somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদয়াত ও এর সঠিক ব্যাখ্যা

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদয়াতের লোগাতী অর্থঃ
“বিদয়াত হলো দ্বীনের পূর্ণতার পর নতুন কোন বিষয় উদ্ভব হওয়া অথবা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর আমল ও খাহেশাত সম্পর্কিত কোন বিষয় নতুন উদ্ভব হওয়া।” (লোগাতুল কামূস আল মহীত্ব ৩য় জিলদ্‌ পৃষ্ঠা ৩, বয়ানুল লিসান পৃষ্ঠা ১১৫, লিসানুল আরব ১ম জিলদ্‌ পৃষ্ঠা ২২৯, তাজুল উরুস ৫ম জিলদ্‌ পৃষ্ঠা ২৭১, লোগাতে হীরা পৃষ্ঠা ১৭৫, গিয়াসুল লোগাত পৃষ্ঠা ৭১)

“জেনে রাখ, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর পরে উদ্ভব ঘটেছে এমন প্রত্যেক কাজই বিদয়াত।”(আশআতুল লোমাআত)

বিদয়াতের শরীয়তী অর্থঃ
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ আল্লাম বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,
“প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত হলো- এমন জিনিসের আবির্ভাব যার নমুনা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।”(উমদাতুল ক্বারী ৫ম জিলদ্‌ পৃষ্ঠা ৩৫৬, আল ইতেছাম জিলদ্‌ পৃষ্ঠা ২০)

আল্লামা ইসমাঈল নাবিহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,
“(শায়খুল ইসলাম) ইজদুদ্দীন ইবনে সালাম বলেন, বিদয়াত এমন একটি কাজ, যা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় সম্পন্ন হয়নি।”(জাওয়াহিরুল বিহার পৃষ্ঠা ২৮০)

ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,
“শরীয়ত মোতাবেক বিদয়াত হচ্ছে- এমন সব নব আবিস্কৃত জিনিসের নাম,যা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।”(শরহে মুসলিম লিন নববী)

উপরোক্ত লোগাতী ও শরীয়তী অর্থের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিদয়াত হলো- হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভাবিত বিষয়ের কোনটি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য ও কোনটি পরিত্যাজ্য, তা অবশ্যই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।
তাই বিদয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত হাদীস শরীফের কিতাব মিরকাত শরীফে উল্লেখ করেছেন,
“ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে নব উদ্ভাবিত কাজ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, আসার( সাহাবা-ই-ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের আমল বা কাওল) অথবা ইজমার বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত, সেটাই গোমরাহী ও নিকৃষ্ট। আর যে নব উদ্ভাবিত কাজ উল্লেখিত কোনটির বিপরীত বা বিরুদ্ধ নয়, তা মন্দ বা নাজায়েয নয়।” (মিরকাত শরীফ, ১ম জিলদ্‌ পৃষ্ঠা ১৮৯)
ইমাম শারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিই যে নিকৃষ্ট বা নিষিদ্ধ হবে, তার কোন যুক্তি নেই।”( আনওয়ারে কুদসিয়্যাহ)

বিদয়াতের শ্রেণী বিভাগঃ
ইমাম, মুজতাহিদ্গণ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিদয়াতকে প্রধানতঃ ২ ভাগে ভাগ করেছেন,
(১) বিদয়াতে ই’তেক্বাদী (আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিদয়াত)
(২) বিদয়াতে আ’মলী ( কর্মগত বিদয়াত)

বিদয়াতে ই’তেক্বাদীঃ যে সমস্ত আক্বীদা বা বিশ্বাস কুরআন ও সুন্নাহর মুলনীতির বহির্ভূত, মূলতঃ এ আক্বীদাগত বিদয়াতের সবটাই হারামের পর্যায়ভুক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমনঃ খারেজী, মু’তাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বাহর আবির্ভাব। এই নব্য আবির্ভূত ফিরক্বাহর ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।
বিদয়াতে আ’মলীঃ একে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়। (১) বিদয়াতে হাসানা (২) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ

(১) বিদয়াতে হাসানাঃ বিদয়াতে হাসানা সম্পর্কে হাদীছে শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“যে কেউ দ্বীন ইসলামের উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে ( যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য সে সওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতি অনুসরণ করবে, তার সাওয়াবও সে পাবে।” ( মুসলিম শরীফ)

বিদয়াতে হাসানা আবার ৩ প্রকার –(১) বিদয়াতে ওয়াজিব (২) বিদয়াতে মোস্তাহাব (৩) বিদয়াতে মোবাহ

বিদয়াতে ওয়াজিবঃ যা পালন না করলে ইসলাম ক্ষতি বা সংকট হবে, যেমনঃ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ কাগজে লিপিবদ্ধ করা, কুরআন শরীফের জের, যবর, পেশ দেওয়া, মাদ্রাসা নির্মাণ করা, নাহু সরফ, উসুল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কিতাব লেখা ও পড়া।
বিদয়াতে মোস্তাহাবঃ যা শরীয়তে নিষেধ নেই এবং তা সমস্ত মুসলমানগণ ভাল মনে করে সাওয়াবের নিয়তে করে থাকেন। যেমনঃ তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়া, খতিবের সম্মুখে আযান দেওয়া, রমজান মাসে বিতর নামায জামায়াতে আদায় করা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
“হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, লোকে যা ভাল মনে করে তা আল্লাহ পাক-এর নিকটও ভাল। আমার উম্মত কখনো গোমরাহীর মধ্যে একমত হবে না।” ( মেশকাত শরীফ)
বিদয়াতে মোবাহঃ ঐ সমস্ত নতুন কাজ যা শরীয়তে নিষেধ নেই। যেমনঃ পোলাও, বিরিয়ানী, বুট, পিয়াজু ইত্যাদি খাওয়া, ট্রেন, বাস, প্লেন ইত্যাদি যানবাহনে চড়া,মসজিদে মেহরাব ব্যবহার করা, মিনার ব্যবহার করা, মাইক ব্যবহার ইত্যাদি।

(২) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহঃ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“যে ব্যক্তি আমার দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিসের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (মেশকাত শরীফ)

আর বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ২ প্রকার – (১) বিদয়াতে হারাম (২) বিদয়াতে মাকরূহ

বিদয়াতে হারামঃ যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফের পরিপন্থী বা ওয়াজিব আমলগুলো ধ্বংসের কারণ। যেমনঃ ইহুদী, নাসারা ও ভন্ড ফকিরদের কু-প্রথা বা আক্বীদাসমূহ।
বিদয়াতে মাকরূহঃ যা দ্বারা কোন সুন্নত কাজ বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমনঃ বিধর্মীদের পোশাক পরিধান করা, টাই পরা ইত্যাদি।

মূল কথা হলো- যা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর নতুন উদ্ভব হয় এবং তা দ্বীনের সাহায্য করে থাকে অথবা সাহায্যকারী না হলেও দ্বীনের কোন ক্ষতি করে না, সেটাই বিদয়াতে হাসানা। আর যে নতুন বিষয় উদ্ভব হওয়ার কারণে দ্বীনের কিছু মাত্রও ক্ষতি হয়, সেটাই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিদয়াত বলতেই পরিত্যাজ্য নয়। অর্থাৎ যে নতুন উদ্ভাবিত কাজ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের বিপরীত তা অবশ্যই বর্জনীয়। আর সেটাই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা হারামের অন্তর্ভূক্ত, যদিও তা “কুরুনে সালাসার” (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরবর্তী ৩ যুগ) মধ্যে উদ্ভাবিত হোক না কেন। আর যেই নতুন পদ্ধতি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অনুকূলে তা অবশ্যই জায়েজ এবং উত্তম। আর সেটাকেই বিদয়াতে হাসানা বলা হয়। যদিও তা “কুরুনে সালাসার” পরে উদ্ভাবিত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×