somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রহস্যময় চুম্বক পাহাড়

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ফেডরিকটন ছাড়ার পর বৃষ্টি কমে গেলো। হালকা রোদের আভাষ দেখা দিল। ঘন্টাখানেক পরে পাহাড়ি এক শহরে পৌঁছালাম। নীচে ভ্যালি জুড়ে শহর। নীল ছড়ানো যেন চোখের সীমানায় তার মাঝে রূপালি ঝিলিক দালান কোঠার। পাহাড়ের উপর সাজানো বাড়িঘর আবার নীচেও সুন্দর সাজানো শহর। অপূর্ব পাহাড়ি শহরের প্রধান আকর্ষন চুম্বক পাহাড়। আমরা শহর পাড়ি দিয়ে ম্যাগনেটিক পাহাড়ের পার্কে চলে গেলাম। শুনসান ফাঁকা জায়গায় একখানা ছোট কাঠের ঘর, তার সামনে ব্যারিকেট দেয়া ভিতরে ঢুকার রাস্তার উপর। ছোট ঘরের সামনে গাড়ি নিয়ে হাজির হলাম। লেখা আছে টিকেট কাটার জন্য। এবার চোখে পরল ভিতরে একজন মানুষ বসে আছে। তার থেকে টিকেট কেটে ভিতরে কি করতে হবে শুনে ব্যারিকেটের সামনে গেলাম। টিকেটখানা মেশিনকে দেখানোর সাথে সাথে এবার আস্তে পাল্লাখানা উপরে উঠে গাড়ি যাওয়ার পথ খুলে দিল। মেশিনের কি কারবার! ভিতরে ঢুকে ফাঁকা সাজানো উচু টিলার মতন বেশ বিস্তৃর্ণ জায়গা এবং কিছু স্কাল্পচার চোখে পড়ল। এখানে দেখার মতন ঠিক কি আছে বুঝতে পারলাম না। তবে নিরব শান্ত একটা জায়গা উঁচু থেকে উপভোগ করা মন্দ না। বৃষ্টি বাতাস পেরিয়ে রোদের আলোয় একটানা অনেকটা পথ আসার ক্লান্তি ভুলে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজলাম।
টুকটাক খাওয়া পর্ব চলল। এবার গাড়ি করে আমরা পার্কের ভিতর চলতে লাগলাম ধীরে ধীরে। এক জায়গায় পৌছে দেখলাম নোটিশ বোর্ডে বলা আছে, উঁচু পাহাড় থেকে যে রাস্তা নীচে নেমে গেছে, সে ঢাল পথ বেয়ে চলে যেতে হবে একদম শেষে যেখানে একখানা খুঁটি দিয়ে চিহ্ন দেয়া আছে সেখানে। নীচে নেমে গাড়ি চালু রেখে গিয়ার নিয়ে আসতে হবে নিউট্রালে, গ্যাস প্যডেল থেকে পা সরিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে হবে। তারপর চুপ করে মজা উপভোগ করুন। কথা মতন পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নীচে চলে গেলাম। গাড়ির গিয়ার নিউট্রালে দিয়ে, গ্যাস প্যাডেল থেকে পা সরিয়ে নিয়েছি। একটু পরেই গাড়ি আপনা আপনি পিছন বেয়ে পাহাড়ে উঠতে লাগল। বাহ্! মজা তো! যদিও একটু ভয় লাগছিল,পিছনে যেতে যেতে কোথায় গিয়ে পরব কে জানে? গাড়ি যেন সোজা রাস্তার উপর থাকে এবং পিছনে যায় সেজন্য স্টিয়ারিং ধরে ব্যালেন্স রাখছিলাম। গাড়ির কন্ট্রোল মনে হয় আমার হাতে নাই। মনে হচ্ছে রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে কেউ আমার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছে, পিছনে টেনে উপরে নিয়ে যাচ্ছে । যেতে যেতে একদম যেখান থেকে নেমে এলাম সেই জায়গায় গিয়ে থামল পাঁচ কিলোমিটার উপরে। ওয়াও দারুণ অভিজ্ঞতা তো। গাড়ি আপনা আপনি পাহাড়ে উঠে আসে।



প্রথম বারের একটু ভয় ভয় কাটিয়ে এবার আরো কয়েকবার উঠা নামা করলাম। ছেলেও চালকের আসনে বসে পরখ করে নিল, আমি ঠিক বলছি কিনা।
আমরা ভেবে ছিলাম মানুষের সৃষ্টি কিন্তু পৃথিবীর কত যে রহস্যময়তা আছে। তার কতটুকু আমরা আর জানি। ক্যালিফোর্নিয়ায় আরো একটি এমন ধরনের রহস্যময় জায়গায় দেখেছিলাম ।



১৯৩১ সনে ঘোড়ার গাড়িতে এই পথে যাওয়ার সময় প্রথম উপলব্ধি করা হয়, নীচের দিকে না গিয়ে উপরের দিকে সহজে উঠে আসে ভাড়ী মাল বোঝাই গাড়িগুলো। এরপর রাস্তা তৈরী করতে গিয়ে আবিষ্কার হয় কিসের আকর্ষণে লোহালক্কর সব অন্য দিকে চলে যাচ্ছে ঠিকঠাক জায়গায় থাকছে না, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা। পাহাড়ের অভ্যন্তরে চুম্বকের কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে এমন ধারনা করা হয় তাই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ঐ এলাকা থেকে অনেকটা দূরে নিরাপদ এলাকায় রাস্তা তৈরী করা হয়।

যে পথ পেরিয়ে এলাম হাইওয়ে দুই। যে রাস্তা পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিমের শেষ শহরটি ছূঁয়েছে, বেঁধেছে এক সূতায় সারা দেশ। আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে এই বিশাল হাইওয়ে দুই পুরোটা। সারা কানাডা অতিক্রম করেছি এই পথ বেয়ে। এক কিলোমিটার রাস্তা বানাতে বিশ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। দ্বিতীয় বৃহতম এই দেশের জন বল কত কম আবহাওয়া কি পরিমান বৈরী অথচ গোটা দেশ জুড়ে তৈরী করা আছে অসাধারান মশৃণ আধুনিক মানের রাস্তা। প্রতি নিয়ত সংস্কার চলছে প্রয়োজন মতন।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অপটিকাল ইলুশন, চোখের বিভ্রম বলা যায় এই উপরে উঠে আসার ব্যপারকে তবে উপভোগের মজাটা দারুণ। কত রকম মায়া বিভ্রান্তির জাল ছড়িয়ে আছে এই সৃষ্টির সে বিশালের কত টুকু আমরা জানি। তাই এই পথে নামা আমার, খুঁজে বেড়ানো বৈচিত্র এ জগতের রহস্য আর অপূর্ব সৌন্দর্য।



বর্তমানে দর্শনিয় স্থান করে রাখা হয়েছে এলাকাটা। ঘণ্টা দুই দারুণ এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে আবার পথে নামলাম। আমাদের গন্তব্য প্রভিন্সের শেষ সীমানা, আমার পছন্দের জায়গা হোপওয়েল রক কেপ। মোনাকটন পেরুনোর পথে পার হতে হলো চকলেট নদী। চকলেট রঙের জল গড়িয়ে যাচ্ছে, মনে হয় যেন গলানো চকলেটের ধারা বয়ে যাচ্ছে। বিকালের রঙিন আলোয় ঝলমল করছে যেন রঙ। অদ্ভুত বিষ্মেয়ে অভিভূত হই আমি পথে না নামলে কিছুই কি জানা হতো, দেখা হতো এমন বৈচিত্র,সৌন্দর্য।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪৬
১৮টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×