somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপমানবী

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ধরমর করে উঠে পড়লাম ঘুম থেকে। আমার সেলফোনে কল এসেছে একটা। চোখের সামনে সেলফোনের স্ক্রিনটা উচু করে ধরতেই দেখলাম ঋতুর কল।

-‘হ্যালো?’

-‘কোথায় তুমি?’

-‘রুমে। ঘুমাচ্ছিলাম।’

-‘সন্ধ্যার সময় ঘুম?’

-‘না, মানে একটু ...’

-‘চুপচাপ আমার বাসায় চলে এসো। এখনই।’

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো ঋতু।

মাথাটা ঝিম ঝিম করছে আমার। তবুও অনিচ্ছা থাকলেও বেড়িয়ে পড়লাম আমি।

*******

সমস্ত ঘর অন্ধকার হয়ে আছে। লোডশেডিং হয়নি, জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়। আসলে ইচ্ছে করেই সমস্ত লাইট অফ করে রাখা হয়েছে।

আমার পাশে শুয়ে আছে ঋতু। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। ফর্সা শরীরটা ঘামে ভেজা। শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমারও একই অবস্থা!

কিভাবে কি হয়ে গেলো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। রুমে ঢুকতেই আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো মেয়েটা। তারপর মেতে উঠে আদিম এক খেলাতে। কেমন এক ঘোরের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম আমি নিজেও। না পেরেছি বাঁধা দিতে, না পেরেছি কিছু বলতে। নিজেকে ওর হাতে তুলে দেয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না আমার।

বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল এভাবেই। না আমি কিছু বলছি, না ঋতু। আসলে কি বলবো বুঝতে পারছি না। গুলিয়ে ফেলেছি সব। এভাবে এমন কিছু হয়ে যাবে, তা আমার চিন্তার বাইরে ছিল। নিজেকে এখন ফালতু বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই এখন। যা হবার হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।

‘ঋতু,’ নিজের অজান্তেই বলে উঠি আমি, ‘এটা কি হলো?’

‘যা হবার তাই,’ মাথাটা একটু উচু করে জবাব দিলো মেয়েটা, ‘এখন এটা নিয়ে হা-হুতাশ করে লাভ নেই।’

‘কিন্তু,’ ধীরে ধীরে বললাম আমি, ‘রুদ্র জানতে পারলে কি হবে ভেবে দেখেছো?’

‘জানবে না ও,’ শান্তকন্ঠে জবাব দিল ও, ‘ওকে নিয়ে আর না ভাবলেও চলবে।’

‘কিন্তু,’ ক্লান্তগলায় বলে উঠলাম আমি, ‘কাজটা ঠিক হয়নি। রুদ্র আমার বন্ধু। আমি কিনা ওরই গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ......’

এমনসময় তীক্ষ্ণসুরে ফোনটা বেজে উঠলো। হাতড়ে মেঝে থেকে প্যান্টটা তুলে তার পকেটে হাত দিলাম আমি। ফোনের স্ক্রিনটা চোখের সামনে তুলতেই দেখতে পেলাম উদ্দ্যান কল করেছে। রিসিভ করলাম আমি।

-‘হ্যালো,’

-‘আবে শালা কই তুই?’

-‘আছি এক জায়গায়।’

‘তাড়াতাড়ি রুদ্রের বাসায় আয়,’ ব্যগ্রকন্ঠে বলে উঠে উদ্দ্যান, ‘কাহিনী হইয়া গেছে।’

‘কি কাহিনী?’ কিছুটা চমকে উঠি আমি।

‘রুদ্র,’ কিছুটা ফুঁপিয়ে উঠে ছেলেটা, ‘রুদ্র ইজ ডেড।’

‘হোয়াট?’ বিস্ময়ের চোটে চেঁচিয়ে উঠি আমি, ‘কখন? কিভাবে?’

‘জানি না,’ দ্রুত বলে যায় ও, ‘বিকেলে রুদ্রের মায়ের ফোন পেয়ে ওদের বাসায় এসে দেখি কে বা কারা যেন মেরে রেখে গেছে ওকে। একেবারেই খারাপ অবস্থা। দেখে মনে হয় কেউ যেন দানবের মতো তান্ডব চালিয়েছে ওর উপর।’

‘বলিস কি?’ আরো অবাক হয়ে যাই আমি ওর কথায়।

‘হ মামা,’ একই ভঙ্গিতে বলে উঠে উদ্দ্যান, ‘তাড়াতাড়ি আয়।’

ফোনটা কেটে যেতেই ঋতুর দিকে তাকাই আমি। মেয়েটা মৃদু হাসছে। মাথা নাড়াই আমি। এখন ওকে রুদ্রের মৃত্যুর খবরটা দিতে হবে। ভাবতেই খারাপ লাগছে!



আজকে শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। অবশ্য আমরা প্রায় গত তেরোদিন ধরে ছুটিই কাটিয়েছি। সেমিষ্টার ফাইনাল শেষ হওয়ার পর বাড়ি গিয়েছিলাম, গতকাল রাতে এসেছি আবার উত্তরা।

আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠতেই রুদ্রের ফোন পাই আমি। আর্জেন্ট দেখা করতে বলে ও। তাই ফ্রেশ হয়ে কাপড় পাল্টেই চলে যাই ওর বাসায়।

রুদ্রের বাবা-মা উত্তরা দশ নাম্বারেই থাকে। আমার মেসের খুবই কাছাকাছি। চটপট ওর বাসায় এসে দেখি পুরো বাসায় ও ছাড়া আর কেউই নেই।

‘এসেছিস?’ দরজা খুলে আমাকে এভাবেই অভ্যর্থনা জানায় ও।

‘হুম,’ বাসায় কেউ নেই দেখে আমি প্রশ্ন করি, ‘আংকেল আন্টি কই রে?’

‘গ্রামে গেছে সবাই,’ ওর রুমে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দেয় ও, ‘এক সপ্তাহ হলো। আজকে সন্ধ্যায় ফিরবে।’

‘বাহ!’ খুশী হয়ে উঠি আমি। তির্যক দৃষ্টি হেনে বললাম, ‘তাহলে তো তোর পোয়াবারো! ঋতুকে ডেকে নিয়ে আসতে পারিস। নাকি ইতোমধ্যেই দু’একবার......’

‘দুরররর,’ হাত দিয়ে মাছি তাড়ায় রুদ্র, ‘আমি অন্য কাজে ব্যস্ত মাম্মা। এখন ঋতুরে নিয়া ফাইজলামী করার কোন সময় নাই।’

‘কস কি?’ আকাশ থেকে পড়ি আমি, ‘মানে, ব্রেকআপ করে ফেলেছিস নাকি তুই?’

‘আরে নাহ মামা,’ মাথা নাড়ে রুদ্র, ‘ব্রেকআপ করবো কেন? আসলে ছুটির এই কয়দিন একটু অন্য বিষয়ে পড়াশোনা করলাম।’

‘আতেল হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে!’ বাঁকাস্বরে মন্তব্য করি আমি। কিন্তু পরক্ষনেই ওকে ভ্রু কুচকাতে দেখেই তাড়াতাড়ি অন্য দিকে ঘুরে যাই, ‘কি নিয়ে গরু খুজতেছিস?’

‘মানে কি?’ আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে ও।

‘গরু খোঁজার কথা বললাম,’ মৃদু হেসে বললাম আমি, ‘মানে হইলো গবেষণা। গবেষণা করতেছিস না তুই?’

‘তা বলতে পারিস,’ আবার মাথা নাড়লো ও। ওর রিডিং টেবিলের পাশে একটা চেয়ার দেখিয়ে বললো, ‘এখানে বোস।’

চেয়ারে বসার পর ও ড্রয়ার থেকে একটা পুরনো বই আর ওর নিজের একটা ডায়েরী বের করলো। সাথে একটা কলম। আমি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। নতুন নতুন বিষয়ের উপর পড়াশোনা করা ওর হবি। কি যে দেখাবে কে জানে!

‘দেখ,’ পুরনো বইটা বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে ও, ‘কিছু বুঝতে পারিস কি না!’

সুন্দর কারুকার্য করা একটা প্রাচীন বই। হাতে নিয়ে রীতিমতো একটা ধাক্কা খেলাম আমি।

কোন প্রাণির চামড়া দিয়ে বানানো হয়েছে এটা। বুঝতে পারছি বইটা সাধারন কিছু নয়। বেশ কয়েকপাতা উল্টালাম আমি বইটার। আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। কোন ভাষায় লেখা কে জানে!

‘এটা কোন ভাষা মামা?’ মুখ তুলে ওর দিকে তাকাই আমি, ‘জীবনেও এইরকম জিনিস দেখি নাই আমি।’

‘ভাষাটা হইলো,’ কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে আবার বলল ও, ‘প্রাচীন গ্রিক।’

‘কস কি?,’ অবাক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালাম আমি।

‘এইখানে,’ বিজ্ঞের মতো করে বলতে লাগলো ও, ‘মানে এই বইতে মজার কিছু জিনিস বলা আছে।’

‘তাই,’ আবারও বললাম আমি।

‘জানিস,’ চোখ চকচক করছে রুদ্রের, ‘এই বইটা প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর পুরনো।’

‘কিসের বই?,’ একই ভঙ্গিতে বললাম আমি।

‘মজার কিছু কাহিনী আছে এখানে,’ আমার কথাকে পাত্তা না দিয়ে বলল ও, ‘যেগুলো এখনকার সময় কেউ বিশ্বাসই করবে না।’

মাথা চুলকাতে লাগলাম আমি। প্রাচীন বইগুলোতে অদ্ভুদ অদ্ভুদ অনেক কাহিনী থাকে। জ্বীন-পরী, দৈত্য, দানব, পিশাচ এরকম আরো অনেক আজব জিনিসের কথা লেখা থাকে। কিন্তু ও ঠিক কি বের করলো এখান থেকে, তাই বুঝতে পারছি না।

‘দোস্ত,’ নিচু গলায় বলি আমি, ‘বইটা পুরোটা পড়তে পেরেছিস?’

এবার হাসি ফুটে ওর মুখে। ‘না, এখনো শেষ হয়নি। জানিস কত্তো ঝামেলা করে এই বইটা জোগার করেছি আমি? গত তেরোদিন ধরে এটা নিয়েই মাথা ঘামিয়ে যাচ্ছি আমি।’

‘গুড,’ আবার মাথা নাড়াই আমি। ‘তা কি পেলি এখানে? মজার কিছু জিনিসের কথা বলছিলি না!’

‘হ্যাঁ,’ আবারও চকচক করছে ওর চোখ দুটো, ‘জানিস মামা, এখানে দুটো নতুন জাতি সম্পর্কে জানতে পারলাম। পুরনো ধর্মগ্রন্থে কিছু মিথ ছিল, কিন্তু এখানে সেগুলোর উপরে মোটামুটি ভালই জোড় দেয়া হয়েছে। মানুষ ছাড়াও আরো কয়েকটা প্রজাতির উল্লেখ আছে এতে।’

‘কি রকম?’ কিছুটা আগ্রহের সাথেই জিজ্ঞেস করি আমি, ‘ভূত, পেত্নী, পিশাচ, ড্রাকুলা এইরকম?’

‘আরে নাহ,’ আমার কথাকে হাত দিয়ে যেন তাড়িয়ে দেয় ও, ‘তবে অনেকটা সেরকমই।’
‘বলে ফেল,’ একঘেয়ে সুরে প্রশ্ন করি আমি।

বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো ও, তারপর বলতে লাগলো, ‘লিলিথের নাম শুনেছিস কখনো?’

‘অ্যা?’ মাথা চুলকাই আমি, ‘এইটা আবার কি জিনিস?’

‘লিলিথ,’ মাথা নেড়ে বলে ও, ‘এডামের প্রথম স্ত্রী। অনেক ধর্মগ্রন্থে আদি মানবী হিসেবে যার উল্লেখ আছে।’

‘ওও,’ এবার কিছুটা মাথায় ঢুকে আমার, ‘ইভের কথা বলতেছিস? এডাম আর ইভ! জানি তো। কিন্তু এইখানে লিলিথ আসলো কোত্থেকে? প্রথম মানুষ হচ্ছে এডাম, তার স্ত্রী ছিল ইভ।’

‘কাহিনী সত্য,’ আবার মাথা নাড়ায় ও, ‘কিন্তু ঘাপলা আছে মামা।’

‘কিসের ঘাপলা? ওর দিকে স্থিরভাবে তাকিয়ে আছি আমি।

‘শোন, তাহলে পুরোটা ব্যাখ্যা করি আমি।’ ডায়েরীটা খুলতে খুলতে বলে ও।

‘বল,’ আগ্রহের অতিশায্যে ওর দিকে একটু এগিয়ে যাই আমি।




“অ্যাডাম এবং ইভ প্রথম পুরুষ ও নারী, এমনটা আমরা জানি। কিন্তু অ্যাডাম এবং ইভ একই সাথে সৃষ্টি হয়েছিল নাকি আগে ও পরে সৃষ্টি হয়েছিল, এটা নিয়ে মোটামুটি ভালই গ্যাঞ্জাম বাধে।

বাইবেল অনুসারে, ঈশ্বর ৭ দিনের মধ্যে স্বর্গ ও পৃথিবীর বিভিন্ন জিনিস সৃষ্টি করেন। অ্যাডাম ও ইভ নিয়ে আমার প্রশ্নের দুই ধরনের উত্তর পাওয়া যায়, জেনেসিস ১ ও ২ থেকে। বাইবেলের জেনেসিস ১:২৬-২৭ অনুসারে, ঈশ্বর নিজের রূপে মানব সম্প্রদায় সৃষ্টি করলেন। পুরুষ এবং নারী একই সাথে। যেহেতু একই সাথে তাই এটা অনুমান করতে দোষের কিছু নেই যে, তাদের সৃষ্টির উপাদানও একই ছিল।

কিন্তু জেনেসিস ২:৭-২৫-এ এই একই ঘটনার ভিন্ন রূপ দেখা যায়। জেনেসিস ২:৭-২৫ অনুসারে, অ্যাডাম আগে এবং ইভকে পরে সৃষ্টি করা হয়েছিল। আরও মজার ব্যাপার জেনেসিস ২ বলছে, তাদের সৃষ্টির উপাদান একই ছিল না। ইভকে সৃষ্টি করা হয়েছিল অ্যাডামের বাম পাঁজরের হাড় থেকে।

তুই যদি জেনেসিস ২ পড়ে থাকিস তাহলে ব্যাপারটি তোর কাছে স্পষ্ট হবে। অ্যাডাম ও ইভের ঘটনা বর্ণনায় এমন একটা ভাব আছে যে, আগে কিছু যেন একটা ঘটেছিল যার উল্লেখ নেই জেনেসিস ২ তে। এর আভাস আছে অ্যাডামের অনুভূতিতেও। ইভকে পেয়ে রীতিমতো উল্লাস করেছিল অ্যাডাম। কাউকে পরাজিত করার আনন্দও যেন ছিল সেই উল্লাসে। ইভকে পেয়ে অ্যাডামের অনুভূতি ছিল, ‘আমি ইহাকে পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম’ এর মতো।

অ্যাডামের অনুভূতি ছিল এমন,

“এবং এখন এই হাড় আমারই
এই মাংস আমারই
তাকে “নারী” বলা হবে,
কারন তাকে পুরুষ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”

‘এখন’ শব্দটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ‘এখন’ কিছু হলে পূর্বে নিশ্চয় কিছু ঘটেছিল! আসলে কি ঘটেছিল এটা আর জানা যায় না বাইবেল থেকে। অবশ্য এতে কোন সমস্যা নেই।

জেনেসিস ১ ও ২ এর মধ্যেকার ভিন্নতা দূর করতে প্রাচীন রাব্বারা দুটি পথ বেছে নিয়েছিল। তাদের প্রথম অনুমান, প্রথমে যে সৃষ্টি হয়েছিল সে ছিল অ্যাডামের প্রথম স্ত্রী। তার পাখা ছিল। তাকে অ্যাডাম পছন্দ করেনি এবং ঈশ্বর তাঁর পরিবর্তে ইভকে সৃষ্টি করেছিল তারই পাঁজর হতে। তাদের দ্বিতীয় অনুমান, প্রথম সৃষ্টিটি ছিল উভয় লিঙ্গের। নারী এবং পুরুষ উভয়ই একই সাথে ছিল। এর পর তারা পৃথক হয়ে যায়। (জেনেসিস রাব্বা ৮:১, লেভিটিকাস রাব্বা ১৪ : ১)।
সব কিছু কেমন যেন জট পাকিয়ে গেলো তাই না? হা হা হা। অনেকেই ধাক্কা খায় প্রাচীন রাব্বাদের প্রথম ব্যাখ্যা শুনে। ভেবে দেখ, অ্যাডামের প্রথম স্ত্রী ইভ নয়, অন্য কেউ! আবির্ভাব হল নতুন একটা তথ্যের।

অ্যাডামের প্রথম স্ত্রীও তবে ছিল!

বাইবেল এবং তিলমুদের তথ্যের অপূর্ণতা থেকে পৌরাণিক কাহিনীতে সৃষ্টি হয়েছে লিলিথের। যেমন, ব্যাবিলন তিলমুদে লিলিথের কথা ৪ বার এলেও একথা কোথাও উল্লেখ নেই যে, অ্যাডামের প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল লিলিথ। তাকে সেখানে ডেমন বা শয়তান অথবা দানব রূপেই দেখতে পাওয়া যায়।

লিলিথ কাহিনীর অসংলগ্নতা মিথ দূর করেছে সুন্দরভাবে। ব্যাবিলন মিথ বলে, লিলিথ ও অ্যাডাম একই মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। আর এ কারনেই লিলিথ সম-অধিকার চেয়েছিল। সঙ্গমের সময় লিলিথ কিছুতেই নিচে থাকতে চায়নি। কারন, তারা একই উপাদান থেকে সৃষ্টি হয়েছে। অ্যাডাম বলেছিল, সে-ই শ্রেষ্ঠ তাই সে উপরে থাকবে। আর এতেই ঝগড়া চলতে থাকে অ্যাডাম ও লিলিথের।

এক পর্যায়ে স্বর্গ ত্যাগ করে লিলিথ। ঈশ্বর তখন এঞ্জেলদের বলে, লিলিথকে ফিরিয়ে আনতে। নইলে প্রতিদিন ১০০ সন্তান মেরে ফেলার অনুমতি দিতে হবে লিলিথকে।”

বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো রুদ্র। তারপর আবার শুরু করলো,

“লিলিথের নাম পাওয়া যায়, ৭০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লিখিত বেন সিরাখের পাণ্ডুলিপিতেও। এই পাণ্ডুলিপির সাথে রাজা নেবুচাদনেজারের নামও জড়িত। রাজা নেবুচাদনেজারের ছেলে অসুস্থ হলে বেন সিরাখকে তিনি সুস্থ করতে বললেন। বেন সিরাখ তখন তিনজন এঞ্জেলের নাম লিখে একটা তাবিজ তৈরি করলেন নেবুচাদনেজারের সন্তানের জন্য।

নেবুচাদনেজার এর কারন জানতে চাইলে বেন সিরাখ বলেন, অ্যাডামের প্রথম স্ত্রী লিলিথ স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হবার পর সে প্রতিদিন ১০০ সন্তান নষ্টের অনুমতি পায়। সাথে এই ক্ষমতাও পায়, ছেলে নবজাতককে ৮ দিন এবং মেয়ে নবজাতককে ২০ দিন রোগে আক্রান্ত করার। কিন্তু ঈশ্বরের নির্দেশে ঐ তিনজন এঞ্জেল তাকে ফিরিয়ে আনতে গেলে লিলিথ প্রতিজ্ঞা করে, যখন তাদের নাম কোন মাদুলিতে দেখবে তখন সে আর এমন করবে না।

না, এঞ্জেলদের কথায় পরবর্তীতে আর স্বর্গে ফেরত যায়নি লিলিথ। খুবই অভিমান হয়েছিল তার। এই যে স্বর্গ থেকে লিলিথের বিতারন, অমঙ্গল করার শক্তি প্রাপ্তি, এর পর কী হয় লিলিথের? লিলিথ কাহিনীর শেষটুকু জানতেও আমাদের ভর করতে হয় বিভিন্ন উপকথার উপর।

যদিও ব্যাবিলন তিলমুদে লিলিথ-এর কথা ৪ বার এসেছে। কিন্তু, এসেছে অন্যভাবে। যেমন, বিটি সাব্বাত ১৫১ বি-তে আছে, কোন পুরুষের বাড়িতে একা থাকা উচিৎ নয়, যেই একা থাকবে তারই উপর ভর করবে লিলিথ। এখানকার লিলিথের চরিত্রের সাথে সম্পূর্ণ মিল পাওয়া যায় উপকথার সাকুবাসের।

জোহার এবং বেন সিরাখের লেখায় উল্লেখ পাওয়া যায় যে, সাকুবাস এবং লিলিথ আসলে একই চরিত্র। সাকুবাস হল নারী অপদেবতা বা প্রেতযোনি যে রাতে একাকী পুরুষের উপর ভর করে। উদ্দেশ্য যৌন মিলন। বিটি সাব্বাত ১৫১ বি-তে উল্লেখিত লিলিথ আর উপকথার সাকুবাসের মধ্যে আসলেই মিল আশ্চর্যজনক! এটাকে কাকতালীয় বলে কেউ কেউ। কিন্তু কাকতালীয় বললে লিলিথ কাহিনীর শেষ অংশটুকু থেকে যায় আবার অমীমাংসিত!

লিলিথের শেষ অংশটুকুও দারুণ। স্বর্গ থেকে বিতাড়িত লিলিথ এখন একা, অতৃপ্ত। রাতের আঁধারে অবিবাহিত ঘুমন্ত ছেলেদের সাথে মিলিত হয়ে যাচ্ছে লিলিথ, শতাব্দীর পর শতাব্দী। অতৃপ্ত লিলিথ নিজের যৌন ক্ষুধা মিটিয়ে যাচ্ছে এভাবেই। আর কথা মত, প্রতিদিন ১০০ শিশুর মৃত্যু ঘটছে এই যৌথ ক্রিয়ায়।”



‘মানে কি?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করি আমি, ‘এই কাহিনীর সাথে এই বইয়ের সম্পর্ক কোথায়?’

‘সম্পর্ক আছে দোস্ত,’ রহস্যময় কন্ঠে জবাব দেয়, ‘কঠিন সম্পর্ক আছে। এই বইতে অনেককিছুর উল্লেখ আছে, যা আমার মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে।’

‘যেমন?’ আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে আমার।

‘অমানব,’ শান্তকন্ঠে এই কথাটা বলেই চুপ করে যায় ও।

‘কি?’ ভীষনভাবে চমকে উঠি আমি ওর কথা শুনে।

‘আরেকটা আছে,’ বেশকিছুক্ষন পর আবার বলে ও, ‘অপমানবী।’

‘মানে কি?’ তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি ওর দিকে। নিজেকে অতিকষ্টে শান্ত করে আবার জিজ্ঞেস করি, ‘এসব কি বলছিস তুই?’

‘মানে হচ্ছে,’ মাথা নেড়ে বলল রুদ্র, ‘এই বইয়ে লিলিথের কাহিনীর পরবর্তী অংশ বর্ণনা করা হয়েছে। সেখান থেকেই দুটো নতুন জাতির নাম জানা যায়। একটা হচ্ছে অমানব, আরেকটা হচ্ছে অপমানবী।’

‘ব্যখ্যা কর তো,’ স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি এখনো, ‘পুরোটা।’

‘করছি,’ মাথা নেড়ে আবার শুরু করে ও,

‘পৌরানিক অনেক কাহিনীতেই লিলিথের কথা এসেছে। আবার অনেক কাহিনীতে এসেছে লুসিফারের কথা। ভিন্ন ভিন্ন মত অনুসারে, লিলিথ আর লুসিফার দুজনই হচ্ছে শয়তান। কিন্তু এখানেও খটকা আছে। কারন লুসিফারকে ছেলে বলা হয়েছে সব জায়গায়, অন্যদিকে লিলিথ হচ্ছে মেয়ে। এখানেই কনফিউশন তৈরী হয়েছে আসলে। প্রশ্ন এসে যায় একটা, আসলে আমরা যাকে শয়তান বলি, সে আসলে কে? লুসিফার নাকি লিলিথ?

এই বইতে এর উত্তর পাবি তুই। এখানে এভাবে বলা আছেঃ

লিলিথ যখন স্বর্গ থেকে চলে আসে, তার কিছুসিন পর এঞ্জেলরা ঈশ্বরের আদেশে তাকে ফিরিয়ে নিতে আসে। কিন্তু লিলিথ ফিরে যায় নি আর। তখন লুসিফার দেখতে পায় এটাই সুযোগ! লিলিথকে কব্জা করে এডামকে বড়সড় একটা ধাক্কা দেয়া যাবে। কারন এডামের কারনে সে তার মর্যাদা হারিয়েছে। তাই সে লিলিথের সাথে সখ্য গড়ে তোলে এবং এক পর্যায়ে লিলিথের সাথে মিলিত হয়। লিলিথও লুসিফারকে এসময় পাশে পেয়ে খুশীই হয়। কিন্তু এই খুশী বেশীদিন টেকেনি।

ঈশ্বর এরপর ইভকে সৃষ্টি করলেন। এডাম লিলিথকে ভুলে ইভের প্রেমে মত্ত হয়ে পড়লো। লিলিথ দেখলো যে এডামের উপর সে প্রতিশোধ নিতে পারছে না। একই কারনে লুসিফারও লিলিথকে ত্যাগ করলো। বেচারী লিলিথ হয়ে গেলো একেবারেই একা।

এ ঘটনায় লিলিথ খুবই কষ্ট পায়। সে ভেবেছিল অন্তত লুসিফারকে সে নিজের সাথে পাবে। কিন্তু চতুর লুসিফারও যখন ওকে ত্যাগ করলো, তখন সে খুবই মর্মাহত হয়ে পড়লো। সে তখন এডাম আর লুসিফার, দুজনের উপরই বিরক্ত হয়ে গেলো এবং নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করলো এদের কাউকে বা এদের কারো বংশধরকেই সে ছাড়বে না।

এঞ্জেলরা যখন লিলিথকে ঈশ্বরের আদেশে ফিরিয়ে নিতে এসেছিল, সে তাদের সাথে যায়নি। ফলে সে কয়েকটি ক্ষমতার অধিকারিনী হয়। প্রতিদিন একশ সন্তান নষ্টের অনুমতি পায়। সেইসাথে ছেলে নবজাতককে ৮ দিন এবং মেয়ে নবজাতককে ২০ দিন রোগে আক্রান্ত করার ক্ষমতাও পায় সে। এদুটোর কথা বলেছি তোকে।

এছাড়াও আরো দুটো ক্ষমতা সে পেয়েছিল। লুসিফারের মতো বিশ্বজগত ধ্বংসের আগপর্যন্ত বেঁচে থাকবে সে। আর সবচেয়ে ভয়ংকর যে ক্ষমতাটা সে পায়, তাহলো বিভিন্ন মহিলা মানুষের শরীরে নিজের বাচ্চা জন্ম দেয়ার ক্ষমতা।”

‘বলিস কি?’ আক্ষরিক অর্থেই আমার চোখগুলো গোল্লার মতো হয়ে গেলো। ‘এর মানে......’

‘এর মানে,’ আমার মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে বলে উঠে রুদ্র, ‘যেকোন সময় যেকোন মেয়ের গর্ভে লিলিথ তার বাচ্চাকে জন্ম দিতে সক্ষম।’

-‘হোয়াট দ্যা...’

-‘আরে মুখ ঠিক কর। এগুলো তো মিথ। বিশ্বাস করতেই হবে এমন কোন কথা নেই।’

-‘হুম, এটা তুই ঠিক বলেছিস।’

বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকি আমি। তারপর আবার জিজ্ঞেস করি, ‘আচ্ছা, অমানব আর অপমানবী নামে দুটো জাতির কথা বলছিলি না? এগুলো কি?’

‘বলছি,’ মৃদু হাসি ফোটে রুদ্রের মুখে, ‘অমানব হচ্ছে লুসিফার বা শয়তানের কিছু অনুসারী। এখনো বইটা পুরোটা পড়তে পারিনি, তাই এসম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। তবে অপমানবী সম্পর্কে মোটামুটি ভালই জানতে পেরেছি।’

‘কি জেনেছিস?’ খুবই ধীরে ধীরে ভেতরের দীর্ঘশ্বাসটা ছেড়ে দিই আমি।

‘মোটামুটি অনেক কিছুই।’ একই ভঙ্গিতে বলে রুদ্র, ‘লিলিথ যেকোন মেয়ের শরীরে নিজের বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। কোন এক কারনে তার বাচ্চাগুলো সবসময় মেয়েসন্তান হয়। আর অপমানবী হচ্ছে লিলিথের মেয়ে। যাকে গ্রিকে বলে Lilithera κόρη, আর স্প্যানিশে বলে Lilithera Hija। অবশ্য আমার কাছে স্প্যানিশ নামটাই ভাল লাগে।’

‘তারপর?’ তাড়া দেই আমি, ‘আর কি জানলি?’

‘তারপর,’ কিছুক্ষণ ভেবে আবার বলল ও, ‘যতটুকু বুঝতে পারছি, অপমানবীদের অনেক ক্ষমতা। অন্তত মানুষের চাইতে তো বেশীই। শয়তানী ক্ষমতা বলবো না, কারন লিলিথ একইসাথে এডাম এবং লুসিফারের বিরোধী। নতুন একটা সাম্রাজ্য তৈরী করে সে। লুসিফার একদিকে চাচ্ছে মানব জাতির ক্ষতি করতে, অন্যদিকে লিলিথ চাচ্ছে একই সাথে মানবজাতি আর লুসিফারের বংশধরদের ক্ষতি করতে। কিন্তু মজার কথা কি জানিস? তারপরও লুসিফারের চেয়ে লিলিথের ক্ষমতা কম।’

‘এর মানে,’ মনের ভেতরে ঝড় চলছে আমার, ‘এর মানে বলতে চাচ্ছিস যে, অমানবের চাইতে অপমানবীর ক্ষমতা কম হবে!’

‘হতে পারে,’ অনিশ্চিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল রুদ্র, ‘কে জানে! আসলে এখনো পুরোটা পড়িনি আমি। তাই পুরো জিনিসটা বুঝতে পারছি না, বলতেও পারছি না। আমি শুধু তোকে অপমানবীর কথা বলার জন্যই ডেকেছিলাম।’

‘হুম,’ মাথা নাড়ালাম আমি। কেম যেন হতাশ লাগছে নিজেকে। ‘বুঝতে পারছি।’

‘সমস্যা নাই দোস্ত,’ প্রচন্ড উতসাহে বলে উঠে ও, ‘আর মাত্র কয়েকটা দিন পেলেও পুরোটা জানা সম্ভব হবে আমার পক্ষে। তখন এবিষয়ে সব খুলে বলতে পারবো আশা করি।’

‘হুম,’ গম্ভীরগলায় বলি আমি। মাথায় এখনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে আমার।

বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলো এভাবেই। তারপর হঠাত করেই আমি বলে উঠি, ‘দোস্ত, একটা কথা বলি?’

‘বল,’ আমার দিকে তাকিয়ে জবাব দেয় ও।

‘তোর এই বইটা,’ টেবিলের উপর নির্দেশ করি আমি, ‘এটা কি আমি দিন দুয়েকের জন্য নিতে পারি?’

‘কিন্তু,’ দ্বিধা নিয়ে বলে উঠলো ও, ‘আমার তো এখনো পড়া শেষ হয়নি! পড়া শেষ করি আগে, তারপর নিস?’

‘দোস্ত,’ আবদার করি আমি, ‘প্লিজ। দুদিনের মধ্যেই ফেরত পাবি এটা। প্লিজ দোস্ত?’

বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে রুদ্র। তারপর হেসে বলে, ‘ঠিক আছে, নিয়ে যা।’

আমি জানতাম ও আমাকে বইটা নিতে দেবে। ইচ্ছে থাকলেও, অনিচ্ছা থাকলেও। এখানে ওর কিছুই করার নেই। আমি এটাও জানি বইটা ও অনিচ্ছাস্বত্বেও দিয়েছে। কারন আমি বাধ্য করেছি ওকে!

কিন্তু ও সেটা জানে না!



‘রুদ্র মারা যায় নি, ওকে খুন করা হয়েছে।’

আবারো চমকে উঠি আমি।

মেয়েটার মুখের মৃদু হাসিটা অট্টহাসিতে রুপ নিতে যাচ্ছে। চোখে-মুখে অপার্থিব একটা ভাব বিরাজ করছে।

‘তুমি কিভাবে জানলে?’ স্পষ্ট বিস্ময় ফুটে উঠে আমার মুখে।

ঋতু মৃদু হাসছে। বেশ কিছুক্ষণ একভাবে থাকার পর উঠে এলো ও আমার সামনে। বাইরে থেকে মৃদু আলো আসছে। সেই আলোয় ওর ফর্সা শরীরটাকে অদ্ভুদ সুন্দর লাগছে।

ঠিক আমার সামনে এসে দাড়ালো ঋতু। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ও। তারপর বলল, ‘কারন আমিই খুন করেছি রুদ্রকে।’

‘কিই?’ খেঁকিয়ে উঠি আমি। ‘কেন?’

‘কারন,’ শান্তকন্ঠে বলে উঠে ও, ‘ও জেনে গেছিল আমি কে, আমি কি!’

‘মানে কি?’ যদিও সবকিছুই আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে আগেই, তবুও আমি ওর মুখ থেকে শুনতে চাইছি, ‘কি জেনে ফেলেছিল?’

‘কিউরিয়াস, হাহ!’ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো ও, ‘আমার তো মনে হয় তোমারও জানার কথা। আজকে সকালে তুমি তো রুদ্রের বাসায় গিয়েছিলে। কিছু বলে নি ও তোমাকে?’

‘অপমানবী,’ বিস্ময়ের সাথে উচ্চারন করি আমি। অবশ্য ঠিক এটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে আমার মধ্যে, কিন্তু তবুও শিওর হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমিই অপমানবী? লিলিথের কন্যা? Lilithera Hija…’

‘ইয়েস,’ শান্তকন্ঠে বলে উঠে ও, ‘ধরতে পেরেছো তুমি। হ্যাঁ, আমিই লিলিথের কন্যা। সাধারন মানুষের সাথে বলতে গেলে কোন অমিলই নেই আমার মধ্যে। সাধারনের মাঝে থেকেও আমি অসাধারন।’

‘হুম,’ মাথা নাড়াই আমি, ‘বুঝতে পারছি। লিলিথের একটা বৈশিষ্ট্য আছে। প্রতি রাতেই সে একা থাকা পুরুষ মানুষের উপর চড়াও হয়। আর যার ফলে জন্ম হয় অপমানবীর। বলেছিল রুদ্র আমাকে।’

‘বেচারা,’ কপট দুঃখ ফুটে উঠে ওর মুখে, ‘শুধু শুধুই এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে গেছিল। তা না হলে আরো অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারতো ও। সো স্যাড। অবশ্য, খুব ইনজয় করেছি আমি ওর সাথে। এটা ওর প্রাপ্য ছিল। এখন একই জিনিস পাবে তুমিও। কারন তুমিও জেনে গেছো আমি কে!’

ওর চোখ দুটো জ্বলছে। কোন এক উত্তেজনায় বুঁদ হয়ে আছে ও। আমার আরো কাছে ঘেষে এলো ও। আমাদের মাঝখানে বলতে গেলে কোন দূরত্বই নেই আর।

মৃদু হাসি ফুটলো আমার মুখেও, ‘যাক, সে কাজটা আজ বাদে কাল আমাকেই করতে হতো, তা তুমি নিজেই করে দিয়েছো। গুড!’

‘মানে?’ এবার ওর অবাক হবার পালা, ‘কি বলতে চাইছো তুমি?’

আমার চোখের মধ্যে হয়তো কিছু একটা দেখতে পেয়েছে ও। হঠাতই তাড়াতাড়ি দুপা পিছিয়ে যায় ও।

‘এর মানে হচ্ছে এই,’ ওর দিকে ঝুঁকে আসি আমি, ‘রুদ্রের সেই বইটাতে শুধুই অপমানবীর কথা বলা ছিল না, আরেকটা জাতির উল্লেখ ছিল। তোমার তো জানার কথা!’

‘অমানব!’ আক্ষরিক অর্থে এবার ওর দৃষ্টি বিস্ফারিত হয়। ‘তুমি অমানব!’

‘কোন সন্দেহ আছে কি?’ শ্লেষমাখা সুরে বলে উঠি আমি, ‘এবার আমার পালা নয় ঋতু, এবার তোমার পালা। এবার মরবে তুমি, আমি নই।’

ওর চোখে ভয় দেখতে পাই আমি। প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে ও।

মৃত্যুভয়!



রুদ্রের লাশের সৎকার করে ঢাকা ফিরলাম এইমাত্র।

আমি বসে আছি তুরাগ নদীর পাড়ে। আইইউবিএটির পেছনে জায়গাটা। রুদ্রের সেই বইটা আমার হাতে এখন। একটা একটা করে পাতা ছিড়ছি আর তুরাগের কেমিক্যাল মেশানো পানিতে দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে মারছি।

আসলে আমি কখনই রুদ্রকে মারার কথা মাথায়ও আনিনি। আমি ওর বইটা আমার কাছে এনে রেখেছিলাম। দুদিন পর ফেরত দেয়ার কথা ছিল সেটা, যা আমি কখনই করতাম না। ওকে বলতাম যে বইটা হারিয়ে ফেলেছি আমি, যাতে ও অমানব সম্পর্কে কিছু জানতে না পারে। হয়তো ও কয়েকদিন চেচামেচি করতো, তারপর কদিন পর সব ভুলে যেতো।

রুদ্রের বইটি আমি পুরোটা পড়েছি। অপমানবী সম্পর্কে ডিটেলস জেনে নিয়েছি বইটা থেকে। এখন আর এটার কোন প্রয়োজন নেই।

সন্ধ্যা নেমে আসছে। চারদিকে অন্ধকারের এক গাঢ় চাদর এসে আলোর রেখাগুলোকে মুছে দিচ্ছে ধীরে ধীরে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। ভাল লাগছে না আমার। রুদ্রের জন্য কষ্ট হচ্ছে।
২২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×