somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ রঙ ও আলো

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুতপা পাশের রুম থেকে দৌড়ে এসে বলল, বাবা, বল তো এটা কি রঙ? বলেই সে তার অংকন খাতাটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। দেখলাম, তাতে ওর মা’র এঁকে দেওয়া একটা গোলাপ ফুলের ছবিতে মোমের রঙ পেনসিল দিয়ে রঙ করেছে সে। আর ওর মুখ্য উদ্দেশেই হল আমাকে সেটা দেখানো।

আমি সেটা না বোঝার ভান করে বললাম, কেন মা, এটা লাল রঙ!
না, বাবা এটা নীল রঙ!
আমি বললাম, না মা, এটা লাল রঙ!
না, এটা কমলা রঙ!
আমি বললাম, আচ্ছা! তোমার কথাই ঠিক!
এই পর্যায়ে আমি ওর কাছে হার মেনে নিলাম। কারণ আমি হার না মানা পর্যন্ত সে একটার পর একটা প্রশ্ন করবে আর কথা ঘুরাতে থাকবে। এটাই ওর খেলা। ও এই খেলায় ততক্ষণ পর্যন্ত আনন্দ পায় যতক্ষণ পর্যন্ত আমি ওর কাছে হার না মানি।

আমি এত সহজে হার মেনে নেওয়ায়, ও কিছুটা নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে দেখে আমি ওকে কাছে টেনে এনে জিজ্ঞাসা করলাম, কি এঁকেছো মা, দেখি?
বাবা, ফুল! গোলাপ ফুল। মিস বলেছে ছুটিতে প্রতিদিন একটা করে ফুল আঁকতে। ওর মুখে কথার খই ফুটলো।


তোমার ফুলটা খুব সুন্দর হয়েছে, মা! এটা তুমি এঁকেছো?
না বাবা, মা’মনি পেনসিল দিয়ে এঁকে দিয়েছে আর আমি রঙ করেছি।
আচ্ছা! আমি তোমার ফুলে পাতা একে দেই, কেমন? তুমি সেটাতে সবুজ রঙ দিবে। ঠিক আছে? বলেই খাতাটা নিয়ে গোলাপটার দুটো পাপড়ি এঁকে দিয়ে ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, এবার সুন্দর করে আঁকো।
উৎসাহের সাথে ও পেনসিল বক্স খুলে, সব পেনসিল বিছানায় ছড়িয়ে দিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, কোনটা সবুজ রঙের পেনসিল? বাবা, তুমি দেখিয়ে দাও!


এটাও ওর আর একটা খেলা, আমি জানি ও সবুজ রঙের পেনসিল চেনে। মোমের রঙ পেনসিলগুলো কিনে এনে প্রথমেই ওকে আমি রঙগুলো চেনাতে শুরু করি, যখন ওর বয়স ছিল মাত্র এক বছর। এটা ছিল ওর জন্মদিনের প্রথম উপহার আমার পক্ষ থেকে। আমার এই কাণ্ড দেখে ওর মা হাসতো, জুটতো দুই একটা মুখ ঝামটাও মাঝেমধ্যে। তারপরেরও আমি এটা নিয়ে মেয়ের সাথে লেগে থাকতাম।
আমি সবুজ পেনসিলটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, এটা দিয়ে পাতাগুলো রঙ করো তো মা!
পেনসিল হাতে নিয়েই, জিজ্ঞাসা করলো, সবুজ রঙ দিয়ে পাতা আঁকতে হয় বাবা?
আমি বললাম, হ্যাঁ মা!
কেন?
পাতার রঙ সবুজ তাই। বলেই, জানালার পর্দা তুলে বাইরের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম, দেখো, গাছগুলো দেখো, সব পাতার রঙ সবুজ। তাই তুমি পাতার রঙ সবুজ দিবে।
তাহলে কি ফুলের রঙ সব লাল দেবো? সব ফুল কি লাল?
এবার আমি কিছুটা বিপদে পড়লাম, বললাম, না মা! সব ফুলের রঙ লাল না, তবে কিছু কিছু ফুলের রঙ লাল।
তাহলে গোলাপ ফুলের রঙ লাল। তাই না বাবা?

আবারো প্যাঁচে পড়ে বললাম, না মা, সব গোলাপই লাল না, আরও অনেক রঙের গোলাপ আছে। সাদা রঙের গোলাপ আছে, গোলাপি রঙের গোলাপ আছে, নীল রঙের গোলাপ আছে, এমনকি কালো রঙের গোলাপও আছে।
উম! তাহলে “রঙ” কি বাবা? এবার মোক্ষম প্রশ্নটা করলো ও।

বলতে চাইলাম, রঙ হচ্ছে এক প্রকার প্রতিফলিত আলো, যা কোন বস্তুতে “সাদা আলো” পড়ার পর তা থেকে শোষিত হওয়ার পর, বাকি যে আলোটা ওই বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়। পাবলো পিকাসোর ভাষায়, “Colours, Like features, follow the changes of the emotions” মোদ্দা কথায়, রঙ হলো- অনুভূতির পরিবর্তনের খেলা অথবা প্রতিফলিত হয়ে যে আলো আমাদের চোখে পড়ে।


তা না বলে, ওর বোঝার সুবিধার্থে বললাম, রঙ হচ্ছে আলোর খেলা, ধর তুমি টিভিতে যে রঙ দেখছো, তা আসলে তুমি টিভি থেকে বের হয়ে আসা রঙ বেরঙের আলো দেখছো।
বলেই বুঝলাম, এত শক্ত কথা ও বুজছে না। ওর চার বছর বয়সী মাথা’র এটা বোঝারও কথা না! কিন্তু শক্ত প্রশ্নটা সে আমাকে করে ফেলেছে। যার ঠিকঠাক উত্তর দেওয়া আমার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না। তাই গুগলের সাহায্য নিলাম।


ঘাঁটাঘাঁটি করে পেলাম মহা বিজ্ঞানী নিউটনের ১৬৬৬ সালে ডিজাইন কৃত “কালার হুইল” যাতে আছে ১২ ধরণের রঙের নমুনা। যা প্রাইমারি, সেকেন্ডারি আর তৃতীয় – এই তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। এথেকে যা বুঝলাম, তা হল, রঙ আসলে আলোর খেলা এবং তরঙ্গের মিশ্রণ। আমরা যা দেখি তা হল সেই তরঙ্গের প্রতিফলিত রূপ।


রঙের মধ্যে আবার বিভাজনও আছে। প্রাইমারি রঙ হচ্ছে মূলত: তিনটি- লাল, হলুদ ও নীল। যা অন্য কোন রঙের সাথে মিশ্রিত হয়নি। আর এই তিন রঙের যে কোন দুটির মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে সেকেন্ডারি রঙ- সবুজ, বেগুনী ও কমলা। যেমন হলুদ আর নীলের মিশ্রণে তৈরী হচ্ছে সবুজ। নীল আর লালের মিশ্রণে হচ্ছে বেগুনী। আর লাল আর হলুদের মিশ্রণে তৈরি হয় কমলা। বাকি তৃতীয় রঙ হলো- প্রাইমারি আর সেকেন্ডারি রঙের মিশ্রণ।
অপরদিকে, সব রঙের মিশ্রিত রূপ হল সাদা। আর কালো? এর পুড়োটাই রঙের অনুপস্থিতি। অর্থাৎ কালো কোন রঙ নয়। সহজভাবে বলতে গেলে বুঝি, যে বস্তু সাদা আলোর পুড়োটাই শোষণ করে তাকেই কালো দেখায় বা আমরা তাকে কালো বলি।

আমি যখন গুগল ও চিলড্রেন’স এনসাইক্লোপিডিয়া বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করছিলাম, আমার একরত্তি মেয়ের মোক্ষম প্রশ্নের উত্তম জবাব দেওয়ার জন্য- ও তখন আমার পাশে বসে কুটস কুটস শব্দ করে মুগডাল ভাজা খাচ্ছিল। আর সেইসাথে আমাকে অর্ডার করছিল প্যাকেট থেকে ডালভাজা ওর টুক্কুস খানি হাতের তালুতে অল্প অল্প করে ঢেলে দেওয়ার জন্য। ঢালতে যেয়ে এক-দুইটা ডাল বিছানায় পড়ে গেলেই ওর তোতলা উচ্চারণে সাথে সাথেই ধমকও খাচ্ছিলাম, “বাবা তুমি ঢালতেও পালো না, জানো না, বিছানায় পিপ্পা উঠবে”! শুনে আমি শুধুই হাসি, ও যেন আমার সাক্ষাৎ মা!
মেয়ের ডালভাজা খাওয়া শেষ হতেই, আমি প্রস্তুত হয়ে বললাম, এবার তোমার রঙ খাতাটা বের করো তো মা? আসো, আজ তোমার সাথেই অফলাইনে ব্লগিং করি।

সে ঝটপট খাতাটা বের করলো, আমি গোলাপ ফুল দেখিয়ে বললাম, মা, এই যে ফুলের লাল অংশটা দেখছো না? এটা হলো- তুমি লাল আলো দেখছো, আর পাতার সবুজ রঙটা হলো- সবুজ আলো দেখছো। আর “রঙ” হচ্ছে আসলে “আলো”! বুঝেছো এবার?
হ্যাঁ বাবা! তাহলে “আলো” কি বাবা?
ইস আবার প্রশ্ন !!!
এর চেয়ে তো অনলাইনেই ভাল ছিলাম, ওখানে কেউ এত জটিল প্রশ্ন করে না!

১৪/১০/২০১২, রাতঃ ৮.০০
ছবি সুত্রঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৪
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×