কিছু দিন থেকে দেখছি বাংলা ব্লগ-ফেসবুক এ ধর্ম, অধর্ম, ধর্ম বিদ্বেষী ইত্যাকার বিষয় নানা আলোচনা হচ্ছে। সরকার থেকে আমার ব্লগ কে নোটিশ দেয়া হয়েছে ধর্ম আবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। আবার কিছু ব্লগার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। ভাবখানা এমন যেন নাস্তিক হইয়া বিরাট অপরাধ। যাই হোক, এইসব বিষয় নিয়ে কিছু কথা নিচে লিখলাম।
১। নাস্তিকতা:
শাহবাগ এর আন্দোলন কে অগ্রহণযোগ্য করার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী চক্র প্রচার করা শুরু করেছে যে শাহবাগ এর আন্দোলনকারীরা নাস্তিক। আর সেটা ঠেকাতে যেয়ে দেখছি অনেকেই নিজেদের আস্তিকতা প্রমাণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। মিডিয়াতে যেয়ে তারা প্রশ্ন করছে যে সবাইকে ঢালাও ভাবে নাস্তিক বলা ঠিক হচ্ছে কিনা; বা এক মুসলমান আরেক মুসলমান কে নাস্তিক বলতে পারে কিনা ইত্যাদি।
আবার থাবা বাবাকে আস্তিক প্রমাণ করার ও কিছু চেষ্টা হয়েছে। যেন নাস্তিক হলে তাকে হত্যা করা আইনসিদ্ধ হয়ে যায় তাই তাকে আস্তিক প্রমাণ করতেই হবে।
যেটা বলা উচিৎ ছিল তা হল “আমি (বা অন্যকেউ) আস্তিক না নাস্তিক সেটা এই আন্দোলন এর সাথে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক” এই কথাটা শাহবাগ আন্দোলন এর মুখপাত্রদের মুখ থেকে খুব স্পষ্ট করে আসলে বলতে পারতাম যে তারা প্রকৃতপক্ষে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ধারণ করতে পেরেছে। যা কিনা ৭১ এর চেতনার অংশ ছিল। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ধর্মকে পৃথক করাই ধর্ম নিরপেক্ষতা। এই কথা টা কাঠমোল্লারা না বুঝতে পারে। শাহবাগ এর আন্দোলনকারীদের বুঝা উচিৎ ছিল।
কিন্তু তা না করে তারা বিভিন্ন ভাবে প্রমাণ করা শুরু করল যে তারা কত ধার্মিক। আমরা যদি আন্দোলন থেকেই ধর্মকে পৃথক করতে না পারি, তবে আমরা রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ধর্মকে পৃথক করব কেমন করে, কবে?
আবার এদিকে বি এন পি, জামাত বলেছে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আমি বুঝলাম না কি অপরাধ এ নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাস্তিক হওয়া কি অপরাধ? বাংলাদেশ এর সংবিধান কী বলে?
আবার আজ খবর দেখলাম ওলামা মাশায়েখরা নাকি জামাত কে নাস্তিক বলে দাবী করেছে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না। মূর্খ ওলামাদের নাস্তিকতা সম্পর্কে ধারনা কত কম এটা তার ই প্রমাণ। নাস্তিক দের বিভিন্ন ভাবে হেয় করার এটি আরেকটি অংশ।
২। ধর্ম বিদ্বেষঃ
এর মধ্যে আবার কিছু লক বলা শুরু করেছে যে নাস্তিক হতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু ধর্মকে ‘অবমাননা’ করলেই মুল সমস্যা। এখন এখানে এটা পরিষ্কার করা দরকার যে ‘অবমাননা’ বলতে আমরা কে কী বুঝই।
২ক/
প্রথমে আসি নাস্তিকতা প্রচার এ। আমি যদি বলি ‘আল্লাহ বলতে কিছু নেই’ তাহলে কি তা ধর্ম আবমাননা করা হবে? এটা তো নাস্তিকতার মুল কথা। যেকোনো ধরনের নাস্তিকতা প্রচার করতে হলেই এটা বলতে হবে। এটাও যদি আমরা ধর্ম অবমাননা হিসেবে ধরে নিই তবে আর কোন দিন কোন রকমের নাস্তিকতা প্রচার করা যাবে না। নাস্তিকদের গলা টিপে ধরা হবে। আমরা কি বাক স্বাধিনতাহীন বাংলাদেশ চাই?
২খ/
আবার অনেক ঐতিহাসিক ভাবে সত্য তথ্য প্রচার করাকেই অনেকে ধর্মবিদ্বেষ বলে প্রচার করে। উধাহরন হিসেবে বলে যায়; আমি যদি বলি ‘রাসুল সঃ আয়েশা কে বিয়ে করার সময় আয়েশার বয়স ছিল ছয়’ বা যদি বলি ‘রাসুল সঃ বানু কুরাইজা গোত্র তে সকল পুরুষ হত্যা করেছিলেন এবং নারী ও শিশুদের দাস হিসেবে নিয়েছিলেন’। এইগুলি ঐতিহাসিক ভাবে সত্য এবং এর পক্ষে বহু তথ্য প্রমাণ আছে। কিন্তু এই কথা প্রচার করলেও প্রচুর মানুষ আছে যারা নাস্তিকের গলা টিপে ধরতে চায়। সত্য প্রকাশ কক্ষনো দ্বেষ ছড়ানো হতে পারে না। সত্য যদি কারো জন্য অবমাননাকর হয় তবে সেটা কার দোষ? কারও পজিশন এর জন্য কি আমরা তার সম্পর্কে সত্য বলা থেকে বিরত থাকব? বা রেস্পেক্ট এর কারণে? আর এই বিরত থাকার থ্রেশহোল্ড কোথায়? কতটুকু পজিশন বা রেস্পেক্ট থাকলে তার জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে? আর কে সেই থ্রেশহোল্ড নির্ধারণ করবে? আপনি বলতে পারেন আল্লাহর রাসুল সেই থ্রেশহোল্ড এর ঊর্ধ্বে। কিন্তু আরেকজন বলবে শেখ হাসিনা সেই থ্রেশহোল্ড এর ঊর্ধ্বে; তার শামিম ওসমান কে দেয়া প্রশ্রয় এর কথা বলা যাবে না। আবার আরেকজন বলবে তারেক জিয়া সেই থ্রেশহোল্ড এর ঊর্ধ্বে; তার চুরির গল্প করা যাবে না। আবার আরেকজন বলবে সাইদি সেই থ্রেশহোল্ড এর ঊর্ধ্বে; তার যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে বলা যাবে না। কোথায় সেই লাইন, কে নির্ধারণ করবে?
২গ/
কিছু বিষয় আছে যা ঐতিহাসিক ভাবে সত্য নয়। বরং সাব্জেক্টিভ ব্যাপার। যেমন কেউ দাবী করতে পারে যে ‘তরবারির দ্বারাই ইসলাম এর মুল প্রচার হয়েছে’। এই ব্যাপারটি সাব্জেক্টিভ ব্যাপার কারণ একই ইতিহাস পড়ে আপনার মনে হতে পারে কথাটা সত্য নয় কিন্তু আমার মনে হতে পারে কথাটা সত্য। এই ব্যাপার এ যুক্তি তর্ক হতে পারে। আপনার সাথে আমার চ্যালেঞ্জ – পাল্টা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কিন্তু ধর্ম অবমাননার অপরাধ এ যদি এক পক্ষের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয় তবে আলোচনা সম্ভব? আমরা যদি নিয়ম করি যে ধর্ম সম্পর্কে কোনও সাব্জেক্টিভ নেতিবাচক বিষয় বলা যাবে না তাহলে আমরা কক্ষনো জাতি হিসেবে আগাতে পারব না।
২ঘ/
বেইসলেস গালাগালি। এটা অবশ্যয়ই নেতিবাচক। তবে এই ব্যাপার এ এইটুকুই বলতে চাই; যে আমরা যদি এর বিরুদ্ধে আইনগত স্ট্যান্ডার্ড ই বসাতে চাই; তবে সেই স্ট্যান্ডার্ড সবার জন্য সমান ভাবে প্রযোজ্য করা উচিৎ। আমাদের দেশ এ ইসলাম বাদে আর প্রতিটা ধর্ম সম্পর্কে লাগামহীন ভাবে গালাগালি করা হয়। এবং সেটা করা হয় বিশাল জনসভা করে চারিদিক এ মাইক বসিয়ে; ওয়াজ মাহফিল এর নামে; ও কোন কোন মসজিদ এর খুতবায়। যারা আজকে ইসলাম ধর্মের আবমাননা নিয়ে খুবই তৎপর তারা কি কোন দিন বলেছেন যে ওয়াজ মাহফিল ও খুৎবায় এ হাজার হাজার মানুষ এর সামনে হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, খ্রিস্টান, ও নাস্তিকদের যে গালাগালি করা হয় সেটাও অবমাননাকর?
সবকিছুর পর শুধু এটুকুই বলতে চাই যে মুসলমানদের আরও সহনশীল হতে হবে। কোনও কিছু পছন্দ না হলে ইগনোর করা শিখতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




