সকালে ঘুম ভাঙল কান্তার মসজিদের মাইকে ভেসে আসা কারো মৃত্যু সংবাদে। “ একটি শোক সংবাদ...অমুক ......ইন্তেকাল করিয়াছেন............”।
এই ব্যাপারটা কান্তার একদম ভালো লাগে না। সকাল বেলা কারো মৃত্যু সংবাদ শুনে ঘুম থেকে ওঠা!
তাই ওয়াশ রুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে একটা মস্ত বড় হাসি দেয়। সারাদিন যেন এমন হাসি মুখ থাকে ! কারণ, কান্তা বিশ্বাস করে সে একজন আশাবাদী মানুষ। তাই সব সময় আশা নিয়েই বেঁচে থাকে। অনেক নেতিবাচকতা সামনে এলেও, ধাক্কা মেরে সররিয়ে দেয়। আর আশা করে “মিরাকল” ঘটার। ও জানে মানুষের জীবনেই “ মিরাকল “ ঘটে। ওর জীবনেও ঘটবে, ওর লক্ষে ও পৌঁছবেই ।
অফিসে যাওয়ার আগে নেটে ঢুকে পেপার পড়ে নেয় কান্তা। নেটে পেপার পড়ার সুবিধাটা হলো হকারের জন্য অপেক্ষায় আর ঘর-বারান্দা করতে হয় না। কিন্তু নেটের গতি ধির হলে খবর হয়ে যায়! ক্লিক করতে করতে আঙ্গুল ব্যাথা হয়ে যায়।
ই –মেইল চেক, ফেসবুক দেখা আর পেপার পড়া –এই ৩টা কাজ এক সাথে করে ও। ফলে অনেক সময়ও বেঁচে যায় । তাছাড়া, তথ্য সংগ্রহ করাও ওর একটা হবি। আগে পেপার কেটে ফাইলে রাখতো। এখন কপি-পেস্ট করে ওয়ার্ড ফাইলে রাখে।
দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই নাস্তা করে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিলো । ঢাকায় এখন যেন মানুষ উপচে পড়ছে। প্রশাসন বা সরকার কারো কোন পদক্ষেপ নেই রাজধানী শহরের অফিস গুলোর বিকেন্দ্রিকরণের।! কবে যেন শহরটা বসবাসের অযোগ্য ঘোষিত হয় আশঙ্কা কান্তার!
একটু আগে বের হওয়ার কারণে রাস্তা ফাঁকাই পেলো। ঝলমলে রোদ উঠেছে। ঝলমলে রদেলা দিন কান্তার ভীষণ পছন্দ। কিন্তু সুন্দর সকালটা তেতো করে দিলো এক বাস যাত্রী আর বাসের হেল্পারের ভাড়া নিয়ে ঝগড়া। মাত্র ২ টাকা বেশি সেই যাত্রী দিবেই না, আর হেপ্লারও ভাড়া আদায় করবেই!
২ টাকা দিয়ে কি হয় আজকাল? ভাবে কান্তা। এক কাপ চাও তো পাওয়া যায় না। সেই ২ টাকার জন্য এতো সুন্দর সকালটা মেঘলা হয়ে গেলো। হেল্পারের অসুবিধাটা না হয় কান্তা বুঝতে পারলো। তাকে মালিকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু যাত্রীটা এমন করছেন কেন? ২ টাকা দিয়ে সে কি এমন রাজপ্রাসাদ বানাবে! ভাবল কান্তা।
নিজের উপরেই বিরক্ত হয় কান্তা, কেন সে আজ সে এই “ মুড়ির টিন “ মার্কা বাসে উঠলো। কারণ, ও খেয়াল করে দেখেছে, বাসের ভাড়ার সাথে “যাত্রী শ্রেণীর “একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেই বাসগুলোর ভাড়া বেশি , সেগুলোর যাত্রীরা একটু একটু শিক্ষিত বা ভদ্র টাইপের হয়। কিন্তু, কম ভাড়ার বাসের যাত্রীগুলো যেন সরাসরি গ্রাম থেকে মানে খেতের আল থেকে উঠে ঢাকায় চলে আসে।
নগরে বাস করতে হলে কিছু “নাগরিক ভদ্রতা “ বা নিয়ম-কানুন মেনে চলা উচিৎ। কিন্তু গ্রাম থেকে আসা কিছু মানুষের এগুলো ভাবার কোনো অবকাশ নেই ।
সবাই যেন ছুটছে । মাঝে মাঝে কান্তার মনে হয় –এই মানুষগুলো কেন ছুটছে, কোথায় ছুটছে –তারা নিজেরাও যেন বা জানে না! সবাই ছুটছে, তাই তাকেও ছুটতে হবে! অদ্ভুত এক মানসিকতা!
এই সব ভাবতে ভাবতে কান্তা অফিস পৌঁছে যায় ।