somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধুসর চিত্রাবলী (আমার ছেলেবেলা ৪)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাকুরীর খোঁজে মানিক কাকা ( আব্বার চাচাতো ভাই) আমাদের বাসায় এলেন। আমাদের আনন্দ দেখে কে! রাতে আমাদের দু ভাই বোনকে দুপাশে নিয়ে গল্প বলে ঘুম পাড়ানো, আমাদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, আমাদের দুষ্টুমি, আবদার মুখ বুজে সহ্য করা সবই ঐ কাকা করতেন। আব্বা, আম্মারও সুবিধা হয়েছিলো। আমাদেরকে কাকার জিম্মায় রেখে সিনেমায় যেতে পারতেন।
একদিন কাকা আমাদের দুজনকে নিয়ে কোনো মেলায় গিয়েছিলেন বোধহয়। মেলার কথা মনে নেই, তবে ভাইয়ার হাতে টেনিস বলের আকারে একটি বরইএর কথা মনে আছে। লোকাল বাসে করে ফিরছিলাম, দরজার পাশেই আমাদের সিট। বাসে বেশ ভীড় ছিলো। হঠাৎ একটি স্টপেজে বাস থামতেই হুড়মুড় করে অনেক লোকের নামা দেখে ভাইয়ার হাত ধরে আমিও নেমে গেলাম। বাস হুস করে একরাশ ধোঁয়া আমাদের নাকে-মুখে ছেড়ে চলে গেলো। তখন খেয়াল হলো- আরে! কাকা কই? ভাইয়া তো ভয়ে ভ্যাএএএএ করে রাগ দরবারী ধরলো। আমি সাহসে বুক বেধে বললাম, আরে! কাঁদিস কেনো? আমি আছি না? দরবারী বন্ধ হলেও তার রেশ রয়ে গেলো। সামনে তাকিয়ে দেখি জোনাকি সিনেমা হল। বুকে বল এলো। এটা তো আমার পরিচিত জায়গা। ভাইয়ার হাত ধরে টেনে সিনেমা হলের সামনে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে সিনেমার পোস্টার দেখতে লাগলাম। হঠাৎ আবার ভ্যাএ শুনে ফিরে তাকিয়ে দেখি মানিক কাকা হাফাচ্ছেন, আর ভাইয়া কাকার কোমর ধরে পেটে মুখ গুজে আছে। কিছু বোঝার আগেই কাকা এগিয়ে এসে আমার কান ধরলেন। :|

ভাইয়াকে স্কুলে ভর্তী করানো হবে। আমি তো ভেবেই পাইনা ইসকুল? এ আবার কি জিনিস? ভাইয়া একা সেই ইসকুল নামক আজব জায়গায় যাবে, আর আমি যাবোনা? শুরু হলো আমার ঘ্যানঘ্যান! আম্মা বললেন, " বাপী সব কিছু পড়তে পারে, লিখতে পারে, তুই কি পারিস"? সত্যিই ভাইয়া মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই গড়গড় করে বই পড়তে পারতো। কত্ত বই সে নিয়ে এসেছিলো। প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় ভাগ তো সে গুলে খেয়েছিলো। আমি তো সেসব শুনে শুনে মুখস্ত বলতে পারি। কিন্তু স্কুলে শুধু মুখস্ত বিদ্যায় হবেনা। তাই ভাইয়াকে ক্লাস থ্রীতে ভর্তী করানো হলো তেজগাঁ পলিটেকনিক হাই স্কুলে। আমি তখনই বুঝলাম, আমার আর বিদ্বান হওয়া হবেনা। আমি সারা জীবন মুক্ষু হয়েই থাকবো। :(
স্কুলে যাওয়ার সময় প্রতি দিন যে দৃশ্যের অবতারনা হতো তা আমায় অবাক করতো। প্রতিদিন সকালে আম্মা ভাইয়াকে পরিপাটি করে সাজিয়ে গুছিয়ে দিতেন। আর আব্বা ভাইয়াকে টেনে টেনে নিয়ে যেতেন। ভাইয়া পিছন দিকে আম্মার দিকে তাকিয়ে থাকতো, আর দু'জনের চোখ দিয়ে অবিরাম অশ্রু ঝরতো। আমি ভেবেই পেতামনা স্কুলে যেতে কান্না কেনো? স্কুল থেকে আসার সময় আচাঁর,হজমি, কৎবেল নিয়ে আসা কত আনন্দের! সেই আনন্দ আশ্রমে যেতে এতো কান্নাকাটি কেনো বাপু? আমি প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম, আমি যদি কখনো স্কুলে যাই তবে কিছুতেই কাঁদবোনা। পরবর্তীতে সে প্রতিজ্ঞা আমি ঠিকই রেখেছিলাম। :)

আমাকে কুকুর আঁচড়ে দিয়েছিলো সে ঘটনা আগে অন্য পোস্টে উল্লেখ করায় এখানে আর লিখলাম না। ঈদের কথা মনে আছে। ভোর বেলায় আব্বা আমাদের ভাই-বোনকে গোসল করিয়ে দিতেন। আম্মা কাপড় পড়িয়ে আতর মাখিয়ে দেয়ার পর আমরা দুধ-সেমাই খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম। ঈদের দিনের আর কিছু মনে নেই, শুধু মনে আছে ঈদের জামাতে সবাই যখন সিজদায় যেতো আমি তখন সটান খাড়া হয়ে ঢেউএর মতো সেজদারত জনসমুদ্র দেখতাম। কেমন করে, কিভাবে আমাদের মনিপুরিপাড়া ছাড়তে হলো। আমরা নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়ে চলে গেলাম ইন্দিরা রোডের ভাড়া বাসায়। চারিদিকে যুদ্ধের দামামা। আমিও মাটি দিয়ে হেলিকপ্টার বানিয়ে দোপাটি ফুল দিয়ে সাজাতাম।
বাইরে যাওয়ার উপর কঠিন নিষেধ্বাজ্ঞা জারী হলো। কিন্তু সেই নিষেধ্বাজ্ঞা কি আর আমি মানি? চেয়ারের উপর উঠে দরজার ছিটকিনি খুলে বাইরে বেরিয়ে যেতাম প্রায় রোজই। ফলস্বরুপ, আম্মার হাতের ধোলাই! যেটা আর আমাকে মোটেই বিচলিত বা কষ্ট দিতোনা। সেটাকে আমার প্রাপ্য বলেই ধরে নিয়েছিলাম। আব্বা ঘরে ফিরলে আবোল তাবোল অনেক গল্প করতাম, যেমন-- ই--ইয়া বড় একটা প্লেন আমাদের বাসার উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে বুম বুম করে বোমা ফেল্লো। ফলশ্রুতি-- 'আমার নামকরন করা হলো " আকাশবাণী"। আমি এর মানে না বুঝেই নতুন নাম পেয়ে খুশীতে বাগবাগ! বড় হয়ে বুঝেছি এ নামের মাজেজা! X((
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×