ঘটনা - ১ ঃ
চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী ক্লাসে না পড়ে পাশের জনকে ডিস্টার্ব করছে বলে ক্লাসের বিষয় শিক্ষক তাকে কান টেনে দিল। তেমন জোরে টানেনি বলে মনে হয়। কারণ ছুটির পর মেয়েটির মা যখন অভিযোগ নিয়ে আসেন তখন ব্যাথার কথা বলছেন না, বলছেন মেয়েটির অপমানিত হওয়ার কথা। তাঁর মেয়ে ক্লাসের ক্যাপ্টেন, ওকে এভাবে কান টেনে দেয়াতে সে অপমানিত হয়েছে।
শুধু এতটুকু পর্যন্ত হলে হয়তো খুব বেশি সমস্যা হত না। কিন্তু আমার কষ্টটা ঐ অভিভাবিকার এর পরবর্তী আচরণে।তিনি অফিসে এসে মেয়েকে বলেন - কোন টিচার তোমার কান টেনেছে আমাকে দেখাও। আমি দাঁড়িয়ে থাকব তুমিও ওই টিচারের কান টেনে দিবে। (কি দুঃখজনক!)
ঘটনা - ২ ঃ
টেস্ট পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শেষ মুহুর্তে উত্তরপত্র কালেকশনের সময় তিন চারজন মেয়ে (এস.এস.সি. পরীক্ষার্থী) হৈ চৈ করছে দেখে ডিউটিরত এক ম্যাডাম একজন মেয়ের পিঠে একটি থাপ্পড় মারেন। মেয়েটি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় যাওয়ার পর অফিসে আমার মোবাইলে দুজন ফোন করেন। ফোনের উনাদের অভিযোগগুলোর চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরলাম।
১ম জন (বড় বোন) ঃ আচ্ছা আমার বোনের পিঠে এক ম্যাডাম থাপ্পড় মেরেছেন। কেন মেরেছেন জানতে পারি? আপনি জানেন এখন দেশে ছাত্রদের শাস্তি দেয়া নিষেধ। এবং আমি চাইলে এখন আপনাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি! আমার বোনকে আমরা জীবনে কখনও মারিনি আপনারা কোন সাহসে ওকে মারলেন? আমার বোনকে কখনও কেউ আঘাত করার সাহস করেনি।
২য় জন (মামা) ঃ একটু আগে আপনাকে একটা অভিযোগ করা হয়েছে। আপনি জানেন আমি এখন ওমুক এবং তমুককে ফোন করে এই ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছি? আমি যদি এখন আপনাদের স্কুলে আসতাম তাহলে ঐ ম্যাডামকে দুই গালে দুইটা থাপ্পড় লাগাতাম। আপনি যদি এখন ঐ ম্যাডামে বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আমি আপনাদের স্কুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে এবং শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দাখিল করব।
৩য় ঘটনা ঃ
এক শিক্ষার্থী ক্লাসে দেরিতে আসায় ক্লাসটিচার তাকে কান ধরান ও তারপরে ক্লাসে ঢুকতে দেন। ফলশ্রুতিতে বাচ্চাটি বাসায় যাওয়ার পর ঐ ক্লাস টিচারের মোবাইলে তার বাবার ফোন। টিচার ক্লাসে থাকায় ফোন রিসিভ করেননি। ক্লাস শেষে ঐ টিচার যখন উক্ত অভিভাবককে ফোন করেন তখন তিনি খুব রেগে প্রথম কথাটা বললেন - আপনি আমার ফোন রিসিভ করলেন না কেন? আমি কি আপনার সাথে প্রেম করার জন্য ফোন করেছিলাম? আমার বাচ্চাকে আমিই দেরিতে স্কুলে পাঠিয়েছি। ওকে কান ধরালেন কেন? তখন ম্যাডাম এক উত্তরে বলেন - আসলে দেরিতে আসায় তাকে ক্লাস করতে না দেয়াটাই উচিত ছিল। কারণ দেরিতে আসলে আমরা ক্লাস করতে দিই না। এটাই আমাদের নিয়ম। তখন প্রতিউত্তরে অভিভাবক বলেন - তোদের নিয়মের নিকুচি করি আমি। নিয়ম আমাকে শেখাছ? আমি তোদের দেখে নেব। আমি আজকেই সাংবাদিক সম্মেলন করব। পুলিশে দিব তোদের সবাইকে।
আগেতো শিক্ষকতা পেশায় শুধু টাকা ছিল না, কিন্তু সম্মানটুকু ছিল। এখনতো সেই সম্মানটুকুও শেষ। আর ভাল লাগে না শিক্ষকতা পেশা। এভাবে চলতে থাকলে আমার মনে হয় না শিক্ষকতা পেশায় কেউ আগ্রহী হবে!!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



