somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

ঘুরে এলাম চে গুয়েভারার স্বপ্ন সফল কিউবায়

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেলাভূমির নোনা বাতাস ভূমিময় উড়ছে। উত্তাল জলরাশির উছলে পরা উর্মি বাজিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত সঙ্গিত ব্যঞ্জনাময়। এক খণ্ডভূমিকে চারপাশ থেকে ঘিরে আছে নীল জলরাশি, না নীল নয় সবুজ জলরাশি তাও নয় গোলাপী অথবা সোনালী। না আবার কখনও হয়ে যাচ্ছে রূপোর মতন উজ্জ্বল। আসলে জলের কোন রঙ নেই। সূর্যের আলো এবং তাপ আকাশের রঙের প্রভাব, মেঘ ও বাতাসের শক্তি সব মিলে ছাপ ফেলে জলের উপর। ভিন্ন সময়ে নতুন মায়াবী রঙ ধারন করে হাজির হয় চোখের সামনে।
চারপাশে সমুদ্র মহাসমুদ্র ও উপসমুদ্র ঘিরে আছে তার মাঝে ১০৪৫৫৬ কিলোমিটার দ্বীপ। আটলান্টিক, ক্যারেবিয়ান সাগর, ম্যাক্সিকো উপসাগর জড়ানো ভূমিটির নাম কিউবা। ষোলটি প্রভিন্সে ভাগ করা দ্বীপের মানুষগুলো আনন্দ উচছল, সচ্ছল। সাধারন নিরুদ্বেগ এবং স্বস্থির জীবন যাপন করছে।
কিউবা দেশটির কথা ভাবলেই কেমন আবেগ তাড়িত হয়ে যাই। আবেগের অনেকটা জুড়ে থাকে চেগুয়েভার। স্বপ্নময় এক মানুষের স্বপ্ন ধারনের দ্বীপটি মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় আমার হৃদয়ে।। চে নামেই যে বহুল পরিচিত পৃথিবীর মানুষের কাছে। একজন মাকসীয় বিপ্লবী, চিকিৎসক, লেখক,সামরিক তাত্তিক,গেরিলা নেতা, কূটনীতিবীদ এবং কিউবান বিপ্লবের অন্যতম সেনানী। এখন পর্যন্ত সাম্যতার ধারক পৃথিবীর এই দেশটি। নিজেদের মতন পথ চলছে, চেষ্টা করে যাচ্ছে। পৃথিবী যখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে, ঝলোমলো উজ্জ্বলতায়, বয়াবহ আকর্ষন চারপাশে তখনও তারা আছে নিজেদের সামর্থের মধ্যে, সাধারন স্বনির্ভর প্রচেষ্টার জীবন যাপনে।
অনেকদিন ধরেই যাওয়ার ইচ্ছা। কিন্তু সময় সুযোগ করাটা চাট্টিখানী কথা না। কিন্তু এবার আমার ভ্রমণের রাজযোটক। তাই অনেকটা প্রস্তুতিবিহীন অবস্থায় প্লেনে চড়ে বসলাম বলা যায়। ব্যপারটা ঘটেছে এমন ভাবে। আমি ছিলাম নিজের কিছু কাছে ভীষণ ব্যাস্ত। যে কাজ একান্ত আমার। দিনমানের সব কাজের শেষে রাত জেগে বইয়ের পান্ডুলিপি প্রস্তুত করছি। সব কিছু মিলিয়ে নিজের উপর বেশ একটা চাপ এবং ধকল চলছে। যার খবর আমি ছাড়া আর কেউ তেমন জানে না। ওরা যেমন সরবে জানান দিয়ে কাজ করে যায় আমি করি চুপচাপ আপন মনে। কিন্তু পরিবারের লোকজন ওদের ছুটির সাথে মিলিয়ে প্যাকেজ নিয়ে নিল। তাও শুনেছিলাম। ভালো দশদিনের সব ইনস্কুলিভ প্যাকেজটা ফুরিয়ে গেলো সিদ্ধান্ত নিতে নিতে। কারণ ডিসেম্বরের ছুটি আর হীমে থেকে পালাতে ভ্রমণকারীদের লক্ষ থাকে বিষুবরেখার কাছাকাছি উষ্ণ অঞ্চলগুলো। দেখার সাথে সাথে দখল না করলে বক্সিং ডের জিনিসের মতনই ফুরিয়ে যায় নিমিশে।
হাবানার প্যাকেজটা ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে ডিসেম্বরের বাকি দিনগুলোতে তেমন কিছু আর পাওয়া যাচ্ছিল না। বড়দিন শেষ হতেই আবার নতুন করে সুলভ মূল্যের কিছু প্যাকেজ দেখা দিল। তবে আগের মতন প্রায় বিনামূল্যের নয় একটু দামী এবং একটু কম সময় পাওয়া গেলো। চট করে ধরে ফেলা হলো এই প্যাকেজটা কোন দ্বিধা না রেখে। আমাকে জানানো হচ্ছিল বছর শুরুর দিনটিতে আমরা উড়ছি। আমি হু হ্যা উত্তর দিয়ে হিসাব করছিলাম, প্রায় তিনশ পাতার লেখা এডিট, আরো কিছু গল্প কবিতা বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর কাজ এই দু চার দিনের মাঝে সারতে পারব কিনা। চব্বিস ঘন্টার মধ্যে পাওয়া যায় সর্ব সাকুল্যে দু এক ঘন্টা নিজের জন্য তাও ঘুম কেটেছেটে বাদ দিয়ে। আমার ইচ্ছে ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে গেলে শান্তি লাগত আমার। যদিও লেখা আঁকার কাজগুলো কোনদিন শেষ হবে না। কিন্তু সবার যখন ছুটি তার সাথে মিলিয়েই যেতে হবে। সমস্যা হচ্ছে ছুটি যখন আসে তখন যেন পৃথিবী ব্যাপী এক সাথে ছুটি আসে। তাই সব জায়গাতে ভীড় ভাট্টা লেগে থাকে। একদম ধনী এবং কাজহীন অলস মানুষ ছাড়া যখন তখন বেড়িয়ে পরা সম্ভব নয়, যখন ফাঁকা পরে থাকে সুন্দর দর্শনিয় জায়গা গুলো।
বছর শেষের একদিন বাকি। বাক্স প্যাটরা গোছানোয় হাত দেইনি এখনো। ছুটি আর উৎসব আয়োজনে, নানা দাওয়াত আর পার্টি সামাজিকতাও এর মাঝে করতে হচ্ছে। নিজের কাজগুলো বাদ দিয়ে। জীবনে সব কিছুই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম প্যাকেজটা না পাওয়ায় ভেবেছিলাম যাওয়া হচ্ছে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকেট কাটা সারা, থাকার জায়গা ভাড়া হয়ে গেছে। আমার কাজ শেষ হয় না কিন্তু ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তুতি সারা।
৩১শে ডিসেম্বর দুপুরে মনে হলো যাচ্ছি তো গ্রীষ্মকালিন দেশে এইসব বুটজুতা পরে চললে চামড়া উঠে যাবে গরমে। ফ্যাশন স্যান্ডেলও চলবে না। চাই ঢাকার ফুটপাত থেকে স্পঞ্জ স্যান্ডেল। যাবোতো সারাদিন বালুকা বেলায় হাঁটতে। সাগরের নোনাজলে ভাসতে।
যদিও প্রথম দিনের সারাদিন আছে আমার হাতে কিন্তু কোন কাজ হবে না। বছর শুরুর আনন্দে সব বন্ধ থাকবে। তাই পরি মরি ছুটলাম দোকানে কেনাকাটার জন্য। নিদেন একখানা হাওয়াই চপ্পল না হলেই নয়।
এই দেশে আবার সব কিছু সিজনমাফিক চলে। শীতের দিনে গরমের জিনিস পাওয়া ভারি মুসকিল। সবাই আছে নিউ ইয়ার পার্টির মুডে। একদিকে কখন দোকানের ঝাপি বন্ধ হয়ে যায় সেই চিন্তা। অন্য দিকে স্যান্ডেল কিনতে না পারলে কি মুসকিল হবে সেই দু:শচিন্তা তার মাঝে চষে বেড়াচ্ছি এ মার্কেট সে মার্কেট এ দোকান ও দোকান। যাক শেষমেস একখানা ছোট দোকানে স্পঞ্জ স্যান্ডেলের কাছাকাছি কিছু পেলাম কিন্তু তার সাইজ দশ বারোর নীচে নাই। কী মহা মুসিবত! এত্ত বড় জুতা পায়ে থপথপ করে হাঁটব নাকি বেড়াতে গিয়ে। যাক দোকানির অশেষ প্রচেষ্টায় এক জোড়া বেড়িয়ে এলো গুদাম থেকে। পাওয়া গেলো মাপ মতন।
বাড়ি ফিরে খাবার পর্ব শেষ করে আবার এডিট নিয়ে বসলাম। প্রকাশক মাথার দিব্বি দিয়ে রেখেছেন লেখা না পাঠিয়ে যেন কোথাও না যাই। রাত বারোটার তিন মিনিট আগে বসার ঘরে বাড়ির সবার সাথে পরবর্তি কিছু সময় নতুন বৎসরের উৎসব পালন করে পি সিতে ফিরে গেলাম আবার। ভোর সাড়ে ছয়টায় লেখা পাঠিয়ে ঘুমাতে গেলাম।
সাড়ে দশটায় উঠে নাস্তা সেরে স্যুটকেস গোছাতে বসলাম। প্লেন উড়বে সন্ধ্যা ছয়টায় অথচ এয়ারপোর্টে হাজির হতে হবে তিন ঘন্টা আগে। পৌঁছানোর এক ঘন্টা সব মিলিয়ে যাত্রার চার পাঁচ ঘন্টা আগেই যাত্রা শুরু হয়ে গেলো।
এয়ারপোর্টে পৌঁছে চেকিং সেরে বোর্ডিং কার্ড হতে নিয়ে মনে হলো বেশ শূন্যতা এখন আর কোন কাজের ঝামেলা নাই। ঘন্টা দুই কিছু ফোনকল, ম্যাসেজ হ্যাপী নিউ ইয়ার উইস করা হলো ব্যস্ত বিমান বন্দরে বসে। কত ধরনের মানুষ হাঁটছে, জটলা করছে, বসে আছে। কত গন্তব্যের মানুষ এক বিন্দুতে জমেছে।
কাঁচের বাইরে বিকালের সোনালী আলোয় নানান দেশের যান্ত্রিক বলাকার আসা যাওয়া দেখছি। দিনটা সকালেও সুন্দর ছিল এই বিকালেও অনেক সুন্দর। শুধু এয়ারপোর্টে আসার সময় খানিক বরফ উড়াউড়ি করছিল। সাধারনত এই সময়ে আবহাওয়া খারাপ থাকার সমুহ সম্ভাবনা থাকে। বরফের কারণে নির্ধারিত সিডিউল বদল হয় অনেক সময়। বছর তিন আগে একবার তো ক্রিসমাস করতে হলো অনেক যাত্রিকে এয়ারপোর্টে।
সময়ের আধঘন্টা আগে কালো রঙের মাঝাারি একটা প্লেন এসে লাগল গেটে। যারা এলো তারা নেমে চলে গেলো অন্য পথে। আর আমাদের ওঠানোর জন্য ঝটপট দুজন পরিপাটি মানুষ এসে দাঁড়িয়ে গেলো ডেস্কে এবং দরজার সামনে। লম্বা সারি পরে গেলো সাথে সাথেই তাদের সামনে।
র্নিবিঘ্নে কিউবান প্লেনে উঠে আমরা আমাদের র্নিধারিত আসনে বসলাম। আমার আসনের জায়গাটি হলো দারুণ। খোলামেলা চওড়া । এবং পাশের দুটো আসনেও কেউ নাই সুতরাং সবটা জায়গা জুড়ে আমার রাজত্ব।
ঠিকঠাক হয়ে বসার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই প্লেন চলতে শুরু করল। আমার শেষ ম্যাসেজটা তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে এরোপ্লেন মুড করে বন্ধ করে দিতে হলো মোবাইল। মিনিট খানেকের মধ্যে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ দৃষ্ট। নিচের মেঘের ঘনঘটার উপরে এক রঙিন পৃথিবী। সন্ধ্যার অস্তরাগে রাঙ্গিয়ে দিয়েছে দিগন্ত। মেঘের উপর রঙের কারুকাজ। যার কোন তুলনা হয়না ব্যাখ্যা হয় না শুধু উপভোগ করা য়ায়। খুব ইচ্ছে হতে থাকল এমন একটা ছবি যদি আঁকতে পারতাম। যতক্ষন আলো দেখা গেল বাইরে আমার দৃষ্টি লেপ্টে রইল তার সাথে।
চোখের সমনের মুঠো আড়াল করে দেয় পাহাড়। তেমন হলো যখন বিমান ক্রুরা আলো জ¦লিয়ে কাজ শুরু করে দিল যাত্রী সেবার। আকাশের ঘরে ফিরে এলাম বাইরের দিগন্ত থেকে।
খাবার দাবার সেরে ঘুম জড়িয়ে আসতে শুরু করল চোখে। এখন কোন কাজ নেই আর কদিন ঠিক মতন না ঘুমানোর ধকল। বেশ আয়েসে শরীর বিছিয়ে দিলাম তিনখানা শূন্য সিট জুড়ে। রাজযোটক ভ্রমণের শুরুটা শুরু হলো আয়েসি ভাবে। পায়ের নিচে সর্ষে আমার, না চাইতে এমন হুটহাট বেড়িয়ে পরতে হয়েছে অনেকবার। আর ইচ্ছে আয়োজন করে লম্বা ভ্রমণ সেতো আমার প্রিয় একটা বিষয়।
সাড়ে তিনঘন্টার আকাশে ভাসা সময় দ্রুত শেষ হলো। ঘুম জড়ানো ভাব কাটাতে মাঝে আরো একবার কফি চেয়ে পান করলাম। কফিটা দারুণ লাগল। ফাস্টফুডের দোকানের মতন নয় একদম ঘরে বানানো ফ্রেস মনে হলো।
দারুণ ল্যান্ডিং করল পায়লট। সব যাত্রি হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাল সুন্দর নিরাপদ ভাবে মাটিতে নিয়ে আসার জন্য।
আমার মনে হলো মাটিটি অন্যদেশের মাটি। এই পৃথিবীর এক আকাশের নিচে হলেও পাখির মতন উড়ে যে কোন দেশে চলে যেতে কত বাঁধা মানুষের। এয়ারপোর্টে কত পরীক্ষা নিরীক্ষা পেরিয়ে আসতে হয়। বাংলাদেশিরা ভিসা ছাড়া আসতে পারে কিউবাতে। এই সুযোগটা ভালোলাগল। আপনারা যারা কিউবা ঘুরতে যেতে চান তাদের জন্য তথ্যটা দিয়ে রাখলাম।
উপর থেকে অনেকটা লম্বা পথ পেরিয়ে নিচে নেমে এসে কয়েকজন গাইড দেখলাম। তারপর আর কোন পাহারাদার বা সিকিউরিটি বা গাইড কিছুই দেখলাম না। এত্ত মানুষ নেমে এলো কারো কোন সাড়া শব্দ নাই। হৈ চৈ চ্যাচামেচি নাই। নিঃশব্দ চলাচল লাল দেয়ালের পরিচ্ছন্ন বিশাল ঘর জুড়ে ।

সাধারনত প্লেনে একটা কাগজ দেয়া হয় পূরণ করার জন্য। কিন্তু এই প্লেনে সেটা দেয়া হয়নি। এয়ারপোর্টে ঢুকার পর দেখিয়ে দিল ফর্ম রাখা আছে সেটা পুরণ করার জন্য। সবাই এক একটা ফর্ম পুরণ করে এগিয়ে গেলাম লাগেজ বেল্টের কাছে। পরিপাটি করে নামানো আমাদের ব্যাগ স্যুটকেস এবং আরো অনেক যারা এখনও এসে পৌঁছাননি তাদের। টাকা পয়সা পাওয়ার আসায় বা হাতিয়ে নেয়ার জন্য শিকারি চোখ মেলে কাউকে ঘুরাঘুরি করতে দেখলাম না। যেমনটা হয় একমাত্র বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে। আমরা নিজেদের ব্যাগ স্যুটকেস তুলে নিয়ে আরো কিছু সামনে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। সামনের ছোট ছোট বুথে একজন করে যাত্রি যাচ্ছে ইমিগ্রেশন বুথে যদিও দলবদ্ধ সবাই পরিবার বা বন্ধুর। কেবল ছোট বাচ্চা মা বা বাবার কোলে তাদের সাথে যাচ্ছে ইমিগ্রেশনের ঘটি পার হতে।
নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে বাইরে আসার পর, বেশ আবেস জমানো গরম হাওয়ার অভ্যথনা পেলাম। শরীর মন পুলকিত হয়ে গেলো। শীতের কবল থেকে শুধু নয় ভারী ভারী কাপড় জামার ওজন থেকেও মুক্ত থাকা যাবে। দেখলাম বেশ কজনা গাইড কোম্পানির নাম সম্বলিত কাগজ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের গাইডের সাথে দেখা হলো। সে আমাদের সাথে করে শাটল বাসের কাছে নিয়ে গেলো।
বাসের পেটের ভিতর ব্যাগ ঢুকিয়ে দিয়ে আমরা বাসে চড়ে বসলাম। গুনে গুনে সব যাত্রি আসার পর, গাড়ি ছাড়ল।
প্রতিটি হোটেলের দায়িত্ব শাটল বাস পাঠিয়ে যাত্রিদের হোটেলে নিয়ে যাওয়ার ।
বাস চলার সাথে গাইড নিজের পরিচয় দিয়ে কিউবার পরিচয় দিতে শুরু করল। যদিও ভালো ইংরেজি বলছিল মেয়েটি তারপরও বারবার সে ভালো ইংরেজি বলতে পারছেনা বলে দু:খ প্রকাশ করছিল। প্রয়োজনীও কিছু তথ্য সরবরাহ করল। যেমন চলতে ফিরতে অর্থ প্রয়োজন, সেই অর্থ কেমন করে কোথায় কিউবান পেসোতে বদল করা যাবে। হোটেলের কাছাকাছি খাবার দোকানের সময়। পেসো বদল করতে না পারলেও ডলার বা ইউরো দিয়ে কেনা কাটা করা যাবে। টেপের পানি খেয়ে পেট খারাপ হতে পারে। সাবধান, সতর্কতার টিপস।
আমাদের গন্তব্য ভেরেডেরো শহর, এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। প্যাকেজে পাওয়া আমাদের হোটেলটিও সবার শেষে। প্রায় আধঘন্টার যাত্রা মাঝেমাঝে এক একটা হোটেলে বাস থামছে। যাত্রীরা নেমে যাচ্ছে তাদের নিদৃষ্ট গন্তব্যে। অন্ধকারে তেমন ভালো দেখতে পেলাম না বাইরের প্রকৃতি। তবে হোটেলগুলো অনেক সুন্দর এবং দারুণ ভাবে আলোক সজ্জায় সজ্জিত। ক্রিসমাস এবং নতুন বছরের সাজ নিয়ে আমাদের অর্ভথনা করছে শহর।
শেষ গন্তব্যে পৌঁছে নিজেদের রুমে যাবার জন্য বাক্স প্যাটরা টানাটানি করতে গেলাম। হোটেল বয় বলল ও সব নিয়ে যাচ্ছে রুমে। রুমে ঢুকে চমকিত হলাম। দারুন আধুনিক একখানা ঝকঝকে এ্যপার্টমেন্ট বাড়ি। দুই রুম দুই বাথরুমসহ ফ্রিজ, মাক্রওয়েভ, স্টোভ, ওয়াশার, কফিমেকার, দুখানা টেলিভিশন। আধুনিকতার কোন কিছুরই কমতি নেই। কিচেনে রান্নার হাড়ি পাতিল থেকে প্লেট গ্লাস, চামুচ কোন কিছুরই কমতি নেই।
লজ্জিত হলাম নিজেই। আমি জানতে চেয়েছিলাম হোটেল ম্যানেজারের কাছে, গরম পানি আছে তো বাথরুমে। শীত, গ্রীষ্ম, সব সময় গরম পানির ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি অনেক বছর থেকে। এখানে গরম তাই হয়তো বা গরম পানি নাও থাকতে পারে। তবে বিষয়টা নির্ভর করে মানসিকতা এবং সংস্কৃতির উপর। প্রচণ্ড শীতে দারজিলিংয়ের হোটেলে জিজ্ঞেস করেছিল গরম পানির রুম নিবে নাকি ঠান্ডা পানিতে চলবে? এখানকার জীবন যাত্রা টুরিস্ট নির্ভর এবং বেশীর ভাগ মানুষ উন্নত বিশ্বের তাই তাদের পছন্দ এবং উপযোগী করে করা হয়েছে। ম্যানেজার গরম পারি সাথে এয়ারকন্ডিসন আছে সেটাও জানিয়ে দিয়েছিল।
পরিপাটি সুন্দর বাড়িতে থাকতে কার না ভালোলাগে। মন ভালো হয়ে গেলো আমাদের। ফুরফুরে মন নিয়ে দরজা খুলে পিছনের বারান্দায় বের হলাম। বিশাল একখানা খোলা বারান্দার একপাশে বিছানা পাতা। একপাশে পেটিও চেয়ার টেবিল। দূরে হালকা আলোর মালা আর লবন হাওয়ার বাতাস জড়িয়ে নিতে থাকল শরীর। আমরা সবাই বারান্দার বিছানায় সটান হয়ে ঘন নীল আকাশ আর করুকাজ বোনা তারা দেখে প্রথম কিউবান রাত উপভোগ করতে করতে। গল্পে মত্য হলাম।
রাত একটা পর্যন্ত খাবার রেস্তোরা খোলা থাকে শুনেছি। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজলেও বাইরে জমজমাট আলোর ছন্দ আর মানুষের চলাচল গান বাজনার শব্দ আসছে ক্যানেলের ওপর পার থেকে । প্লেনের খাওয়া পেট ভরপুর ছিল। কেউ বাইরে যেতে চাইল না। টিভি চালিয়ে স্প্যানিস চ্যানেল দেখতে দেখতে পেয়ে গেলাম সিএনএন, সিটিভি। এমন কি হিন্দি মুভি!
যে যার বিছানায় শুয়ে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে কেটে গেলো।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১২
১৮টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×