somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

স্মৃতিকথা

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক সময় প্রতি বছর টি এস সি থেকে দল বেঁধে রবিউল ভাইর বাসায় যেতাম সব লেখক কবি মিলে । কবি স্থপতি রবিউল হুসাইনের জন্মদিন একত্রিশে জানুয়ারি। উনার স্ত্রী গর্জিয়াস পার্টির আয়োজন করতেন উনার ধানমণ্ডির বাসায়।
কবিতা উৎসবের আগের দিন টিএসসিতে সবার মিলন মেলা, শেষ মূহুর্তের যত হৈ চৈ, আনন্দ আর শেষ মূহুর্তের কাজ শেষে করার অস্থিরতা,আয়োজন ঘিরে। তার থেকে এক ফাঁকে সবাই মিলে জন্মদিন পালনে চলে যাওয়া রাত নটা সাড়ে নটার দিকে।
রবিউল ভাইর বাড়ি গমগম করছে আত্মিয় স্বজনে, পরিচিত বন্ধু বান্ধবে। তার মাঝে আমরা হাজির হতাম রবিউল ভাইসহ। বিশাল তিন চার তলা বাড়ির সব জায়গা জুড়ে বসে আছেন মানুষ।
কিন্তু খাওয়ার আয়োজন নিচে সামিয়ানা টানানো খোলা জায়গায়। ভাবীর কড়া নির্দেশ কেউ খাবার উপরে নিতে পারবে না। সবাই মজলিশে এসে টেবিলে বসে খাবে।
সেবার আমরা কজন বসে তুমুল আড্ডা দিচ্ছি তিনতলার এক ঘরে বসে। বারবার খাবারের ডাক আসছে। কেউ নড়ছে না নিচে যেতে।
এক সময় একজন দুজন করে রাহমান ভাই (শামসুর রাহমান ) হক ভাই (সৈয়দ শামসুল হক) রফিক ভাই (রফিক আজাদ ) এমন মুরব্বীরা রওনা দিলেন নিচে । বাচ্চা দল মনে হয় মোজাম্মেল বাবু, ইউসুফ, তারিক সুজাতরাও চলল পিছে পিছে। শেষ মেশ আমি আর মিলন ভাই(ইমদাদুল হক মিলন) বসে আছি পাশাপাশি।
কিছুদিন আগে উনার উপন্যাস নুরজাহান প্রকাশিত হয়েছে।
আমি বললাম, মিলন ভাই বিচিত্রায় না সজনী গল্প পড়ে আপনার গল্পর ভক্ত হয়েছিলাম। নতুন করে আবার নুরজাহান উপন্যাসটা পড়ে আপনার ভক্ত হয়েছি। অসাধারন লিখেছেন।
উনি জানালেন দ্বিতীয় পর্ব আসবে। অপেক্ষা করেছিলাম অধির আগ্রহে পরের পর্ব পরার জন্য । সচিত্র সন্ধানীতে মনে হয় দ্বিতীয় পর্ব বেরিয়েছিল কয়েক বছর পর। আরো পরে আমি পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু পড়ে মনে হয়েছিল দ্বিতীয় পর্ব লেখার কোন প্রয়োজন ছিল না। নুরজাহান একটা উপন্যাস থাকলেই পারত। দ্বিতীয় পর্ব অন্য গল্প হতে পারত।
যাহোক রবিউল ভাইর জন্মদিনের খাবার খাওয়ার জন্য সবাই চলে গেছেন নিচে। আমি আর মিলন ভাই বসে আছি। যে মেয়েটি ডাকতে এলো আবার খাওয়ার জন্য মিলন ভাই তাকে অনুরোধ করলেন, তুমি প্লেটে করে আমাদের খাবার এখানে নিয়ে আসো প্লিজ।
আমাকে চুপি চুপি বলছিলেন, খাওয়ার জন্য কি এত নীচে নামা যায়! তাই তো খাওয়ার জন্য আমরা কি নীচে নামতে পারি।
মেয়েটি, ভাবীকে লুকিয়ে আমাদের খাবার এনে দিয়েছিল তিনতলার ঘরে। নিচে না নেমে আমরা খাবার খেয়েছিলাম। নিয়মও ভঙ্গ করেছিলাম, নিচে না নেমে। সব নিয়ম ভঙ্গ করার মাঝেই মজা।
সবার খাওয়ার পরে মহা আনন্দে কেক কাটলেন রবিউল ভাই। সব কবিরা হৈ চৈ করে কেক খাওয়ালেন আর খেলেন। আহা সেবারের বছর দুয়ের মধ্যেই মনে হয় রবিউল ভাইর স্ত্রী, ভাবী মারা গেলেন। সময়গুলো বদলে গেল অন্যরকম হয়ে গেল। রবিউল ভাইর জন্মদিন আনন্দে কাটুক।
সবাই বাড়ির দিকে রওনা দিতেন আর আমরা ফিরে আসতাম কবিতা উৎসবের আয়োজন দেখতে টিএসসির মোড়ে। মাঝ রাতে বাড়ি ফিরে পরদিন ভোর না হতেই আবার অনুষ্ঠানের জন্য ফিরে আসা।
পরের দিন পহেলা ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে অনুষ্ঠান চলছে। তার মাঝে লুৎফর রহমান সরকার সাহেবের জন্মদিন। ক্রমাগত কবিতা পাঠ চলত তার এক ফাঁকে রাতে আমরা চলে যেতাম উনার মেয়েদের আহ্বানে উনার জন্মদিনের সারপ্রাইজ পাটিতে অংশ নিতে পরীবাগের বাসায়।
দরজার বাইরে শব্দ শুনা গেলেই, বাতি নিভিয়ে নিঃশ্বাসের শব্দ না করে নিরব ঘর ভর্তি মানুষ । কয়েকবার ফলস শব্দ হওয়ার পর এক সময় তিনি দরজা খুলে ঘরে ঢুকেন। অন্ধকার দেখে বলেন, কারেন্ট চলে গেছে । তখন আমরা বাতি জ্বেলে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে হ্যাপি বার্থডে বলে উঠি। আনন্দময় সময় উচ্ছাসে মজাদার হয়ে উঠে। উনি মেয়েদের আদর করে বলেন পাগলী সব তোমরা এসব আয়োজন করেছো আবার।
মোঃ লুৎফর রহমান সরকার‌ একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ষষ্ঠ গভর্ণর ছিলেন । কিন্তু উনার ভক্ত ছিলাম আমি আমার ছাত্র জীবন থেকে উনার রম্য লেখার জন্য। উনি ছড়াও লিখতেন।
একবার উনার গুলশানের বাসায় বেরাতে গিয়ে, দেখা হয়েছিল উনার ফুপু বিখ্যাত গোয়েন্দা সিরিজ দস্যু বনহুরের লেখক রোমেনা আফাজের সাথে। বনহুর সিরিজ মনে হয় পড়তাম না গোগ্রাসে গিলতাম সেই ছোটবেলায়।
রোমেনা আফাজকে দেখে খুব ভালোলেগে ছিল। এত অদ্ভুত চিন্তা যার মাথা থেকে বেরিয়েছে সেই কত আগে তাঁর সাথে কথা বলে অনেক আনন্দ হয়েছিল।
তখন এমন সেলফি আর ছবি উঠানোর সুযোগ ছিল না। কিন্তু মন জুড়ে রয়ে গেছে স্মৃতি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:৩৮
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×