মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ২০০৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতাহার তৈরি করেছিল তা বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ পছন্দ করেছিল। ইশতেহারে আপনারা দিন বদলের কথা বলেছিলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছিলেন, আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলেছিলেন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছিলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলেন, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের কথা বলেছিলেন। আরও আনেক কথাই আপনারা বলেছিলেন যা এখানে লিখলাম না।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আপনি তো খালেদা জিয়ার মত কালো টাকা সাদা করেননি, আপনার পুত্র তো অশিক্ষিত চাঁদাবাজ নয়। তাহলে আপনার সরকার কেন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে এত দূরে সরে যাচ্ছে। ২৯ শে ডিসেম্বর ২০০৮ এর নির্বাচনের ফলাফলে যখন দেখা গেল আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী, তখনই আপনি ক্ষমতা গ্রহণ করার আগেই এমনিতেই দ্রব্রমূল্য কমতে শুরু করল। কারণ মজুদদারদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। ১৯৯৬-২০০১ এর আওয়ামী লীগের শাসনামলে কঠোর হস্তে মজুদদারী দমন করা হয়েছিল।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আপনি মন্ত্রীসভা গঠনের পরপরই মন্ত্রীদের চেহারা দেখেই হুহু করে দ্রব্যমূল্য বাড়তে শুরু করল। যারা কখনো আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেনি তারা শুধু এমপিই হল না, কেউ কেউ মন্ত্রীও হল। তারা মনে করল "আমি কি হনু রে"। দেশের ভালমন্দের দিকে এদের কোন খেয়াল নেই। এদর খেয়াল নিজেদেরকে জাহির করা, দুর্নীতির মাধ্যমে আখের গোছানো। আপনার এক প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর নিজের এলাকায় শত শত তোরণের মাধ্যমে সংবর্ধনা নিয়েছেন। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী তোরণগুলি তৈরি করতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন তৈরি করা যায়।
জাহাজভাঙ্গা শিল্পের জন্য শিপইয়ার্ড তৈরির জন্য উপকূল অন্চলের হাজার হাজার গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে সরকারী দলের লোকজন। পুলিশের সামনেই এ কান্ড ঘটেছে। গাছ নিধনকারীদের কিছুই হয়নি।
ছাত্রলীগের, যুবলীগের সন্ত্রাসের কথা আর কি বলব। সারা দেশে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। কিছু উচ্ছৃংখল ছেলের ইভটিজিংয়ের উৎপাতে অনেক মেয়ে স্কুলে যেতে পারে না। কোথাও ব্যবসায়ী এবং ঠিকাদারেরা শান্তিতে টেন্ডার ড্রপ করতে পারে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন কোনই ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তার বিতর্কিত মন্তব্যে সরকারের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তিনি মাঝে মাঝে লোক দেখাতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হুংকার ছাড়লেও, কাজের বেলায় ঠন ঠন। তার আচরণে মনে হয় না তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী। তিনি আলতাফ হোসেন বা লুৎফুজ্জামান বাবরের চেয়ে ভাল কিছু নন। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের চেয়েও খারাপ। তিনি আসলে কোন গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন? তিনি সংসদে সন্ত্রাসীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছিলেন তাতে মৃত ব্যক্তির নামও ছিল। আবার অনেক দাগী সন্ত্রাসীর নাম ছিল না। কিছু ছিসকে চোরের নামও তালিকায় ছিল। পুলিশের আইজিসহ পুলিশ বিভাগের কেউ এই তালিকা সম্পর্কে কেউ জানতেন না। তাহলে কাদের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র ,মন্ত্রালয় এই তালিকা তৈরি করেছিল? তাদের উদ্দেশ্য কি এই সরকারকে বিতর্কিত করে অজনপ্রিয় করে তোলা? ডিএনএ টেস্ট ল্যাবের জন্য দেওয়া জাপানের ২৫ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে। কাদের অযোগ্যতায়। এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ দেওয়া যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি জানি আপনি দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালবাসেন। আপনাকে কালো টাকা সাদা করতে হয়নি। আপনার পুত্র লেখাপড়া শিখেছেন। শুনেছি তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে পরোক্ষভাবে কাজ করছেন। তিনি চাঁদাবাজ নন, কখনো চাঁদাবাজ হবেন বলেও মনে হয় না। তাহলে সমস্যা কোথায়? আমরা দেখেছি আপনি দেশ পরিচালনায় আগের চেয়ে দক্ষতা অর্জন করেছেন। আপনি নিজেই অনেক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেদিন আপনি ঘড়ির কাঁটা এক ঘন্টা এগিয়ে আনার এবং ৫২০০০ বৈদ্যুতিক খুঁটি কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করলেন, সেদিন খুব আশাবাদী হয়েছিলাম। আপনি দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু আপনার কোন কোন মন্ত্রী এবং অধিকাংশ আমলার কারণে আপনার সরকারের সাফল্য খুবই সামান্য।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সরকারকে অজনপ্রিয় করার জন্য সব আয়োজন সঠিকভাবে এগিয়ে চলেছে। যেসব কারণে গত নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা আপনার দলকে ভোট দিয়েছিল তার অন্যতম যুদ্ধাপরাধের বিচার। সেই বিচারের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। উপরন্তু বিচার শুরু হওয়ার আগেই বিচার প্রক্রিয়াকে আপনার মন্ত্রীরা বিতর্কিত করে তুলেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রী নিজেদের ইচ্ছেমত এই বিচার সম্পর্কে আবোল তাবোল বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে যে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হল তিনি ছিলেন চরম বিতর্কিত। ৭১ সালে যারা দেশের ভেতরে সরকারি চাকরি করতেন তারা ছিলেন চরম বিপদের মধ্যে। সেই বিপদ উপেক্ষা করে চাকরি ছেড়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু জনাব মতিন অক্টোবর, ৭১ এ পাকিস্তান সরকারের অধীনে শপথ নিয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। উপরন্তু তিনি ছাত্রসংঘের সদস্য ছিলেন যা তার সহপাঠিদের কথায় প্রমাণিত হয়েছে।আপনার আইন প্রতিমন্ত্রী এরকম একজন ব্যক্তিকে তদন্ত দলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা অবাক হয়ে দেখলাম আপনার সরকার তরুণদের জনপ্রিয়তম অয়েবসাইটগুলির একটি ফেসবুক বন্ধ করে দিল। ফেসবুক শুধু তরুণরা ব্যবহার করে না। সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যারা কম্পিউটার ও ইনটারনেট ব্যবহার করে তাদের অধিকাংশ ফেসবুকের একাউন্ট হোল্ডার। যে শ্রেণীর ভোটার আপনার দলকে ক্ষমতায় বসিয়েছে তাদের কাছে আপনার সরকারকে অজনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় এবং ১০০% কার্যকর পদক্ষেপ। আমরা ব্লগাররা লক্ষ্য করছি, মূলত জামাত শিবিরের লোকেরা ফেসবুক বন্ধে খুব খুশি হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা আশা করব আপনি ঘড়ির কাঁটা বা বৈদ্যুতিক খুঁটির বিষয়গুলির মত ফেসবুক বন্ধের বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং এই জনপ্রিয় অয়েবসাইটটি খুলে দিয়ে আপনার সরকার ও দলের জনপ্রিয়তা পুণরুদ্ধার করবেন।