somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাজার অর্থনীতি, যেখানে সেক্স, হিন্দি ছবি আর বিধাতা ভাল দামে বিকোচ্ছে!

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজও গোহাটিতে প্রচণ্ড শীত পড়েছে। যদিও শীত আমার ভীষণ প্রিয়, তারপরেও বাইরে বের হতে ভয় ভয় করছে। খুব ভোরেই, আমাদের নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়ার ইম্পোরটার, নিজাম ভাই; গেছেন আমাদের বসের সাথে দেখা করতে। শীতের পোশাকে প্যাকেট হয়ে বের হয়েই তিনি আবার চটজলদি রুমে ফিরে এসেছিলেন আরও শীতের কাপড় নিতে। তার কাছ থেকেই জানলাম বাইরের শীতের ভয়াভহতা সম্পর্কে। তবে রুমে আমার তেমন শীত লাগছে না। বেডে একা একা শুয়ে আমার স্বভাব মতো টিভি রিমোটের বাটন অনবরত টিপতে থাকলাম। কোন চ্যানেলই তেমন পছন্দ হচ্ছে না। এক পর্যায়ে, একটা মিউজিক চ্যানেলে এসে থিতু হলাম।

ভোর থেকেই হোটেল রুমের ওয়াল টিভিতে মিউজিক চ্যানেলটিতে একনাগাড়ে হিন্দি গান দেখে চলেছি। অনেকদিন পর টিভিতে এত সময় ধরে হিন্দি গান দেখছি। “গান দেখছি” কথাটা আসলে কেমন যেন শোনাচ্ছে? আসলে কথাটা হওয়া উচিত ছিল টিভিতে হিন্দি ছবির “গান শুনছি এবং এর পিকচারাইজেশন দেখছি”; কিন্তু তা বলতে পারছি না, কারণ বম্বে ফিল্মের হিন্দি গান, আজকাল আর শ্রোতাকে শোনানোর জন্য তৈরী করা হয় না, তৈরি হয় দর্শকদের দেখানোর জন্য।

ইতিমধ্যেই একনাগাড়ে প্রায় “শ” খানেক লেটেস্ট হিন্দি ছবির গান দেখে ফেলেছি। সব গান একই উদ্দেশ্য নিয়ে বানানো হয়েছে আর তা হল সেক্স, বাণিজ্য আর টাকা। ভারতীয় সংস্কৃতি এখানে সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত। সব গানেই দর্শককে তা শোনানোর চাইতে দেখানোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মেয়েরা এখানে সম্পূর্ণ পণ্য-রূপে উপস্থাপিত হয়েছে এবং তা সম্ভবত ভাল দামে বিকচ্ছেও। না হলে, এত এত মেয়ে কোথা থেকে আসছে? আগে যেখানে একটা গানে একজন নায়িকা হলেই চলত, আজ সেখানে একটা গানে নায়িকার পাশাপাশি এক্সট্রা নামধারী কমপক্ষে ১০ জন মেয়ের উপস্থিতি রয়েছে। যারা নায়িকাদের চেয়েও বেশী উলঙ্গ, এক্সপ্রেশন ও অঙ্গভঙ্গিতেও চরম অশ্লীল। হয়ত ছবির প্রযোজকরা নায়িকাদের চেয়েও কমমূল্যে এদের ক্যামেরার সামনে কাপড় খোলাতে পারছে। আর পরিচালকরাও, শিল্প ভুলে, ছবি হিটের নেশায় ক্যামেরার ফ্রেমে এখন আর একটা মেয়েকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারছে না, হিটের জন্য তাদের চাই, আরও বেশি বেশি উলঙ্গ মেয়ে। যারা নায়িকাদের চেয়েও বেশী কিছু দিবে দর্শকদের! এখন একটা গানের শুটিঙে ১০ থেকে ২০ জন মেয়ে লাগছে, কাল হয়তবা ১০০ জন মেয়ে লাগবে, তারপর কি হবে? বিগ বসের মত সানি লিয়ন’রা কি সরাসরি সালমানদের নিয়ে নেমে পড়বে? আর পূজা ভাট’রা কি নিবে তা পরিচালনার দায়িত্ব? এতে অবশ্য টাকা বিনিয়োগের লোকের অভাব হবে না। ভারতীয় সংস্কৃতি রক্ষা আর দেশে ধর্ষণকাণ্ড ঠেকাতে না পারলেও “গণতন্ত্র” এ খাতে বিনিয়োগের প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য তো রীতিমত এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে! আফটার অল শরীর দেখানটাও এখন মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর শিল্পের পর্যায়ে পরে!

গানগুলো দেখে মনে হচ্ছে- কারিনা, ক্যাটরিনা, জেরিন, মালাইকা, বিদ্যা বালান’রা আজ শুধুই পণ্য। সবাই যেন কাপড় খোলায় ব্যস্ত। এক্ষেত্রে ব্যাপক কম্পিটিশন। কে কার চেয়ে বেশি খুলতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। প্রথমে ছিল শাড়ি খোলার প্রতিযোগিতা, তারপর পেটিকোট আর ব্লাউজ, এখন অবশিষ্ট আছে প্যান্টি আর ব্রা। আশা করা যায়, আঁচিরেই এরা আরও নিচে নেমে যাবে! আর নাচ, সেখান থেকে "শিল্প" সেই কবেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ক্যাটরিনা’রা এখন জানে শুধু পিটি টাইপের এক্সারসাইজ আর অর্ধনগ্ন স্তনযুগল ঝাঁকানো! ইঙ্গিত স্পষ্ট, পারলে ঝাঁকুনি থামাও !!

সিনিয়র নায়িকারা যখন এইসব করতে থাকে, তখন জুনিয়রদের বা উঠতি নায়িকাদের সামনে বিকল্প বলে কিছু থাকে না। পরিচালকরাও তাদের কাছে আরও বেশি কিছু আশা করেন! উঠতিদের ক্যারিয়ারে আরও প্লাস প্লাস যোগ করতে বাধ্য বা উৎসাহিত করেন তারা! পুনম পান্ডে আর পাওলী দাম যার উদাহরণ !!

মজার বিষয় হচ্ছে, কাপড় কিন্তু এখন শুধু মেয়েরাই খুলছে না, ছেলেরাও মানে নায়করাও খুলছে। সালমান খান এর নাটের গুরু। ওর দেখা দেখি জন আব্রাহাম, অজয় দেবঘন, শাহরুখ খান’রাও আজ কাপড় খুলছে। নিজেদের উলঙ্গ শরীর নিয়ে ক্যামেরার সামনে উপস্থাপন করছে। এখানেও বাণিজ্য! ছেলেরা যেমন মেয়েদের নগ্ন শরীর দেখে মনে মনে পুলকিত হয়! মেয়েরাও নিশ্চয় পুরুষের নগ্ন শরীর দেখে একই রকম অনুভব করে! তার মানে দাঁড়াচ্ছে, এই সেক্টরেও গানের তথা ছবির ভাল বাজার আছে। হয়ত “গে” রাও পুরুষের শরীর দেখতে পছন্দ করে! পৃথিবীতে তো এদের সংখ্যাও আজ কম না! অর্থাৎ এখানেও একটা বড় বাজারের উপস্থিতি রয়েছে।

বর্তমানে বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন আর একটা স্টাইল এখানে শুরু হয়েছে, আর তা হল, ছবিতে নানা কুকীর্তি করে নায়ক-নায়িকারা ফুল-ফলের-উপঢৌকনের ডালি নিয়ে হাজির হচ্ছে বিভিন্ন মন্দির-দরগায়। সৃষ্টিকর্তার কাছে ওদের চাওয়া একটাই, মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবিটি যেন বক্স অফিসের চার্টে সবার উপরে থাকে। এদের পাল্লায় পড়ে আর সবকিছু জেনেশুনে সৃষ্টিকর্তাও বোধ হয় আছেন বড় বিপদে! এর অবশ্য আরো একটি উদ্দেশ্য আছে- আর সেটা হল, “সাধারণ মানুষকে এই বলে বোঝানো যে, আমরা যখন তখন কাপড় খুললেও কি হবে? আসলে দ্যাখো! আমরা কত ধার্মিক!” অর্থাৎ এখানেও প্রচার ও বাজারই মূলত টার্গেট ওদের! ধর্ম, উপাসনা এগুলো ব্যবহার্য উপাদান ছাড়া আর কিছু নয় ওদের কাছে! এটা একটা ভাল "সেলস এন্ড মার্কেটিং" টুলস!

আমার ধারণা, এসবের মুলে রয়েছে বাজার অর্থনীতির নীতি-হীন বেড়ে চলা। আজ সবকিছুই বিক্রয়যোগ্য পণ্য। এখানে সব সময় খোঁজা হচ্ছে নতুন বাজার আর তার জন্য নতুন পণ্য। কে না জানে, নতুন বাজার মানেই পণ্যের বিক্রয় প্রসারের সুযোগ। আর বিক্রয় মানেই রেভেনিউ বৃদ্ধি, ব্যবসায় ক্যাশ ইনফ্লো। সবকিছু মিলিয়ে এর একটাই অর্থ ও উদ্দেশ্য, আর সেটা হল- টাকা, টাকা আর শেষ পর্যন্ত টাকা! ক্যাপিটাল মার্কেটে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি!

দিল্লীতে ধর্ষিত মেয়েটিও আজ পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে! হয়তবা, ইতিমধ্যেই বম্বের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে(!) কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে, কার আগে কে এই ঘটনাটা নিয়ে ছবি বানাবে! আর কে হবে এর নায়ক-নায়িকা আর ভিলেন! আমি নিশ্চিত এই ছবি বক্স অফিসে সুপার হিট হবে, অভাব হবে না সিনেমা হল বোঝাই দর্শকেরও এবং তা থেকে ব্যবসায়ীরাও ব্যাপক মুনাফা বের করে নিবে! কিন্তু যে পিতা-মাতা তাদের মেয়ে হারিয়েছে, যে প্রেমিক তার ভালবাসার প্রেয়সীকে হারিয়েছে, যে ভাই তার বোনকে হারিয়েছে তাদের বেদনা এতে কমবে না, বরঞ্চ বেড়ে যাবে আরও বহুগুণ। আমার মনে হয় না, বাজার অর্থনীতি এইসব বিবেচনা করবে?

অতএব, আসুন বলি- জয় হোক বাজার অর্থনীতির! যেখানে সেক্স, হিন্দি ছবি আর বিধাতা ভাল দামে বিকোচ্ছে!

যতোসব ফালতু কায়কারবার !!!

০৮-০৯/০১/২০১৩

পুরনো লেখাঃ অন্য ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×