২০০১ সালের ঘটনা,তখন নিয়মিত মিউজিক করি এবং বোহেমিয়ানদের মতো সারা দেশ চষে বেড়াই।সে সময় ফরিদপুর এলাকায় দূর্গা পুজো খুব ঘটা করে পালন করা হতো।ফরিদপুরের কাশিয়ানী গ্রামে পুজোর অনুষ্ঠানে দাওয়াত ছিল, পাঁচজনের দল নিয়ে হাজির হলাম।পুজোর আগের দিন সকালে খবর পেলাম পাশের গ্রামে একটি পরিবারকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কৌতূহল বশত ঘটনাটি দেখতে গেলাম। খুব সাধারণ একটি টিনের বাড়ি, সামনের উঠোনে ছড়িয়ে আছে ভাঙা দোতারার টুকরো, চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া হাড়ি পাতিল আর কাটা বড় বড় চুলের গোছা। মাটির বারান্দার এক কোনে নির্বাক হয়ে একজন ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক মানুষ বসে ছিলেন, ওনার সমস্ত মুখ জুড়ে সাদা দাড়ি। কাঁদছিলেন তিনি, চোখের পানি ক্রমাগত ওনার দাড়ি বেয়ে নীচে ঝড়ে পড়ছে। পাশে গিয়ে বসলাম, জানতে পারলাম ওনার নাম হীরু শাহ, কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন। হীরু শাহের বোনের বাড়ি ছিল এটা।উনি বাউল সঙ্গীত করেন জেনে হৃদয়ে ভক্তি জেগে উঠল। উনি যা বললেন তার সারমর্ম হলো তার বোন এবং বোনের স্বামীও বাউল গান করতেন এবং এটাই তাদের অপরাধ ছিল।আগের দিন বিকেলে গ্রামের মোল্লাদের দল ওনাদের বিরুদ্ধে বিচার ডাকে। বিচারে শরীয়ত বিরোধী কাজের অভিযোগে ওনার বোন এবং বোনের স্বামীর মাথা নেড়া করে চুনকালি মাখিয়ে পুরো গ্রামে ঘুরানোর সিদ্ধান্ত হয়।বাউল আর বাউলের স্ত্রীর চুলগুলি নৃশংস ভাবে চেছে ফেলা হয়, পরদিন সকালে তারা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। আমি আমার জীবনে এমন পাশবিকতা এর আগে কোনোদিন দেখিনি। স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকি, হাটা চলার মতো শক্তিটাও এক নিমিষে উধাও হয়ে গিয়েছিল যেন।পরম শ্রদ্ধেয় বাউল হীরু শাহের সাথে সেই হতে পরিচয়।ওনার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত ছিল।
কি অপরাধ ছিল ঐ বাউলদের? জীবনে কোনোদিন কারো ক্ষতি করেনি ওরা, শুধু গান করাটা কি মানুষ খুন করার চাইতেও বেশী অপরাধের? সেদিন যেসব তথাকথিত ইসলামী মোল্লারা নিরাপরাধ বাউলদের বিচার করেছিল, মাথা নেড়া করে দিয়েছিল সেইসব কুলাঙ্গারদের ঔরসে নিব্রাস আর ঐশীদের মত কুসন্তানদের বারবার জন্ম হওয়াটাইতো স্বাভাবিক।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৩২