somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ ময়ুরাক্ষীর বিয়ে

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি ময়ূরাক্ষী মানে আমার ব্লগ নিক ময়ূরাক্ষী। শিরোনামের মত ঠিক আজই আমার বিয়ে না তবে একটি বিশেষ স্মরনীয় দিন। আর তাই আজ সকালে ঘুম ভেঙ্গেই মনে পড়লো, আমার জীবনের সেই অমূল্য স্মরণীয় দিনটির কথা। ঠিক এমনই এক ভোরে ঘুম ভেঙ্গেছিলো আমার বাড়ি ভর্তি এক গাঁদা লোকজন আর উৎসব বাড়ির কর্মযজ্ঞের কোলাহলে। চাচাত বোন সূবর্না এসে ডাক দিয়ে গেলো, মা ডাকছেন। সকালে গতদিনের এক প্যাচ দিয়ে পরিয়ে দেওয়া এলোমেলো শাড়ী কোনোমতে গুছিয়ে, খুলে যাওয়া আঁচল হাতে ধরেই দাঁড়ালাম গিয়ে উনাদের সামনে। উনারা বললাম কারণ মায়ের সাথে বসে ছিলেন চাচী, মামী আরও সব মুরুব্বী স্থানীয় মহিলা স্বজন ও পাড়া পড়শীরা। পাঠকেরা এতক্ষনে নিশ্চয় আঁচ করে নিয়েছেন আজ না হলেও সেদিনটি ছিলো আমার বিয়ের দিন। হ্যাঁ আর সেদিনটি নিয়ে লিখতে গিয়েই মনে পড়লো আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের আজ চিত্রার বিয়ে উপন্যাসটির কথা। তাই এমন শিরোনাম দিলাম আমিও। যদিও ময়ুরাক্ষীও তারই একটি উপন্যাসের নাম আর তাই এই নাম এবং নদী আমার খুব প্রিয়।

যা বলছিলাম, সেদিন সকালে মানে আমার সেদিন বিয়ের দিন ছিলো। আমি যখন তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, দেখলাম প্রচন্ড শীতের সকালেও তারা সব জবুথুবু না হয়ে পান সুপারী ও নানা মিষ্টান্ন সহযোগে ও গালগল্পে সে জায়গাটি সরগরম করে তুলেছেন। সত্যি বলছি আমাদের রাজশাহীর সেই হাঁড় কাঁপানো শীতের সকালও সেই মুরুব্বী স্থানীয় মহিলাদের কলকাকলী ও হাসি তামাশায় উত্তপ্ত আলোকিত হয়ে উঠেছিলো সেদিনটিতে। ওরা সবাই বসে ছিলেন আমাদের রাজশাহীর বাড়ির উঠোন লাগোয়া অন্দরের সিড়িতে। এই বাড়িটা বেশ পুরোনো হলেও বেশ রাজকীয়ও বটে। উঠোনের দিকে যে সিড়ি নেমে গেছে তার দুই পাশে দুই সিংহ হা করে আছে। অন্যদিকে রান্নাঘর, গোয়াল, মুরগীর ছোট্ট বাড়ী এসব সাঁজানো ছিলো। সেই উঠোন, বরইগাছ, শিউলিতলা, হা করা সিংহের মুখ চোখ বুজলেই আমার চোখে ভাসে। ছোটবেলা এই ভয়ংকর পাথরের সিংহের হা করা মুখে হাত ঢুকিয়ে এক রকম রোমাঞ্চ অনুভব করতাম। রবিঠাকুরের বীরপুরুষ কবিতার মতন যেন নিজেকেই ভাবতাম বিষম সাহসী কেউ একজন যে জীবন্ত সিংহের মুখে হাত ঢুকিয়ে দিতে পারে।

মা, চাঁচীদের সামনে গিয়ে দাড়াতেই তারা আমাকে কাছে টেনে নিলেন। চুমু খেয়ে বসালেন কাছে,আমার মামী তো কেঁদেই ফেললেন। আমাকে অনেক ভালোবাসতেন তারা হয়তোবা সাত চড়ে রা না করা মেয়ে বলেই আমি। তারা আমাকে নানা গয়না, শাড়ী এসব উপহার দিয়ে ফেললেন সেই সকালবেলাতেই। মামী একটা খাঁচার মত ঝুমকা পরিয়ে দিলেন। পরে দেখেছি খাঁচাটার ভেতরে পাখি বসার মত একটা দাঁড়ও ছিলো। শুধু সেখানে ছিলো না কোনো রুপকথার গল্পের মত সোনার তোতা। থাকলে বেশ হত। সে যাইহোক, চাচী দিলেন আমার হাতের তুলনায় বেশ বড় সড় অনন্তবালা । বললেন একটু বড় করেই বানালাম যেন ছেলেপুলে হয়ে মোটা হয়ে যাবার পরেও পরতে অসুবিধা না হয়। বাবাহ কি ভবিষ্যৎ দূরদর্শী চাচীমা আমার। আরও সবাই আরও কত কি যে দিলেন! শাড়ির স্তুপ হয়ে গেলো এক পাশে। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর তারা আমাকে নানা উপদেশ দিচ্ছিলেন যা শুনে আমার এই শেষ মহুর্তে বেশ ভয় ভয় করতে লাগলো।

এমনিতেই আমি শুধু মুখচোরাই ছিলাম না সাথে বেশ ভীতুও। অকারন ঝামেলা ফ্যাসাদ সর্বদা এড়িয়ে চলেছি। তাদের উপদেশ বাণীতে আমি রিতীমত ভড়কে গেলাম। তারা বলছিলেন, শ্বাশুড়িকে সেবা করবে, শ্বসুরের কথা শুনবে, স্বামীকে আপনি করে বলবে, দেবর ননদদেরকে আরও সব কি কি যেন আমার মাথায় আর ঢুকছিলো না। আমি যতটুকু বা কথা বলতাম সেসব শুনে ভয়ে আমার সেদিন থেকে আরো সোজা ভাষায় বাকযন্ত্র মিউট হয়ে গেলো। একটা গোপন কথা বলি আমার হাজব্যান্ডের সাথে আমি হ্যাঁ না হু হা ছাড়া কোনো কথাই বলিনি বিয়ের দুই সপ্তাহ পর্যন্ত।

কারো সাথেই বলতামও না হয়তো তবে বিয়ের পর পর নানা চমকপ্রদ ঘটনা ঘটতে শুরু করলো যে কথা না বলে আর উপায় ছিলো না।

ঘটনা -১ আমি আর বিশ্বাসঘাতক ফুলদানী
বিয়ের একদিন পর। সারা বাড়িতে ফুলের ছড়াছড়ি। গোলাপ, বেলি, জুঁই আরও কত কি! ফুল দিয়ে বিছানা সাজানো হয়েছে, গেট সাজানো হয়েছে এমনকি দরজা জানালার গ্রিলগুলো পর্যন্ত। আসলে আমার শ্বাশুড়ীর পুস্পপ্রীতি আর তার বড়ছেলে প্রীতি আর তারই আবার বিয়ে এর কারণেই এই ফুলে ফুলাকার বাড়িঘরের অবস্থা। সত্যি বলতে কি প্রথম এ বাড়িতে পা দিয়ে আমারও মন ভরে উঠেছিলো, রজনীগন্ধা, বেলি, গোলাপের সুবাসে। বাসর ঘর সাজানো হয়েছিলো গন্ধরাজ ফুলে। সেই অভাবনীয় বাসরের ঘ্রাণ আমি কখনও আমার জীবনে আসলেও ভুলবোনা।

তো এত ফুল শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে! আমার শ্বাশুড়ির সইলোনা । তিনি নিজে হাতে ফুলগুলিকে রক্ষা করতে পারছিলেন না তাই আমাকে বললেন, " বউমা যাও তো এই ফুলদানীটার মধ্যে ঐ ফুলগুলো পানি দিয়ে রাখো।" বলে বেশ মোটাসোটা একটা ফুলদানী ধরিয়ে দিলেন উনি আমার হাতে। আমিও তড়িঘড়ি মিউট মুখেই উনার হাত থেকে ফুলদানীটা নিয়ে আর আরেক হাতে ফুলগুলি নিয়ে বাথরুমে গেলাম বেসিন থেকে পানি ভরে ফুলগুলো রাখতে। ইয়া খোদা, ঠুক করে ফুলদানীর মাথাটা বেসিনের গায়ে লাগতেই গলা ভেঙ্গে খুলে পড়লো ফুলদানীর মাথা। আমি তো ভয়ে শেষ। আমার রিতীমত হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু হলো। আমি এখন কি করবো?

মনে পড়লো আমার ছোটমামীর বিয়ে দিনে একটা পোলাও এর ডিশ ভেঙ্গেছিলো বলে মামীকে অপয়া উপাধী পেতে হয়েছিলো। মামী এটা নিয়ে কতদিন যে কেঁদেছেন। এইসব সাত পাচ ভেবে আমি আর কোনো বুদ্ধি না পেয়ে বাথরুমের দরজা একটুখানি ফাকা করে চারিদিকে খুঁজলাম আমার স্বামীকে। তাকে কোথাও দেখতে পেলাম না, দেখলাম আমার এক ছোট ননদকে। তাকে হাত ইশারায় ডেকে বললাম, রুমকী সুপার গ্লু হবে? সে অবাক হয়ে আমাকে বাথরুমের দরজা থেকে উঁকি দিয়ে বের হয়ে সুপার গ্লু খুঁজতে দেখে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে রইলো, তারপর বললো, সুপার গ্লু দিয়ে কি করবা? আমি বললাম, দেখোনা এই যে ফুলদানীটা একটু ভেঙ্গে গেছে। প্লিজ কাউকে বলো না। আমার খুব লজ্জা লাগছে, ভয় লাগছে। তুমি প্লিজ আমাকে একটু সুপার গ্লু এনে দাও না। সে বললো আমি বাবা জানিনা কিছু এ বাড়ির। কিচ্ছু হবেনা তুমি বের হও তো। আমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। শেষে উপায় না দেখে আমার নাবলা কথা স্বামীর অবলা বউ হয়ে তাকেই একমাত্র আপন ভেবে ফোন দিলাম । ভাবলাম সেই একমাত্র আমার সমস্যা বুঝবে। তাকে ফোন দিয়ে বললাম, "প্লিজ খুব তাড়াতাড়ি একটু সুপার গ্লু এনে দিতে পারবেন?"

সে নিশ্চয় একে আমার ফোন পেয়ে অবাক হয়েছিল, দ্বিতীয়ত আমার মিউট গলার শব্দ শুনে আর সুপার গ্লু কি কাজে লাগবে হঠাৎ এটা তো যে কারোর মনেই প্রশ্ন জাগাবে। সে যাইহোক তিনি কোনো প্রশ্ন না করেই ৫ মিনিটের মাঝে সুপার গ্লু এনে দিলেন। আমি কোনো কথা না বলেই কাঁচুমাচু মুখে তাকে দেখালাম আমার সে অপয়া কীর্তি। সে আমার হাত থেকে ফুলদানীটা নিয়ে দু মিনিটের মধ্যে সযতনে সুপার গ্লু লাগিয়ে নিখুতভাবে রিপেয়ার করে দিলো।কৃতজ্ঞতায় আমার মুখে ভাষা আরও ছিলোনা তবে চোখের ভাষায় হয়তো কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলাম।

এরপর ফুলসহ ফুলদানীটা নিয়ে শ্বাশুড়ীর কাছে গেলাম। উনি বললেন, এতক্ষণ কই ছিলা? আমি বললাম, বাথরুম ধুচ্ছিলাম মা। তিনি অবাক হয়ে বললেন, বাথরুম ধুইতেছিলা! কেন? যাইহোক কই কই ভাঙ্গছে দেখি? রুমকিরে কইলাম কিছু হইবো না .............
ফুলদানীসহ কেঁপে উঠলাম আমি। হয়তো টলেও পড়ে যেতাম। সাত কান্ড রামায়ন পড়ে সীতা কার মা ছিলো যেন? মনে করতে পারছিলাম না , ঐদিকে দূরে দাঁড়িয়ে হাসছিলো রুমকি।

ঘটনা -২ আমি আর ওয়াশিং ম্যাশিন
তখন বেশ কিছুদিন পার হয়েছে। আত্মীয়, স্বজন সব বিদায় নিয়েছেন, দুদিন পরেই আমার হাজব্যান্ডের অফিস খুলে যাবে। তো শ্বাশুড়ির ব্লাড, ইউরিন এসব টেস্ট করতে সিএমএইচে গেছেন তারা দুজন শ্বাশুড়ি আর হাজব্যান্ড। শ্বাশুড়ি ফোন দিলেন, বউমা ওয়াশিং ম্যাশিনটা চালায়া দিও। আমি বললাম, আমি তো ওয়াশিং ম্যাশিন চালাতে জানিনা মা।উনি বললেন, বাম দিকের ড্রয়ার খুলে দুই চামিচ ওয়াশিং পাউডার দিবা। কটন লেখা বাটনটা ঘুরাইবা আর ডানদিকের স্যুইচ টিপ দিবা। এক্কেরে সোজা। আমি তার কথা মত সব করলাম। পানির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বাহ! তার মানে আমি পেরেছি।
কয়েকঘন্টা পর শ্বাশুড়ি ফিরে আসলেন।
-বৌমা মেশিন চালাইছিলা?
-হ্যাঁ মা। উনি খুশি হয়ে ডালা খুললেন।
- বাহ কাপড়গুলা মেলে দিসো?
আমি অবাক হয়ে
-নাতো
শ্বাশুড়ি আরও অবক হয়ে,
- তাইলে কাপড়গুলা গেলো কই?
আমি
-আমি কি জানি? আমি তো কোনো কাপড়ই দেইনি কোথাও। নেইওনি.....
পিছে ফিরে দেখলাম আমার হাজব্যান্ড মুখ নীচু করে, কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।


ঘটনা-৩ ( আমি আর মাইক্রোওয়েভ)
আবারও শ্বাশুড়ি অর্ডার দিয়ে গেলেন । কালরাতে বিরিয়ানী যেন দুপুরে আমি মাইক্রোতে গরম করে রাখি। এটা তো সহজ কাজ, আমি জানিও। আমি খুব আনন্দে এবং নিশ্চিন্ত মনেই বিরিয়ানীর সসপ্যানটা মাইক্রোতে দিতেই। ওমা ! ঠাস ঠাস করে আগুন জ্বলতে শুরু করলো ভেতরে। কাচের ভেতর দিয়ে সেটা দেখে আমি ভয়ে শেষ। তাড়াতাড়ি প্লাগ খুলে ফেললাম টেনে। বাসায় কেউ নেই। ফোন দিলাম ওকে। প্লিজ শিঘ্রি আসো, শিঘ্রি। আমি আর কিছুই বলতে পারছিলাম না। ও মিটিং এ ছিলো তাড়াতাড়ি ছুটে আসলো। তারপর সব শুনে।
- ওহ তোমাকে নিয়ে কি করি বলোতো? জানোনা স্টিলের জিনিস মাইক্রোতে দেওয়া যায়না? তুমি আস্ত স্টিলের সসপ্যান মাইক্রোতে দিয়ে দিলে!
আমি আমতা আমতা করে,
- এটা তো জানতাম কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম কেনো যে....
তাড়াতাড়ি সব অপরাধের চিহ্ন মুছে ফেললাম দুজন মিলে। কৃতজ্ঞ আমি আসলেও তার কাছে সবটা সময় আমার সকল লজ্জা দুঃখ যে এইভাবে লুকিয়ে দিয়েছে সবার থেকে।

ঘটনা-৪ আমি আর আমার হারিয়ে যাওয়া স্বামী
আমরা হানিমুনে কলকাতায় গেলাম। এক বিকেলে নন্দন সিনেপ্লেক্সে ম্যুভি দেখতে গেলাম দুজনে। তো উনি বললেন তুমি নীচে ঘুরো আমি একটু কাজ সেরে ঠিক আধা ঘন্টা পরে সিনেমা হলের সামনে থাকবো। আমি একটু ঘুরলাম। দশ মিনিটও পার হয়নি এমনই মনে হচ্ছিলো আমার। হঠাৎ ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি কোথায় দশ মিনিট, আধা ঘন্টা পার হয়ে গেছে সেই কখন! আমি তড়িঘড়ি সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলাম । হলের গেইটে , সামনে আর একটু এদিকে সেদিকে কোথাও কেউ নেই। ভয়ে কাঁপছিলাম আমি। আমার কান্না পাচ্ছিলো। নিশ্চয়ই সে আমার দেরী দেখে রাগ করে আমাকে রেখেই চলে গেছে। আমার সাথে তো ফোনও নেই কি করবো এখন আমি? হোটেলের এ্যাড্রেস কিছুই জানিনা কি হবে এখন?

আমি নীচে নেমে এসে ইনফরমেশন সেন্টারে ওদেরকে জানালাম, ভালো হিন্দিও পারিনা। সেই লোক হিন্দিতে কথা বলছিলো,আমি বললাম আমার হাজব্যান্ড, আমার হাজব্যান্ড, ফোপাচ্ছিলাম আমি। সে বললো, কিয়া! তুমি তোমার হাজব্যান্ডকে হারায় ফেলেছো? আমি বললাম, তার সাথে এসেছিলাম, উনি আমাকে রেখে কোথায় গেছেন? পাচ্ছিনা, আরও কি সব আবল তাবল। সেই লোক খুব বিজ্ঞের ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। সব বুঝেছেন, এমন কত দেখেছেন, কত হয়। উনি কেমন দেখতে আমাকে জিগাসা করলেন। আমি বললাম ইতনা লম্বা, ইতনা চওড়া। তো তিনি হাজির করলেন ইতনা লম্বা, ইতনা চওড়া দুই দুইজন ষন্ডা গন্ডা পুলিশ পেয়াদা টাইপ কিছু। ইতনা লম্বা, চওড়াকে ধরতে তো তেমন কাউকেই লাগবে। তাদেরকে বললেন আমাকে নিয়ে আমার স্বামীকে আশপাশ খুঁজে দেখতে।

আমি তাদের সাথে আবার উপরে গেলাম। দূর থেকে দেখি ভারী উদ্বিগ্ন মুখে ঘড়ি দেখছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন আমার হাজব্যান্ড। আমি দূর থেকে তাকে দেখেই চিৎকার করে উঠলাম। তর্জনী তুলে চিল্লাতে শুরু করলাম, ঐ যে ঐ যে আমার হাজব্যান্ড। ঐ ষন্ডা গন্ডা পেয়াদা দুজন চোখের নিমেষে গিয়ে তার দুইদিকে চেপে ধরলো। আমি দৌড়ে গেলাম তার কাছে। কান্নাকাটি, কোথায় চলে গিয়েছিলে আমাকে ফেলে?

আমার হাজব্যান্ড এতটাই অবাক যে কিছুই মিলাতে পারছিলেন না। ঐ দুজন লোক তাকে বকা ঝকাশুরু করলো। কই গেছিলেন বউকে ফেলে? এই বেচারী তো আপনার চিন্তায় কাঁদতে কাঁদতে মর গ্যায়া। আরও কি কি সব। আমার হাজব্যান্ড রাগবেন নাকি কাঁদবেন না কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না । উনি বললেন আমি তো ঠিক সময় মতই আসছি। আমি বললাম, কই? এই যে এখন দেখোতো কয়টা বাজে? সে বললো, ঠিকই তো বাজে। দেখি তোমার ঘড়ি। আমি ঘড়িটা দিলাম।
সে বললো তুমি তো ঘড়ির টাইমই পাল্টাওনি। এটা তো বাংলাদেশ টাইমেই আছে। চারিদিকে লোকজনের ভীড় লেগে গেলো। সিনেমা আর দেখবো কি নিজেই সিনেমা করে ফিরে এলাম আমরা।

আরও আছে এমন কত স্মৃতি গত চার বছরে। হুড়মুড় করে মনে পড়লো আজকে সকালে। এত অপরাধ, এত দোষ করেও আমার শ্বশুরবাড়িতে আমি এত আদর পাবো এটা ভাবতেই পারিনা আমি। আর আমার দেবতাতুল্য স্বামী , তার কথা আর কি বলবো? বলার ভাষাই খুঁজে পাইনা আমি। তার কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আমার। সে কথা কখনও বলা হয়নি তাকে। বলা হবেও না হয়তো কখনও। শুধু জানি সব কথা বলতেই হবে এমন কথা নেই। কিছু জিনিষ না বলাতেও জানা হয়ে যায়।

আর একটা কথা আজও তাকে বলা হলোনা । কখনও বলা হবেও না হয়তো, বলেনতো কি সেই কথাটা?

কেউ বলতে পারবেন? :`>
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৬
৫৬টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×