somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইয়িদ রফিকুল হক
আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

মুক্তচিন্তা ভালো। তবে তা মহান আল্লাহ ও তাঁর পবিত্র রাসুলকে গালি দিয়ে নয়।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুক্তচিন্তা ভালো। তবে তা মহান আল্লাহ ও তাঁর পবিত্র রাসুলকে গালি দিয়ে নয়।
সাইয়িদ রফিকুল হক

আপনি একজন মুক্তচিন্তক। ভালো কথা। আপনি সবসময় মুক্তচিন্তা করবেন। এটিও খুব ভালো কথা। আর আপনি সারাজীবন মুক্তচিন্তা করুন। খুব ভালো কথা। আর আপনি মুক্তচিন্তা করতে-করতে একজন বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাহিত্যিক ও নন্দনতত্ত্বের শিল্পী হয়ে উঠুন। এতে দেশ ও জাতির মঙ্গল হবে। আপনি মুক্তচিন্তা করতে-করতে ভাবলেন: পৃথিবীতে কোনো ঈশ্বর নাই! তাই, আপনি নাস্তিক হয়ে যাবেন বা সরাসরি নাস্তিক হয়ে গেলেন। এটি আপনার ইচ্ছা। মহান স্রষ্টার পৃথিবীতে সবাই স্বাধীন। প্রত্যেকে তার কাজকর্ম স্বাধীনভাবে করার অধিকার রাখে। মহান ঈশ্বর কাউকে বন্দী করে রাখেননি। আপনি নিজের ইচ্ছায় নাস্তিক হয়ে গেছেন। এতে কার কী এমন আসে যায়?

আপনি নাস্তিক হয়েছেন। আপনার পক্ষে অনেক যুক্তি আছে। আর যারা হাজার-হাজার বছর ধরে বংশপরম্পরায় আস্তিক হয়ে আছেন তাদের পক্ষেও তো জোরালো যুক্তি রয়েছে। আপনি যদি নাস্তিক হয়ে কাউকে তার ধর্মপালনে বাধার সৃষ্টি করেন—তাহলে, সমাজে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে। আর এতে সংঘাত অনিবার্য। আপনি নাস্তিক—আপনি বুদ্ধিমান। তাই, আপনাকে মানতে হবে: আপনার যেমন ঈশ্বর না-মানার অধিকার রয়েছে তেমনিভাবে অন্যেরও অধিকার রয়েছে ঈশ্বর মানার। আর আপনি যে সমাজে-রাষ্ট্রে অধিকার ভোগ করতে চাচ্ছেন সেখানে আপনার কর্তব্য হলো: অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ণ না করা। কেননা, অধিকার ও কর্তব্য একটি আরেকটির সঙ্গে জন্মলগ্ন থেকে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আর কর্তব্যপালনকে বাদ দিয়ে অধিকার ভোগ করা যায় না।

সমাজে-রাষ্ট্রে আজ আপনি অধিকার চাচ্ছেন? এর অর্থ হলো: আপনি কারও অধিকার ক্ষুণ্ণ করবেন না, আর অন্যে আপনার অধিকার ক্ষুণ্ণ করবে না। তাই, সমাজে-রাষ্ট্রে যে-কারও অধিকার ভোগ করতে হলে তাদের অবশ্যই কর্তব্য মেনে চলতে হবে।

পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ধর্ম আছে। আর তা বর্তমানের সকল গণ্ডী অতিক্রম করে ভবিষ্যতেও থাকবে। ধর্ম কখনও শেষ হওয়ার বিষয় নয়—আর এটি সবসময় ‘Never ending process।’ ধর্ম কখনও একজন সত্যিকারের নাস্তিকের টার্গেট হতে পারে না। তার অন্য ভাবনা আছে। আর তার ভাববার বিষয় আছে।
ধর্মবিষয়ে আঘাত করে কারও হৃদয়কে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত করা সমীচীন নয়। অহেতুক কারও হৃদয়ে আঘাত করে তা ছিন্নভিন্ন কিংবা ধারালো ব্লেড দিয়ে একেবারে কেটেকুটে ফালাফালা করা মোটেই উচিত নয়।
লেখার অনেক বিষয় আছে। তবে তা কারও হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে নয়। ধর্মের ভিতরে যত রকমের ভণ্ডামি আছে, আর ধর্মের ভিতরে যত রকমের ভণ্ড লুকিয়ে আছে—এদের বিরুদ্ধে সবসময় লেখা উচিত। আর আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে: কখনওই মহান আল্লাহ ও তাঁর পবিত্র রাসুল (সা.)-কে গালি দিয়ে সাহিত্য হয় না। সাহিত্য মহৎ-বিষয়—আর অন্যকিছু।

মুক্তচিন্তা মানে চিন্তার ক্ষেত্রে মুক্তি বা স্বাধীন বা উন্মুক্ত বা সর্বপ্রকার কুসংস্কারমুক্ত হয়ে নিজের ধারণা ব্যক্ত করা। আর এই মুক্তচিন্তার ভিতরে অবশ্যই রাষ্ট্রের আইনকানুন রয়েছে। আপনি যদি এগুলোকে কুসংস্কার মনে করেন—তাহলে তো চলবে না। কারণ, সমাজে-রাষ্ট্রে অনেক মানুষের কাছে এর বিরাট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। মানুষ আইনকানুন মানতে অভ্যস্ত। আপনার একটি কথায় সমাজের বা রাষ্ট্রের সব মানুষ একনিমিষে নাস্তিক হয়ে যাবে না। আবার পৃথিবীর সব মানুষই কখনও আস্তিক হবে না। পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আস্তিক ও নাস্তিক দুইটি সত্তা বিরাজমান। আগে তো কখনও নাস্তিক ও আস্তিকের মধ্যে সংঘাতসৃষ্টি হয়নি। বরং যারা আগে নাস্তিক ছিলেন বা এখনও সত্যিকারের নাস্তিক রয়েছেন তারা কখনও কারও ধর্মকে কটাক্ষ করেন না কিংবা ঈশ্বর বা তাঁর প্রেরিত নবী-রাসুলদের বা কোনো ধর্মের অবতারকে গালি দেন না। তারা যথার্থ নাস্তিক। তারা সমাজ-রাষ্ট্রের সভ্য-নাগরিক।
আর আপনি হঠাৎ করে একদিনে নাস্তিক হয়ে তার পরদিন থেকে মহান আল্লাহ ও তাঁর পবিত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দিতে শুরু করলেন! এটি কোন মানসিকতা? আপনি ধর্মের ভিতরে প্রচলিত নানারকম গরমিলের সমালোচনা করতে পারেন। আপনি ধর্মকেন্দ্রিক ভণ্ডদের বিরুদ্ধে লড়াই করুন। আর তা না করে আপনি সরাসরি মহান আল্লাহ ও তাঁর পবিত্র রাসুলদের গালি দিতে আরম্ভ করে আর তাকেই জীবনের একমাত্র আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করলেন! আসলে, আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে যারা সত্যিকারের নাস্তিক তারা কোনো সমস্য নয়—সমস্যা হচ্ছে: যারা আজকাল কোনোকিছু না বুঝে হুজুগে নব্যনাস্তিক হচ্ছে তারা। আর এই ভূঁইফোঁড় নব্যনাস্তিকরাই এখন নাস্তিক্যবাদের ধারণা পাল্টে দিতে আর তাদের জনপ্রিয়তাসৃষ্টির কাজে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বেছে নিয়েছে। কিন্তু কেন? কারণ, এরা কেউই আসল নাস্তিক নয়। এরা নিজেদের স্বার্থে ও সুবিধার্থে সমাজে-রাষ্ট্রে নাস্তিক হয়েছে।

আপনি একজন নাস্তিক হয়ে প্রকাশ্যে বলতে পারেন: “আমি এই পৃথিবীতে কোনো স্রষ্টা বা ঈশ্বর মানি না। আর কোনোদিন তা মানবো না।” এতে কারও কোনো আপত্তি নাই। কোনো মুসলমানই আপনাকে আক্রমণ করতে পারবে না। কারণ, মহান আল্লাহ তার অস্বীকারকারীদের হত্যার আদেশ দেননি। কিন্তু আপনি যখন কারও ঈশ্বর বা আল্লাহকে বা তাঁর রাসুলকে বা কোনো অবতারকে গালি দিবেন, তখন তো আপনি অন্যের অধিকার স্বীকার করলেন না। আবারও বলছি: আপনার অধিকার আছে নাস্তিক হওয়ার। আর অন্যের অধিকার রয়েছে আস্তিক হওয়ার। আর তাই, সবসময় মনে রাখুন: নিজের অধিকার ভোগ করতে চাইলে আপনাকে অন্যের প্রতি কর্তব্যপালন করতে হবে অন্যের অধিকাররক্ষায়। তাহলে, আপনার অধিকারে আর কেউ হস্তক্ষেপ করার সাহস পাবে না।

আমি প্রার্থনা করি: আপনি অনেক বড় মুক্তচিন্তাবিদ হন। আর আপনি চিন্তা করতে-করতে সবসময় চিন্তাসাগরে ভাসতে থাকুন। আপনি হয়ে উঠুন সমাজ-রাষ্ট্রের প্রভাবশালী এক গবেষক কিংবা চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব। কিন্ত দোহাই লাগে: আপনি কোনো ধর্মকে কিংবা মহান আল্লাহ ও তাঁর পবিত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কখনও আক্রমণ করবেন না কিংবা তাঁদের গালি দিবেন না। আর সবসময় মনে রাখুন: নিজের অধিকার ও কর্তব্যের প্রতি। এতে আমাদের সমাজ হয়ে উঠবে সহনশীলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

বি.দ্র. যারা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ অপবাদ দিয়ে হত্যা করছে, তারা মূঢ় ও বিভ্রান্ত। পবিত্র ধর্ম ইসলামে কোনো সন্ত্রাস, নাশকতা ও বাড়াবাড়ি নাই।

সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২৫/০৪/২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১৪
২৯টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×