somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ চকিত প্রেমাগুন

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দু’ মাস আগের ঘটনা। টিএসসি মোড়ে হলুদবরণ এক কন্যাকে দেখে ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম বর্ষের ছাত্র আরিফের হৃদয়ে প্রেমের আগুন জ্বলে উঠে ধপ করে। কিন্তু কন্যার সাথে সে আলাপ করতে পারে না। কন্যা হঠাৎ তার দৃষ্টিলোকে আবির্ভূত হয়ে হঠাৎই অদৃশ্য হয়ে যায়। হলুদবরণ কন্যার নাই টেলিফোন, নাই ঠিকানা। আরিফের হৃদয়ের আগুন একগুন, দুইগুণ, তিনগুন করে শতগুণ বেড়ে যায়। ফায়ারব্রিগেড দিয়েও সেই আগুন আর নেভানো যায় না। আগুনের উত্তাপে আরিফের ভেতর একটা পরিবর্তন চলে আসে। তার এই পরিবর্তনে চিন্তিত বন্ধুরা তাকে চাপাচাপি শুরু করে দেয়। বন্ধুদের চাপাচাপিতে আরিফ তার হৃদয়ে আগুনজ্বালানিয়া সেই হলুদবরণ কন্যার কথা তাদেরকে খুলে বলে। বন্ধুরা তার পীঠ চাপড়িয়ে বলে, আরে ব্যাটা এই ব্যাপার! এতোদিন বলস নাই ক্যান? চিন্তা করিস না। ওই মেয়ে যদি মঙ্গল গ্রহে থাকে তারপরও তাকে খুঁজে বের করা হবে।

বন্ধুর হাতে আছে মহাশক্তি। বন্ধুর মনের বিষণ্ণতা দূর করতে বন্ধু যতোটা উদ্দামবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই বেগে পাহাড়ের ঝর্ণাধারাও পাথরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিনা সন্দেহ আছে। বিশেষকরে বন্ধুর প্রেম জটিলতার প্যাঁচ খুলতে বন্ধুর যে উদ্যোগ দেখা যায় সেই উদ্যোগের সিকি পরিমাণও যদি একটা সমাজ পরিবর্তনের কাজে লাগানো যায় তাহলে সেই সমাজকে উল্টানোর জন্য বড়জোর এক মাস সময় লাগবে। আরিফের উদ্যোগী বন্ধুমহল আড়াই দিনের মধ্যেই হলুদবরণ কন্যার বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে আরিফের কাছে পেশ করে, আরে ব্যাটা এই মেয়ে তো আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে।

আরিফ পুলকিত হয়ে বলে, কোন সাবজেক্টে?

-- রসায়ন।
-- কোন ইয়ার?
-- থার্ড ইয়ার।

বন্ধুরা ভাবে সিনিয়র আপুর কথা শুনে আরিফ চুপসে যাবে। কিন্তু আরিফ চুপসে যায় না। । দুই বছরের সিনিয়র তাতে কি হয়েছে? প্রেমের ক্ষেত্রে বয়স কোন বাঁধা নয়। বন্ধুরা তার এই প্রেমের গভীরতা উপলব্ধি করে আরও উদ্যমী হয়ে উঠে। দু’ একজন অবশ্য তাকে একটু দমানোর চেষ্টা করে, আরিফ বাদ দে। রসায়নের মেয়েরা একটু রসকষহীন হয়। এদের হৃদয়ে প্রেম সহজে ক্রিয়া করে না। এরা সবসময় বিক্রিয়া নিয়েই পড়ে থাকে।

আরেকজন বলে, হ্যাঁ দোস্ত ঠিকই। তুই এক কাজ কর, আমাদের সাহিত্যের কোন মেয়েরে পটায় ফ্যাল। সাহিত্যের মেয়েদের মন হলো কবিতার মতো নরম।

আরিফ তাদের কথায় কান দেয় না। উদ্যমী যারা আছে তারা এই নিরুৎসাহদাতাদের থামিয়ে দিয়ে হলুদবরণ কন্যার সাথে আরিফের সাক্ষাতের একটা ব্যবস্থা করতে তৎপর হয়ে উঠে। নজরুলের ১২৬ তম জন্মজয়ন্তীতে হলুদবরণ কন্যা যে এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় গান গাইবে সেই সংবাদও তারা সংগ্রহ করে ফেলে। আরিফ তার ভাবি প্রেয়সীর গান গাওয়ার গুণের কথা শুনে অতিব আপ্লুত হয়ে পড়ে।

অতঃপর ২৫ শে মে’ র ঘটনা। আরিফ তার বন্ধুদের সাথে লাল গোলাপ হাতে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় হাজির হয়। দু’ একজনের পর হলুদবরণ কন্যা মঞ্চে উঠে নজরুলের গান ধরে, যদি সহেলী আমায় কানে কানে কিছু বলে---

আ-হা কি মধুর কণ্ঠ। কন্যার কণ্ঠ উপস্থিত শ্রোতাদের কানে যতোটা না মধুর বাজে, তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি মধুর হয়ে আরিফের কানে বাজতে থাকে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে বন্ধুদের কাছ থেকে ঝাড়ফুঁক নিয়ে আরিফ হলুদবরণ কন্যাকে প্রপোজ করে। তার প্রপোজে কন্যার অধরে মৃদুমধুর হাসির রেখা ফুটে উঠে। কন্যা তাকে কফির অফার দেয়। কফি খেতে খেতে কন্যা বলে, তোমরা কয় ভাইবোন?

-- দুই ভাই এক বোন। ভাই বড়, বোন ছোট।
-- বড়ভাই কিসে পড়ে?
-- রসায়ন থার্ড ইয়ার।

কন্যা এবার একটু নড়েচড়ে বসে। অধরে তার মধুর হাসি খেলে যায় আবার। বলে, তোমার ভাইয়া যখন প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলো তোমার মতো সেও একদিন লাল গোলাপ হাতে নিয়ে আমাকে প্রপোজ করেছিলো।

আরিফ উৎকণ্ঠিত হয়ে বলে,তারপর?

-- তারপর থেকে তোমার ভাইয়ার সাথে আমার প্রেম চলছে এখনো মৃদুমন্দ ছন্দে।

আরিফের হৃদয় ভেঙে যায়। চোখের কোণে জল ছলছল করে উঠে। কফি ছেড়ে সে উঠে পড়ে তড়িতে। হলুদবরণ কন্যা তাকে টেনে ধরে, এই দেবর শুনে যাও।
আরিফ শুনে না। মঞ্চে এমন সময় কেউ একজন নজরুলগীতি শুরু করে, জল দেখেছি আমি তোমারও চোখে---

বিঃদ্র- গল্পটি নজরুলের জন্মদিনে লেখা- ২৫ মে ২০১৫-
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×