সমুদ্রর কাছে গিয়ে বড় বড় নোনা ঢেউয়ে ভাসতে ইচ্ছে করছে। কখনো সমুদ্র কখনও পাহাড়, মায়াময় আহ্বানে জড়িয়ে রাখে।
সাউথ আমেরিকার এক বিশাল ভূখণ্ড অবিরত ডাকছে আমাকে। ম্যাক্সিকোর মায়া সভ্যতার ঘেরা টোপ পেরিয়ে, পেরু আর্জেনটিনা, ব্রাজিল, চিলি ভিন্ন রূপের ঝাপি খুলে উদার আহ্বানে ডেকে চলেছে আমাকে। মাঝখানে বলিভিয়া।
চায়না ভ্রমণের সময় বেইজিং এ দেখা হলো রীটার সাথে। রীটা ওর মা আর খালাকে সাথে করে এসেছে ঘুরতে। কী দারুণ একটি স্পেনিস মেয়ে। টগবগে ঘোড়ার মতন সতেজ। গ্রেটওয়ালের সবগুলো সিঁড়ি ভেঙ্গে এক মাত্র সেই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উঠল। আমরা যখন দলের সবাই (ক্যাবল কার) তারবাহি গাড়ির ভেলায় চড়ে বাতাসে ভেসে একটা পাহাড় পারি দিলাম। রীতা তখন একদম নীচ থেকে প্রতিটি সিঁড়ি ভেঙ্গে হেঁটে উঠল। তারপর বাকি উপারে উঠাত ছিলই। অনেকে ওইটুকু উঠেই আবার ক্যাবল কারে নীচে ফিরে গেছেন। আমরা কয়েকজন ছিলাম উপরে উঠার অ্যাডভেঞ্চারস সদস্য। মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল প্রচণ্ড গরম ছিল সেদিনটা আর ছিল প্রখর রোদের তাপ। বসন্ত মনে হচ্ছিল গ্রীষ্মের মতন উষ্ণ।
রীটা কী সহজ আন্তরিকতায় আমাকে আমন্ত্রণ জানাল তাদের বাড়িতে থাকার জন্য বোলেভিয়ায় ঘুরতে গেলে। মানুষের সাথে না মিশলে তার কৃষ্টি, সমাজ জীবন সম্পর্কে জানা যায় না। রীটার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ কিন্তু বোলেভিয়ার নাম মনে হলেই একটি কালো ছায়া রেখাপাত করে আমার মনে। যেতে ইচ্ছে করে না বোলেভিয়ায়।
প্রকৃতির সকল আমন্ত্রণ উপেক্ষা করে ম্লান হয়ে যায় বলিভিয়া আমার কাছে যখনই মনে হয়, এর্নেস্তো "'চে" গুয়েভারা গণ মানুষের উন্নতির জন্য যে মানুষটি নিরন্তর সাধনা করে গেলো। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল দুঃখি, কষ্ট ক্লিষ্ট মানুষের জন্য। শুধু নিজের চারপাশ নয়, নিজের দেশ নয় যার মনে ছিল, পৃথিবীর সকল মানুষের মাঝে সুখ বন্টন করার তাগিদ। রীটার মতন সাধারন, সহজ মানুষের জন্যই ছিল চের বিপ্লব। মানবতাবাদি মানুষটিকে নির্মম ভাবে হত্যাকরা হয় বলিভিয়ায়।
কিউবায় তার স্বপ্ন সফল হয় দীর্ঘ গেরিলা বিপ্লবের পর বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করার মাধ্যমে।
এক মাত্র কিউবার জনগণ চে'র স্থাপিত সরকার ব্যবস্থায় সুখ ভোগ করছে এখন পর্যন্ত। কে জানে মার্কিনি প্রবেশের পর বন্ধুত্বের হাত ধরে বিপ্লবের সমবন্টন কতটা এক রকম থাকবে। দেখা যাক, এ বছরই তো প্রথম মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রবেশ ঘটল কিউবাতে এতো বছর বাদে।
কিউবায় সাফল্যে পর নিজের সুন্দর সুখের জীবন বেছে না নিয়ে, চে' গুয়েভারা কঙ্গোর যুদ্ধে সহায়তা করেন। এরপর বলিভিয়ার মানুষের জন্য বিপ্লব করতে গেলেন। দেশে দেশে মানুষের সুখ আনাই যেন তার স্বপ্ন ছিল।
একজন মানব দরদী মানুষকে বেঁচে থাকতে না দিয়ে হত্যা করা. তাদের মুক্তচিন্তার ব্যাপ্তী থামিয়ে দেয়া, এতো যুগে যুগে ঘটে আসছে। আজো তার কোন পরিবর্তন হয়নি। একই ধারায় বলিভিয়ার সেনাবাহিনী মানুষের প্রিয় চে' গুয়েভারাকে ৭ অক্টোবর গ্রেফতার করে এবং তাকে হত্যা করা হয় ৯ অক্টোবর ১৯৬৭ সাল বেলা ১.১০ টায়।
একটি স্বপ্ন এবং বিপ্লবের মানুষকে হত্যা করা যায় কিন্তু তার স্বপ্ন ছড়িয়ে আছে অগুণতি মানুষের মনে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:০৩