somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায়! আজমেরী! বোন, তোর চিকিৎসার টাকা মেরে খেয়ে আজ আমি বড়লোক!

১২ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেখানে হিংস্র পশুর বসবাস, মানবতা নাকি সেখানে বিপন্ন! মানবতার ভান করি আমরা সবাই, কতজন আসলে পালন করি? কতজন হাত বাড়িয়ে দেই? সমালোচনা করতে, গীবত গাইতে তবু আমাদের জুড়ি নেই। আমরা নাকি মুসলমান!

ওয়েল, আমি নিজেকে ডিফেন্ড করছিনা। কিছু তথ্য তুলে ধরছি। আপনারা যারা পড়বেন, তারা বিচারক। দরকার হলে খোঁজ নিন, আজমেরীর আপন ভাইয়ের মোবাইল নাম্বার আমার স্টিকি পোস্টে ছিলো, নিচে আবার দিয়ে দিলাম।

আজমেরীর বাবা একজন কৃষক। সিরাজগন্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এক গ্রামে (নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, পড়লে এডিট করে দেবো) তারা থাকে। অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত আজমেরী কখনো ২য় হয়নাই। নবম শ্রেণীতে ওঠার পর তার শুরু হয় কিডনীর সমস্যা। সে প্রায় ছয় বছর আগের কথা। সবচেয়ে বড় ভাইটি তখন মাত্র এইচ এস সি শেষ করেছে। তার ছোট ভাইটি তখনও দ্বায়িত্ব নেয়ার মতো সাবালক নয়। বন্ধ হয়ে গেলো বড় ভাইটির পড়াশুনা। তারা গ্রামের ভেতর ধনী হিসেবেই পরিচিত। শুরু হলো কষ্টের দিন...

দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, আজমেরী সুস্থ হয় না। ওষুধ খেয়ে যায় আজমেরী। ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় দুইটি কিডনীই। দুই দুইবার অপারেশনের প্রচেষ্টা বিফলে যায়। একবার রক্তে পটাশিয়ামের অতিরিক্ততার কারণে, আরেকবার কিডনী জোগার না হবার কারণে। মাঝে কেটে গেছে ছয়টি বছর। একসময়ের ধনী কৃষক পরিবার মেয়ের চিকিৎসার জন্য জমি বেঁচতে বেঁচতে আজ নিস্ব প্রায়! লিখনকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন আজমেরীর বাবা-মা। তাই ইন্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠান দেশের নামকরা এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪ বছর আগে। অপারেশনের আগে ছয় মাস ছিলো হাসপাতালে আজমেরী। তখন চিকিৎসার টাকা যোগাড়ে তার ভাইয়ের পড়াশুনাও বন্ধ হবার উপক্রম। ভিটে মাটি ও একটা ওষুধের দোকান ছাড়া আর কিছুই নেই ততদিনে। ৬ বছরে শুধু আজমেরীর পিছনে খরচ হয়েছে ১৭ লাখ টাকা। কিন্তু অপারেশনটাতো করতে হবে? তাতেও ৩ লাখ টাকার বেশী লাগবে অপারেশন, ডায়ালাইসিস ও চিকিৎসা পরবর্তী খরচ হিসেবে। কোথায় পাবে টাকা? কে দিবে?

লিখনের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ক্যাম্পাসে দেখা হলেই কথা হতো। একদিন ক্যাম্পাসে গেলাম, কে যেন বললো টাকা তুলতে হবে, কনসার্ট করতে হবে। স্বভাব মতো কে সেটা না জেনেই ঝাপিয়ে পড়লাম। বরাবরের মতোই অন্যদের তুলনায় আমার সেল ও কালেকশন তিন গুনেরও বেশী। লিখনের সাথে দেখা এর মাঝে। দেখি সে উদভ্রান্ত! তারপর? সে এক ইতিহাস!

অনেকের দ্বারেই ঘুরেছে লিখন, শিক্ষক, বড়লোক...বহু মানুষের দ্বারে... আমার সাথে যখন দেখা হয়, আমি বলেছিলাম- তুই কোন চিন্তা করিস না, তোর টাকা আমি যোগাড় করে দেবোই। তার দৃষ্টিতে অবিশ্বাষ ছিলো। আমি নিজে ব্যাপারটাকে চ্যালেন্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আর যেটাকে আমি চ্যালেন্জ করি, সেটার শেষ পর্যন্ত দেখে আমি ছাড়ি। অনেকেই অনেক রকম কথা দিলেও আজমেরীর চিকিৎসার প্রত্যেকটি টাকা দিয়েছেন ব্লগাররা।

তো, অপারেশন শেষ হলো। আজমেরী সম্পূর্ণ সুস্থ। শুধু অপারেশন পরবর্তী ৫-৬ মাসের ওষুধের টাকা তখনও বাকি। ততদিনে এটা ডেড ইস্যু! কোন সুত্র থেকে আর টাকা আসে না! অথচ প্রতিদিন ১০০০ করে টাকার ওষুধ খেতে হচ্ছে তাকে, মাসে ২৫০০০-৩০০০০! লিখন বললো, আমাদের ভিটেবাড়ীটা বিক্রি করবো। আমার সেটা পছন্দ হয়নি। আমি বলেছিলাম - না। দেখি আমি কি করতে পারি। আমি চাইনি চিকিৎসা শেষে আমার বোনটি রাস্তায় থাকুক।উপায়ন্তর না দেখে পোস্ট দিলাম আরেকটি। কিছু টাকা উঠলো। তখনো একটা বিশাল অংকের টাকা বাকি তার ৫ মাসের চিকিৎসা চালাতে। বার বার একই কথা বলে পোস্ট দেয়াতে অনেকে বিরক্ত হতে পারে ভেবে ব্যাক্তিগত ভাবে যোগাযোগ শুরু করলাম। আপডেট কিন্তু তখনো দিয়ে গেছি। আরো কিছু টাকা হাতে আসলো। একটা বড়ো অংকের টাকা দেয়ার কথা একজন ব্লগারের, সে জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আরেকজন টাকা দিবে বলে আর ফোনটাও রিসিভ করে না। ঐ টাকাটা হাতে আসলে আর টাকার প্রয়োজন নেই বলে একটা পোস্টও দিয়ে রাখবো বলে ঠিক করে রেখেছি। এর মধ্যে অভিযোগ আসলো এখানো তার চিকিৎসার জন্যে চাঁদা তোলা হচ্ছে । আর এদিকে ওর চিকিৎসার জন্য পুরো টাকা সংগ্রহ হয়ে গেছে ।

আমার বোনের জন্য চিকিৎসার টাকা তুলে আমি আজ বড়লোক। আমি প্রতারক, বাটপার। ভালো কথা। আজমেরীর বড় ভাইয়ের নাম্বার দেয়া ছিলো পোস্টে। কে কত টাকা দিচ্ছে সেটা ব্লগের মতো একটা গনমাধ্যমে তুলে দিয়েছি প্রতিনিয়ত। যারা টাকা দিচ্ছেন, তারা দেখছেন তারা কত টাকা দিয়েছেন। যারা পাচ্ছে, তারা দেখছে কত টাকা উঠছে। ব্লগার মাছরাঙার এক বন্ধু সেদিন আমার সাথে গিয়ে আজমেরীকে দেখে এসেছেন ও খোঁজ নিয়ে এসেছেন কত টাকা লাগবে। না হলেও জনা তিরিশেক ব্লগার সামনা সামনি দেখে এসেছে আজমেরীর অবস্থা কি। দুই জন রক্ত দিয়েছেন। তারপরও আমি চোর! আমি ভন্ড! আজও লিখন ফোন দিয়েছিলো, টাকা নাই। ওষুধ কেনা লাগবে। আমি কিছুই বলতে পারিনি! কি বলবো? লুমিক্স ক্লিক টু ফেইমে প্রথম ১০০ জনে সিলেক্ট হবার আনন্দ ফিকে হয়ে আসে আমার অপারগতায়...

আসমার জন্য কিছু করবো ভেবেছিলাম। তা হয়তো আর হয়ে উঠলো না। কেউ যেন কখনো আর তার বোনকে বাঁচাতে না চায়, মরে যাক যতো আজমেরী, আসমা, আরমান, সিরাজুল, জামিউল, সাব্বির... আমার, আপনার কি? আমরা বেঁচে থাকলেই হলো!

আরো যাদের টাকা পেয়েছি-
মহুয়া রশীদ- ২০০০
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক- ৫০০
ভূমিহীন জমিদার- ৩৪৭২০
______________________
৩৭২২০
সর্বমোট= ৩,১৫,৫৫৩
লিখন- ০১৭১৭৭১২৮৬০
আমার শারীরিক অপারগতা নিয়ে ব্যাঙ্গ করলেও আমার কিছু যায় আসে না।

ধিক আমার মতো ভন্ডদের, পিশাচদের, যারা বোনের জন্য টাকা তুলে বড়লোক হয়! আসেন, সবাই আমার মুখে থুতু মারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৩:২৩
৮৫টি মন্তব্য ৮৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×