বাংলাদেশ টসে জিতে পরে ব্যাট করে ২২২/১০ (৪৪.৪)
বিটিভি'তে চৌধুরী জাফরুল্লা শরাফত: শ্রদ্ধেয় দর্শক বন্ধুরা, বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতি ম্যাচ শেষে ম্যাচ প্রিভিউ তে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি চৌধুরী জাফরুল্লা ছরাফত (ছাগলের লোমে তৈরি নতুন হেয়ার স্টাইলের প্রতি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হাতের কলমটা হুইগের দিকে তাক করে)। আপনারা এতক্ষণে জেনে গেছেন বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের কাছে একশ'র বেশি রানে পরাজিত হয়েছে (সঠিক সংখ্যাটা জানেন না বলে মুখে কোষ্ঠকাঠিন্য হাসি )। আজকের মেঘমুক্ত আকাশ ফ্ল্যার্ট ইউকেটে বাংলাদেশ অধিনায়ক প্রতিপক্ষের হাতে ব্যাট তুলে দিয়েছেন এবং নিউজিল্যান্ডের বাঘা বাঘা ব্যটসম্যানরা সেটির পূর্ণ সদ্যাবহার করে কন্ডিশনকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের উপর পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ড যাদের কিউয়ি নামে সবাই চেনেন, কিউয়ি ফল অনেক সুমিষ্ঠ হলেও কিউয়িদের ব্যাট কিন্তু মোটেও টাইগারদের প্রতি সদয় ছিলনা, যার ফল অল-ব্ল্যাক দের রানের পাহাড়ে চড়া (এই পর্যায়ে একটু চিন্তিত, কিউয়ি ফলটা তো নিউজিল্যান্ড দলের লগোতে নাই। তবে তাদের যে অল-ব্ল্যাক বলে সেটা নিশ্চিত কারন একবার কোন এক হোটেলের টিভিতে নিউজিল্যান্ডের রাগবি খেলা চলতেছিল আর ভাষ্যকাররা অল-ব্ল্যাক অল-ব্ল্যাক চিল্লাইটেছিল। চামে ঐখানথেকে একটু মেরে দিতে পেরেছেন বলে আনন্দে আবারো কোষ্ঠকাঠিন্য হাসি )।
ক্রিকেটে সবসময়, এমনকি পাড়ার ক্রিকেট-গলির ক্রিকেট-ক্ষেপ ক্রিকেটেও আগে ব্যাটিং করতে হয়। প্রতিপক্ষের উপর বোঝা চাপিয়ে দিতে হয়! এই প্রসংগে এককালের মাঠ কাঁপানো ব্যাটসম্যান, ক্রিকেটের আজীবন পৃষ্ঠপোষক, জীবন্ত কিংবদন্তি, আধুনিক ক্রিকেটের জনক(মনে মনে: টুয়েন্টি টুয়েন্টি হইতে পারে ), মাস্টার ব্লাস্টার, শার্প ফিনিশার স্যার ডব্লু জি গ্রেসের একটা কথা না বললেই নয়। তার সাথে প্রতি সাক্ষাতেই একবার হলেও কথাটা আমাকে বলেন সেটি হল- দর্শক মন্ডলি একটা বিরতি নিয়ে আসি। কোত্থাও যাবেন না, আমার ছংগেই থাকুন
যার কথা বলছিলাম, স্যার ডব্লু জি গ্রেসের সাথে দেখা হলেই আমাকে বলেন, "ছরাফত, ক্রিকেট ইজ অল এবাউট ব্যাটিং। নো নিড টু বল, অনলি ব্যাট এজ লং এজ ইউ ক্যান"! (এই পর্যায়ে আরো একটা চাপা মারতে পেরে শরাফত সাহেবের হাসি প্রাণ ফিরে পায়, মনে হয় আটকে থাকা বায়ুটা বেরিয়ে গিয়েছিল )।
চাপা চলতেই থাকে.......আমিও চ্যানেল টিউন করি।
অন্য একটি প্রাইভেট চ্যানেলে শুরু হয়ে গেছে রকিবুল হাসানের আলোচনা: আমার প্রেডিকশন ঠিক ছিল, বাংলাদেশ এক ম্যাচ জিতে তো পরের ম্যাচে খুব বাজে খেলে। এখন নিজেকে অক্টোপাস পল মনে হচ্ছে । আমাদের সময়ে এরকম ছিলনা, আমাদের মাঝে কমিটম্যান্ট ছিল যে ভাল করতেই হবে ভাল খেলতেই হবে। আজ কি করল দেখেন, টসে জিটে নিউজিল্যান্ড কে ব্যাটিং এ পাঠিয়ে দিল। সাকিবের উদ্যেশ্যে আমি ক্রিকেটের বহুল আলোচিত উক্তিটি আবার করতে চাই, "ওয়েদার খারাপ তবুও বোলিং নেয়ার আগে ভাব, বোলিং কন্ডিসন তাও ভাব, অবশেষে বোলিং নিবে তাও ভাব"।
নিউজিল্যান্ড একটা খুব ব্যালেন্সড টিম, তাদের আছে ম্যাককালামের মত হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান। সে দাড়িয়ে গেলে কি হতে পারে আজ আপনারা দেখেছেন, যে দলে ম্যাককালাম থাকে তাদের কে আগে ব্যাটিং এ পাঠানোর মত ভুল আমাদের সাকিবই শুধু করতে পারেন। আজ যদি বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে একটি সমীহজাগানো সংখ্যা দাঁড় করাতে পারত তবে হয়তো বাংলাদেশী বোলার রা সেটি ডিফেন্ড করতে পারত। আমাদের স্পিন ট্রায়ো আজ কিছু বুঝে উঠার আগেই ম্যাককালাম তাদের এলোমেলো করে দিল। আর শেষ পর্যায়ে আমাদের ব্যাটসম্যানরা যা করল স্পেসালি রকিবুল, নামটার জন্যও আমার মায়া হচ্ছে
যাই হোক, বাংলাদেশ পরের ম্যাচে আবার ফিরে আসবে, এবং খুব ভালো ভাবেই ফিরে আসবে এটাই আমার বিশ্বাস।
পরের ম্যাচ সম্বন্ধে ভবিষ্যতবাণী..... বাংলাদেশের জিতার সম্ভাবনা আছে, যেমনটি আছে নিউজিল্যান্ডের হারার সম্ভাবনা। আবার পুরো বিপরীতও ঘটে যেতে পারে।
পরের দিন আলুর বিশেষ রিপোর্টে উৎপল শুভ্র: মিরপুরের রৌদ্রোজ্বল সকালের আলোকছটা সাকিবের ওকলে ভেদ করে চোখে লাগার আগেই তিনি ঘোষণা দিয়ে বসেন আজ বাংলাদেশ আগে বোলিং করবে! অন্যদিকে ড্যানিয়েল ভেট্টোরির মন কি তখন কুইন্সটাউন নেভিস হাইওয়ারে বাঙগি জাম্প করার মত লাফিয়ে উঠেনি? যময় যতই গড়াতে থাকে কিউয়িদের একের পর বাউন্ডারি-ওভারবাউন্ডারিতে সাকিব নিজের ওকলে খুললে বুঝতে পারেন খালি চোখে দিনটি মোটেও ওকলে পরে থাকার মত সুন্দর ছিলনা।
নিউজিল্যান্ডের ৩৩৩ তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ দল যখন রান আর বলের হিসাবে ধুঁকতেছিল তখন বারবার আশরাফুলের চেহারা মনে করছিলাম। সাকিবও কি আশরাফুলকে মিস করেন নি, হয়তো করেছেন। হয়তো আশরাফুল নিজের রুমের টিভিতে ম্যাচ দেখতে দেখতে বুক ভিজিয়েছেন, "আহা কতদিন এমন বল খেলিনি। আজ আমি থাকলে একটা কিছু হয়েও য়েতে পারত।"
(দলে না থাকলেও স্বভাবসুলভ আশরাফুলকে নিয়ে ত্যানি প্যাচানি, আর কাব্যের ফুলঝুড়ি )
ভাগ্যিস বাংলাদেশ আজ আগে বল করে পুরো ম্যাচ ভালো খেলে জিতেছে, নয়তো উপরের কথাগুলোই আমরা আবার শুনতাম, পড়তাম। তার মানে দাঁড়ায় বিশেষজ্ঞরা আজ প্লেয়ারদের ভালো বলেন তো কাল খারাপ। কমেন্ট করা যতটা সহজ মাঠে গিয়ে খেলে আসা ততটাই কঠিন।
ছবি © AFP
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১১:১৯