‘‘ আমি এখানে ইট ভাঙ্গি। এখানে ১০০ ইট ভাঙ্গলে ৮০ টাকা দেয়। ইট ভাঙ্গতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই পায়ে বারি খাই, হাত-পা কেটে যায়।’’
এই কথাগুলো শিশু শেফালীর। লাইনটি পড়েছিলাম প্রথম আলো থেকে।
পুতুল খেলার বয়সেই বাবা-মা, ওর হাতে তুলে দিয়েছে হাতুড়ী। আর তা দিয়েই ইট ভাঙ্গার মতো কঠিন কাজটি করে আসছে সে।
স্বেচ্ছায় নয়, অনেকটাই বাধ্য হয়ে শেফালীর মতো অনেক শিশু-কিশোর বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে ইট ও পাথর ভাঙ্গার। নিজেদের রঙ্গিন শৈশবের দুরন্তপনার ছাপ নেই এই সব শিশুদের মাঝে। রয়েছে দারিদ্যের অভিশাপ, কর্মক্ষেত্রে প্রায়শই দুর্ঘটনা আর পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জনের স্পৃহা। তবে, এ সবের মধ্যেও আশার বাণী হচ্ছে, ইট ও পাথর ভাঙ্গার কাজে নিয়োজিত এইসব শিশুদের বেশিরভাগই করছে লেখাপড়া। এ নিয়ে কয়েকজন শিশু-শ্রমিক জানায়,
‘‘ আমি দুপুর ১টার সময় আসি রাত ৮ টায় বাড়ি যাই। যে টাকা পাই, ওই টাকা দিয়ে পড়াশুনা করি। বাবা-মাকে টাকা দেই। আমার স্বপ্ন বড় হয়ে আমি চাকরি করব।’’
অনেকটা নিরুপায় হয়েই ইট ও পাথর ভাঙ্গার এই কাজে সন্তানাদিদের ব্যবহার করছেন বাবা-মায়েরা। দারিদ্যের কষাঘাতে কিছুই যেন করার নেই তাদের। তারা বলেন,
‘‘ আমাদের বাচ্চারা বড় বড় পাথর টানে। একলা কাজ করে সংসার চালাইতে পারি না। এজন্য দু’টো ছেলে-মেয়ে নিয়ে আসি, কাজ করাই সাথে। বাচ্চা কাজ করতে গিয়া ব্যাথা পায়, কান্না করে পরে আবার মাল ভাঙ্গে।’’
মহাজনরাও কাজে নিয়োগ দিচ্ছেন এই সব শিশুদের। হারভাঙ্গা পরিশ্রমের পর হাতে তুলে দিচ্ছেন নূন্যতম পারিশ্রমিক।
মহাজনদের ভাষ্য,
‘‘ বাচ্চাদের কাজে আমি দিচ্ছি না। ওদের মা-বাবা নিয়ে আসে। কাজ করতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে।’’
শুধুমাত্র পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে, দিনের পর দিন শ্রম দিয়ে যাচ্ছে ইট ও পাথর ভাঙ্গার কাজে নিয়োজিত শিশুরা। পরিবারের জন্য এই সব শিশুরা শ্রম দিয়ে গেলেও, এই শ্রম ওদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা রাখবে এখন সেটিই প্রশ্নের বিষয়।
ছবি সংগ্রহ করা Google থেকে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৫১