somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষক-ছাত্রী প্রেমের দৃষ্টান্ত

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অ্যাবেলার্দ মধ্যযুগের একজন নামকরা দার্শনিক এবং ধর্মতত্ত্ববিদ। প্যারিসে শিক্ষাদানের সময় ধর্মশাসক ফুলবার্টের ভাইঝি হেলোইজের প্রনয়ে পড়েন অ্যাবেলার্দ।

অ্যাবেলার্দের চেয়ে প্রায় কুড়ি বছরের ছোট হেলোইজ তখন জ্ঞানের অন্বেষণে লড়াকু একজন। জীবনের প্রকৃত সত্য, প্রকৃত উদ্দেশ্য, মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে সে ব্যস্ত। তখন এই বিষয়ে তাকে শিক্ষাদানের জন্য প্যারিসে কেবল একজনই যোগ্য শিক্ষক ছিলেন এবং তিনি পিটার অ্যাবেলার্দ।

এইভাবেই শিক্ষকের সাথে প্রেমের শুরু হয় হেলোইজের। তৎকালীন সমাজের নৈতিকতার বেড়াজাল ঠেলে অ্যাবেলার্দ আর হেলোইজ তাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়েছেন।

(বলাবাহুল্য, প্রেম করছেন যেহেতু তাইলে সেক্স অবশ্যই করবেন। দার্শনিক ছিলেন বইলা যে দৈহিক চাহিদা তারে নাড়া দেয় নাই তা কিন্তু না। বর্তমানের আরও দশটা প্রেমের মতই তাহারাও সেক্সে লিপ্ত হইছিলেন। না হইয়া অবশ্যই উপায় নেই, কেননা প্রেম করার বহু শ্রুতিমধুর কারনের সাথে শ্রুতিকটু হইলেও যুগলের সেক্সের বাসনা একটা সাংঘাতিক বাস্তবিক কারন। সম্ভবত, সবচাইতে ইফেক্টিভ কারনও হইয়া থাকতে পারে কোন কোন কেইসে।)

যাহোক, হেলোইজের কথা বলছিলাম।
হেলোইজ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় প্যারিসের রক্ষণশীল সমাজে থাকাটা বিপদজনক বুঝতে পেরে তারা অ্যাবেলার্দের জন্মস্থানে পালিয়ে যান। কিন্তু হেলোইজের চাচা ফুলবার্টের কারসাজীতে তারা আবারও ফিরে আসেন। ফুলবার্ট ভাতিজীর মান সম্মান রক্ষার খাতিরে গোপনে অ্যাবেলার্দ আর হেলোইজের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। হেলোইজ বুঝতে পেরেছিলো তার চাচার এসকল কারসাজীর মূল উদ্ধেশ্য ছিলো অ্যাবেলার্দের ক্ষতি করা। অ্যাবেলার্দের কথা চিন্তা করে হেলোইজ পালানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু খুব বেশী দেরী হয়ে গিয়েছিলো। অ্যাবেলার্দ প্যারিসে আটক হন এবং শাস্তিপ্রাপ্ত হন।

অ্যাবেলার্দ এবং হেলোইজ দুজনেই বুঝতে পারেন তাদের পরিনতির কথা। তাই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে দুজনের কাছথেকেই দুজন বিদায় নিয়ে মঠবাসিনী এবং ধর্মযাজকের কাজ বেছে নেন।

এরপর বহু বছর তাদের সামনা সামনি দেখা না হলেও পত্র আদানপ্রদান চলেছে। বহুবছর পর প্যারিসে এক অনুষ্ঠানে আবারও দেখা হয়ে যায় অ্যাবেলার্দ এবং হেলোইজের। বহু প্রতিক্ষার পর এই দেখা হেলোইজ এবং অ্যাবেলার্দ দুইজনকেই মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেয়। ভালোবাসাই যে এই অস্তিত্বের মূল কারন সেটা বুঝে যান দার্শনিক অ্যাবেলার্দ এবং তার ছাত্রী হেলোইজ।
এরপর তাদের আর কোনদিন দেখা না হলেও যোগাযোগ হয়েছে পত্রের মাধ্যমে।

সেইসকল পত্রাবলী আজও বিখ্যাত হয়ে আছে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে।

প্রেম নিয়ে স্কেপ্টিক্যাল হইলেও দার্শনিক অ্যাবেলার্দ এবং তার ছাত্রীর প্রেমের কাহিনী আমায় মাঝে মাঝে নিজের স্কেপ্টিসিজম নিয়া বিব্রত বোধ করায়।

তখনই যদি আবার সংবাদ শিরোনাম দেখি পরিমল টাইপের শিক্ষকদের লুচ্চামীর কান্ডকীর্তি নিয়া, তখন দোটানায় পইরা যাই। দার্শনিকরা কি কইরা গেলেন। না পারলেন নীতিশাস্ত্র শিখাইতে, না পারলেন প্রেম করা শিখাইতে।

আহা, দুঃখিত।
দার্শনিকেরা হয়তো পথ ঠিকই দেখাইছেন, কিন্তু আমরাই না পারলাম নীতিশাস্ত্র মানতে, না পারলাম তাদের কাছ থেকে প্রেম করা শিখতে।

আমরা পারি নাই কেনো?
টেকনোলোজির কারনে?? মধ্যযুগে (অ্যাবেলার্দের সময়ে) যদি এই টেকনোলোজি থাকতো!!
এইটা কি হইতে পারতো যে অ্যাবেলার্দ যখন ছাত্রীর প্রেমে পইড়া তার সাথে সেক্স করেছেন তখন যদি ৮ মেগাপিক্সেলের স্মার্টফোন এবং অন্তর্জাল থাকতো তবে অ্যাবেলার্দও সেইটা গোপনে ভিডিও কইরা অন্তর্জালে ছাইড়া দিতেন এবং যখন তখন সেইটা দিয়ে তার ছাত্রীরে ব্ল্যাকমেইল করতেন?

সমস্যাটা কি ফিলোসোফিতে নাকি টেকনোলোজিতে?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৭
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×