সবাইকে জানাই ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। নিজের অন্তরের পশুত্ত্বকে বিসর্জন দিয়ে আত্মসুদ্ধির মধ্যে আমরা সবাই যেন ঈদের আনন্দকে উপভোগ করতে পারি সে কামনা করি।
ঈদ এলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় সেটা আগেও বলেছি। আর কোরবানীর ঈদের তো পুরাই মাথা নষ্ট। এ বছরটা ঝামেলায় ঝামেলায় কেটে গেলো প্রায়। এ কারনে জয় কবির তো আমার নামই দিয়েছে “ঝামেলা বু”। ভাবছি কোরবানীর সময় একভাগ দিয়ে নতুন নামের আকিকা করবো কিনা।
অনেকদিন ধরেই কোন পোস্ট দিতে পারছিনা। কেন যেন লিখতে ইচ্ছে করেনা। রোজ ভাবি, কাল সকালেই একটা পোস্ট লিখে ফেলবো। কিন্তু কাজের বেলায় কিচ্ছু হচ্ছেনা। লিখি তো খাড়া বড়ি থোড় আর থোড় বড়ি খাড়া মার্কা আজাইড়া প্যাচাল। কিন্তু মনে মনে ভাবখানা যেন আমি মহিলা হুমায়ুন আহমেদ।
রান্নার মেয়ে এ মাস থেকে উধাও। যদিও তার অপুর্ব রান্না খাবার ভয়ে মাসের ২৫ দিনই আমি নিজেই খুন্তি নাড়তাম। তবুও তো সে কাঁটা-বাছা করে দিতো। এবার কি করি? শরীর মন ভালো না থাকলেও দশভুজা হতে হবে। কোরবানী হবার পর মাংস বিলি-ব্যাবস্থা করা, গোছানো, রান্না, সবই করতে হয়। এবার আমার বিচ্ছুরা আসবেনা। ওরা দাদার বাড়ী গিয়েছে আজ। দাদাবাড়ীতে যাওয়ার আনন্দে তাদের সে-কি উচ্ছাস, আনন্দ! দেখে মন ভরে গিয়েছে।
এ ঈদে আমি রান্নায় বেশী ঝামেলায় যাইনা। নাস্তা বানানোর দায়ীত্ব আমার ছোট জাএর। নতুন বছরে নিজের নতুন সংসারে যাবে, সে আনন্দে সে নাস্তা বানানোতে অনেক তৎপর।
ঈদের বিকেলে আমি একটি রান্না করি, সেটা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
বিফ/মাটন ফ্রাই
*********
উপকরনঃ চাকা মাংস আধ কেজি, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, জিরাগুড়ো ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুড়ো ২ চা-চামচ, গরম মসলা গুড়ো ১ চা-চামচ, সিরকা ২ টেবিল চামচ, সয়াসস ১ টেবিল চামচ, লবন ১ চা-চামচ, তেল- ভাজার জন্য। কর্ন ফ্লাওয়ার ৪ টেবিল চামচ। গোল মরিচের গুড়ো ১ চা-চামচ।
রন্ধন প্রনালীঃ চাকা মাংস চারকোনা করে পাতলা করে স্লাইস করে পাটার উপর রেখে পুতা দিয়ে একটা ছ্যাঁচা দিয়ে নিন। ভালো করে ধুয়ে চিপে পানি ঝরিয়ে একটা বাটিতে রাখুন। কর্ন ফ্লাওয়ার ও তেল ছাড়া বাকি মসলা দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে রেখে দিন ঘন্টা-খানিক। কর্ন ফ্লাওয়ার পানি দিয়ে ঘন গোলা করে নিন। কড়াইতে তেল গরম করে কর্ন ফ্লাওয়ারে একটি একটি করে মাংসের টুকরো চুবিয়ে লালচে করে ভেজে তুলুন। গরম গরম চা/কফির সাথে খেয়ে দেখুন। খুব ভালো লাগবে।
ঈদের পরদিন সকালে রুটি বা পরটার সাথে পায়া/নেহারী পরিবেশন করি। আগে মা-খালাকে দেখেছি পায়া রান্না করতে ৪/৫ দিন লাগতো। ৪/৫ রাত ভর পায়া চুলায় জ্বাল দেবার পর খাবার উপযুক্ত হতো সেটা। আমি নিজেও করেছি।
কিন্তু এখন আমি হইছি বুদ্ধিমতী। তাই ঈদের পরের দিন সকালেই পায়া পরিবেশন করতে পারি।
পায়া/নেহারী
*******
উপকরনঃ গরু/খাসির পায়ের হাড্ডি ছোট করে টুকরো করে নিবেন। যারা মাংস কাটে তাদের বললেই টুকরো করে দিবে। ১ কেজি পায়া, ১ টেবিল চামচ আদাবাটা, ১ টেবিল চামচ রসুন বাটা, মরিচ গুড়ো ১ চা-চামচ, হলুদ গুড়ো সামান্য, না দিলেও কিছু যায় আসেনা। জিরা গুড়ো ১ টেবিল চামচ, ২টা তেজপাতা, গোলমরিচ ১৫/২০টা, এলাচ ৫/৬টা ছেঁচে নিবেন, দারচিনি কয়েক টুকরো, তেল ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ টেবিল চামচ, আস্ত শুখনামরিচ ৩/৪টা। লবন স্বাদমত।
রন্ধন প্রনালীঃ পায়ার হাড্ডি ভাল করে ধুয়ে ৫ লিটারি বা এর চাইতে বড় প্রেসার কুকারে রাখুন। পেঁয়াজকুচি ও তেল ছাড়া বাকি সব মসলা দিয়ে দিন। এমন ভাবে পানি দিন যাতে হাড্ডিগুলো ঢেকে যায়। কুকারটি চুলায় বসিয়ে আগুন বাড়িয়ে দিন। ১টি সিটি বাজলে আগুন কমিয়ে দিন। এ ভাবে ৪/৫ ঘন্টা রাখবেন। অবশ্যই ২০/২৫ মিনিট পর পর কুকার খুলে পানির পরিমান দেখবেন। পানি কমে গেলেই পানি দিবেন। এবং নেড়ে দিবেন। নাহলে কিন্তু পানি শুখিয়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। তখন আমাকে ঝাড়ি দিবেন না। ৪/৫ ঘন্টা পর ঝোলটা দেখে নিবেন কতটা ঘন আপনি রাখতে চান সেটা আপনার রুচির উপর নির্ভর করে। একটা পাত্রে তেল গরম করে শুখনা মরিচ ও পেঁয়াজ ছেড়ে দিন। পেঁয়াজ লাল করে বেরেস্তা ভেজে পায়ার উপর তেল সহ ছেড়ে দিন। ব্যাস! তৈরী হয়ে গেলো মজাদার পায়া। চালের আটার রুটি, গমের আটার রুটি, পরটা দিয়ে পেট পুরে খেয়ে নিন।
ফটুক পরে দিমুনে। ঈদের দিন রাইন্ধা লই তাপ্পরে...।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:১৮