উলঙ্গ হয়ে লাভ নেই, পোশাকেই ভালো আছি।।
***(প্রথম পর্ব)***
সাইয়িদ রফিকুল হক
বর্তমান বিশ্বে সভ্যতার সবচেয়ে বড় অবদান হলো—পোশাকি-মানুষ।এখনকার মানুষ নিয়মিতভাবে পোশাকআশাক পরিধান করছে।আর এখন, প্রায় সবাই ন্যূনতম পোশাক হলেও ব্যবহার করছে।শুনেছি, পূর্বকালে মানুষ নাকি পোশাকআশাক ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতো না(সকলের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়, অধিকাংশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।তবে সেটা অনেক-অনেক আগে।এদের কিছু-কিছু নির্দশন এখনও আফ্রিকা-মহাদেশের বিভিন্নস্থানে দেখতে পাওয়া যায়।আর ইউরোপ-আমেরিকায় তো একদল “আধুনিক-জংলী” প্রকাশ্যে “সাংবাদিক-সম্মেলন” করে আনুষ্ঠানিকভাবে নগ্নতাকে জীবনে ধারণপূর্বক তারা প্রকাশ্যে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।এদের কথা আপাততঃ বাদ দিচ্ছি।কিন্তু কথা হচ্ছে, আজ আমাদের স্বাধীন-বাংলাদেশে অনেক মানুষের মধ্যে আচরণিক-সমস্যা দেখা দিয়েছে।এরা প্রকাশ্যে উলঙ্গ হচ্ছে না।কিন্তু ভিতরে-ভিতরে একেবারে উলঙ্গ।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিধৌত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে একশ্রেণীর মানুষ স্বেচ্ছায়-শখের বশে উলঙ্গ হওয়ার সাধনায় মত্ত হয়েছে।এদের মধ্যে “বখে যাওয়া” ‘তরুণ-তরুণী’র সংখ্যাই বেশি।এরা দেশকে ভালোবাসে না।এদের কাছে দেশপ্রেমটা হচ্ছে “জলন্ত একটা সিগারেটের মতো”।এরা দেশ ও রাজনীতিকে এক-করে দেখে এই দুটোর প্রতি উন্মাদের মতো অনাস্থা-জ্ঞাপন করে থাকে।এরা এখন নগ্নতাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। কারণ, নগ্ন হলে নাকি জনপ্রিয় হওয়া যায়।তাই, এদের চেহারায় নগ্নতা, চাহনিতে যৌনতা, সর্বোপরি দৃষ্টিতে প্রগাঢ় কামভাব, আর পোশাকে একটা বেখাপ্পা-জোড়াতালি-ভাব।এখনকার অনেক বিভ্রান্ত “তরুণ-তরুণী” নিজেকে খুব আধুনিক ভাবার কারণে একেবারে খাপছাড়া-সৃষ্টিছাড়া হয়ে যাচ্ছে।আর এদের ‘বিকৃত-পোশাকে’র মতোই এদের ভাষাও হয়ে উঠছে মারাত্মক অশালীন ও বিকৃত।এরা সবসময় অশিষ্ট-ভাষা ব্যবহার করে, এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করে বিমল আনন্দ অনুভব করে থাকে।আজকাল এরা, পোশাকের পাশাপাশি ভাষাপ্রকাশের ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে উলঙ্গ হয়ে পড়ছে। আতঙ্কটা সেখানেই।এদের গন্তব্য কোথায়?এরা আসলে কী চায়?এরা এখনও বুঝতে পারছে না যে, মানুষের একটা ভাষা আছে।আর সেই ভাষাকে কখনও পশুর পর্যায়ে নামিয়ে আনা যাবে না।মানুষকে মানুষের ভাষায় কথা বলতে হবে। আর মানুষের জন্য কিছু লিখতে চাইলে, তাও হতে হবে মানুষের ভাষায়।এখন অনেকেই “ফেসবুকে-ব্লগে” যে-সব রিরংসাবৃত্তির ভাষা প্রয়োগ করে তা একমাত্র ‘নিষিদ্ধ-এলাকায়’ কিংবা ‘নিষিদ্ধ-এলাকায়’ নিয়মিত যাতায়াতকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।এদের মনে রাখতে হবে, মনে চাইলেই সবকিছু করা ঠিক নয়।আর একটা-কিছু বলে দিলাম, তাতে এমন কী আসে যায়—এধরনের অপরিণামদর্শী চিন্তাভাবনা একেবারে বাদ দিতে হবে।এদের আর-একটা কথা মনে রাখতে হবে: একটা-কিছু লিখে দিলেই পণ্ডিত হওয়া যায় না।পাণ্ডিত্য-অর্জন করার জন্য বহু সাধনার প্রয়োজন।
সমাজে-রাষ্ট্রে “অশ্লীল-ভাষাব্যবহারকারীরা” আজ একেবারে উলঙ্গ হয়ে যে-কাউকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে তার বিরুদ্ধে নিজেদের কল্পিত-মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এহেন অশ্লীল-ভাষায় আবোলতাবোল কথা লিখে যাচ্ছে।এদের গন্তব্য কোথায়?এদের ভবিষ্যৎ কী?এরা আসলে কী চায়?
আসলটা বুঝতে পেরেছি, এরা সমাজে-রাষ্ট্রে কিংবা বৈশ্বিক-পরিমণ্ডলে সস্তা-জনপ্রিয়তা-অর্জন করার অভিলাষে এমন অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এরা মনে করে থাকে, আজেবাজে কথার দ্বারা “আবোলতাবোল লেখা” বা “প্যাঁচাল” রচনা করতে পারলে সহজেই সস্তা-মানুষের দ্বারা বেশি পরিমাণে “লাইক” বা “সমর্থন” পাওয়া সম্ভব।আর এদের এই হীন-মানসিকতার কারণেই আজ আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রে নতুন-নতুন ব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে।কিন্তু এদের এই প্রবণতা আত্মহত্যার শামিল। আমরা মার্জিত কঠোর-ভাষার দ্বারা দেশবিরোধীদের সমালোচনা করবো।কিন্তু সমালোচনার ভাষা যেন কখনওই অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ না হয়।আমাদের ভাষা শাণিত হোক, বৈপ্লবিক হোক, আর একেবারে দ্রোহে পরিপূর্ণ এক-জ্বালাময়ী-ভাষা হোক।কিন্তু তা কখনও অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হতে পারবে না।তোমরা দেশের শিক্ষিতসমাজ।আর তোমরা হবে আগামীদিনের পথিকৃৎ।
সাহিত্যের একটা নিজস্ব-ভাষা আছে।আগে এটা উপলব্ধি করতে হবে।তারপর লেখনিশক্তি-ধারণ করতে হবে।তুমি বড় লেখক হও, বড় কবি হও, আমি তোমাকে স্যালুট দিবো।কিন্তু আলতুফালতু লোক হয়ে আজেবাজে ভাষায় কাসুন্দি ঘাঁটবে, তাতে তোমার গর্ব করার কিছুই থাকবে না।আর এমনটি করলে তাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন-বাংলাদেশে অন্ধকার।তাই বলছি: উলঙ্গ হয়ে লাভ নেই, পোশাকেই ভালো আছি।
(চলবে)
----------------------------------------------------------------