এক সময় প্রতি বছর টি এস সি থেকে দল বেঁধে রবিউল ভাইর বাসায় যেতাম সব লেখক কবি মিলে । কবি স্থপতি রবিউল হুসাইনের জন্মদিন একত্রিশে জানুয়ারি। উনার স্ত্রী গর্জিয়াস পার্টির আয়োজন করতেন উনার ধানমণ্ডির বাসায়।
কবিতা উৎসবের আগের দিন টিএসসিতে সবার মিলন মেলা, শেষ মূহুর্তের যত হৈ চৈ, আনন্দ আর শেষ মূহুর্তের কাজ শেষে করার অস্থিরতা,আয়োজন ঘিরে। তার থেকে এক ফাঁকে সবাই মিলে জন্মদিন পালনে চলে যাওয়া রাত নটা সাড়ে নটার দিকে।
রবিউল ভাইর বাড়ি গমগম করছে আত্মিয় স্বজনে, পরিচিত বন্ধু বান্ধবে। তার মাঝে আমরা হাজির হতাম রবিউল ভাইসহ। বিশাল তিন চার তলা বাড়ির সব জায়গা জুড়ে বসে আছেন মানুষ।
কিন্তু খাওয়ার আয়োজন নিচে সামিয়ানা টানানো খোলা জায়গায়। ভাবীর কড়া নির্দেশ কেউ খাবার উপরে নিতে পারবে না। সবাই মজলিশে এসে টেবিলে বসে খাবে।
সেবার আমরা কজন বসে তুমুল আড্ডা দিচ্ছি তিনতলার এক ঘরে বসে। বারবার খাবারের ডাক আসছে। কেউ নড়ছে না নিচে যেতে।
এক সময় একজন দুজন করে রাহমান ভাই (শামসুর রাহমান ) হক ভাই (সৈয়দ শামসুল হক) রফিক ভাই (রফিক আজাদ ) এমন মুরব্বীরা রওনা দিলেন নিচে । বাচ্চা দল মনে হয় মোজাম্মেল বাবু, ইউসুফ, তারিক সুজাতরাও চলল পিছে পিছে। শেষ মেশ আমি আর মিলন ভাই(ইমদাদুল হক মিলন) বসে আছি পাশাপাশি।
কিছুদিন আগে উনার উপন্যাস নুরজাহান প্রকাশিত হয়েছে।
আমি বললাম, মিলন ভাই বিচিত্রায় না সজনী গল্প পড়ে আপনার গল্পর ভক্ত হয়েছিলাম। নতুন করে আবার নুরজাহান উপন্যাসটা পড়ে আপনার ভক্ত হয়েছি। অসাধারন লিখেছেন।
উনি জানালেন দ্বিতীয় পর্ব আসবে। অপেক্ষা করেছিলাম অধির আগ্রহে পরের পর্ব পরার জন্য । সচিত্র সন্ধানীতে মনে হয় দ্বিতীয় পর্ব বেরিয়েছিল কয়েক বছর পর। আরো পরে আমি পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু পড়ে মনে হয়েছিল দ্বিতীয় পর্ব লেখার কোন প্রয়োজন ছিল না। নুরজাহান একটা উপন্যাস থাকলেই পারত। দ্বিতীয় পর্ব অন্য গল্প হতে পারত।
যাহোক রবিউল ভাইর জন্মদিনের খাবার খাওয়ার জন্য সবাই চলে গেছেন নিচে। আমি আর মিলন ভাই বসে আছি। যে মেয়েটি ডাকতে এলো আবার খাওয়ার জন্য মিলন ভাই তাকে অনুরোধ করলেন, তুমি প্লেটে করে আমাদের খাবার এখানে নিয়ে আসো প্লিজ।
আমাকে চুপি চুপি বলছিলেন, খাওয়ার জন্য কি এত নীচে নামা যায়! তাই তো খাওয়ার জন্য আমরা কি নীচে নামতে পারি।
মেয়েটি, ভাবীকে লুকিয়ে আমাদের খাবার এনে দিয়েছিল তিনতলার ঘরে। নিচে না নেমে আমরা খাবার খেয়েছিলাম। নিয়মও ভঙ্গ করেছিলাম, নিচে না নেমে। সব নিয়ম ভঙ্গ করার মাঝেই মজা।
সবার খাওয়ার পরে মহা আনন্দে কেক কাটলেন রবিউল ভাই। সব কবিরা হৈ চৈ করে কেক খাওয়ালেন আর খেলেন। আহা সেবারের বছর দুয়ের মধ্যেই মনে হয় রবিউল ভাইর স্ত্রী, ভাবী মারা গেলেন। সময়গুলো বদলে গেল অন্যরকম হয়ে গেল। রবিউল ভাইর জন্মদিন আনন্দে কাটুক।
সবাই বাড়ির দিকে রওনা দিতেন আর আমরা ফিরে আসতাম কবিতা উৎসবের আয়োজন দেখতে টিএসসির মোড়ে। মাঝ রাতে বাড়ি ফিরে পরদিন ভোর না হতেই আবার অনুষ্ঠানের জন্য ফিরে আসা।
পরের দিন পহেলা ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে অনুষ্ঠান চলছে। তার মাঝে লুৎফর রহমান সরকার সাহেবের জন্মদিন। ক্রমাগত কবিতা পাঠ চলত তার এক ফাঁকে রাতে আমরা চলে যেতাম উনার মেয়েদের আহ্বানে উনার জন্মদিনের সারপ্রাইজ পাটিতে অংশ নিতে পরীবাগের বাসায়।
দরজার বাইরে শব্দ শুনা গেলেই, বাতি নিভিয়ে নিঃশ্বাসের শব্দ না করে নিরব ঘর ভর্তি মানুষ । কয়েকবার ফলস শব্দ হওয়ার পর এক সময় তিনি দরজা খুলে ঘরে ঢুকেন। অন্ধকার দেখে বলেন, কারেন্ট চলে গেছে । তখন আমরা বাতি জ্বেলে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে হ্যাপি বার্থডে বলে উঠি। আনন্দময় সময় উচ্ছাসে মজাদার হয়ে উঠে। উনি মেয়েদের আদর করে বলেন পাগলী সব তোমরা এসব আয়োজন করেছো আবার।
মোঃ লুৎফর রহমান সরকার একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ষষ্ঠ গভর্ণর ছিলেন । কিন্তু উনার ভক্ত ছিলাম আমি আমার ছাত্র জীবন থেকে উনার রম্য লেখার জন্য। উনি ছড়াও লিখতেন।
একবার উনার গুলশানের বাসায় বেরাতে গিয়ে, দেখা হয়েছিল উনার ফুপু বিখ্যাত গোয়েন্দা সিরিজ দস্যু বনহুরের লেখক রোমেনা আফাজের সাথে। বনহুর সিরিজ মনে হয় পড়তাম না গোগ্রাসে গিলতাম সেই ছোটবেলায়।
রোমেনা আফাজকে দেখে খুব ভালোলেগে ছিল। এত অদ্ভুত চিন্তা যার মাথা থেকে বেরিয়েছে সেই কত আগে তাঁর সাথে কথা বলে অনেক আনন্দ হয়েছিল।
তখন এমন সেলফি আর ছবি উঠানোর সুযোগ ছিল না। কিন্তু মন জুড়ে রয়ে গেছে স্মৃতি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:৩৮