somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকারের সুখ

০২ রা জুন, ২০১০ রাত ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নিস্তব্ধতার মাঝে একধরনের সুখ আছে। টের পেলাম যখন রাতে একা একা হাঁটছিলাম। কেউ নেই চারপাশে, আছে শুধু অন্ধকার আর আলোর ছায়ার খেলা। ল্যাম্প পোস্ট গুলো কেমন যেন নির্জীব আলো ছড়াচ্ছে, তাতে রাস্তাটা আলোর বদলে কালোর ছায়ায় জড়িয়ে বদ্ধ গুমোট দেখাচ্ছে। একটু আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে, তাতে গরম একটুও না কমে বরং আরো যেন বেড়েছে। এতোক্ষণ শোনা যাচ্ছিলো না, আস্তে আস্তে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক গুলো বাড়ছে। আকাশের দিকে তাকালাম, নাহ! চাঁদের দেখা নেই কোথাও। দু একটা তারা প্রাণপনে নিজেদের আলো বিলিয়ে আকাশে পুডিংয়ের মতো জমে ওঠা অন্ধকারকে তাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টায় ম্লান হয়ে আছে। হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে যেতে সামলে নিলাম। অস্ফুটে গাল দিয়ে উঠলাম নিজেকে। "শালা, দেখে চলতে পারিস না?"

আরে! এখানে মানুষ এলো কোথা থেকে? ঐতো, দাঁড়িয়ে আছে। আঁধার ভেদ করে যেন আমার দিকেই তাকিয়ে। কে ও? "ঐ কে ওখানে?" কোন উত্তর নেই। আবে শ্লা চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারী নাকি? একটু ভয় পেলেও আবার হাঁক ছাড়লাম, "কেডারে ঐ!" ভয় পেলেও এগিয়ে গেলাম... অবয়বটা আস্তে স্ফুট হয়ে উঠলো।
- আরে! তুমি এখানে?
- হুম।
- হুম! হুম মানে কি? এখানে কি করো?
- তুমি কি করো?
- আমি? নাহ, কিছুনা। একটু হাঁটছিলাম। কিন্তু এতো রাতে তুমি?
- কেন, রাতে কি বের হওয়া যাবে না? তোমরা ছেলেরা মেয়েদের কি মনে করো?
- না মানে, কি করছিলা তাই জিজ্ঞাসা করলাম। নো অফেন্স!
- এই তো, তারা দেখছিলাম, রাত দেখছিলাম। নিহারীকার পথ বেয়ে হাঁটার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কোথায় যেন হারিয়ে গেলো হঠাৎ করে!
- কি হারিয়ে গেলো?
- নিহারীকাটা। তাই তো দাঁড়িয়ে ছিলাম।

খেয়াল করলাম, হাঁটতে হাঁটতে আমরা একটা মাঠের মাঝে এসে দাঁড়িয়েছি। দূরে, অনেক দূরে দুয়েকটা আলো মিট মিট করে জ্বলছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের ডাকগুলো আরো যেন জোরে শোনা যাচ্ছে। শিয়াল ডাকলো নাকি কোথাও? কি জানি! এতো নির্জন এক রাতে এতো সুন্দর একটা মেয়ে আমার পাশে, বুকের মাঝে কেমন যেন একটা সুখ অনুভব করলাম। তার দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম। শুধু অবয়বটা বোঝা যাচ্ছে। মুখ দেখতে পেলাম না। আচ্ছা, সেও কি আমাকে নিয়ে এমন করেই ভাবছে? কি জানি! দেখি জিজ্ঞাসা করে!
- কি ভাবো?
- আমার ভয় করছে!
- ভয়? কিসের ভয়?
- দেখছো না চারপাশে কতো পোকামাকড়?
- হা হা হা, দু একটা ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ শুনে ভয় পাচ্ছো?
গাঢ় স্বরে বললাম,
- আমি আছি না?
- হুম, তারপরও খুব ভয় করছে। দেখো না ওগুলো উড়ছে!
- কৈ?
- আরে ঐ তো! তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা, না? কেউ আমাকে বিশ্বাস করে না!
- কি পোকা?
- অনেকগুলো, ফড়িংয়ের মতো। তেলাপোকা। আর টিকটিকিও আছে, এই এতো মোটা! উমাগো! তুমি দেখতে পাচ্ছো না?
- চলতো, এখান থেকে যাই।
- গড ড্যাম ইট!

আমরা হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় এলাম। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় দেখি ওর চোখ মুখ সব বিবর্ণ হয়ে গেছে। চমকে চমকে উঠছে আর চারপাশে তাকাচ্ছে। দেখে খুব খারাপ লাগলো। আমার হাত ধরে রেখেছে। যখনি চমকে উঠছে, তখনি খামচি দিয়ে ধরছে আমার হাত। পরম মমতায় ধরে রেখেছি হাতটি, কিন্তু সে হাতে কোন উত্তাপ নেই। নেই কোন স্পর্শ সুখ। আছে কেবল ভীতি আর যন্ত্রণা। হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ও পা থেকে স্যান্ডেল খুলে রাস্তার উপর পিটাতে থাকলো। একটু পর উঠে এলো হাতে একটা তেলাপোকা নিয়ে। বললো-
- তুমি তো বিশ্বাস করছিলে না, এই দেখো তেলাপোকা।
এবার আমি ভয় পেলাম। আরে! সত্যিই তো! ওর করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে খুব ইচ্ছে করছিলো শক্ত করে ধরে থাকতে, ও যেন ভয় না পায়। ও কাঁদতে কাঁদতে হাতে তেলাপোকাটা নিয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। হাত ছেড়ে দিয়েছে কখন টের পাইনি। হাতটা ধরতে গেলাম, ততক্ষণে অনেকটা দূরে চলে গেছে। চিৎকার করে ডাকতে গেলাম, গলা দিয়ে স্বর বের হলোনা। যেন এক মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছি আমি, আর ও দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে... অসহায় আমার বুক ফেটে কান্না আসছে, পারছিনা কাঁদতে! পুরুষরা কাঁদে নাকি! একসময় সে মিলিয়ে গেলো আঁধারের চাদরের ভাঁজে।

সম্বিত ফিরে পেলাম। কানে এলো কে যেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! দূরে কেউ যেন ঝগড়া করছে। ভয়ে গুটিয়ে গেলাম নিজের মাঝে। ত্রস্ত পায়ে হাঁটতে শুরু করতেই পায়ের নিচে কি যেনো পড়লো, থ্যাঁচ করে একটা শব্দ হলো। দেখি একটা পোকা। চিনিনা, কিন্তু তখনো নড়ছে। রাস্তায় তাকিয়ে দেখি চেনা-অচেনা লাখ লাখ পোকা! আমার পা বেয়ে ওঠার চেষ্টা করছে! ভয়ে পা ঝাড়ি দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম। আমার চারপাশে উড়ছে, ভন ভন করছে, পায়ের নিচে পড়ে ভর্তা হয়ে যাচ্ছে! টের পেলাম আমার পেছন পেছন কে যেন দৌঁড়ে আসছে। ভয়ে তাকালাম না। আরো জোরে দৌড়ানো শুরু করলাম। মাথার চুলের মাঝ পোকা, জামার বুক পকেটে পোকা, বোতামের মাঝের ফাঁক দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে পোকা, কামড় দিচ্ছে, মাংশ তুলে আনছে। সারা গা রক্তে ভিজে যাচ্ছে! পাগল হয়ে গেলাম। হঠাৎ কিসে যেন হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। অন্ধকার হয়ে এলো আমার পৃথিবী। আহ! কি শান্তি!



ছয় মাস পর

এই ছয় মাস কেমন কেটেছে জানিনা। আমার কিছু মনে নেই। আমাকে নাকি ঘুমের অষুধ দিয়ে রাত দিন ঘুম পাড়িয়ে রাখা হতো। পাগল হবার পথে এগুচ্ছিলাম নাকি আমি। স্কিৎযোফ্রেনিয়া না কি যেন হয়েছিলো আমার। এখন নাকি আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।





রাতে কি যেন মনে হলো, বাইরে চলে এলাম। কেউ নেই চারপাশে, আছে শুধু অন্ধকার আর আলোর ছায়ার খেলা। ল্যাম্প পোস্ট গুলো কেমন যেন নির্জীব আলো ছড়াচ্ছে, তাতে রাস্তাটা আলোর বদলে কালোর ছায়ায় জড়িয়ে বদ্ধ গুমোট দেখাচ্ছে। একটু আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে, তাতে গরম একটুও না কমে বরং আরো যেন বেড়েছে। আমার চারপাশে অনেক অনেক পোকা। আমার পাশে পাশে হাঁটছে, উড়ছে। হাসি হাসি মুখে ওদের সাথে খেলা করতে করতে আমি ডাকছি-
- এই শুনছো! কোথায় গেলে! আছো ওখানে? এই... ...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৩:২৩
৫৯টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×