হাতঘড়িটা হটাৎ নষ্ট হয়ে গেলো। শাকিল ঘড়িটা নিয়ে গিয়েছিলো নিউমার্কেটের ওর পরিচিত ঘড়ি সারাই করার দোকানে। যেখান থেকে ও গত দশ বছর ক্রমাগত ঘড়িটার ব্যাটারি পরিবর্তন করেছে।
ঘড়ি মেরামতকারি বাবুল ভাই ঘড়িটা দেখে, ভালো করে পরীক্ষা করে বললেন, “না ভাই, এই জিনিস আর চল্ব না। আয়ু শেষ।“
-আর একটু দেখেন না ভাই। শাকিল তবুও অনুরোধ করে।
-না, ভাই। হবে না। বাবুল ভাই আবারো জানায়।
কি আর করা ! অনেক সৃতি মাখা ঘড়িতে নিয়ে ব্যাগে ঢোকায় শাকিল। তারপর উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে থাকে।
এই ঘড়িটা গত দশ বছর ধরে ছিলো ওর সাথে। ওর অনার্স পাশের পর মা টাকা দিয়ে বলেছিলেন,” একটা নতুন ঘড়ি কিনবি বাবু।“
মায়ের দেয়া সেই টাকা দিয়ে ঘড়িটা কিনেছিলো শাকিল। চার বছর আগে মা মারা যাওয়ার পর ওর মনে হতো হাতঘড়িটা যেন মা-এর হাত হয়ে ওকে ধরে রাখে সব সময়। তাই এই মোবাইল ফোনের যুগে প্রায় সবাই যখন ঘড়ি পরা বাদ দিয়েছেশাকিল তখনো এই হাত ঘড়িটা দেখেই সময় দেখে নেয়। মাঝে মাঝে ঘড়িটার সাথে কথাও বলে। এভাবেই যান্ত্রিক এই ঘড়িটার সাথে ওর বন্ধুত্ত গড়ে ওঠে। এক তরফা একা একা কথা বলে যায় আর ঘড়িটা ওর নীরব শ্রোতা । কথার মাঝে কেউ বাঁধা দেওয়ার নেই, তর্ক করার কেউ নেই। এটাই সুবিধা যন্ত্রের সাথে কথা বলার। যন্ত্র কখনো তর্ক করে না। যা বলার , বলে যাও আপন মনে ।
আবার শাকিল এও ভাবে কে বলেছে যন্ত্রের মন নেই? এই যে অনেক গুলো দিন এক সাথে থাকা এটা কি একটা সঙ্গ না? অনেক অনুচ্চারিত কথা কি বলে যায় না যন্ত্র? আমার কত আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কি থাকেনি এই ঘড়িটা? ও যখন আনন্দিত হয়, ঘড়িটাও কি আনন্দিত হত না? ও যখন মন খারাপ করে বসে থাকতো, ঘড়িটা কি ওর হাত ধরে চুপচাপ ওর সঙ্গী হতো না?
এই ঘড়িটা ছিল ওর যান্ত্রিক সঙ্গী। নিরবে দুজন দুজনকে সঙ্গ দিতো।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭