somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম হলাম মা...সাত রাজার ধন মানিক রতন কেউ তা জানেনা...

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘুমের ঘোর কাটলো যখন, তখনও চোখের পাতা দুটো ভীষন ভারী। চোখ মেলতে কষ্ট হচ্ছিলো খুব। তীব্র পিপাসায় ফেঁটে যাচ্ছিলো বুকের মধ্যেটা। নানা ধরণের জটিলতার কারণে পেথিড্রিন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিলো আমাকে। ঢুলু ঢুলু চোখ মেলে চাইতেই পারছিলাম না। বারে বারে বন্ধ হয়ে আসা চোখের পাতাটা এক ঝটকায় খুলে গেলো একটি কচি কন্ঠের কান্নার শব্দে। আমার পাশেই গোলাপী তোয়ালেতে জড়ানো ছোট্ট একটি মুখ। উঁকি দিচ্ছিলো সে মামশ্বাশুড়ির কোল থেকে। আমি চোখ মেলতেই তার কান্না থেমে গেলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সে, বড় বড় চোখ দুটি মেলে। সিনেমায় থেমে যাওয়া স্থির চিত্রের মত আমরা দুজন তাকিয়ে রইলাম একে অন্যের দিকে। আত্মজা। এ আমার আত্মজা। দশ মাস দশ দিন তিলে তিলে নিজের জঠরে গড়ে তুলেছি যারে।

উঠে বসতে পারছিলাম না তবুও ভীষন ইচ্ছে হচ্ছিলো একটু ছুঁই ওকে। মুখ ফুটে লজ্জায় বলতেও পারছিলাম না। মুখচোরা স্বভাব আমার।ঘর ভর্তি শ্বাশুড়ি, শ্বশুর,মামী মামা, চাচীদের ঢল । তারা সবাই একে একে ওকে কোলে নিচ্ছিলো এটা সেটা বলছিলো। মামী ওর গালটা একটু ছুঁইয়ে দিলো আমার গালে। মেডিসিনের ঝাঁঝালো সব গন্ধ ভেদ করে সেই অপূর্ব সুমিষ্ট গন্ধটা মিশে গেলো আমার স্বত্বার সাথে। আমি এখন যখন তখনই পাচ্ছি গন্ধটা।সেই অসাধারণ গন্ধটা মনে হচ্ছে আমৃত্যু রয়ে যাবে আমারই সাথে। কখনই ছেড়ে যাবেনা সে আর আমাকে।

রাতে একটু নিরিবিলি হয়েছে।একে একে সবাই বিদায় নিয়েছেন হসপিটাল থেকে।আমার সাথে রয়ে গেছেন শুধু বড় চাচী। রাতে বাচ্চার কোনো অসুবিধা হয় কিনা, কাঁথা কাপড় বদলে দেবার জন্য, আমাকে সাহায্য করবার জন্য। চাচীকে বললাম, চাচী আমাকে একটু কোলে দেবেন? চাচী আমাকে ধরে উঠিয়ে বসিয়ে দিলেন। কোলে দিলেন ওকে। ছোট্ট এক তুলতুলে পুতুল। কি অঘোরে ঘুমুচ্ছে। ছোট্ট ছোট্ট চোখ, নাক, ছোট্ট ছোট্ট মুঠি। তোয়ালের থেকে বের হয়ে আসা একটা লাল টুকটুক পা।এ যেন এক জীবন্ত পুতুল। চোখের পাতায় উপরে একটা আনকমন ভাজ। মেয়েটার চোখ দুটো এখনি এত সুন্দর যেন মাশকারা লাগানো। আমি অবাক হয়ে দেখছি তো দেখছিই। চাচীর কথায় টনক নড়লো। চাচী বললেন, এখন একটু ঘুমাও। এত ধকল গেছে শরীরের উপরে। মা হওয়া কি চাট্টিখানি কথা!

চাচী শুইয়ে দিলেন পুতুলটাকে আমার পাশেই রাখা ছোট্ট একটা হসপিটালের বেবিকটে। কিন্তু একি চিন্তায় তো আমার ঘুমই হচ্ছেনা। বাবুটাকে আমার বেডে রাখলে কি হত? অতটুকুন বাচ্চা কি একা একা থাকতে পারে নাকি মাকে ছাড়া? আমার একটু রাগ হচ্ছিলো। চাচীর যে পাঁচ পাঁচটা বাচ্চা তবুও চাচী এই কথাটা জানেন না? খুব আস্তে বল্লাম, চাচী ওকে আমার কাছে নিয়ে শুই? আমার বুকের কাছে নিয়ে। চাচী হেসে ফেল্লেন । আমার লজ্জা লাগলো, আবার রাগও হলো । কি এমন বলে ফেল্লাম যে উনার হাসতে হবে? চাচী বললেন, আমি তো আছি দরকার পড়ে আমি সারারাত জেগে তোমার বাচ্চা পাহারা দেবো । তুমি ঘুমাও মা।

একটু অভিমান হলো আমার চাচীর উপরে তবুও কিছু বললাম না। একটু ঘোর লেগে এসেছিলো হঠাৎ দেখি বাবু কাঁদছে। আর আমার সারারাত জেগে বাচ্চা পাহারা দেবার ইচ্ছা পোষনকারী চাচী অঘোরে ঘুমোচ্ছেন। আমি চিৎকার করে উঠলাম। চাচী...... বাবু কাঁদছে। চাচী আমার চিৎকারে ধড়মড় করে উঠে বসলেন। তারপর ব্যাপারটা উপলদ্ধি করে ধাতস্থ হয়ে বললেন, ওহ' তারপর ধীরে সুস্থ্যে বাবুর কাঁথা চেঞ্জ করে দিলেন।

বাচ্চাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হলো। বাচ্চাটা কিছুই খেতে পারছেনা। আমার এত কান্না পাচ্ছিলো। আমি বললাম চাচী ওকে কিছু খেতে দাও ওতো না খেয়ে বাঁচবেনা। চাচী আমার কথা শুনে আবরও হেসে ফেললেন । আরে আমাকে এরা পেয়েছে কি? এর চাইতে এরা না থাকলেই আমি বাচ্চার ভালো দেখাশোনা করতে পারতাম । সারারাত ঠিক মত ঘুমাতেই পারলাম না বাচ্চার চিন্তায়।

দুদিন পর বাসায় ফিরে এলাম। এই দুইমাসে যতটা সময় পারি আমি ওকে কোলে নিয়ে বসে থাকি। বসে বসে দেখি কি করে ঘুমায় বাবুটা! ঘুমের মধ্যে হাসে আবার ফুপিয়ে কেঁদেও ওঠে। তার কান্ডগুলো দেখে আমি হাসতে হাসতে মরি। সবাই বলে আমি নাকি ওর অভ্যাস খারাপ করে দিচ্ছি। এরপর ও আর কোল ছাড়া ঘুমাতে চাইবেনা। বাচ্চাকে কোলে রাখার অভ্যাস করাতে নেই।যতটা পারা যায় শুইয়ে রাখতে হয়। আমার রাগ লাগে।

আমার বাচ্চা আমি কোলে রাখবো, ও কোল ছাড়া না ঘুমালে কোলেই ঘুমাবে .......

তাতে কার কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৪
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×