somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি এখনও অপেক্ষায় আছি... যদি কখনও ভুল করে বলে ফেলো ভালোবাসি!!!

৩০ শে জুন, ২০১১ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সারারাত ফ্রেন্ডদের সাথে চ্যাটিং এবং ফেইসবুকিং করে সকাল ৮ টার কিছু পরে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গেলো তমাল। শোবার সাথে সাথেই ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসলো। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মনে হয় একটা স্বপ্ন দেখছিলো। স্বপ্নে যখন কঠিন ক্ল্যাইম্যাক্স অবস্থা তখন হঠাৎ করে মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। কতক্ষন ঘুমিয়েছে তমালের জানা নেই মনে হলো মাত্রই চোখ বন্ধ করেছিলো এর মধ্যে ফোন। ...খুব বিরক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করেই ফোন রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে ধমকের সুরে বলে উঠলো,
“এখনও ঘুমাচ্ছিস? তাড়াতাড়ি হ্যালেভেশিয়াতে আয় আমি ওখানে একা একা বসে আছি।“

এই কথা শোনার পর তমাল লাফিয়ে উঠে বিছানায় বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো, “তুই কবে দেশে এলি?”

অপরপ্রান্ত থেকে উত্তর এলো, “গতকাল। তোকে সারপ্রাইজ দিবো বলে আগে থেকে কিছুই জানাইনি। যাইহোক ৩০ মিনিটের মধ্যে আয় নাহলে আমি চলে যাবো বলে দিলাম।”

এই কথা শুনে তমাল বললো, “তুই থাক আমি আসছি” বলে ফোন রেখে কোন মতে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় পরে বের ঘর থেকে বের হতে হতে মাকে বললো, “আমি বাইরে যাচ্ছি আসতে দেরী হবে। বাইরেই খেয়ে নিবো।“

হ্যালভেশিয়ার ঢুকে সাদা জামা পরা মেয়েটাকে দেখে চিনতে একটুও ভুল হলনা তমালের। একবছর পর বাংলাদেশে এসেছে রিয়া। পুরো পরিবার সহ আমেরিকায় চলে গিয়েছিল গত বছর। এখন হঠাৎ করে কি মনে করে বাংলাদেশে চলে এলো এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে রিয়ার পাশে গিয়ে বসলো তমাল। বসতে না বসতেই রিয়া বলে উঠলো, “হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস্ ডে।“

এটা শুনে তমাল যেনো আকাশ থেকে পড়লো কারন ওর মনেই ছিলনা আজকে ভ্যালেন্টানস্ ডে। এর উত্তরে ও বললো, “সেম টু ইয়্যু।“

এবার জিজ্ঞেস করলো, “হঠাৎ কি মনে করে বাংলাদেশে আসা হলো?” রিয়ার স্বভাবসুলভ উত্তর, “মন চাইছে চলে আসছি। তোর কোন সমস্যা? সমস্যা থাকলে বল আমি এখন চলে যাই।“

তমাল বলে উঠলো, “আরে আমি তো এমনিই জানতে চাইলাম। বলা নাই কওয়া নাই হঠাৎ চলে এলি তাই একটু কিউরিয়াস দ্যাটস্ অল।“

রিয়া বললো, “মনে আছে তোকে কথা দিয়েছিলাম ভ্যালেন্টাইনস্ ড্যা তে তোর সাথে কাটাবো? তাই ৭ দিনের ট্যুরে চলে এলাম।”
তমাল চরম বিস্ময়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো, “তুই কি একা এসেছিস?”

রিয়া মিটি মিটি হাসতে হাসতে বললো, “হুম, একা এসেছি এখানেও তোর প্রবলেম? সরে যা আমার সামনে থেকে আমি গেলাম।“
তমাল বললো, “আরে কি করছিস । আমি কি কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারবো না নাকি?”

“পারবি। তবে এখন না। এখনি সব বলে ফেললে সারাদিন ধরে করবো কি?”

“সারাদিন আমার সাথে থাকার প্ল্যান?”
“অবশ্যই। কেন তোর কোন অসুবিধা আছে? ঠিক আছে থাকলে বল আমি চলে যাই।”

“আরে আমি কি তাই বলেছি নাকি? রিয়া তোর কথায় কথায় রাগ করার অভ্যাসটা গেলো না।”

“হুম, যাবেই না তো। যাইহোক কি খাবি বল শুনি। অর্ডার দিয়ে আসি।”

খাবারের অর্ডার দিয়ে এসে ওদের দুজনের কথা চলতে থাকলো। তমাল জিজ্ঞেস করলো, “তোর ওখানকার লাইফ কেমন কাটে? ভালো লাগে?”

“না লাগলেও তো কিছু করার নাই তাই না? প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো। এখন আর তেমন কিছু মনে হয় না।” বলে রিয়া। এর মধ্যে ওদের ডাক পড়লো খাবার নিয়ে আসার জন্য। খাবার নিয়ে এসে খাওয়ার সাথে সাথে গল্প শুরু করলো পুরোনো দিনগুলো নিয়ে।

রিয়াই বলে, “তোর মনে আছে আমার চলে যাবার দিনের কথা? ইস কি খারাপটাই না লাগছিলো! মনে হচ্ছিলো আর জীবনে কোনদিন আমি আর তোদের মত মজা করতে পারবো না। অবশ্য পারিও না। এটা সত্যি। ওখানকার লাইফ পুরাই আলাদা।”

রিয়ার মন খারাপ হচ্ছে বুঝতে পেরে খাওয়া শেষ হবার পর তমাল হঠাৎ বললো, “চল রিয়া এবার বের হই। রিক্সায় ঘুরবো।”

রিক্সায় ঘুরার কথা শুনে রিয়া চমকে উঠলো আর চিৎকার দিয়ে উঠলো, “ইসসসসসসসস কত্তদিন রিক্সায় ঘুরি না।”

এটা বলেই লাফিয়ে উঠে তমালকে সরিয়ে দিয়ে গেট দিয়ে বের হয়ে গেলো। তমাল ওর পাগলামি দেখে অভ্যস্থ তাই একটুও অবাক না হয়ে বের হয়ে রিক্সা ঠিক করে দুজনে মিলে উঠে পড়লো।

ওরা বেইলি রোড থেকে রিক্সায় উঠে ঘুরতে ঘুরতে যখন টি.এস.সির দিকে গেলো তখন টি.এস.সির অবস্থা দেখে চোখ ছানাবড়া অবস্থা। ওদের মনে হলো ঢাকার আর কোন ছেলে মেয়ে বাদ নেই সব টি.এস.সিতে এসে হাজির হয়েছে। ওদের রিক্সা কোনভাবেই এগুচ্ছে না। এগুলা নিয়ে ওদের মাথা ব্যাথা নেই। ওরা ওদের মত গল্প করেই যাচ্ছে।

অনেক দিন পর রিয়াকে কাছে পাওয়ায় রিয়ার প্রতি তমালের পুরোনো ভালোবাসা আবার জেগে উঠেছে। এবং এক পর্যায়ে তমাল ভীষন আগেবী হয়ে রিয়ার কাছে জানতে চায়, “আমাদের মধ্যে কি কখনই কিছু সম্ভব নয়?”

তমালের প্রশ্নের উত্তরে রিয়া বলে, “দেখ তমাল আমার আগে একটা রিলেশন ছিলো। তুই আমাকে একসময় অনেক সাপোর্ট দিয়েছিস। তোর কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ। তোর জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। এই যেমন আজ আমি ফ্যামিলি ছেড়ে এত দূর ছুটে এসেছি শুধু তোর জন্য। আমি সব পারবো শুধু তোর সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারবো না। কারন তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমি তোকে ধোঁকা দিতে পারবো না। আমি আমার এক্সকে এখনও লাভ করি। আমি তোর ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারবো না। ইয়্যু ডিসার্ভ বেটার দ্যান মি।”

তমাল বললো, “তুই আমাকে একদিন একটা কথা বলেছিলি যেটা আমার এখনও মনে আছে আর তা হলো একসাথে থাকতে থাকতে ভালোবাসা হয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করটে দোষ কি? আই লাভ ইয়্যু মোর দেন এনিথিং এ্যান্ড ইয়্যু নো দ্যাট।”

রিয়া তার কথায় অটল সে তমালের জন্য সব কিছু করতে পারবে শুধু রিলেশনশিপে যাওয়া ছাড়া। তমাল অনেক আকুতি মিনুতি করে শেষ পর্যন্ত চুপ করে গেলো। রিক্সা তখন হাইকোর্টের সামনে দিয়ে প্রেসক্লাবের দিকে যাচ্ছে।

সন্ধ্যা হবে হবে এমন সময় রিয়া বলে, “আমি প্রচন্ড টায়্যার্ড ফিল করছি আমি কি তোর কাঁধে মাথা রেখে একটু ঘুমাতে পারি? আর একটা কথা উনাকে বল যে রিক্সা বনশ্রীর দিকে নিতে। এই রিক্সায় করেই বাসায় যাবো।”
এই বলে রিয়া তমালের কাঁধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেলো।



এতক্ষন ধরে কষ্ট করে জমিয়ে রাখা চোখের জলগুলো বৃষ্টিধারার মত নীরবে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। রিয়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আর অন্ধকারে চলছে তমালের নীরব অশ্রু বিসর্জন যা কখনও রিয়া জানতে পারবে না। আর তমালও চায়না রিয়া এই ব্যাপারটা জানুক। রিক্সা যখন রামপুরা ওভারব্রীজ দিয়ে বনশ্রীতে ঢুকছিলো তখন তমাল আস্তে করে ওর নাম ধরে ডেকে ওকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়ে বললো, “সরি ডিস্টার্ব করার জন্য। তোর বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি।”

চোখ ডলতে ডলতে রিয়া বললো, “থ্যাংকস্ এ্যা লট তমাল এত সুন্দর একটা দিন উপহার দেয়ার জন্য।”

তমাল বললো, “আরে আমি আবার কি করলাম? ইয়্যু মেইড মাই ড্যে। তুই যদি সাত সাগর তেরো নদী পাড়ি দিয়ে না আসতি তবে...”

“এ্যানিওয়েজ... হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস্ ড্যা ওয়্যানস্ এগেইন” বলে বিদায় নিতে যাবে রিয়া...

তখনি দাঁড়া বলে তমাল কি মনে করে মানিব্যাগ বের করল। সেখান থেকে শতছিন্ন একটা কাগজ বেরুলো... সেখানে কিছু লেখা। রিয়া বুঝতে পারলো না তমাল কি চাইছে। তমাল মোবাইল বের করে মোবাইলের মৃদু আলোয় আবৃত্তি শুরু করল...


আমি এখনও অপেক্ষায় আছি
যদি কখনও ভুল করে বলে ফেলো ভালোবাসি।
এমন কিছু ক্ষতি হবেনা পৃথিবীর
বদলে দিতে হবে না কোন সংবিধান,
কমে যাবে দীর্ঘশ্বাস আর অপেক্ষার জন্ম নিবে আরেকটি নতুন সুখ সত্তার।
আমি এখনও অপেক্ষায় আছি
যদি অন্যায়গুলো অনুশোচনায় বদলে যায়
এমন কিছু ক্ষতি হবে না সময়ের,
হারিয়ে যাবে দুঃখ আর হতাশা
জন্ম নিবে আরেকটি কাঙ্খিত পৃথিবীর।
আমি এখনও অপেক্ষায় আছি
যদি ভুল করে বলে ফেলো
আমি, আমরা অনুশোচনায় কাতর
নিজের মত ভালোবাসি তোমাকে
তোমাকে আর তোমাকে...




অ.ট: এখানে অনেকে ভুল বুঝছেন কবিতাটি নিয়ে। কবিতাটি আমার বোনের সংগ্রহে ছিল। কবিতাটি আমাদের অনেক প্রিয় বলে এই লেখায় ব্যবহার করলাম। কবির নামটা জানা নেই বলে এখানে দিতে পারলাম না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১১ রাত ১০:০৯
৮২টি মন্তব্য ৮১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×