ঘটনাটি কিশোরগঞ্জ জেলার
হালিমা খাতুন যখন ছোট্ট ছিলেন, তখন একদিন স্কুলে যাবার সময় এক অশরিরী আক্রমণ হয় উনার উপর।
যথারীতি হুজুর আলেম মাওলানা সাহেবদের তদবির চললো। তাতে করে জানা গেলো, ছোট্ট হালিমা জ্বিনদের কাজের জায়গার উপর দিয়ে চলাফেরা করে তাদের অসুবিধা করেছিল। তাই তারা হালিমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
ঐ ছিলো শুরু। পরবর্তি বিভিন্ন সময়ে জীবনে বহুবার হালিমা খাতুন তাদের দ্বারা এরকম অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। সংসার জীবনেও।
অবশেষে একবার উনাকে তারা নিজেদের কাছেই নিয়ে রেখে দিলো।
১৯৭৭ সাল, যখন হালিমা খাতুন প্রৌঢ়া, একদিন তিনি নিজ বাড়ি থেকে উধাউ হয়ে গেলেন।
চারদিকে খুঁজা খুঁজি চলছে... কিন্তু কোত্থাও নেই তার খোঁজ !
পরিবারের সকলে মিলে বিভিন্ন পন্থায় চেষ্টা চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে হুজুরদের তদবিরে উত্তর মিলল-
ভদ্র মহিলা কতিপয় জ্বিনদের হেফাজতে রয়েছেন।
নানা প্রকার আচার অনুষ্ঠান করে রোগিণীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলল।
একদিন ঘরের সিলিং এর উপর বাড়ির কেউ একজন ভারি কিছু একটার অস্তিত্ব উপলব্ধি করলেন। বিষয়টি সকলে মিলে উদ্ঘাটন করতে গেলেই বেরিয়ে পরলো-
হালিমা খাতুন কে "তারা" এখানে এই সিলিং এর উপর রেখে গিয়েছে!
এভাবে উনাকে ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ির মধ্যে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরী হল। আর শুরু হল দিন রাত পাহারার ব্যাবস্থা।
রুগিনীর অবস্থা সঙ্গিন। দিন রাত পরিবারের কেউ না কেউ পাশে থাকেন। যতোটা না সেবার জন্য, তার চেয়ে বেশি সাবধানতা, ভয়। যদি আবার কিছু ঘটে!
অনুপস্থিতির এই দিন গুলোতে রুগিনী কোথায় ছিলেন, কীভাবে ছিলেন সেই সম্পর্কে কিছু কথা জানালেন।
জিনেরা তাদের বাচ্চাদের কুর্আন পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছিলো। তিনি অনুরোধ করেছিলেন তাদের কাছে, যেন একটিবার তাঁর সদ্যোজাত প্রথম নাতিকে দেখতে দেয়া হয়, পরিবারের কাছে যেনো তাকে ফিরতে দেয়া হয়।
যাইহোক, পাহারার ভেতর দিনরাত কাটছিল।
একরাতে রুগিনীর বৃদ্ধ বাবা মা রইলেন পাশে। ফজরের ওয়াক্ত হলে তাঁর বাবা নামাজ পড়তে গেলেন, তিনি ফিরে আসলে মা যাবেন নামাজে।
বাবা চলে যাবার পর মা মেয়ের পাশে, সারা রাতের শেষে ভোরে একটু ঝিমুনি এসে গেলো। একটু তন্দ্রা মতন।
হঠাৎ একটা ডানা ঝাপটানোর মতো আওয়াজে ঘোর কেটে গেলো মায়ের!
হুঁশ ফিরে দেখেন, বিছানা খালি !
আবারো শুরু হলো তদবির। কিন্তু এবার আর আগের বারের মত ফিরিয়ে দেয়া হলো না হালিমা খাতুনকে। এরপর আর কোনোদিন পরিবার তাকে ফিরে পায়নি।
হালিমা খাতুনের দেবর ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের vice চ্যান্সেলর (নামটা আমার জানা নাই), তিনি এগ্রি ভার্সিটি এরিয়াতেই থাকতেন। সেখানেই বেশ কয়েকমাস পর একদিন ভোর বেলা উনার কাছে কিছু শুভ্র পোশাকধারী দীর্ঘকায় লোক আসলো। এসে সালাম দিয়ে বললো-
আপনার ভাবি, আউয়াল সাহেবের wife মারা গেছেন। উনাকে দাফন করা হয়েছে।
এইটুকু বলেই তারা চলে গেলো।
শেষ মুহূর্তে পরিবারের কেউ কাছে ছিলেন না, দাফন টুকুও পরিবারের কাছে হয়নি, কিন্তু উনার কবরটা দেখার একটা আকাঙ্ক্ষা ছিলো উনার স্বামীর।
একদিন ফজরের নামাজ শেষে মোরাকাবা করছিলেন আউয়াল সাহেব। তারি মাঝে তিনি দেখতে পেলেন, এক সুসজ্জিত ফুলের বাগান , খুব সুন্দর একটা জায়গা। সেখানে একটি নতুন কবর। দেখা মাত্রই ধ্যান টুটে গেল...
Note : ঘটনাটি আমার খুব নিকটাত্মীয়ের পরিবারে ঘটেছিল। এই কাহিনীর সকলেই আমার relative, শুধু জ্বিনরা ছাড়া।