somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী হাত ভাঙা লাগবে না, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে, হার্ট ব্লক হওয়ার পথে

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করবে তাদের হাত ভেঙে দেবেন। খুবই ভালো কথা, আশান্বিত হওয়ার মতো একটা ঘটনা। কিন্তু মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত বিনয় এবং দুঃখের সাখে বলছি, হাত ভাঙা লাগবে না কারণ ইতমধ্যে জাতির মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেছে, হার্ট ব্লক হওয়ার পথে। আর এটা আমরা জানি যে, মস্তিষ্ক এবং হার্ট যখন অকার্যকর হতে শুরু করে তখন অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আর কোন শক্তি থাকে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে কোমার দিকে ধাবিত হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে প্রায় সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষকরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে আর আপনার কর্তাব্যক্তিরা বলছেন প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে না। আপনারা আইন করলেন যার কাছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যাবে তাকে গ্রেফতার করা হবে। এই আইনের প্রয়োগ করতে গিয়ে গ্রেফতার করা হলো কিছু ফটোকপির দোকানদারকে। কি হাস্যকর! প্রশ্ন ফাঁস যারা করছে তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে আর ধরা পড়ছে সামান্য ফটোকপিওয়ালা। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে, ঐ একই আইনে তাহলে জাফর ইকবাল স্যারকে কেন গ্রেফতার করা হবে না! কারণ উনি এই তো দুইদিন আগে পত্রিকায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র সংযুক্ত করে কলাম লিখেছেন। এখন উনাকে বিচারের আওতায় আনা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
গত কয়েক বছর ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁস এক মহামারির আকার ধারণ করেছে। ২০১৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সময় প্রতিদিনিই স্টুডেন্টরা ফোন করে বলত স্যার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এখন কি করব? কোনো সদুত্তর দিতে পারতাম না। একরাশ হতাশা নিয়ে ফোন রেখে দিতাম। পরদিন সকালে পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্নপত্র বিতরনের পর স্টুডেন্টদের চাপা হাসি আবার কখনো কখনো উল্লাস দেখে বুঝতে পারতাম ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে ওদের প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে। এরপর চুপিচুপি ওদেরকে জিজ্ঞাসা করলে ওরা লাজুক হাসি হেসে বলত স্যার মিলে গেছে। কি বলব এর পর তিনটি ঘন্টা কাটত ক্ষোভ, অভিমান আর হতাশা নিয়ে। ওরা না হয় কিছুটা বড় হয়ে গেছে তাই অনেকেই এর পরিনতি সম্পর্কে অবহিত ছিল।
কিন্তু এই যে অযাচিত পিএসসি পরীক্ষার নামে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত নষ্ট করার পায়তারা করা হচ্ছে এদের জন্য ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে জানিনা। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় মানব মনকে জাগানো, তার মধ্যে সুকুমার বৃত্তির উন্মেষ ঘটানো তাহলে এই অযাচিত পরীক্ষা নিয়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের শৈশবের আনন্দ কেড়ে নেওয়ার মাঝে কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩৪৩ সনে শান্তিনিকেতনে স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বলতে গিয়ে লিখেছিলেন, “ অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে আমার মনে এই কথাটি জেগে উঠেছিল, ছেলেদের মানুষ করে তোলবার জন্য যে একটা যন্ত্র তৈরি হয়েছে, যার নাম স্কুল, যেটার ভিতর দিয়ে মানবশিশুর শিক্ষার সম্পূর্ণতা হতেই পারে না।”
মানুষের একটি আনন্দময় জীবনযাপন বা জীবন উদযাপনের মস্ত আকাঙ্খা সার্থক হয়ে ওঠে তার দুটি সামর্থ্যের ভিত্তিতে, একটি হলো আত্মবিকাশ এবং অপরটি হলো আত্মপ্রকাশ। এখন আমরা একটি শিশুর আত্মবিকাশ ও আত্মপ্রকাশ ঘটাতে তার হাতে তুলে দিচ্ছি ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। আমরা অভিভাকরা তাদেরকে রাত জেগে শেখাচ্ছি এই হলো প্রশ্নপত্র তুমি এটা পেয়েছ মানে তুমি অনেক ভাগ্যবান। কারণ এই প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে গেলে তোমাকে এটা মুখস্থ করতে হবে। আমরা এভাবে যে শিশুর মনোজগৎ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছি তার খবর কেউ রাখছি না।পৃথিবীর সব বিখ্যাত কোচরাই বলে থাকেন, প্রথমে শিশুটি ছিল একতাল নরম কাদা আর তাকে ছাঁচে ফেলে তিনি তৈরি করেছেন একজন বিখ্যাত খেলোয়াড়। তো আমাদের এই শিশুরাও একতাল নরম কাদা। এখন ওদেরকে আমরা যেভাবে গড়ে তুলব ওরা সেভাবেই গড়ে উঠবে। আমরা প্রত্যেকে এখন এক এক জন অপরাধী তৈরি করার যন্ত্র হয়ে উঠছি। এই যে কোমলমতি শিশুদেরকে এক একটি অপরাধী করে গড়ে তোলার কর্মযজ্ঞ সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকলে উঠেপড়ে লেগেছি তার ফল পাওয়ার জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করা লাগবে না। সামনেই আসছে সেই সুদিন আর সেই সুদিনকে সাদরে বরণ করার জন্য আমাদেরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে নইলে হঠাৎ আলোর ঝলকানি আমাদের এই ছানিপড়া চোখ সহ্য করতে পারবে না।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আপনাকে আমার বিনম্র নিবেদন, আপনারা প্রথমে সমস্যাটাকে স্বীকার করুন। সকলের সহযোগিতা চান। এটাকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে সকলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ান দেখবেন লাখো হাত আপনাদের দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আপনারা প্রত্যেক স্কুল-কলেজে অভিভাবকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করার জন্য প্রত্যেক স্কুল-কলেজকে নির্দেশ দিন।অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের কাছে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করার ব্যবস্থা করুন। কারণ অভিভাবকরা সচেতন হয়ে গেলে চাহিদা বন্ধ হবে আর তখন যোগান দিয়েও লাভ হবে না। শিক্ষাবিদদের নিয়ে বসুন, মিডিয়ার সাহায্য চান দেখবেন ঠিকই এই মরণ ব্যাধিকে জয় করা যাবে। কয়েক বছর আগে নকলের বিরুদ্ধে কিন্তু একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল আর তাই নকলকে উপড়ে ফেলা গেছে। এখনও সময় আছে আপনি সমস্যা স্বীকার করে সাহায্যের জন্য হাতটি বাড়িয়ে দিন দেখবেন সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু তা না করে যদি সমস্যাটিকে অস্বীকার করতে থাকেন তাহলে ঐ দুর্নিতিীবাজ, খুনীগুলো ( শিশুর মস্তিষ্ক বিকৃতি খুনেরই নামান্তের) আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে আর আমরা ধীরে ধীরে জ্ঞানহীন এক অথর্ব জাতিতে পরিণত হব।

৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×