্রধানমন্ত্রী গেলেন গুলশানে। উদ্দেশ্য, শোকাহত খালেদা জিয়াকে সান্ত¡না জানানো।
পরের ঘটনা হলো, গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডের আলোচ্য বাড়িটিতে প্রধানমন্ত্রী না ঢুকেই ফেরত আসেন।এরপর থেকে দেশের বিশিষ্টজনেরা টকশোসহ নানা মাধ্যমে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন। শেখ হাসিনাকে বাড়িতে ঢুকতে না দিয়ে খালেদা জিয়া নাকি অন্যায় করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির তরফ থেকে বলা হয়েছে শনিবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, শোকাহত বেগম খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
এসব অবহিত হওয়ার পরও রাত সাড়ে ৮ টার দিকে প্রধানমন্ত্রী গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডে গিয়ে ফেরত আসেন। তিন সপ্তাহ আগে যে বাড়ির গেটে খালেদা জিয়ার দিকে ছোড়া হয় পিপার স্প্রে, সেই গেট থেকে আজ ফিরে গেছেন বর্তমান সরকারপ্রধান। এখানে উল্লেখ্য, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী কোনো শোকবার্তা দেননি।
আমি সিভিল সার্ভেন্ট মানুষ। যাহা বুঝি, সরলভাবেই বলি। ১৬ বছর ভিভিআইপি ডিউটি করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাজারো প্রোগ্রাম করতে হয়েছে। প্রটোকল অফিসার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করেছি ৫ বছর, আর শেষের ৫ বছর প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ও প্রোগ্রাম দিতে হয়েছে। এ নিয়ে প্রতি কর্মদিবসেই এসএসএফের সাথে নিরাপত্তা মিটিং করতে হতো। একটা প্রোগ্রাম ঠিক হলে সেটা জানার জন্য এসএসএফের সিনিয়র অফিসাররা সর্বদা ব্যতিব্যস্ত করে রাখত। উদ্দেশ্য একটাই-প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আয়োজনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা।
প্রধানমন্ত্রী কোথায় যাবেন সেটা অফিস হোক, বাড়ি হোক, জনসভাস্থল, বিমান বা যাই হোক না কেনো, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব এসএসএফের। বাইরের নিরাপত্তার আয়োজন আরো ব্যাপক হলেও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফ কমপক্ষে ৪ ঘন্টা আগে ভেন্যুর গেট থেকে শুরু করে সকল রুমের চাবি গ্রহণ করে পুরো এলাকার নিরাপত্তা পরীক্ষা করে ক্লিয়ারেন্স দেয়ার পরেই প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে আনা হয়। এটাই ঝঙচ. এসএসএফ নিরাপত্তা বই রেডবুক অনুযায়ী নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স নিশ্চিত না হলে তারা প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রেসিডেন্টকে কোথাও যেতে বাধা দেয়ার ক্ষমতাবান।
তো, এখন প্রশ্ন হলো, সত্যি সত্যিই কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে সান্ত¡না দিতে গুলশানে গিয়েছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব যদি ‘হ্যা’ হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফ অবশ্যই গুলশানে আগে গিয়ে খালেদা জিয়ার বাড়ির গেইটের চাবি ও ভেতরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। নিরাপদ করা হয়নি এমন কোনো জায়গায় নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীকে এসএসএফ নিয়ে যায়নি। সেক্ষেত্রে ৮৬ নম্বর রোডের ওই বাড়ির গেট খোলা বা বাড়িতে ঢোকার সকল দায়িত্ব ছিল এসএসএফের। কোনো অবস্থাতেই বিএনপির লোকজন প্রধানমন্ত্রীকে ওই বাড়িতে প্রবেশ করা থেকে বিরত করতে পারেন না।
আর প্রশ্নের উত্তর যদি ‘না’ হয়, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী কোনো শোক জানাতে যাননি, কেবল ঘুরে আসার জন্য গিয়েছেন, তাহলে তো আর কোনো কথাই থাকে না। কোনো বাড়ির চাবি এসএসএফ এর কাছে নাই, নিরাপত্তা ক্লিয়ার না করে প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে নিয়ে যাবে এসএসএফ, তাও বিপক্ষ দলের প্রধান অফিসে, এটা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ আছে কি? এমন কল্পনা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।
শেখ হাসিনার গুলশানে যাওয়াটা লোক দেখানো কিনা সেটা জনগণ অনুধাবন করতে পারবেন। সত্যি সত্যি তিনি যদি শোক জানাতে যেতে চাইতেন, তবে যোগাযোগ করে দু’দিকের সুবিধাজনক সময়ে যেতে পারতেন। শোক জানানো আর নাটকের মধ্যে ব্যবধানটা পরিষ্কার। - See more at: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯