ভাষা মানুষের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। অন্যভাবে বলা যায়, মুখ দিয়ে শব্দ করে ভাব প্রকাশের পদ্ধতিই হল ভাষা। বাংলা তোমার-আমার মায়ের ভাষা। এ ভাষায় আমরা কথা বলি, পড়ি, লিখি, আবার স্বপ্নও দেখি। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমাদের এ প্রাণের ভাষার প্রথম বই কোনটি?
চর্যাপদ কবে রচিত হয়েছিল, এ ব্যাপারে বাংলা ভাষার জাঁদরেল পণ্ডিতরা একদমই একমত হতে পারেননি। একেক জন পণ্ডিত একেক মন্তব্য করেছেন। কারও মতে চর্যাপদ ৬৫০-৯০০ খ্রিস্টাব্দে লিখিত, কারও মতে ১০০০-১২০০ সালে; এমনি একেক জনের একেক মত। সবার মত মিলিয়ে অনুমান করা হয়, চর্যাপদ রচিত হয়েছিল ৮৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।
এই বইটি কিন্তু হারিয়েই গিয়েছিল। ১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের একটি খণ্ডিত পুঁথি খুঁজে বের করেন। তাও আবার নেপালের রাজদরবারের লাইব্রেরি থেকে! বাংলা ভাষার সবচেয়ে পুরনো এই বইটি নিয়ে কিডজে একটি ফিচার প্রকাশিত হয়েছিল। নিচে ফিচারটির লিঙ্ক দেওয়া হল।
এ তো গেল বাংলা ভাষার সবচেয়ে পুরনো বইয়ের গল্প। এবার আসা যাক, বাংলা ভাষার প্রথম মুদ্রিত বইয়ের গল্পে।
যতদূর জানা যায়, পৃথিবীর প্রথম বাংলা হরফে মুদ্রিত বই প্রকাশিত হয়েছিল ১৬৮২ সালে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। তবে বইটি পুরো পাওয়া যায়নি, বইটির কিছু ছেঁড়া পাতা পাওয়া গিয়েছিল। এটিকেই বলা যায় সবচেয়ে পুরনো বাংলা মুদ্রণের নমুনা। এতে যে তামার মুদ্রণের নমুনা পাওয়া যায়, তার বর্ণগুলো ছিল তামার পাত থেকে মুদ্রিত। অর্থাৎ তখনও ঢালাই করা বাংলা বর্ণের প্রচলন হয়নি।
এরপর ১৭২৫ সালে জার্মানিতে সম্ভবত আরেকটি বাংলা বই ছাপা হয়েছিল। সেটিও পাওয়া যায়নি। ছেঁড়া পাতা ইত্যাদি নমুনা পাওয়া গেছে। সেসব থেকেই বইটির কথা জানা গেছে।
বাংলায় লেখা সবচেয়ে পুরনো যে মুদ্রিত বইটি পাওয়া গেছে, তার নাম-- ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’। লিখেছিলেন মনোএল দ্য আসসুম্পসাঁও। তবে বইটি বাংলা বর্ণে নয়, মুদ্রিত হয়েছিল রোমান হরফে। বইটি লেখা হয়েছিল ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে। তবে স্পেনের লিসবন থেকে ছেপে বের হয় ১৭৪৩ সালে।