তখন বিকেল ঠিক ৫টা।পার্কের এক প্রান্তে বসে আছে আকাশ।অপেক্ষা করছে কোন এক মানুষের জন্য।যাকে আগে সে কখনো দেখেনি,তবুও তাকে ভালবেসেছে এক টানে।
.
৫মাস আগের কথা।ভোর ৪টা বাজে তখন।সবেমাত্র ফজরের আজান দিয়েছে।আজানে আজানে মুখরিত চারিদিক।হঠাৎ আকাশের ফোনটা বেজে ওঠে অজানা এক নাম্বারে।আকাশ নামায পরে ঠিকভাবে।তাই সেদিনও সে নামাজের জন্য উঠেছে।ফ্রেস হয়েই এসেই দেখে ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজেই চলেছে।ফোনটা রিসিভ করলো সে।ওপাশ থেকেই একটা মেয়ের কন্ঠে কথা ভেসে উঠল।
-‘’কিরে! নামাজ পরবি না এখনি উঠে নামাজ পরে নে।
-কে বলছেন আপনি?
-জ্বি।আমার নাম মেঘলা।সরি রং নাম্বার।
-ইটস ওকে।‘’
বলেই কলটা কেটে দিল মেয়েটা।মেয়েটার কন্ঠে অদ্ভুত এক রকমের জাদু আছে।আকাশের ভার্সিটিতে ওর অনেক মেয়ে বন্ধু আছে।তাদের সাথে মাঝে মাঝে সাজেশন নিয়ে কথা হয় আকাশের।কিন্তু এভাবে কারো প্রতি কখনো আগ্রহ জাগেনি আকাশের।এই প্রথম একটা মেয়ের ভয়েস শু্নে পাগলের মত হয়ে আছে আকাশ।এসব রেখে নামাজ পরে আসল আকাশ।ঘুমানোর জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিল কিন্তু ঘুম তার কাছে ধরাই দিচ্ছে না।ঐ মেয়েটা বার বার কিভাবে যেন আকাশকে জালিয়ে মারছে।আকাশ নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না কেন তার ঐ মেয়েটার প্রতি এত আকর্ষন জাগছে।কোনরকম করে রাতটা কেটে যায় আকাশের।
.
পরদিন সকালে আকাশ মেয়েটাকে কল দেয়।
-‘’হ্যালো আসসালামু আলাইকু্ম।
-ওলাইকু্ম সালাম।আমি তো বলেছিই রং নাম্বার।সরিও বলছি তাতেও কি হলো না?
-না।হলো না।
-কেন হবে না?সরি বলার পরেও আর কিছু বাকি থাকে নাকি?
-আপনার জন্য যে আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি তার জন্য কি শাস্তি আপনাকে দিব?
-আমি তো নামাজ পরার জন্য কল দিছিলাম।আর নামাজ পরা তো ভাল কাজ।কিন্তু ঘুমে ডিস্টার্ব হলো কিভাবে?
-আমি সারারাত আপনাকেই নিয়াই ভাবছি।
-আমি তো বলিনাই আমাকে নিয়া ভাববেন।তাও ভাবছেন সেটা একান্তই আপনার দোষ।
-হ্যা সেটা ঠিক।এবারে কি একটু ভালভাবে কথা বলা যায়না?
-কেন যাবে? আপনিই তো উল্টা পাল্টা কথা বলতেছেন।সকাল বেলা মেজাজটাই খারাপ করে দিলেন।
-আচ্ছা সরি।
-সরিতে কাজ হবেনা।
-একটু আগেই তো আপনি বললেন যে সরি বলার পরেও আর কিছু বাকি থাকে নাকি?তো এবারে কি হলো?
-হাহাহা।আপনি না আসলেই একটা।
-কি আমি।
-কিছুনা।
-একটা জিনিস চাইব করবেন?
-কি জিনিস? চেস্টা করা ছাড়া কিছু করতে পারব না।সাধ্য থাকলে করব।
-আমাকে আজকে্র ভোরের মত নামাজের জন্য প্রতিদিন জাগিয়ে দিতে হবে।পারবেন না?
-হু।পারবো।
-হিহিহি।আচ্ছা জাগাই দিয়েন কিন্তু!
-আচ্ছা তাইলে এবারে রাখি?
-আচ্ছা।‘’
.
এভাবেই একটা সাধারন বিষয় নিয়ে পরিচয় আকাশ আর মেঘলার।এরপর থেকেই রেগু্লার কথা হয় তাদের।আকাশ ছেলেটা কিভাবেই যেন মেয়েটাকে ভালবেসে ফেলে।কখন কিভাবে বু্জহতে পারেনি সে।একদিন ভোর রাতের কথা।প্রতিদিনের মতই আজকেও মেঘলা ফোন দেয় আকাশকে।কিন্তু আকাশ আর ফোন ধরে না।মেয়েটা পাগলের মত করে।সারারাত জেগে ফোন দেয় কিন্তু আকাশ ফোনটা রিসিভই করে না।নামাজ পরে সারারাত আকাশের জন্য দোয়া করে সে।সকাল হতেই আবারো ফোন দেয়।এবারেও রিসিভ হয়না ফোনটা।মেঘলা মেয়েটা কান্না করে ফেলে।কিছু খায়না সারাদিন।অবশেষ দুপু্র ১২টার দিকে মেঘলার ফোনে কল আসে আকাশের।
-‘’হ্যালো মেঘলা।
-আল্লাহ হাফিজ।
-আজিব! আল্লাহ হাফিজ কেন?
-কথা বলবোনা তাই।
-বলবা না কেন?
-কতগু্লা কল দিছি একটাও রিসিভ করো নাই।সারারাত কাঁদাইছো।ঘুমোতে পারিনাই আমি।
-আমার জন্য ঘুমাও নাই?কিন্তু কেন?
-এত আমি জানিনা।আগে বলো কি হইছিল?
-আমার রাতে খুব জ্বর ছিল।আর মেসে তো আপাতত একাই থাকি কেউ কেয়ারের জন্য ছিল না।তাই কখন ঘুমাইছি আর কখন উঠছি নিজেই জানি না।মাত্র জ্বরের ঘোর কাটল।উঠেই তোমার কল দেখলাম।তাই ব্যাক করলাম।
-বেশি রাগ করছো?
‘’আকাশ আর মেঘলার সম্পর্কটা এতদিনে বন্ধুতে রুপ নিয়েছে।এখন তারা তু্মি করেই কথা বলে।‘’
-রাগ আর করবো কিভাবে? তুমি তো অসুস্থ ছিলা।অসুধ খাইছো?নাকি কেয়ারবিহীন এখনো বিছানায় পরে রইছো?
-উঠেই তো তোমাকে কল দিলাম।অসুধ আর খাইতে পারলাম কই?
-যাও অসুধ খেয়ে কল দিও।আমি ওয়েট করব।
-না।এখন না আমি তোমাকে রাতে কল দিব।
-কেন রাতে কেন?
-সেটা রাতেই বলব।
.
এরপর রাত ১১টার দিকে মেঘলাকে ফোন দেয় আকাশ।
-‘’মেঘলা?
-বলো।
-একটু তোমার বাসার ছাদে যাবা?
-কেন?
-প্লিজ।
-আসলাম।এবারে বলো কি বলবা?
-আকাশের ওই চাঁদটাকে দেখছো?
-হুম।দেখছি তো।
-চাঁদটা কত সুন্দর তাইনা?
-হুম অনেক সুন্দর।
-একটা কথা বলতে চাই।কথাটা বলব যতক্ষন,ততক্ষন তুমি চাঁদের দিকেই তাকাই থাকবা।কেমন?
-আচ্ছা এবার তো বল।
-সেই দিন যখন আমাকে প্রথম ফোন দিয়েছিলা সেদিন থেকেই তোমার প্রতি কেমন একটা টান অনুভব করি আমি।বলতে পারো ভালবেসেই ফেলছিলাম।দিন দিন ভালবাসাটা কিভাবে যে এত বেড়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।নিজের অজান্তেই কিভাবে যেন তোমাকে ভালবেসে ফেলছি আমি।তোমার কেয়ার,আমার প্রতি অনুভব এগুলো আমাকে আরো দুর্বল করে ফেলেছে তোমার প্রতি।আমি তোমাকে ভালবাসি মেঘলা।
‘’সাথে সাথে ফোনের ওপাশ থেকে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস।আর ফোনটাও কেটে দিল মেঘলা।আকাশ পরে ট্রাই করে দেখলো ফোনটা বন্ধ।আকাশ একা একা দিন কাটাতে থাকে এভাবেই।মেঘলাকে ছাড়া তার দিনগুলো একেবারেই খারাপ যায়।কেয়ার নেয়ার মত কেমন কাউকে পায়না সে।কস্টেই কাটতে থাকে তার দিনগু্লো।একদিন বিকেলে অঝোর বৃস্টি হতে থাকে বাইরে।সেদিন মেঘলাকে খুব মনে পড়ছিল আকাশের।প্রতিদিনের মত খেয়ে দেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় আকাশ।সুয়ে সুয়ে মেঘলার কথা ভাবতে থাকে সে।হঠাৎ আকাশের ফোনে মেঘলার কল।আকাশ আশ্চর্য হয়ে যায়।অনেক কস্টে ফোনটা রিসিভ করে সে।
-‘’মেঘলা এতদিন কোথায় ছিলে?
-আকাশ একটু ছাদে আসবা?
-কেন?
-আসো না।
-আগে বলো এতদিন কই ছিলা?
-উফফফফ! তুমি ছাদে যাও তো।
-আচ্ছা এলাম ।এবারে বলো।
-আকাশে আজকে কি চাঁদটা আছে?
-না নেই।আকাশটা আজ মেঘে ভরা।
-আকাশ আমি আজকে তোমাকে কিছু কথা বলবো তুমি ততক্ষন ওই মেঘের দিকেই তাকিয়ে থাকবা।
-বলো।
-‘’তুমি যেদিন জ্বরের জন্য ফোন রিসিভ করতে পারো নাই সেদিন আমি বুঝলাম আমি তোমাকে সত্যিই কত ভালবাসি।কেননা তোমাকে ফোনে না পেয়ে আমি পুরো পাগলের মত হয়ে গেছিলাম।তখন বুঝলাম আমি আসলেই তোমাকে কত ভালবাসি তাই ঐদিন তোমাকে না পেয়ে খুব কস্ট হচ্ছিল আমার।কথাটা বল্ব বলব করেও বলা হয়নি।আজ বলেই দিলাম।
-সেদিনই তো বলতে পারতা।
-তুমি সেদিন আকাশের চাঁদটা দেখিয়ে তোমার ভালবাসার কথা আমায় জানিয়েছিলা।আর আজ আমি সেই আকাশেরই মেঘলা আভা দেখিয়ে তোমায় আমার ভালবাসার কথা জানালাম।এই সময়টার জন্যেই আমি অপেক্ষা করেছিলাম।এই মেঘলা আভাটা আকাশে পাবার জন্যই।
-তুমি না সত্যিই।
-কি?
-আমার বউ।
-যাহ দুস্টু।
.
এভাবেই চলতে থাকে তাদের ভালবাসা।আজ প্রায় ৫মাসের বন্ধুত আর সেই বন্ধুত্ব থেকেই জন্ম নেয়া ভালবাসার পর দেখা করবে তারা।তাই আকাশ বসে আছে পার্কে।মেঘলার জন্য অপেক্ষা করছে সে।কিছুক্ষন বাদেই একটা মেয়ে এসে তার পাশে বসল।আর হাতে হাত রাখলো।
-‘’মেঘলা?
-হুম।
-তুমি আমাকে চিনলা কিভাবে?পার্কে এত মানুষ তার মধ্যে আমাকে চিনলা কিভাবে?
-ভালবাসার মানুষটাকে হাজার মানুষের ভিড়েও চিনতে পারা যায়।তুমি আমাকে চিনতে পারা যায়।তুমিই আমাকে চিনলা না।তারমানে আমাকে ভালোইবাসোনা।
-ধুর।তোমার চাইতেও বেশি ভালবাসি।
-হু কচু
-কচু না সত্যি।
-হু মানলাম পাগল একটা।
‘’এরপর আকাশের কাধে মাথা রেখে মেঘলা তাকিয়ে থাকে ঐ নীল আকাশের দিকে।আস্তে আস্তে নেমে আসছে সন্ধ্যা।সন্ধ্যার ঐ আলোতে মেঘলাকে অপ্সরীর মত লাগছে।আকাশ সেই আলোতেই দুচোখ ভরে দেখছে মেঘলাকে।……………………………..
.
.
লেখাঃ- Siam Mehraf
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫২