David Tuffley এর লিখা ‘সুখি হও’ বইটি পড়লাম, আর নিজেকে আগের চাইতেও বেশী সুখি ভাবতে শুরু করলাম। আজ সুখি মানুষের হাজার হাজার উদাহরণের মধ্যে একটি শেয়ার করছি। এক ব্যক্তি হাজার অল্প বেতনের একটি চাকুরী বছরের পর বছর করে যাচ্ছেন, বেশী টাকার চাকুরীর চেষ্টা তার মধ্যে খুব একটা পরিলক্ষিত হয় নি, সংসারের মোট ব্যয়কে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন ঠিক সুখি হওয়ার জন্য যতখানি দরকার ততখানি ব্যয় করছেন। জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারছেন না ঠিক কোন জিনিষের অভাব তার সংসারে। অন্যদিকে আরেকজন লাখ টাকার চাকুরী করেন; তবুও ঘর ভাড়া, ড্রাইভারের বেতন, ছেলেমেয়ের স্কুল খরচ, শিক্ষকের বেতন, বাজার খরচ বহনে সর্বদায় হিমশিম খেতে খেতে এক চাকুরীতে কয়েক বছর যেতে না যেতেই নতুন বেশী টাকার চাকুরীর চেষ্টা, আরো উপরে উঠার সিঁড়ি খুঁজে বেড়ানো। জিজ্ঞেস করলে অনায়াসে বলে দিতে পারে সংসারে আরো কিসের অভাব তার? সুখি মানুষ চিনে নিন এইবার আপনারাই।
সুখি হওয়ার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম পূর্ব শর্ত হল সততা। একজন সৎ ব্যক্তি তার প্রতিটি কর্মের মাঝে এক প্রকার নির্ভেজাল তৃপ্তি পেয়ে থাকেন যা একজন অসৎ ব্যক্তির পক্ষে পাওয়া অসম্ভব। তর্কের খাতিরে এইখানেও কেউ কেউ আপেক্ষিকতার ভিত্তিতে সুখকে ব্যাখ্যা করতে পারেন, তবে সেটি হবে একেবারেই অন্য এক ধরণের অসুখের বহিঃপ্রকাশ। আপেক্ষিক বিষয়টি সব জায়গায় প্রয়োগ করে একজন অসৎ মানুষকে সুখি হিসাবে উপস্থাপনের কোন অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে না নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া। এক্ষেত্রে অন্য একটি বিষয় লক্ষণীয়, একজন বিশ্বাসী একজন অবিশ্বাসীর চাইতে বেশী সুখি। একজন অবিশ্বাসী তার সকল ভাল কর্মের জন্য তৃপ্ত হতে পারেন মাত্র, অন্যদিকে একজন বিশ্বাসী তার প্রতিটি ভাল কর্মের জন্য শুধু তৃপ্তই হন না অধিকন্তু স্রষ্টার নিকট হতে কিছু প্রাপ্তির নিশ্চয়তা তার মাঝে সুখের উদ্রেক করে। এমতাবস্থায় ভাল কর্ম সম্পাদন করতে গিয়ে বার বার ব্যর্থতা একজন অবিশ্বাসীকে অল্পতেই হতাশ করে দিতে পারে, যেখানে একজন বিশ্বাসী এই ব্যর্থতাকে স্রষ্টার ইচ্ছা হিসাবে মেনে নিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে ভাল কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সফলকাম হন।
সততা এবং বিশ্বাস একজন মানুষকে অন্য একজন অসৎ ও অবিশ্বাসী ব্যক্তির চাইতে বেশী সুখি করে। আরো গভীরে চিন্তা করলে দেখা যায় একজন প্রার্থনাকারী সে যে ধর্মেরই হোক না কেন অন্য একজন প্রার্থনা বিমূখ মানুষের চাইতে সুখি। মাসলোর প্রয়োজনের তত্ত্ব নিয়ে ডেভিড টাফলে লিখেছেন মানুষ তার সবগুলো প্রয়োজন (food, shelter, sex, safety, security, love, belonging, self-esteem) পূরণের মাধ্যমে যদি সুখি হতে চায়, তাহলে এই সুখের সন্ধান লাভ অসম্ভব। বরং তিনি বলছেন, মানুষ যদি জানতে পারে কিভাবে কিছু প্রয়োজন পূরণের পর Self-Actualisation পর্যায়ে পৌছা যায় তাহলে মানুষ সুখি হতে পারে। এই জন্য দুটি কাজ করতে হবে, একটি হল বর্তমান মুহূর্ত সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন থাকতে হবে এবং সচেতনতার পরও মুহূর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমুহকে মেনে নিতে হবে। এটি বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন। কারণ আমরা সব সময়ই নিজেকে বর্তমান অবস্থানে না দেখে অন্য কোন অবস্থানে দেখতে চাই।