somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইয়িদ রফিকুল হক
আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

মনে হয় চিৎকার করে বলি: শয়তান জিন্দাবাদ (পর্ব—১)

২১ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মনে হয় চিৎকার করে বলি: শয়তান জিন্দাবাদ (পর্ব—১)
সাইয়িদ রফিকুল হক

কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এই বাংলাদেশকে কতই-না ভালোবেসে গেয়ে উঠেছিলেন:

ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা;
তাহার মাঝে আছে দেশ এক—সকল দেশের সেরা;
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা,
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাক তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে—আমার জন্মভূমি।

এই ছিল আমাদের সোনার বাংলা। কিন্তু আজ চারিদিকে কীসের যেন গণ্ধ পাচ্ছি! মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে আর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পশুত্ব! অতি-মুনাফালোভী অমানুষদের ভিড়ে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে নতুন-নতুন শয়তান! তাও সব নতুন জাতের আর নতুন ধাঁচের শয়তান! ওরা সবাই মিলেমিশে আজ সৎ, নির্লোভ আর ভালোমানুষদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। যাক, এবার আসল কথায় ফিরে আসি। শিরোনামের প্রসঙ্গে আসি।

দেশে অবাধে ধান্দাবাজি ও শয়তানি করে গোরুর গোশতো-বিক্রেতারা তথা গোশতো-ব্যবসায়ীরা (এদের আবার ব্যবসায়ী না-বললে এদের মানসম্মানে আঘাত লাগে! এরা মনে মনে কষ্ট পায়) গোশতোর দাম বাড়িয়েছে লাগামহীন। আর এই দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছিল। এরই মধ্যে কয়েক গোশতো-বিক্রেতা দেশের বিভিন্নস্থানে মোটামুটি ন্যায্য দামে গোশতো বিক্রয় করতে শুরু করে দেয়। আর এতে ভয়ানকভাবে নাখোশ হয়ে ওঠে অজাত-কসাইরা। এরা কম দামে গোরুর গোশতো-বিক্রেতাদের হুমকিধমকি দিয়ে তাদের কম দামে গোশতো বিক্রয় করতে বাধা দেয়। এব্যপারে তখন তাদের সাহায্য করতে ছুটে আসে সরকারি সংস্থা—‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর’ তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। এরকম একজন গোশতো-বিক্রেতা—নাম তার খলিল। সে এই রোজায় ৫৯৫ টাকা কেজিতে গোশতো বিক্রি করার আগাম ঘোষণা দেয়। আর সে রাজধানী ঢাকার শাহজাহানপুরে তার দোকানে রোজার শুরু থেকে এই দামে প্রতিদিন প্রায় ১০০০ কেজি থেকে ১৫০০ কেজি গোশতো বিক্রি করে চলেছে। এর আগেও সে ৬০০ টাকায় গোশতো বিক্রয় করেছে। তার আগে ৬৫০ টাকায়ও বিক্রি করেছে।
বর্তমানে খলিল গোশতোর দাম কমিয়ে তা ৫৯৫ টাকা কেজিতে বিক্রিয় করছে। সে প্রকাশ্যে বলেছে, এতেও তার ভালো লাভ থাকে। তাই, অহেতুক মানুষের পকেট কেটে টাকা নেওয়া ঠিক নয়। আর এতেই বাদ সেধেছে অতিলোভী মুনাফাখোর কসাইচক্র। এরা খলিলের পিছনে লেগেছে জোট বেঁধে।
স্বাস্থ্যবান-হাস্যোজ্জ্বল যুবক খলিলের মুখে দাড়ি নেই! মাথায় টুপি নেই! পরনে পায়জামা এবং গায়ে লম্বা জোব্বা বা পাঞ্জাবিও নেই! তবু সে গোশতো বিক্রিয় করছে সর্বনিম্ন ৫৯৫ টাকা কেজিতে। আর যার বা যাদের মুখে দাড়ি, মাথায় সাদা টুপি, কপালে সিজদাহ’র কালো দাগ, গায়ে লম্বা-সাদা জোব্বা, আর যারা ইসলামের একনিষ্ঠ সেবক তারা গোশতো বিক্রয় করছে ৭৫০ টাকা কেজিতে! খলিল ইসলামের ও মুসলমানের পরিচয়ে গোশতো বিক্রয় করছে না। সে গোশতো বিক্রয় করছে মানুষের পরিচয়ে।
আর এই খলিল যাতে ৫৯৫ টাকা কেজি দরে গোশতো বিক্রয় করতে না-পারে তজ্জন্য তাকে বিরাট হুমকি দিয়েছে এক দাড়ি-টুপি-জোব্বাওয়ালা গোশতো-বিক্রেতা। সে আবার ২২ বার নাকি হজও করেছে!
সব দেখেশুনে তাই মাথা ঠিক থাকে না। মনে হয় আজকাল প্রকাশ্যে বলি আর সজোরে একেবারে গলা ফাটিয়ে বলি—শয়তান জিন্দাবাদ! শয়তান জিন্দাবাদ! শয়তান জিন্দাবাদ!...

আজ ছাত্র-পড়িয়ে শ্যামলী শাহী মসজিদের সামনে দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। মসজিদের সামনে লেবুর পসার সাজিয়ে বসে থাকা দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলাম, “লেবুর দাম কত? হালি কত করে?”
সে বেশ ভারিক্কিচালে বললো, “চল্লিশ টাকা হালি।”
মোটামুটি সাইজের লেবু।
বললাম, “কম আছে?”
বলে, “না। একদাম।”
আমি রোজা-মুখে বলছি, আমি লেবু কিনতে পারিনি।
এর মুখেও কী সুন্দর কালো দাড়ি! মাথায় সাদা টুপি।! আর গায়ে একখান ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি! মসজিদের সামনে দোকানদারি করছে বলে ওর সাজসজ্জা আরও বেশি ভয়ানক!
এই লেবু সে ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে কিনেছে বড়জোর ২০০-২৫০ টাকা শ’য়ে। মানে, ১০০ লেবু ২০০ কিংবা ২৫০ টাকা। নাহয় আরও ৫০ টাকা বাড়িয়ে লেবুর দাম ধরলাম ৩০০ টাকা। তাহলে, দাঁড়ালো ১০০ লেবুর দাম ৩০০ টাকা। আর সে ৪টি লেবু বিক্রয় করছে ৪০ টাকা দরে! এবার আসুন এই লেবুর দামের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরি:
১০০টি লেবুর দাম=৩০০ টাকা
অতএব, ১টি লেবুর দাম =৩০০ ÷ ১০০ টাকা
সুতরাং, ১টি লেবুর দাম=৩ টাকা।
তাহলে, তার ৪টি লেবুর ক্রয়মূল্য=৩×৪ টাকা=১২ টাকা।
তার অন্যান্য খরচ ৪টি লেবুর জন্য (অতিরিক্ত)= ২ টাকা।
তার খরচসহ ৪টি লেবুর ক্রয়মূল্য দাঁড়ালো ১৪ টাকা। সে বিশ টাকায় বিক্রয় করলেও পুরো ৬ টাকা লাভ থাকে হালিতে। আর যদি ২৫ টাকায় বিক্রয় করে তাহলে লাভ থাকে ১১ টাকা। সে বিক্রয় করছে কত? ৪০ টাকায়!
আরও এগিয়ে বিডিআর-বাজারখ্যাত কয়েকটি দোকানে ঢুকে দেখলাম, এর চেয়ে সামান্য একটু বড় সাইজের লেবুর দাম হেঁকেছে ৬০ টাকা হালি! আর সবচেয়ে বড় লেবুর দাম হালিতে ৮০ টাকা!
মনের দুঃখে আজ আরেকবার আপনমনে বললাম—শয়তান জিন্দাবাদ!

লেবু কিনতে পারিনি। শেষমেশ ভাবলাম, একটা তরমুজ কিনে বাড়ি ফিরি। সেখানে গিয়ে দেখি, তরমুজের বাজারে আগুন! শত-শত তরমুজের পসার সাজিয়ে বসে রয়েছে পাক্কা মুমিন-বান্দারা। কী চমৎকার বেশ-ভূষা তাদের! মুখে দাড়ি! মাথায় সাদা টুপি! গায়ে সাদা পাঞ্জাবিও আছে। রমজান-মাস। তাই, লেবাসসুরত ভালোই ব্যবহার করেছে এরা। এতে ব্যবসার গতি বাড়ে। আর এদের ভাবখানা এমন, যেন এইমুহূর্তে কাবাঘর তাওয়াফ করে ফিরেছে! দুনিয়ার কোনো অন্যায়-অপকর্ম সে আর চেনে না! কিন্তু কাছে গিয়ে বুঝলাম, এরা শয়তানের চেয়েও বড় শয়তান। ভেজাল তরমুজ! আরও কাছে গিয়ে ভালোভাবে দেখলাম, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ব্যবহার করে ভিতরে ঢুকিয়েছে বিষাক্ত লাল রং ও বিষ! সব এখন ক্যামিকালাইজড!
প্রকাশ্য-দিবালোকে সেই বিষাক্ত তরমুজের দাম হাঁকাচ্ছে কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে! তাও যদি ভিতরে কিছু থাকতো। সব অবাত্তি তরমুজ! বৈশাখ মাস আসার আগেই বেশি মুনাফা কামাই করার আশায় পাপিষ্ঠরা দেদারসে ক্ষেতের তরমুজ ঢাকা-শহরমুখো করছে। কিন্তু দাম ছাড়ছে না। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম—তরমুজ আর খাবো না।
এই রমজান-মাসে একটা মুমিন-বান্দার মনেও একটু দয়া হয় না! একটাও একটু দাম কমায় না! একটার দেখাদেখি তাহলে আরও কিছু মানুষের জন্ম হতো! এই দেশের বিচিত্র শয়তানদের বিচিত্র চেহারা ও দাপট দেখে কখন যেন বলে ফেললাম—শয়তান জিন্দাবাদ!

টিভিতে-সব চ্যানেলে প্রায় প্রতিদিন দেখি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, শুকনো মরিচ, আপেল, আঙ্গুর, কমলা, আরবের খজ্জুর, নাশপাতি, মাল্টা, ডালিমসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আর ফলফলাদি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে! আর ফলমূলসহ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম ধরে রেখেছে সফেদ-সাদা পোশাকের হাজিসাবরা। এদের অনেকেই ১০-১২ বার আবার কেউ-কেউ ২০-২২ বার করে হজ করেছে! এমনকি কেউ-কেউ নাকি হজ করতে-করতে একেবারে ক্লান্ত! এদের কপালে এক টাকার সমপরিমাণ জায়গাজুড়ে সিজদাহ’র কালো দাগ! নামাজির চিহ্ন! মুখে বিরাট-বিরাট দাড়ি! মাথায় ধবধবে সাদা টুপি! আর গায়ের পোশাকআশাকে নাকি আসমানের ফেরেশতাদেরও হার মানাবে! এক মাইল দূর থেকেও এদের গায়ের আতরের ঘ্রাণ পাওয়া যায়! তবু এরা এই পবিত্র মাহে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছাড়ছে না। একটু দাম কমায় না! এরা গড়ে তুলছে টাকার পাহাড়! এরা হয়তো বেহেশতো কেনার চিন্তাভাবনা করছে! কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবু এইসব ধার্মিক ব্যবসায়ী একটুও বোঝে না মানুষের মন। এরা ধার্মিক নাকি বকধার্মিক! এদের চেয়ে মনে হয় শয়তানও ভালো। তাই, মাঝেমাঝে মনে হয় চিৎকার করে বলি—শয়তান জিন্দাবাদ!

ছবি: গুগল ও নিজস্ব এডিট


সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা।
১৮-০৩-২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:১৮
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×