ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্মব্যবসায়ী হিংস্র-হায়েনা-পশুদের তাণ্ডবলীলা! আর এরা পবিত্র ইসলামকে কলংকিত করছে।
সাইয়িদ রফিকুল হক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক মাদ্রাসা-ছাত্র নিহত হয়েছে। আর নিহতের কারণ মারামারি। সে এলাকাবাসী, এলাকার ব্যবসায়ী ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মারামারি করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। সে স্থানীয় “জামেয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার” অষ্টমশ্রেণীর ছাত্র। তার নিহত হওয়ার পিছনে কারণ কী? এর সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছে না। কারণ, সে স্থানীয়ভাবে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছে। এরই মধ্যে একটি শ্রেণী এটি সরাসরি ছাত্রলীগের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এবার তাদের কাজ শেষ। এদের কাজই এই। সমালোচনা করতে পারলেই হলো। এরা একটাকিছু বলার জন্য একেবারে মুখিয়ে থাকে। অথচ, উক্ত মাদ্রাসার পরিচালনা-কমিটির সহসভাপতি ডা. বজলুর রহমান বলেছে ভিন্নকথা। তার বক্তব্য হলো: “মাদ্রাসায় ঢুকে মাসুদুরকে হত্যা করেছে পুলিশ। সে কীভাবে মারা গেছে সে-বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালে গিয়ে আমি জানতে পেরেছি, মাসুদুরের শরীরে গুলির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।” আর এগুলো কীসের আলামত? সে বা তারা একেক-সময় একেকরকম কথা বলছে। আবার এদেরই কেউ-কেউ পাকিস্তানীমিডিয়ার সামনে বলেছে: “রাত দুইটার দিকে মাসুদুরকে পুলিশ পিটিয়ে মাদ্রাসার কয়েক তলা থেকে ফেলে দেয়!” কয়েক তলা থেকে ফেলে দেয়? মানে, কয় তলা? এর সঠিক জবাব নেই। হয়তো ওরা এখন একসঙ্গে কয়েক শয়তান মাশোয়ারা করে আবার বলবে, “তিনতলা কিংবা চারতলা কিংবা পাঁচতলা থেকে তাকে ফেলে দিয়েছে পুলিশ।” এইব্যাপারে ওদের গবেষণা এখনও চলছে।
প্রকৃত-ঘটনা হলো:
একজন ছাত্র অনাকাঙ্ক্ষিত-ঘটনায় গণ্ডগোলের মধ্যে নিহত হয়েছে। আর সে-ই কিন্তু এই সংঘাত ও গণ্ডগোলের মূল নায়ক। তাদের অসংযত ও উদ্ধত আচরণের কারণেই এই অনভিপ্রেত-ঘটনা ঘটেছে। আর তারা এই সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্মরণকালের অন্যতম সন্ত্রাসের সৃষ্টি করে নিরীহ-এলাকাবাসীকে জিম্মি করে রেখেছিলো। এই তাদের ধর্মবোধ! এরা এই সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাত্তরের পাকিস্তানী-হানাদারবাহিনীর মতো নজিরবিহীন সন্ত্রাস-তাণ্ডব চালিয়েছে। এরা ধর্মের নামে অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর-লুটতরাজসহ অবাধে যাবতীয় নারকীয় কার্যক্রমপরিচালনা করেছে। এরা একাত্তরের হায়েনাবাহিনী পাকিস্তানীকাপুরুষদের যোগ্য-উত্তরসূরীই বটে!
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের পাকিস্তানীমিডিয়া-সংবাদপত্র ও পাকিস্তানপন্থী-চরমপন্থী বুদ্ধিজীবীরা ইতোমধ্যে বলে দিয়েছে, তাকে নাকি ছাত্রলীগের নেতারা হত্যা করেছে। অথচ, মাদ্রাসা-কর্তৃপক্ষও তা বলেনি। আর ওই “সন্ত্রাসীয়া মাদ্রাসার” পাতিহুজুরদের কেউ-কেউ বলেছে: “পুলিশ আমাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু ছাত্রলীগ আমাদের পক্ষে।” এটিই সত্যকথা। স্থানীয় আওয়ামীলীগের ভণ্ড ও ছাত্রলীগের বিপথগামী ষণ্ডারা সবসময় এই পাতিহুজুরদের পক্ষ নিয়ে থাকে। কিন্তু এতে এদের কী স্বার্থ আছে? জাতি আজ এসব জানতে চায়। নইলে সেখানে আওয়ামীলীগের সক্রিয়-রাজনীতি চলমান থাকা সত্ত্বেও এই পাতিহুজুররা কীভাবে, কেন তিনদিন যাবৎ এই তাণ্ডবলীলা চালানোর দুঃসাহস পায়? আসলে, একশ্রেণীর আওয়ামীলীগার-নামধারী ছদ্মবেশীভণ্ডরা এদের তোয়াজ করে থাকে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই ভণ্ডদের মুখোশ-উন্মোচন করা প্রয়োজন। যাতে, এরা আওয়ামীলীগের নাম-ভাঙ্গিয়ে আর-কোনো শয়তানী-বাঁদরামি করতে না পারে।
আসলে ঘটনা কী? কে বা কারা মাসুদকে হত্যা করেছে?
১. নিহত মাসুদকে ছাত্রলীগের কেউই হত্যা করেনি।
২. তাকে পুলিশও হত্যা করেনি।
৩. তাকে হত্যা করে কথিত কয়েক তলার ছাদ থেকেও কেউ ফেলে দেয়নি।
তাহলে কী হয়েছে?
স্থানীয় এক-মার্কেটের মোবাইল-দোকানে মাসুদুরের সঙ্গে নাকি কতিপয় দোকানদার ও ব্যবসায়ীর কথা-কাটাকাটি ও সংঘর্ষ, পরে আরও মারামারি। এভাবে ওই সন্ত্রাসীয়া-মাদ্রাসা বৃহত্তর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আবার কেউ বলেছে, এক সিএনজি-রিক্সাওয়ালার সঙ্গে একব্যক্তির ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটি, আর সেখানে মাসুদুর উপস্থিত ছিল। সেও তর্কে জড়িয়ে পড়ে। আর পরে এই সংঘাতের সৃষ্টি!
আসলে কী তা-ই?
ঘটনা একটা ঘটেছে। আর কোনো স্বার্থান্বেষীমহল তাকে হত্যা করেছে। এর তদন্ত হবে, বিচার হবে।
কিন্তু তার নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কী ঘটেছে?
একজন মাসুদুরের হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা ও তাণ্ডবলীলা চালানো হয়েছে। এখানে, এই তাণ্ডবলীলার যৎসামান্য তুলে ধরছি:
১. কুমারশীল মোড়ে “সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে” আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে “জামেয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার” ছাত্র-শিক্ষকরা। তারা এতোই পাষণ্ড ও নৃশংস যে, তাদের আক্রমণে পুড়ে গেছে সুরসম্রাটের ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রও। এরা ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজটি করেছে।
২. হালদার পাড়ার “প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন-কেন্দ্রেও” আগুন দিয়েছে তারা। এই শয়তানী-কাজটি তারা ইতঃপূর্বে ১৯৯৮ ও ২০০০ সালেও করেছিলো। আর সেই সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই নজিরবিহীন শয়তানীতাণ্ডবের নেতৃত্বে ছিল পাকিস্তানপন্থী-ঘাতক, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীবংশজাত মুফতি-নামধারী ফিতনাবাজ ফজলুল হক আমিনী। এরা পবিত্র ইসলামধর্মের নাম-ভাঙ্গিয়ে সেই সময় মানুষহত্যা থেকে শুরু করে যারপরনাই তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিলো। এরা আবার সেই কাজটি করলো। এরা সেই একইচক্র। আর অপরাধ তাদের। কারণ, তাদের ছাত্রই সামান্য এক মোবাইল কেনাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এরা এতো স্পর্ধা পায় কীভাবে? কে এদের এই দুঃসাহস জোগাচ্ছে?
৩. জামেয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা-নামধারী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করেছে: তারা ভাংচুর করেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল-স্টেশন, জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়, শিল্পকলা একাডেমী, মুক্তিযোদ্ধাকমপ্লেক্স-এ অবস্থিত ব্যাংক এশিয়া কার্যালয়, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষাচত্বরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল, শিশুনাট্যম, ধীরেন্দ্রনাথ স্মৃতিপাঠাগার, তিতাস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, ললিতকলা একাডেমীর কার্যালয়, ওই চত্বরে আয়োজিত বঙ্গসংস্কৃতি-উৎসবের মঞ্চ-চেয়ার-প্যাণ্ডেল ইত্যাদি।
৪. জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হক ভূঁইয়ার বাড়ির একটি কার্যালয়।
৫. রেল-লাইনে আগুন দিয়েছে। হায়েনার মতো ওদের হিংস্র-দাঁতের আঘাতে রেল-লাইনের স্লিপার তুলে ফেলেছে।
৬. রেল-লাইন অবরোধ করে সাময়িকভাবে মানুষের মাঝে আতংকসৃষ্টি করেছে।
৭. রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত পুলিশের রিক্যুইজিশন করা গাড়িতেও আগুন দিয়েছে এই মাদ্রাসার ছাত্রনামধারী-দুর্বৃত্তরা।
এদের তাণ্ডবলীলার কাছে হার মেনে “সূর্যমুখী কিন্ডারকার্টেন, মডেল গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল, হাজেরা সোবহান স্কুল-সহ” অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু কেন এই তাণ্ডবলীলা?
এরা বাংলাদেশ-রাষ্ট্রকে ভালোবাসে না। এরা বাংলাদেশকে এখনও স্বীকার করে না। এরা এখনও মনে-মনে তাদের দেশ হিসাবে ভালোবাসে পাকিস্তানকে। তাই, কখনও একটুআধটু সুযোগ পেলেই তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এভাবে আগ্রাসী হয়ে ওঠে। এইসব মাদ্রাসার একশ্রেণীর পাতিহুজুর ছাত্রদের জিম্মি করে তাদের ইসলামবিরোধী-শিক্ষা দিচ্ছে। আর দিচ্ছে সন্ত্রাসের তালিম। এইসব পাতিহুজুর ইসলামের কেউ নয়। এরা নিজেদের মতো করে ও “ইসলামের ভুলব্যাখ্যা” দিয়ে দেশের কোমলমতী-শিশুদের জোরপূর্বক ধর্মের নামে মাদ্রাসায় ভর্তি করে তাদের আমাদের পবিত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে অস্ত্র, গজারির লাঠি, গ্রেনেড, হাতবোমা ইত্যাদি। আর এইসব পাতিহুজুর শিশুকাল থেকে শিশুদের মন ও মগজের মধ্যে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব গড়ে তুলছে। তাই, বাংলাদেশে আজ এই দুরাবস্থা। ইসলামে “আল্লাহর ওলী” আছে, “ইনসানে কামেল” আছে “আলেম” আছে, কিন্তু এইসব পাতিহুজুরের স্থান নেই। পবিত্র ইসলামে সন্ত্রাস নেই। কিন্তু যারা ইসলামের নামে ঠাণ্ডামাথায় সন্ত্রাসসৃষ্টি করছে, তারা কারা? এরা কেন এমন করছে? কারণ, এরা এইসব করার জন্য কয়েকটি আরব-রাষ্ট্র ও পাকিস্তান থেকে অনবরত টাকা পাচ্ছে। এরা সেই বিদেশীপ্রভুদের নির্দেশে দেশের ভিতরে সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে এভাবে নাশকতা ও তাণ্ডবলীলায় মেতে ওঠে। কিন্তু এভাবে আর কত? আর কত? আর কত?
রাষ্ট্র কি এখনও আগের মতো হাত-পা-গুটিয়ে বসে থাকবে?
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩০