সারারাত ধরে ইন্টারনেট এ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ভোরবেলায় ঘুমাতে গিয়েছিল অন্তু। কিন্তু সাধের ঘুমটা কে শত অনিচ্ছা স্বত্তেও নির্বাসন দিয়ে মায়ের বকুনিতে সকাল ৮ টা বাজতে বাজতেই বিছানা ছাড়তে হয়েছে। মায়ের নিষেধকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রাত জাগার ফল হিসেবে এই বিশেষ শাস্তি। এত আরামের ঘুম আর বিছানা থেকে অন্তুর কিছুতেই উঠতে ইচ্ছা করছিলনা তবুও শুধু মায়ের কাঁচামরিচের মত ঝাঁঝালো বকুনির হাত থেকে নিস্তার পেতেই সে চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসল। খোলা জানালা দিয়ে সকালের রোদ ঘরে এসে পড়ছে। চশমাটা চোখে দিয়ে জানালার বাইরে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল অন্তু।
মাথাটা একটু পরিষ্কার হতেই তার হঠাৎ মনে পড়লো যে আজকে রুমার জন্মদিন। এবং রুমার কোন বিশেষ দিনে সকাল সকাল ফোন করে তাকে উইশ করাটা অন্তুর অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের ভেতর পড়ে। একদিনও যদি অন্তু কোন কারনে এই ব্যাপারটা ভুলে গেছে তো তার পর পুরো ১টা দিন অন্তুর সাথে রুমার কথা বন্ধ। মেয়েটা যে এতই অভিমান করতে পারে! কখনও কখনও সামান্য কোন বিষয় নিয়ে ওদের ভেতর ছোটখাটো ঝগড়াও হয়ে যায়। ইস!! একটা মানুষ কেমন করে সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এত রাগ করতে পারে যে খুব ভাল একজন বন্ধুর সাথে পুরা ১ টা দিন কথা বলবেনা এই বিষয়টা অন্তুর মাথায় কখনই আসেনা।
এইসব সাতপাঁচ নানারকম ভাবতে ভাবতে অন্তুর মনে হল , “এখনই যদি ফোন করে ওকে জন্মদিনের জন্য উইশ না করি তাহলে তো আমার খবর করে ছাড়বে। দেখা যাবে ২ দিন কথা বন্ধ। এই মেয়েটা কে নিয়ে যে কি করি?” এই ভেবে সাথে সাথে ফোন হাতে নিয়ে একটা বাটন প্রেস করতেই অন্তুর মাথায় হাত। মোবাইল বন্ধ। “হায় হায় সারারাত মোবাইল চালিয়ে তো চার্জ শেষ করে ফেলেছি। মোবাইল তো দেখি একা একাই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কি করি?” ভেবে তড়িৎ কোন উপায় না পেয়ে তড়িঘড়ি করে অন্তু ফোন টা চার্জে দিল। তারপর চোখেমুখে হাজারো বিরক্তি নিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেস হতে গেল। ফ্রেস হয়ে দ্রুত হালকা কিছু খেয়ে নিয়ে ঘরে এসে চার্জ থেকে ফোনটা খুলে অন করে তখুনি রুমার নাম্বারে ফোন দিল।
“হ্যালো রুমা। কেমন আছ? হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। সরি একটু দেরি হয়ে গেল। ” কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে অন্তু বার বলল “ আরে বাবা বললাম তো ভুল হয়ে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি করে ফেলেছি। উঠেই তো তোমাকে ফোন দিলাম। প্লিজ মন খারাপ কোরনা ওকে?” এবার ওপাশ থেকে রুমার গলা ভেসে এল “এতই যখন ঘুম আপনার চোখে তখন অযথা ফোনের ব্যালান্স কেন নস্ট করছেন। যান ঘুমান গিয়ে। যত্তসব!!” বলেই লাইন কেটে দিল রুমা। আবার ফোন দিল অন্তু। একটু পরেই ফোন থেকে বিপ বিপ শব্দ। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অন্তু লেখা দেখতে পেল “ user busy ” এরপরেও ২ বার ফোন দিল অন্তু। কিন্তু ফলাফল একই। যদিও ৩য় বারে ফলাফল ভিন্ন হল। তবে এবার দেখা গেল যে ফোন বন্ধ। হতাশ হয়ে অন্তু জানালা ধারে বসল। বসে পুরনো স্মৃতি হাতড়াতে শুরু করল। রুমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে অন্তুর জীবনে। সব একে একে মনে পড়তে লাগল তার।
অন্তু, রুমা ওরা ২ জন একসঙ্গে একই ভার্সিটিতে একই ক্লাসে পড়ে। এবং তারা একে অপরের খুব ভাল বন্ধু। তাদের ভেতর এত খাতির যে অন্তুর বন্ধুরা সব ওদেরকে দেখলেই বলে “মেড ফর ইচ আদার ।” অন্তু বন্ধুদের কথায় খালি হাসে আর বলে “ধুর তোরা যে কি বলিস না ছাই। রুমা আমার শুধুমাত্র একজন ভাল বন্ধু ছাড়া আর কিছুই না। তোরা আমাদেরকে নিয়ে যা ভাবিস, তা ঠিক না।” তবে মুখে মুখে বন্ধুদের সামনে অস্বীকার করলেও রুমা মেয়েটাকে অন্তুর খুবই ভাল লাগে। কি সুন্দর দেখতে মেয়েটা। আর কথা বলে কি মিষ্টি করে। একবার শুনলে বারবার শুনতে ইচ্ছা করে। এছাড়াও ওর হাঁটাচলা, কাজকর্ম সবকিছুই অন্তুর ভাল লাগে। তার ওপর মেয়েটা ছাত্রী হিসেবেও অনেক ভাল।
অন্তুর মতে মেয়েটার সবই ভাল কিন্তু একটু সমস্যা হল একটাই, মেয়েটা খুব বেশি আহ্লাদী স্বভাবের। এম্নিতে রুমা খুবই হাসিখুশি মেয়ে কিন্তু অন্তু ওকে একটু খেপালেই রেগে একদম টং হয়ে থাকে। তারপর ২ দিন কোন কথা নাই। নিজে নিজে যতক্ষন না পর্যন্ত রুমার রাগ ভাঙবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তুর ১৪ পুরুষেরও সাধ্যি নাই যে ওর রাগ ভাঙায়। ব্যাপারটা মাঝে মাঝে অন্তু খুব এনজয় করে। কারন ওর মতে রাগলে রুমাকে দেখতে যা কিউট লাগে। তাই অন্তু ইচ্ছা করেই মাঝে মাঝে রুমাকে রাগায় আর রুমা রেগে গেলে নিজে মনে মনে হাসে।
রুমার সাথে প্রথম পরিচয়ের দিনটার কথা অন্তু কোনোদিনই ভুলতে পারবেনা। সেদিন ভার্সিটিতে ঢুকতেই অন্তুর বেস্ট ফ্রেন্ড ফাহিমের সাথে দেখা। অন্তু দেখে ফাহিমের সাথে আরও ২ জন মেয়ে দাঁড়িয়ে। একজনকে অন্তু চিনে। ফাহিমের খালাত বোন লিজা। ওদের ক্লাসেই তবে অন্য সেকশনে পড়ে। কিন্তু লিজার পাশে দাঁড়িয়ে অসম্ভব কিউট একটা মেয়ে। অন্তু ভাবে এই ডানাকাটা পরীটা কোথা থেকে আসল। নিজের অজান্তেই খানিকক্ষণ সে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকল। কিন্তু মেয়েটাও তার দিকে তাকাতে অস্বস্তিতে পড়ে গেল অন্তু।
অস্বস্তি কাটাতে ফাহিমকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে গিয়ে অন্তু জিজ্ঞাসা করে “দোস্ত লিজার সাথে দাঁড়িয়ে ওই মেয়েটা কে রে?” ফাহিম বন্ধুর দৃষ্টিতে কিছু একটা ব্যাপার আঁচ করতে পারল। ও বলল “ও লিজার বান্ধবী। ওদের সাথে পড়ে। কিন্তু তোর ব্যাপারটা কি রে? তোর ভাবসাব দেখে তো ভাল ঠেকছে না। একটু আগে ওর দিকে ওভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলি কেন? নজরে পড়েছে নাকি রে?” বলে ফাহিম অন্তুর পাঁজরে কনুই দিয়ে হাল্কা খোঁচা দিল। অন্তু বলে “আরে না তেমন কিছু না। তবে মেয়েটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর তো। তাই তাকিয়ে ছিলাম।। বিশেষকরে ওর অই মায়াকাড়া চোখগুলা থেকে আমি কিছুতেই দৃষ্টি ফেরাতে পারছিলাম না।”
শুনে ফাহিম বলে উঠল “হয়েছে বাবা। থাম এবার। আমি তোর ব্যাপার বুঝে গেছি। তুই তো পুরাই ফেঁসে গেছিস। কি কথা বলবি নাকি?” অন্তু সবকটা দাঁত বের করে বলল “চল যাই।” মেয়েদের কাছে এসে ফাহিমই প্রথমে অন্তু আর রুমাকে একে অপরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তারপর অন্তুর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে লিজাকে বলল “এই লিজা আয়। চল আমরা ক্লাসে যাই।” বলে ওকে টানতে টানতে ক্লাসে নিয়ে গেল। লিজা তখন অবাক হলেও পড়ে ফাহিমের মুখ থেকে সব শুনে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিল।
যাই হোক এদিকে অন্তু রুমার সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে মহা খুশি। প্রথম আলাপেই মোটামুটি খাতির করে ফেলল। দেখল রুমা মেয়েটাও খুব মিশুক। ফলে কয়েকদিনের ভেতরেই ওরা ভাল বন্ধুতে পরিনত হয়ে গেল। কয়েকমাস পর অন্তু হঠাত আবিষ্কার করল যে রুমার প্রতি ওর আলাদা একটা ফিলিংস তৈরি হয়েছে। ব্যাপারটা নিয়ে ও একটু ভাবতে বসল। যে রুমাকে ও এতদিন স্রেফ বন্ধুর মত দেখেছে তাকে নিয়ে আজ ওর মন এ কি আজব খেলা শুরু করেছে। মনে হচ্ছে রুমা তার শুধুমাত্র বন্ধুই নয় আরও বেশি কিছু।
প্রথমে ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিলেও কিছুদিন পর অন্তু ঠিকই বুঝে গেল যে ওর মন আসলে কি বলতে চাইছে। হঠাত ওর মনে হল “আচ্ছা রুমাও কি এরকম কিছু ভাবে আমাকে নিয়ে? কি জানি হয়ত। আবার হয়তবা না।” অন্তু ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে রুমার মনোভাব বুঝার চেস্টা করে। রুমা অন্তুর সাথে এত ফ্রি যে এক পর্যায়ে অন্তুর মনে হয় রুমাও মনেহয় তাকে একটু অন্যরকম ভাবে পছন্দ করে।
দিনে দিনে খুব আস্তে আস্তে করে অন্তুর নিজের অজান্তেই তার হৃদয়ের গভীরে বপন করা রুমার প্রতি ভালবাসার বীজ, চারা হয়ে একটু একটু করে বেড়ে উঠতে থাকে। একসময় সময় কখন যে তা বিরাট মহীরুহে পরিনত হয়ে যায় অন্তু তা নিজেও বুঝতে পারেনা। ওর মনে হয় রুমাকে ছাড়া ওর জীবন অর্থহীন। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব সত্তেও অন্তুর মনে হল যে যে করেই হোক খুব তাড়াতাড়িই রুমাকে কথাটা বলতে হবে। একই সাথে অন্তুর মনে একটা ভয়ও কাজ করে যে এতদিন তো রুমা তাকে বন্ধু হিসাবে দেখছে। যদি এই কথায় এখন রুমার মনে অন্তুর ব্যাপারে কোন খারাপ ধারনা তৈরি হয় তাহলে কি হবে? এসব নানান কথা ভেবে অন্তু দিশেহারা হয়ে পড়ে।
অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে বসে ভাবার পর হঠাত অন্তু দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আজকেই সে তার মনের কথা রুমাকে বলে দেবে। হ্যাঁ আজকেই বলবে। যেহেতু আজ রুমার জন্মদিন তাই আজকের দিনটাই পারফেক্ট। অন্তু কি ভাবে কি করবে তার জন্য একটা পরিকল্পনা করে নেয়। রুমাকে ফোন দেয় আবার।
ভাগ্য ভাল যে এবার ফোন খোলা ই পাওয়া গেল। ওপাশ থেকে রুমা ফোন ধরতেই অন্তু ভয়ে ভয়ে বলতে লাগল “দেখ রুমা আমি জানি তুমি অনেক অনেক রাগ করেছ আমার উপর। I am too much sorry. আমি বুঝতে পারছি আমার ভুল হয়ে গেছে, তাই ক্ষমা চাচ্ছি। দয়া করে আর রাগ করে থেকনা।” বলে একটু থামল। তারপর গলা সামান্য গম্ভীর করে অন্তু বলতে লাগল “শোনো রুমা তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে। আবার বলছি খুব জরুরি কথা আছে। আমি তোমার সাথে একঘণ্টার ভেতর দেখা করতে চাই। তুমি আমাদের ভার্সিটির পিছনে যে ছোট পার্ক টা আছে ওখানে চলে আসো। আমি বাসা থেকে বেরচ্ছি।” এবার অন্তুর কণ্ঠে এমন কিছু একটা ছিল যে রুমা আর চুপ থাকতে পারলনা। আস্তে করে বলল “ঠিক আছে। আমি আসছি। ”
ঠিক চল্লিশ মিনিট পর রুমা পার্কে পৌঁছল। ওর মনে একটাই ভাবনা কাজ করছে “আজ অন্তুর হল কি? ওর কথার সুর অন্যরকম লাগছিল কেন? কি ঘটতে পারে যে এক্কেবারে এই পার্কে ডেকে নিয়ে এসে কথা বলতে হবে?” এইসব চিন্তা করতে করতে রুমা বারবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছিল। একটু পড়ে ও অন্তুকে দেখতে পেল। সাদা শার্ট আর কাল জিন্স পরে এসেছে। একহাত প্যান্টের পকেটে ভরে মাথা সামান্য নিচু করে হাঁটছে। মনে হচ্ছে কোন কারনে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
রাস্তার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে রুমা অন্তুকে ডাকল। “এই অন্তু, আমি এখানে। ” রুমার ডাক শুনে অন্তু সামান্য চমকে উঠে ওর দিকে তাকাল। মেয়েটা আজকে চমৎকার একটা লাল রঙের শাড়ি পরে এসেছে। মেঘকাল লম্বা খোলা চুলগুলো বাতাসে হাল্কা উড়ছে। তেমন সাজগোজ করেনি রুমা। তবুও রুমাকে আজ দেখতে এত সুন্দর লাগছে কেন অন্তুর? ওকি সত্যিই এরকম দেখছে নাকি এটা নেহায়েতই ওর মনের খেলা। হঠাত কেন যেন মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় অন্তুর। হয়ত মনের মানুষকে অনেক কাছে পেয়েও হারাবার ভয়ে সে অস্থির। আজকে আবার রুমার দিকে সেই প্রথম পরিচয়ের দিনের মত কিছুক্ষন হা করে তাকিয়ে রইল অন্তু। তারপর ধীর পায়ে কাছে এসে বলল “কেমন আছ?”
“কেমন আছি মানে? এটা কি ধরনের প্রশ্ন হল?” অভিমানি গলায় উত্তর দিল রুমা। “সেই সকাল থেকে ফোন হাতে নিয়ে কতক্ষন বসে ছিলাম তুমি কখন জন্মদিনের উইশ করবে বলে। একসময় তোমার কোন ফোন না পেয়ে খুব মন খারাপ আর সাথে রাগ হয়েছিল। যদিও পরে রাগ ভেঙ্গে গেছে।”
একটু থেমে আবার ও জিজ্ঞেস করল অন্তুকে “তা তোমার ব্যাপার কি? কি এমন জরুরি কথা বলবা যে একেবারে পার্কে ডেকে নিয়ে আসলা?”
“চল ওখানে বসি। তারপর বলব।” কাছের একটা ফাঁকা চেয়ারে বসার ইঙ্গিত করে রুমাকে বলল অন্তু।
বসতে বসতে রুমা বলল “হ্যাঁ এবার বল। কি তোমার জরুরি কথা?”
অন্তু কয়েক সেকেন্ড মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইল। তারপর ওভাবেই বলতে লাগল” দেখ রুমা। আমাদের পরিচয় তো অনেকদিনের তাইনা? আমরা একে অপরের খুব ভাল বন্ধু। আর আমরা একজন আরেকজন কে খুব ভাল করে জানি ও। আমি জানিনা তুমি আমার ব্যাপারে কি ভাব কিন্তু আমার সাথে একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। আমি কয়েকদিন আগে আবিষ্কার করলাম যে আমি তোমার ব্যাপারে একটু অন্য রকম ভাবে ভাবতে শুরু করেছি। মানে, মানে আমি ভাবছিনা কিন্তু আমার মন আমাকে দিয়ে ভাবাচ্ছে।”
চোখেমুখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে রুমা প্রশ্ন করল “এসবের মানে কি? তুমি আমাকে নিয়ে কি ভাবছ?”
অন্তু খুব লজ্জিত গলায় রুমার প্রশ্নের উত্তর দিল “আমি আসলে, না মানে, আমি মনে হয় তোমাকে খুব পছন্দ কর ফেলেছি।”
শুনে হাসতে হাসতে রুমা বলল “আমরা যেহেতু অনেক ভাল বন্ধু তাই তুমি তো আমাকে পছন্দ করতেই পার তাইনা? এটা তো হতেই পারে। এই কথা এত বিশেষ ভাবে লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে বলার কি আছে?”
“আমি সত্যি বলছে আমি তোমাকে অনেক অনেক বেশি পছন্দ করি।” অসহায় কণ্ঠে জবাব দিল অন্তু।
রুমা গলার সুর ঠিক আগের মত রেখে বলল “আরে বাবা তাতো আমি বুঝতেই পারছি। কিন্তু এই সামান্য কথা বলতে এত আয়োজনের কি দরকার? তুমি যে পাগল সেই পাগলই রয়ে গেলা।” বলে রুমা হাসতে লাগল।
এবার অন্তু আর চুপ থাকতে পারলনা। অধৈর্য হয়ে সে হড়বড় করে বলতে লাগল “না রুমা না। তুমি ব্যাপারটা যেভাবে ভাবছ তা ঠিক না। আমি আসলে, আসলে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। জানিনা কখন মনের অজান্তে এটা হয়ে গেছে কিন্তু, আমি সত্যি বলছি। হ্যাঁ সত্যি রুমা, আমি শুধু তোমাকে অনেক পছন্দই করি তা নয় আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি। এবং আমি এটা সিরিয়াসলি বলছি।”
“প্লিজ আমার মনের অবস্থাটা একটু বোঝার চেস্টা কর।” অনুনয় করল অন্তু।
অন্তুর মুখে এই কথা শোনার পর রুমা এক্কেবারে চুপ হয়ে গেল। অনেক্ষন দু’জনের ভেতর কোন কথাই হলনা। একসময় রুমা অন্তুর দিকে তাকাল।“অন্তু আমার দিকে তাকাও।”
অন্তু এতক্ষনে রুমার দিকে চোখ তুলে তাকাল। চশমার ওপাশ দিয়েও রুমা অন্তুর বিষাদ মাখা চোখের চাউনি কি বলছে তা ঠিক বুঝে গেল। অন্তুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি নিয়ে রুমা বলতে লাগল “বোকা ছেলে। মন খারাপ করে আছ কেন? আমি কি কখনও তোমাকে বলেছি আমি তোমাকে পছন্দ করিনা? এতদিন ধরে তুমি আমায় চেন। অথচ কখনও কি আমি কি চাই তা জানার চেস্টা করেছ? করনি। আমি তো তোমাকে তোমার প্রতি আমার ভাললাগার কথা অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তুমি তো তা বুঝেও বুঝনি। ছাগল কোথাকার।”
এই কথা শুনে অন্তুর মনে পড়ে যায়, তার আর রুমার ঝগড়া দেখে একদিন ফাহিম চোখ টিপ মেরে তাকে বলেছিল ‘দোস্ত, মেয়েদের রাগ কিন্তু পছন্দের লক্ষণ।”
এই কথা মনে হতেই অন্তু বুঝে যায় রুমার মনের কথা।অনেক আগেই কেন তা বুঝেনি সে কথা মনে হতেই নিজের ওপর অভিমান হয় অন্তুর।কিন্তু একটু পরই হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার মুখ। রুমার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে অন্তু ফিসফিসিয়ে বলে “আমি কিন্তু তোমাকে দেব বলে হাতের নিচে লুকিয়ে একটা গোলাপ ফুল এনেছিলাম।”
শুনে আবারো হেসে উঠে রুমা বলে যে “ওমা। তাই নাকি? তা এই কথাও আবার কানে কানে বলতে হবে? জোরে বললে কি আশপাশের লোকজন শুনে তোমাকে পিটাতে আসবে নাকি?” এইটুকু বলেই হাসতে হাসতে রুমা অন্তুর কাঁধে গড়িয়ে পড়ে।
“ও তাই? তুমিও চাও মানুষ আমাকে পিটাক, না? এতই যে দুষ্টুমি করতে পার তুমি” বলেই পার্কের আশপাশের লোকজন তাকিয়ে থাকা স্বত্তেও অন্তুও হাসতে হাসতে রুমাকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরল।
________________________________________________
বিঃ দ্রঃ এর সাথে আর লিখব কিনা জানিনা। তাই আপাতত এটা প্রথম পর্ব। অবশ্যই ইহা কোন কপি পেস্ট গল্প নয়। ৩ ঘণ্টা ধরিয়া হাতের অঙ্গুলিগনের এবং কি বোর্ড এর কি গনের উপর অত্যাচার করিয়া লেখা। লেখার অতিশয় নিম্ন মানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
জানিনা কেমন লিখিয়াছি। যেহেতু এটা আমার লেখা প্রথম লাভ ইস্টুরি তাই দয়া করিয়া গঠনমূলক (চাইলে সমালোচনামুলকও) মন্তব্য করিবেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



