somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

ঘুরে এলাম চেগুয়াভারের স্বপ্ন সফল কিউবায়

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দ্বিতীয়:
পরদিন সকালে দরজা খুলে পেয়ে গেলাম উজ্জ্বল আলোর এক দিন। ভয়াবহ উজ্জ্বলতা সূর্য ঝকঝক করছে। আকাশ ঘন নীল মেঘ শূন্য। আর ভালোলাগার মতন উত্তাপ। বাইশ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বেশ অলস অবসর কাটানোর মেজাজে আমরা চারপাশটা ঘুরে ফিরে দেখার জন্য বেড়িয়ে গেলাম। শুরু করলাম আমাদের হোটেল থেকে। দোতালার উপর সুইমিং পুল। সারি দিয়ে রাখা আরাম চেয়ার। সান বাথের জন্য বিশাল বিছানা পাতা কয়েকটা। এই সকালেই অনেকে সূর্য স্নান করছে। অনেকে সাঁতার কাটছে বানানাে নীল জলে।



শহরের একদম শেষ কোনায় আমাদের এ্যার্পটমেন্ট হোটেল। একটা খাল ঢুকে গেছে অর্ধাকৃতি হয়ে। ব্রিজ পেরিয়ে অন্য পাশে যেতে হয়। দূর থেকে মনে হয় পানির উপর ভাসছে সব ঘরবাড়ি। একটু এগিয়ে যেতেই দেখা গেলো। খালটা বেশ বড় হয়ে উঠেছে এবং সারিসারি ছোট বড় জাহাজ নোঙ্গর করা। ভিন্ন দেশ থেকে ভেসে নিজের বোটে চড়ে অনেকে এখানে এসে নোঙ্গর করেছে। নৌকা ভ্রমণের আরেক মজা। আধুনিক এই ইয়েট নিজেদের মটর সাইকেল নিয়ে আসে অনেকে। দল বেঁধে মটর সাইকেলে চড়ে শহর দেখতে বেরুয়। নিজের নৌকায় রাত্রি যাপন করে। আবার নৌকা নোঙ্গরের জায়গায় বাথরুম টয়লেটসহ সব ব্যবস্থা থাকে বন্দরে। ইচ্ছে করলে ঘর ভাড়া নিয়ে স্থলের উপরও থাকতে পারে নৌকায় আসা ভ্রমণকারি। সারিবদ্ধ এই ইয়েট দেখে মনে হলো কবে আমার একখানা এমন ভ্রমণতরী হবে? পৃথিবীর বন্দরে বন্দরে চলে যাবো যখন খুশি পাল তুলে। মাঝ সাগরে বসে জোছনার লীলা খেলা দেখব। অথবা নেমে যাবো সাগর জলে সাঁতার কাটতে। আহা কবে আসবে এমন সুখ (আশা এবং স্বপ্নের শেষ নাই।)
ক্যানেলের অর্ধবৃত্ত অঞ্চল জুড়ে বেশ কয়েকটা হোটেল, নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে অবস্থান করছে। আর আছে ব্যাংক, রেস্তোরা, ক্যাফে, মুদি দোকান, হস্তশিল্পর দোকান। গাড়ি রেন্ট করার দোকান। মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে সিকিউরিটি গার্ড। অনেক জায়গায় দেখলাম সিরামিকের কাজের সুন্দর ডিজাইনের বড় বড় বিছানা পাতা। লোকজন বসছে ওখানে গল্প করছে। ইচ্ছে হলে শুয়েও থাকছে।আর কোথাও এমনটা দেখিনি কখনো।



রাতের বেলা ওপারে আলোর ঝলমল অবস্থান দেখেছিলাম। আর শোনা যাচ্ছিল গান।
আমরা ধীরে সুস্থে ঘুরে ঘুরে চারপাশটা দেখছি হেঁটে হেঁটে। ইচ্ছে করলে হোটেলের এক ধরনের গাড়ি চলে টেম্পোর মতন তাতে চড়া যায়। প্রতিটি হোটেলের আলাদা বাহন নিজ সীমানায় চলে। হোটেল বাসীদের সেবা দেয়। আমাদের মানি এক্সচেঞ্জে যেতে হবে। যেহেতু আমার প্রস্তুতি ছিল না তাই আগে ভাগে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। শেষদিনে ব্যাংকে গিয়ে শুনলাম অন্তত সাতদিন আগে ওর্ডার করতে হয়। বিশেষ করে কিউবান পেসো, অন্যদেশে পাওয়া যায় না ও দেশে ভাঙ্গাতে হবে। মানি এক্সচেঞ্জে যাওয়ার সময় হয়ে উঠেনি।
সবদেশে আমাদের মূদ্রার মূল্য বেশ পাই কিন্তু কিউবায় ভাঙ্গিয়ে মনে হলো কিছুই পেলাম না। ওদের মূদ্রার মূল্য অনেক উপরে। জিনিস পত্রের দাম বেশ তবে গুণগত মানও বেশ ভালো মনে হলো। একমাত্র খাবার সস্থা মনে হলো। অনেক বিদেশি কিউবান ড্রেস পরে ঘুরাফেরা করছে। জমজমাট মানুষের চলাচল। গান বাজছে। সবাই যেন খুশিখশি উৎসবের আয়োজনে।
দুপুরের খাওয়া দাওয়ার জন্য একটি স্টেক হাউসে ঢুকলাম। ভাত মুরগি, মাছ, হাঁস, গরু ছাগল, শুকর সবই পাওয়া যায়। তবে সব রেস্তোরার রান্না প্রায় একই রকম ভাজা এবং শুকনো। এবং আলাদা ভাবে দেয়া সস।
হয় তো বা বিদেশিদের রুচি অনুযায়ী এসব খাবার ম্যেনু করা হয়েছে। দুপুরের খাবার মন্দ লাগল না। তবে চায়ের জন্য মন ছিল অস্থির। সকালে এককাপ চা না পেলে দিনটা ভালো হয় না । খাবার শেষে চা দিতে বললাম। বেয়ারা বুঝে গেলো কড়া লিকারের চা। কিন্তু নিয়ে এলো যা তা মনে হলো আধুনা প্রচলিত সবুজ চা। যার কদর দিন দিন বাড়ছে কিন্তু আমার কাছে অসহ্য মনে হয়। সকাল বেলা সিলেটের চা পাতার এক মগ কড়া লিকারের চা চাই আমার। যেখানেই থাকি না কেনো। আর সব খাবার মানিয়ে নিতে পারলেও, এই চা বিষয়টা এখনও আমার দিন মাটি করে দেয়ার চেষ্টা করে নিত্য অভ্যস্থ অবস্থার বাইরে বিভিন্ন জায়গায়। আনিত কিউবার প্রথম সবুজ চা গলধঃকরণ করে শরীরে কোন তাপ উত্তাপ পেলাম না। বরং মনটা বিক্ষিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করতে লাগল।
হাঁটতে হাঁটতে একটা ক্যাফে পেলাম এবং এই ক্যাফে আমার জীবন রক্ষা করল। ইটালিয়ান এসপ্রেসো কফি ছোট্ট একটি কাপে এত্তটুকুন কফি আমার শরীর মনের সাথে দিনমান সুন্দর করে দিল। বোঝা গেলো কোন ফাঁকি ঝুঁকি নাই নিরেট যত্নে বানানো। ফাস্টফুডের দোকানের স্বাদ নয় একদম আমার ইটালিয়ন বন্ধুর বাড়ির আসল কফির স্বাদ পেলাম। পরবর্তি সব কদিন দুবেলা ওদের দোকানে হামলা দেয়া নিয়ম হয়ে গেলো। কফি বানানো মেয়েগুলোও হয়ে গেলো আমার সখি। শেষের কদিন কফির সাথে বাড়তি একটা কিছু তারা আমাকে দিয়ে যেতো। শুরু হলো একগ্লাস পানি দিয়ে। অতপর একটি ক্যাণ্ডি বা বিস্কিট। অথবা ছোট একপিস কেক।



ভেরোডেরোর এই অংশ দেখে আসল কিউবার কোন স্বাদ পাওয়া যাবে না। তবে পর্যটন শিল্পের ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশের সরকারের এই অংশ সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান নেয়া প্রয়োজন মনে করি। এই অংশ স্থানীয় জনগনের জীবন যাপনের চেয়ে আলাদা। বলা যায় পুরো বিচ্ছিন। এখানে ভ্রমণ পিপাসু যারা আসেন তাদের বৈচিত্রময় মুখ আর ছিমছাম সুখ ভোগের ব্যবস্থা সাজানো আছে।
পুরো এলাকাটা সুন্দর সাজানো গোছান ছবির মতন। পরিচ্ছন্ন এবং মন জয় করার পরিবেশ। মানুষের আচরণ অসাধারন। তবে স্থানীয় তেমন মানুষ এই এলাকায় থাকে না। যারা এখানে হোটেল দোকানে বিভিন্ন কাজে জড়িত, সবাই কয়েক কিলোমিটার দূর শহর থেকে আসে। স্থানীয়দের বাসস্থানে এলাকাটি গিঞ্জি নয়। নোংড়া নয়। নিরাপত্তা বেষ্টনি এবং মন ভালো হয়ে যাওয়ার মতন পরিবেশ। প্রচণ্ড রকম সুন্দরের মধ্যে থেকেও চাঁদের কলংকের মতন আমার মনে হলো। হাভানায় থাকতে পেলে বেশ হতো। এত সাজ সজ্জা দারুণ রকম পরিপাটি আরাম আয়েসে নিজেকে রিচ রির্সোটে বেড়াতে যাওয়া মানুষের মতন মনে হলেও ইচ্ছে হচ্ছিল হাভানা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থান করে, যখন তখন রাস্থায় হেঁটে বেড়িয়ে স্থানীয় মানুষের জীবন যাত্রা দেখার পরিবেশটা মিস করছি। একটি দেশকে জানতে হলে সব সময় স্থানীয় জনগণের সাথে মিশতে হয়। তাদের থেকে জীবনের গল্প শুনতে হয়। যদিও অনেক মানুষের সাথে মিশছি। কথা বার্তা বলতেও অসুবিধা নেই। সবাই ইংরেজি জানা মানুষ। প্রশ্ন করলে সব উত্তর পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও মনে হলো ওদের থেকে ভিতরের আসল খবর পাওয়া যাবে না। কিছুটা আসল ফ্লেবার পাওয়া যেত ঘনবসতির স্থানীয় মানুষদের সাথে থাকতে পেলে। মানুষের জীবন আচরণ দেখা যেত দুচোখ ভরে। তবে ভাগ্য নিয়ে এলো এই ধনীদের ঘরে। যেখান থেকে ভেরেডেরো শহরটাও কয়েক কিলেমিটার দূরে। পুরো এলাকাটি সাজিয়ে রাখা হয়েছে ভ্রমণকারীদের জন্য। এসব ভ্রমণকারীর অধিকাংশ ক্যানাডার অধিবাসি। ক্যানাডার শীত থেকে পালাতে অনেকে নিয়ম করে এসব এলাকায় ছুটি কাটাতে যায়। ক্যানাডার সাথে কিউবার সম্পর্ক অত্যন্ত সুন্দর। অনেকগুলো বড় বড় শিল্প কারখানা ক্যানেডিয়ান সহযোগিতায় গড়ে তোলা হয়েছে।
উইরোপ, ক্যানাডার ভ্রমণকারী অধিকাংশ এবং অন্য দেশের । আমেরিকা এখনও ঢুকতে পারেনি তেমন ভাবে ভ্রমণের জন্য কিউবাতে যদিও তাদের ভ্রমণের গ্রহণ যোগ্যতার একটি চুক্তি হয়েছে। কিউবান সাম্যবাদের জীবন যাত্রা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য ওদের জীবনযাত্রায় ঢুকে যাওয়ার জন্য বারবার চেষ্টা চালিয়ে গেছে আমেরিকা। পৃথিবী ব্যাপী নিজেদের ভোগবাদি জীবন চালু করে নিজেদের প্রাধান্য পাওয়ার চেষ্টা খুব সুক্ষভাবে চলছে। তবে কঠোর ভাবে প্রতিহত করে গেছে ফ্রিদেল কাস্ত্রো। বর্তমান প্রধান মন্ত্রি ফিদেল কাস্ত্রোর ভাই রাউল কাস্ত্রো কঠোর নিয়ম কিছুটা শীথিল করে, আমেরিকানদের আগমন। বা কিউবানদের বাইরের দেশ ভ্রমণে যাওয়া। স্বাধীন ব্যবসা করা। নিজ বাড়ি বিক্রি করতে পারা ইত্যাদি বিষয়ে অনুমোদন দিচ্ছে ধীরে ধীরে।
আমার ইচ্ছে ছিল আমেরিকানদের সংস্পর্শে বদলে যাওয়ার আগে ওরিজিন্যার কিউবা দেখার। সে সুযোগ এলো এবং পৌঁছে গেলাম একদম কিউবার স্বাধীনতার দিনটিতেই কাকতালীয় ভাবে জানুয়ারির প্রথম দিনটিতেই।
ওরা প্রতিবছর স্বাধীনতা উৎসব পালন করে না। প্রতি চার বছরে একবার পালিত হয় দিনটি উৎসব আয়োজনের খরচ বাঁচাতে এই ব্যবস্থা।

কিউবান রেস্তোরাগুলোতে খেয়ে একটা জিনিস টের পেলাম টাটকা। প্রতিটি জায়গায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে খাবার আসার জন্য। বিভিন্ন দেশে যেমন অর্ধ রান্না খাবার রেখে দেয় পরিবেশনের জন্য এবং ঝটপট হাজির করে ক্রেতার সামনে। ওরা এখনও সে সব টেকনিক থেকে দূরে আছে। ওরা পুরো রান্না করেই খাবার র্সাভ করে। আমার ইচ্ছে ছিল একদম কিউবান স্থানীয় খাবার খাওয়ার কিন্তু সে সুযোগটা পাওয়া হয়নি পুরোদমে।
ইটালির খাবার বেশ প্রচলিত। এক সময় ইটালিয়ানরা বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিল কিউবায় তার ছাপ রয়ে গেছে খাবারে। সবজির পরিমাণ দেখে মনে হলো ওদের গোনাগুনতি রেশন ভাবের কথা। দোকানে সবজী অসংখ্য পরিমাণে সাজানো নেই। ফলও গোনাগুনতি। দুপুর গড়িয়ে গেলে সব শেষ হয়ে যায়।
সপ্তাহে একদিন কৃষকের বাজার বসে। আর সকাল বেলাই বাজারের ফল সবজী শেষ হয়ে যায়। সপ্তাহের বাজার করে রাখে মানুষ।
সরকার নিয়ন্ত্রিত করে সব কিছু। জমি থেকে কারখানা। দোকান এবং রেস্তোরা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ মানুষের হাতে নগদ টাকা হয়ত কম কিন্তু মানুষের জীবন যাপনের প্রাথমিক চাহিদা সব বিনা পয়সায় তারা পেয়ে যায়। শিক্ষা, চিকিৎসা বিনা মূল্যে অতি অল্পমূল্যে বাসস্থান। একটি কথা খুব ভালো লাগল শুনতে, জোড় গলায় যখন তারা বলে কিউবায় কোন গৃহহীন নাই। বিনামূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পায় প্রতিটি শিক্ষার্থি। ডাক্তার, প্রোকৌশলী, শিক্ষক, মিলিটারী তে যারা পড়ালেখা করে তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিউবায়। এই শিক্ষার্থিরা সব চেয়ে মেধাবী। মেধার মাধ্যমে তাদের বিষয় নির্ধারিত হয়। এবং বিশেষ মানের নীচে পড়ালেখার মান নেমে গেলে তাদের বিষয় পরিবর্তন করতে হয়। সবচেয়ে চৌকস ছেলে মেয়েদেরই গুরুত্বপূর্ণ পদ অধিকারের জন্য তৈরি করা হয় রাষ্ট্রিয় ভাবে। ইচ্ছে করলে যে কেউ একটা শেষে দুটো তিনটা বা চারটা বিষয়ে গ্রেজুয়েসনের জন্য পড়ালেখা করতে পারে সরকারি সহায়তায় এবং অবশ্যই মেধার মূল্যায়নে। অত্যন্ত গুরুত্বর সাথে শিক্ষার্থিরা জানে ইতিহাস। কি ছিল কিউবা এবং কিভাবে নতুন সমাজ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে তার আদ্যপান্ত। ছোট ক্লাস থেকেই প্রতিটি কিউবান নাগরিক দেশের স্বাধীনতা এবং সুরক্ষার বিষয়ে শিক্ষা নিয়ে বড় হয়।
আমাদের কোম্পনির তথ্য সরবহারকারী আসবে সাড়ে তিনটায়। না জেনে শুনে কোথাও আমরা যেতেও পারছিলাম না। তাই আশে পাশে ঘোরাফেরা সেরে হোটেলে ফিরে এলাম সাড়ে তিনটায়। এবং কোথায় কি আছে কখন বেড়াতে যাবো সব কিছুর একটা তালিকা তৈরি করলাম মহিলার সাথে কথা বলে।



জানা গেলো একটু দূরে আমাদের হোটেলের উল্টা পাশে যে, বড় বড় ফেরী নৌকার মতন জাহাজ ভাসছে। এগুলো ভ্রমণকারিদের সারাদিনের জন্য নদী সমুদ্র এবং সামুদ্রিক জীবজন্তু দেখাতে নিয়ে যায়। আবার স্কুবা ডাইভিং এ আগ্রহিদের সাগর জলের নীচে রঙিন মাছ বা প্রবাল রাজ্য দেখতে নিয়ে যায়। বিশ পঁচিশ কিলেমিটারা দূরে নৈসর্গিক আয়োজনের স্থানগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয় এ সব জাহাজে করে। যার যার সাধ্য এবং সাধের মধ্যে টিকেট কেটে চলে যায় আনন্দে। সারাদিন ঘুরে ফিরে নিজের পছন্দের প্যাকেজ অনুযায়ী কেউ দৃশ্য দেখে। কেউ জলের নিচে সাঁতার কাটে। কেউ নিরালায় নিঝুম দ্বীপে দোলনায় শুয়ে দোল খায়। কেউবা কাটিয়ে দেয় বেলা ডলফিনের সাথে সাঁতার কেটে। এক দারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসে সন্ধ্যায়। আমার অনেক ইচ্ছে জাগল দুটো বিষয় করতে ।
এক ডলফিনের সাথে সাঁতার কাটা আরেক স্কুবা ডাইভিংয়ে যাওয়ার। লাল নীল হলুদ সাঝের ঝাঁক কোরাল, প্রবাল। জলের নীচে অন্যরকম জগৎ। বাস্তবে তার সাথে মিতালী করার সুযোগ সব সময় আসে না। বিশাল রকম খরচের কথা চিন্তা করে যখন নিজের মতনকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছি তখন আমার প্রিয় পরিবার বলল, আমার সাধটা পূরণ করতে অর্থ ব্যায়ের চিন্তা না করে। সো সুইট! একদম সাগরের তলদেশ থেকে কুড়িয়ে আনা ঝিনুক মন্দ হতো না। কিন্তু বাঁধ সাধল সময় এবং আবহাওয়া। আমাদের অবসরের দিনটিতে জাহাজ যাবে না পরের দুটো দিন এমন বৃষ্টি থাকবে যে আনন্দ যাত্রা বন্ধ থাকবে। চুড়ান্ত মন খারাপ নিয়ে একদম এক ইঞ্চি দূরে থেকে চলে আসতে হলো।



ঘুরে বেড়ানোর তালিকা তৈরী শেষে আমরা চলে গেলাম মহাসমুদ্রের টানে বালুকা বেলায়। নারকেল বীথির সারি আর সারিবদ্ধ পামপাতার ছাওনি দেয়া ছোট ছোট ছাতা তার নীচে শরীর মেলে দিয়ে আরাম করার চেয়ার পাতা।
সৈকত মুখরিত পৃথিবীর মানুষের ঢলে। কেউ হাঁটছে, কেউ দৌড়াচ্ছে কেউ বসে আছে, কেউ ভলিবল খেলছে। বাচ্চারা তৈরী করছে বালুর প্রসাদ। অনেকে এই পরন্ত বিকালে পানির মাঝে ঝাপাঝাপি করছে।



উত্তাল সাগরের ঢেউ ছুটে আসছে ভেঙে পরছে তটে। কি যেন এক মদির আবেস তার মাঝে। জলতরঙ্গের সঙ্গীত ও নৃত্যের সাথে তাল মিলিয়ে একটু একটু জলে পায়ের পাতা ভিজাতে ভিজাতে পুরো ভিজে গেলাম। প্রথমে খানিক ঠান্ডা লাগলেও পুরো শরীর ভিজে গেলে, ঠান্ডা অনুভবের আর সুযোগ রইল না। ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে লাফ ঝাপ, সাঁতার, স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া চলল। সূর্য পাটে বসল। সূর্য ডুবছে আমিও ডুবছি। কত রকম রঙিন আলোর খেলা আকাশ আর জলের সীমানায়, আমার হৃদয় থেকে দিগন্তরেখা পর্যন্ত পৃথিবী জুড়ে। জলকেলির সাথে ভুলে গেলাম যেন বাস্তবতা। একসময় উপলব্ধি হলো একা আমিই জলের মাঝে আর সব কখন উঠে গেছে। চলে গেছে সাঁঝের বেলা নামতেই শূণ্য বেলাভূমি।
শুধু আমার বাড়ির লোকজন আমার অপেক্ষায় শুয়ে আছে আরাম কেদারায়। নিরালায় একটু ভয় জাগল মনে সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরতে গিয়ে কেউ আমার পা টেনে ধরে যদি ডিনার করার জন্য সাগর তলের খাবার ঘরে নিয়ে যায়! এতক্ষণ পৃথিবীর সব ভয় আতংক, পৃথিবী ভুলে আনন্দে মেতেছিলাম। ঢেউ আসছিল আমাকে জড়িয়ে ধরতে। তাদের সাথে খেলায় মেতে কী ভালো সময় কাটল। উঠে এলাম সবুজ নীলের মায়া প্রাণ ভরে শরীরে ও মনে মেখে নিয়ে। এবার বালুতটের বালু কনা পায়ে মেখে ফিরতে শুরু করলাম।
চলবে...........
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২০
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×