somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাকড়সা

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মাকড়সা একটি নিরীহ প্রাণি। কারো কোন ক্ষতি করে না। নিজের খাবারের জন্য আবার কোথাও ছোটাছুটিও করে না। শুধু জাল পেতে সারাক্ষন বাসায় বসে থাকে। মশা মাছি জালের সুতোয় আটকে গেলে সেগুলো ধরে ধরে খায়। যুবতী মেয়েরা মাকড়সা দেখলেই আৎকে উঠে। কারন মাকড়সার সুরসুরি সহ্য হয় না তার। আমাদের সমাজেও কিছু মানুষ আছে, মাকড়সার মত। ঘাপটি মেরে বসে থাকে, লোভাতুর দৃষ্টিতে। তার জালে আটকা পড়ে.... কারো জমিন, কারো জীবন, কারো শরীর। এদের ধরতে গেলে ধরা যায় না। মাঝের মধ্যে টিকটিকিরা মাকড়সার খাদ্যে ভাগ বসাতে চায়। না পেলে মাকড়সার দিকেই জীভ বাড়ায়। এভাবেই যুগে যুগে কালে কালে মানব সভ্যতার চরিত্রগুলো মাকড়সারেই অন্যরূপ।

এক নজরে গল্পের চরিত্রের পরিচিতি

গিয়াস উদ্দিন গেদু: ওরফে গেদু চৌধুরী, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী। জমি দখল করেছে মজনু ফকিরের।
হালিম চেয়ারম্যান: অশিক্ষিত, ৩ বারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। পদাধিকার বলে “সেকেন্দার আলী হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। স্কুলের নাম পরিবর্তন করে নিজের নামে নামকরণে সড়যন্ত্রে ব্যাস্ত।
একাব্বর মাষ্টার: স্কুলের শিক্ষক, তার দাদা সেকান্দর আলী নামেই রাখতে চায় স্কুলটি, যেকোন মুল্যেই
মজনু ফকির : তিনি একজন ক্ষেপাটে মানুষ। জায়গা জমিন, ঘর, স্ত্রী সব হারিয়ে মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ায়। প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে তার বুকে।
ময়না : মজনু পাগলার মেয়ে। ভালোবাসে চেয়ারম্যানের ছেলে শরাফতকে।
রূপা : একাব্বর মাষ্টারের মা মরা মেয়ে। স্বপ্নে বিবোর আগামীর। ঘর বেঁধে সংসার করতে চায়।
রাসু : নামেই পরিচয়। একাব্বর মাষ্টারের পালিত। ভালোবাসে রুপাকে।
সরাপত : চেয়ারম্যানের চরিত্রহীন ছেলে। ভালোবেসে প্রতারিত করে ময়নাকে।
মুন্সি : গেদু সাহেবের চামচা।
জনৈক : জনৈক-১, জনৈক-২ উভয়েই গ্রামবাসী।


রাসু : অকালতি পড়ার জন্য ঢাকায় যাচ্ছে যাওয়ার কালে মাষ্টারকে বলে স্যার আপনার ঋণ আমি কোনদিনই শোধ করতে পারুম না।
মাষ্টার : নাও, টাকাটা রাখো। মনদিয়া পড়াশোনা করবা। ঢাকাই পৌছাইয়া একটা চিঠি দিবা। আজ যদি তোমার চাচি বাঁচিয়া থাকতো তাহলে খুব খুশি হতো। থাক সেসব কথা, তোমার চাচি নাই তাতে কী? একাব্বার মাষ্টারতো আছে। সরমাইবা না, যখন যা লাগে টাকা পয়সা খবর পাঠাইবা। আমিতো এখনও মরিয়া যাই নাই। কই মা রূপা, বেগ গোছানো হইছে? তাড়াতাড়ি দে। ট্রেনের সময় হইয়া গেছেতো।
রূপা : বাজান, তোমার আসলেই ধৈর্যটা একটু কম। খাওন আর ব্যাগ গুছাইতে বুঝি সময় লাগে না? এই নাও ব্যাগ আর টিফিন বাটি।
একাব্বর : অচেনা দূরের পথ। ঢাকা শহরের ব্যাপার, দে এগুলো আমার হাতে দে। আমি আস্তে আস্তে স্টেশনের দিকে আগাই
রাসু : রূপা নিজের দিকে খেয়াল রাখিস। মাষ্টার কাকারে—
রুপা : ব্যাগের ভিতরে মাপলারটি দিছি, মনে কইরা পইরেন। আপনেরতো একটুতেই ঠান্ডা লাগে।
রাসু : মাত্রতো দুইটা বছর, থাকতে পারবি না?
রূপা : বুকের খাঁচায় যারে বন্ধি করছি হের লাইগা দ্ইু বছর ক্যান, ২০০ বছর অপেক্ষা করতে পারমু। রাসু ভাই, ঢাকা শহরের লাল নীল বাতির মধ্যে রূপারে কী তুমি মনে রাখবা?
রাসু : তোরে ভুইলা যামু? এ কথাও মুখেও আনিস না আর । খালি ওকালতিটা পাশ করুম, তার পর তোরে ঢাকায় নিয়া যামু। আমার উপর সবার কত আশা। মাষ্টার কাকা, মজনু কাকা, তুই সবার। উকিল হইয়ায় প্রথম ক্যাইচটা করমু মজনু কাকার।
রূপা : রাসু ভাই, সারাদিন তোমারে কত জ্বালাইছি, মনে আছে? একবার আমারে সাতার শিখাইতে গিয়া ঢুবাইয়া পানি খাওয়াইছিলা। রাগে আমি ইটের ঢিলা মারছিলাম তোমার কপালে রক্ত আর সেকি রক্ত, কপালের দাগটা এখনও আছে। রাসু ভাই, ছোটবেলা থেকে তুমি আমারে একটা একটা শব্দ জোড়া দিয়া ভালোবাসা কারে কয় শিখাইছিলা। বিদায় বেলা একটা অনুরোধ রাখবা? তোমার পা দুইটা একটু আগাইয়া দিবা? আমি তোমারে একটু সালাম করুম।


চেয়ারম্যান : কই, মাষ্টার সাব, কই যান?
মাষ্টার : আসসালামুআলাইকুম,
চেয়ারম্যান : ওয়ালাইকুম, তা কেমন চলছে স্কুল?
মাষ্টার ঃ জ্বি তা, ভালোই।
চেয়ারম্যান ঃ ভালো অইলেই ভালো। সব ভালো যার, শেষ ভালো তার। না কি মাষ্টার?
মাষ্টার ঃ তা- আপনি আজ হঠাৎ?
চেয়ারম্যান ঃ আইসা পড়লাম, সময় ঠিকমত পাই না। চারদিকে রাস্তা আর রিলিফের মেলা কাইজ কাম। তবে দায়িত্ব বলে কথা। সবাই মিলা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানাইয়া দিলো... নাও করতে পারলাম না। যাইক সে সব কথা, আমার পোলা সরাপত নাকি ফ্যাইল মারছে?
মাষ্টার ঃ জ্বি, অংক আর ইংরেজীতে অনেক কাঁচা।
চেয়ারম্যান ঃ তাতে কী? বাংলায়তো পাশ করছে। পোলাপান মানুষ, কান্দাকাটি করে, প্রমোশনটা দিয়া দিয়েন। আর যেন কি কইতে আছি? ও হে মনে পড়ছে, কাইল স্কুল বন্ধ।
মাষ্টার ঃ কাইল স্কুল বন্ধ! আর আমি কিছুই জানলাম না?
চেয়ারম্যান ঃ এখনতো জানলেন, ঘটনাটা অইতাছে গিয়া আমার ছোড মাইয়াটার আকিকা, বাড়ীতে এত মানুষের যায়গা কই? তাই ভাবলাম স্কুলেই কামটা সাইরা লই। তো আপনি আইসা ৪টা খাইয়া যাইয়েন আর কি।
মাষ্টার ঃ না মানে কাইল থেইক্যাতো পোলঅপানের ফ্রিটেষ্ট পরীক্ষা।
চেয়ারম্যান ঃ একটু অসুবিধাতো অইবোই। আর পোলাপানের পাশের যে রেজাল্ট সেটাতো আমি জানি।
মাষ্টার ঃ এটা ভুল ধারনা। পাশের উপর লেখাপড়ার মান নির্ভর করে না। ক্লাশ আর কয়দিন পায়। সারা বছরতো আপনাগো সবার অনুষ্ঠান লাইগাই আছে।
চেয়ারম্যান ঃ মাষ্টার, আমি স্কুলের সভাপতি, আমার টেকায় আপ্নাগো বেতন চলে। আমি ব্যাবসা বুঝি। ট্যাকা নিবেন, আর পাশ গইন্যা বুঝাই দিবেন। স্কুলের মাষ্টা রাখছিতো সে জন্যই।
মাষ্টার ঃ মাফ করবেন। স্কুলের জ্ঞানের জন্য। ব্যবসা অন্য জিনিস। আমার দাদা সেকান্দর মিয়া স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। স্কুলতো এক বিঘার উপরে। বাকি চার বিঘা গেলো কই?
চেয়ারম্যান ঃ ধ্যুর মিয়া, সবসময় খালি একই প্যাচাল। কবে কোন আমলে ঘি খাইছেন- এখনও তুড়ি শেষ অয় না। দেখেন গিয়া কত জমিদারের নাতী পুতি রাস্তায় রাস্তায় ঘুইরা বেড়ায়। লেখা পড়া না করলেও শিক্ষার মর্ম আমি বুঝি। আর বুঝি বইলাই- আপনারে স্কুলের চাকুরীটা দয়া করে দিছি। আর হুনেন, একটু পরেই ডেকোরেশনের লোক আইবো। স্কুলের তালাটা খুইলা দিয়া যাইয়েন। আপ্নি এবার যান। আমি আইতাছি।
মজনু ঃ আমি হইলাম গোরস্তানের তাজা শকুন। সব মাকড়সাগুলারে শেষ কইরা দিমু। কি মাষ্টার, ঐ হারামজাদা মাকড়সার লগে কী এত প্যাচাল?
মাষ্টার ঃ না, আইজকাল মাকড়সাগুলোর উৎপাত খুই বাইড়া গেছে। মনে কয় মাছ কাটার বটি দিয়া ওগো কল্লাটা পালাই দি। হারাদিন কই কই মাজারে মাজারে ঘুইরা বেড়াও? ময়নাডা হারাদিন একলা একলা কান্দে। মা মরা মাইয়া যাও তাড়াতাড়ি বাড়ী যাও।
মজনু ঃ ঐ মাইয়াডার লাইগাইতো কিছু কইরতে পারি না। না অইলে কবেই ও মাকড়সাগুলারে শেষ কইরা দিয়া দেশান্তরী অইতাম।
মাষ্টার ঃ মজনু ভাই, ধৈর্য ধর। দিন আমাগো একদিন আইবোই। এখনতো বাতাসের গলায় যদি দড়ি দিতে যাও, তবে সেটা উইড়া যাইবো। আর দড়ির কোন খোঁজ পাইবা না। মাকড়সাগুলারে যদি ধরতে যাও, সেটা এখন পিছলাইয়া পালাইবো। সময় অইলে দেখবা, লেংড়া হাতি নিজেই হের খাদায় পড়ছে। ওগোরে এখন শুধু জালটা বানাইতে দাও। চল বাড়ীর দিতে চল।

গেদু সাহেব ঃ ডুগডুগি মুন্সি, কেমন খাইলা?
ডুগডুগি ঃ জ্বি জনাব, আইজ একটু বেশি খাইয়া ফেলাইছি। খাশির গোস্তের হালুয়াটা খুব ফাইন অইছে।
গেদু সাহেব ঃ আমি বেশি খাইতে পারি নাই। শরীরটা ভালো না। কয়দিন ঘুমেও আবল তাবল দেখতাছি। ভাবছি সিঙ্গাপুর গিয়া হোল বডি চেকআপ করাইবো। ঘুমের মধ্যে কিসব আবল তাবল খোয়াব দেখি। আচ্ছা ডুগডুগি তুমি রাইতের বেলায় কোন খোয়াব দেখো নাকি?
ডুগডুগি ঃ জ্বি জনাব। আমি গত রাইতে একটা খোয়াব দেখলাম.. আমি শুধু খের খাইতাছি। পোলাও না, মাংশ না, দেখলা কি না খের?
গেদু ঃ আমি একি স্বপ্ন বার বার দেখতাছি। গত রাইতে দেখলাম, আমি একটা মাকড়সা জালের মধ্যে বইসা আছি। আর হে জালে আটকা পড়ছে- মজনু ফকির, একাব্বর মাষ্টার, আর তুমি। এর মোজেজাটা কী বুঝতে পারলাম না। তুমি বোঝ কিছু?
ডুগডুগি ঃ জনাব, আপনার স্বপ্নটা জিলাপির লাহান পেছানো। আমিতো আপনার উপকার ছাড়া কোন ক্ষতি করি নাই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে চিন্তা ফিকিরও নাই। আমি কেমনে আপ্নের জালে আটকাইলাম, বুঝলাম না।
চেয়ারম্যান ঃ গেদু সাহেব, আপনি দয়া করে আমার মেয়ের আকিকায় আইছেন, ৪টা ডাল ভাত খাইছেন খুব খুশি হইলাম। আর গেরামের মুরব্বিরা- আইজ একটা খুশির দিনে, আপ্নাগো লাগে একজনকে পরিচয় করাইয়া দিতেছি। তিনি আমাগো এলাকার কৃতী সন্তান, বিশিষ্ট রাজনৈতিবিদ, সমাজ সেবক, জনবা গিয়াস উদ্দিন গেদু সাহেব। যার নাম আপ্নেরা হাজার বার শুনছেন, মাগার দেখার সৌভাগ্য হয় নাই। কারন তিনি পরিবার পরিজন নিয়া ঢাকায় থাকেন।
ডুগডুগি ঃ কথায় আছে- আল্লায় দিলে কি না অয়। গেন্দা সাহেব, থুক্কু, গেদু সাহেব কত মান্যগণ্য মানুষ আইজ, দেশের মন্ত্রি মিনিষ্টারলগে দোস্তি। বড় ভালো লাগে। যখন ভাবি ওনি আমাদেরই লোক।
গেদু ঃ আসসালামুআলাইকুম, প্রিয় গ্রামবাসী, আমি তোমাদেরই লোক, এই মোর পরিচয় হোক। ছোট বেলায় আপ্নেরা আমারে গ্যান্দা নামেই ডাকিতেন। পরে বড় হইয়া ভাইবা দেখলাম এই গ্যান্দা নামের মধ্যে কেমন যেন দুর্গন্ধ দুর্গন্ধ ভাব রইয়াছে। তাই নাম পরিবর্তন রে রাখিয়াছি, গেদু চৌধুরী। যাইহোক, গ্রামের টান- বড় টান। এই টানেই আজ এখানে।
ডুগডুগি ঃ মাসআল্লাহ্, মাসআল্লাহ্।
গেদু ঃ তবে ডুগডুগি মুন্সি একটা কথা ঠিকিই বলেছেন। দেশের মন্ত্রি গভর্নরের লগে আমার দোস্তি আছে। এই দোস্তি সে দোস্তি না। ইহা হইতাছে টেকার দোস্তি। মন্ত্রি গর্ভনর বানাইতে যে টাকা ইনবেষ্ট করি, তার শতভাগ উসুল করিয়া লই। যা শিক্ষিত লোকের ভাষায়- মোষ্ট প্রোফিটেবল ডিগ্নিফাইং বিজনেস। সরকারী দলের নেতাগুলোকে টেকা দিয়া কিনি। আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করিয়া বিরোধী দলের পিছনেও ইনবেষ্ট করি। আমি শায়েস্তা খাঁন, মোনায়েম খাঁন, সবুর খাঁন, ভুট্ট খাঁনসহ বাংলাদেশের সব খাঁই খাঁই পার্টিকে চাঁদা দিই। সবার দিলের নেক মকসুদ পূর্ণ করি। আমার টেকায় বহুন টাউট বাটপার মানুষ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু আমার দুঃখ, দেশের জন্য এত কিছু করিলাম কিন্তু আমার নিজের গ্রামের জন্য কিছুই করিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গ্রামের লোকজনকে মানুষ বানানোর প্রজেক্ট নিয়া আমার বিজনেসকে ডিজসেন্টাইজড করিবো। আপনারা সবাই মানুষ অইবার প্রস্তুতি নেন।
চেয়ারম্যান ঃ মারহাবা মারহাবা, গেদু সাহেব জিন্দাবাদ।
গেদু ঃ বহু দিন সরকারের বাহিরে থাকিয়া, দেশের খেদমত করিয়াছি। এবার সরকারের ভিতরে ঢুকিয়া দেশের খেদমত করার মজা নিতে চাই। আর ভিতরে ঢুকিতে হইলে প্রয়োজন-ইলেকশন। আশা করি বুঝিয়াছেন- আমার আগমনের উদ্দেশ্য।
মজনু ঃ না, আপনার বক্তব্য কিছুই বুঝি নাই।
গেদু ঃ (মাষ্টারকে) আপনি বুঝিয়াছেন?
মাষ্টার ঃ জ্বী কিছুটা।
গেদু ঃ (চেয়ারম্যানকে) আপনি বুঝিয়াছেন?
চেয়ারম্যান ঃ জ্বি ১০০ ভাগ বুঝিয়াছি।
গেদু ঃ তাহা অইলে ডুগডুগি মুন্সি- হিসাবটা কি দঁড়াইলো?
ডুগডুগি ঃ জ্বি জনাব, হিসাব অইলো গিয়া, (সবাইকে) উহাদিগকে মানুষ বানানো যাইবে। আর (মজনুকে) এই বস্তুকে মানুষ বানানো যাইবে না।
গেদু ঃ যাইহোক, সময় সংক্ষিপ্ত, ঢাকায় যাইতে হইবে। ফকল্যান্ডের ফাষ্ট লেডি ঢাকায় আসিয়াছেন, তাই রাষ্ট্রপতি ভবনে কাইল বিরানি দাওয়াত রহিয়াছে। তবে মাঝের মধ্যে আপনাদের আসিয়া দেখিয়া যাইবো। তাহা হইলে আইজ বিদায় নিই (গেদু চলে যায় সবাই পেছনে পেছনে চলে যায়, থাকে শুধু মাষ্টার আর মজনু)
মজনু ঃ মাষ্টার, তুমি যে কইলা, বুঝলা, কী বুঝলা?
মাষ্টার ঃ বুঝলাম, মাকড়োসারে খাওনের লাইগা টিকটিকি হাজির হইয়াগেছে। খেলা শুরু হইয়া গেছে। খালি আমাগো রাসুরে একবার উকিল হইয়া আইতে দাও তার পরে ঐ গেন্দার কাছ থেকে তোমার যায়গা জিরাত, ঘর বাড়ী, সব ফিরাইয় লমু। তোমারে আমি কথা দিতাছি।
মজনু ঃ কার কথা কও, রাসুর? আর কয়দিন লাগবো?
মাষ্টার ঃ বেশি দিন না। মনে আছে, মজনু ভাই? রাসুর বাপ মা রাসুরে ঝড়ের রাইতে নিম গাছের তলায় পালাইয়া গেছিলো। ভাবি ওরে কুড়াইয়া পাইছে। এইদিকে রূপার মা, সন্তানের লাইগা আল্লার দরবারে আহজারি করতাছে। ভাবি রাসুসের রূপার মায়ের কোলে তুইলা দিছিলো। কত যতœ কইরা তারে মানুষ করছে। হের ৫ বছর পর রূপার মা রূপারে জন্মদিতে গিয়া শহিদ অইছে। দুইজনেরে আমি কোলে পিটে কইরা মানুষ করছি। আমার আদর্শ দিয়া রাসুরে গইড়া তুলছি।
মজনু ঃ মাষ্টার মনে আছে, সব মনে আছে। কি নিয়া ধৈর্য ধরতে কও? ঘর নাই, জমি জিরাত নাই, ময়নার মাও নাই। তুমি যদি তোমার গোয়াল ঘরটা না ছাইড়া দিতা, মাইয়াটারে লইয়া আমি কই যাইতাম। মনের দুঃখ ভুলার লাইগা মাজারে মাজারে ঘুইরা বেড়াই।
মাষ্টার ঃ আমারও কী কম কষ্ট মজনু ভাই। ঐ যে চেয়ারম্যান, আমার বাব দাদার সম্পত্তি দখল করছে। দাদা স্কুলের লাইগা জমি দিছিল এক বিঘা, আর হেরা জাল কবলা কইরা নিছে ৫ বিঘা। ঐ যে চেয়ারম্যানের ইটের ভাটা. সেটা আমাগো। ঐ ইটের ভাটায় শুধু আগুন জ্বলে না, আগুন জ্বলতাছে আমার অন্তরেও। উত্তরে সুপারি বাগান, সেটাও আমাগো। দক্ষিণে সরিসা ক্ষেত, সেটাও আমাগো। তবুও চোখ বন্ধ কইরা মনেরে শক্ত কইরা বাঁধ দিছি। খালি রাসু একবার উকিল হোক, তারপর আমাগো সব হিসাব কড়ায় গন্ডায় বুইঝা লমু। চল বাড়ী চল।



চেয়ারম্যান ঃ কই বাবা শরাফত? অইলোডা কী আপ্নের? আইতাছেন না ক্যান?
শরাফত ঃ এডা কোন জায়গায় আনলেন আব্বা? বনের ঝোপ ঝাড়ে মাকড়সার জাল বুনছে। হে জাল লেপটইয়া গেছে আমার চোখের মুখে।
চেয়ারম্যান ঃ লক্ষণতো সুবিধার ঠেকতেছেনা। চোখ ভালো কইরা মুইছা পেলান। এবার দেখতাছেন?
শরাফত ঃ জ্বি আব্বা জান।
চেয়ারম্যান ঃ তো বা জান আইজ আপ্নেরে এখানে ক্যান নিয়া আইছি, বোধহয় জানেন না। বয়সতো আমার কম অইলো না। আল্লায় না করুক। আমর যদি কিছু একটা অইয়া যায়, এত বিষয় সম্পত্তি দেখবো কেডা? বাবা শরাফত।
শরাফত ঃ জ্বি আব্বাজান।
চেয়ারম্যান ঃ সব সময় মনে রাখবেন- সম্পত্তি দখল করার থেকে সম্পত্তি রক্ষা করাই বড় কথা। আপ্নারে বলতে সরমের কিছু নাই। ঐ যে ইটা খোলা, সুপারির বাগান, সরিসা ক্ষেন, মগর এইসব কোনটাই আমাগো হক্কের না। কিন্তু এগুলো রক্ষা করতে অইবো। বৈষয়িক চিন্তা ছাড়া অন্য কিছু আনছেন তো- সব শেষ।
শরাফত ঃ আব্বাজান, আমারে ছাইড়া দেন। আপ্নে কোন চিন্তা কইরবেন না।
চেয়ারম্যান ঃ চিন্তা কী খামাখা করি? আপনার যা মতি গতি দেখতাছি--- আপনি একটু শক্ত হন। তাছাড়া সামনে আমার ইলেকশন।
শরাফত ঃ আপনি তো জিত্তাই আছেন।
চেয়ারম্যান ঃ জিত্তাই আছি? কেমনে?
শরাফত ঃ ভোটের আগে আপ্নেরে নিয়া, সবার বাড়ী বাড়ী যামু। জিগামু, ভোট কারে দিবা? আপ্নারে দেখলে, বেবাতেই কইবো, আপ্নারে দিুম। ব্যাস, মামলা খতম। আমরা কমু আপ্নাগো ভোট বুঝিয়া পাইলাম। খালি খালি সেন্টারে যাওন দরকার নাই। তারপর সেন্টার যদি খালি থাকে তো--------------
চেয়ারম্যান ঃ মাশআল্লা মাশাআল্লা। আল্লায় আপনারে বাঁচাইয়া রাখুক। সত্যি কথা বলতে কী, আপনি কাচে থাকলে আমার কোমরের জোর বাইড়া যায়।
শরাফত ঃ কিন্তু আব্বা জান, গেরামের একটা কানাগুসা হুনলাম---
চেয়ারম্যান ঃ কী?
শরাফত ঃ এ কাব্বর মাষ্টার সাহেবও নাকি এবার কেন্ডিডেট অইতে পারে।
চেয়ারম্যান ঃ মাষ্টার কেমনে অয়? হের আছেটা কী? থাকুনের মধ্যে আছে শুধু স্কুলের চাকুরীটা। আর সেটাতো আমার হাতের মুঠায়।
শরাফত ঃ মাষ্টার সাব কিন্তু খারাফ না আব্বা জান। দেখলেই কেমন জানি ভক্তি শ্রদ্ধা লাগে। মাষ্টার সাব একটা কথা প্রায়ই বলেন--- জগতের ফাঁকি দেওন যায়, কিন্তু নিজের মনেরে কখনো ফাঁকি দেওন যায় না। তার এই কথাটা আমার মনের মধ্যে গাইথা গেছে। কথাটা যখনি ভাবি------------
চেয়ারম্যান ঃ বাবা শরাফত, বয়স আপ্নার অনেক কম। এই বয়সে মনে এসব দুর্বলতা আসা খারাপ লক্ষন। আপনি মাষ্টারের লগে বেশি মিলামেশা করবেন না।
শরাফত ঃ কেন আব্বাজান?
চেয়ারম্যান ঃ হাতি প্যাকে পড়নের কষ্টটা আমি বুঝি। মাষ্টার ভাংবো কিন্তু মসকাইবো না। হেরে আমি ভালো কইরাই চিনি। চলেন আপনারে আমাগো সুপারির বাগানটা দেখাইয়া আনি।


ময়না ঃ রাসু ভাই, কবে আইবোরে---
রূপা ঃ কি জানি, বাজানতো কয় সামনের গরমের বন্ধে। বাজান যে কি করে, সারাদিন রাসু ভাইরে লইয়া আমারে শুধু খেপায়। কি যে আনন্দ পায় বুঝি না।
ময়না ঃ আইচ্ছা বিয়া অইলে তুই কি রাসু ভাইর লগে ঢাকায় চইলা যাবি? কথাটা মনে পড়লেই আমার কইলজার মধ্যে কেমন জানি চ্যাত কইরা উঠে।
রূপা ঃ সারা বছর কী ঢাকায় থাকুম? মাঝের মধ্যে গেরামেও আসুম। তোরে আমার কাছে ঢাকায় নাইয়ুর নিয়া যামু। তুই কী ভাবছোস, ঢাকায় গেলে তোরে আমি ভুইলা যামু। আইচ্ছা ময়না, ঢাকার কথা মনে অইলেই আমার সারাক্ষন খালি ঢর ঢর করে। ঢাকার চলন ফিরন নাকি আলাদা। যদি কোন ভুল টুল অয় রাসু কী ভাববে।
ময়না ঃ আরে পাগল, থাকতে থাকতে সব শিক্ষাই যাবি।
রূপা ঃ ঢাকা শহরে যাওনের লাইগা আমার মন খালি সারাক্ষন চটপট করতাছে, আইচ্ছা, শরাফত ভাইয়ের কথা যে কইছিলি হে মানুষটা আসলে কেমন?
ময়না ঃ মাইনসে তো কয় ভালা। তয় বাপের মতন না। কিন্তু পুরুষ মাইনসের মন, পাল্টাতে কতক্ষন। আমাগোই বা কি আছে? ঘর নাই, জমি জিরাত নাই, বাপ ঘুইরা ঘুইরা বেড়ায়, থাকুনের মধ্যে আছে শুধু...... ভালোভাবে বাইচা থাকনের আশা। কি জানি--- হয়তবা খোয়াব। হেডাও যদি ভাইঙ্গা যায়, তয় বাঁচুম কি নিয়া? চোখের সামনে দেখতাছি পোকা খাওয়া জাম গাছটা ভাইঙ্গা পড়তাছে। তবু মন আশায় বুক বাইন্ধা কয় গাছটা যেন না পড়ে। এমন অনেক কথা, যা কওন যায় না।
রূপা ঃ ময়না, এমনি কি কথা? যুা তুই আমারে কইতে পারিস না? এত কি কষ্ট তোর?
ময়না ঃ এই কষ্টতো ধরনও যায় না, চোয়নও যায় না। বুকের মধ্য খানে কেবল খাবলা খাবলা করে। যন্ত্রনা নামের পাখিটা একবার বুকের ডালে বাসা বাঁধলে, তারে কি আর উড়াইয়া দেওন যায়? যায় না। রূপা, আমার মনে হয় আমি এক অদৃশ্য মাকড়সার জালে আটকা পড়ছি। মাইয়া মাইনসের জীবনতো এমনি। ভালোবাসে অন্ধের মত, প্রতারিত হয়, বঞ্চিত হয়, কান্দে, আবার ভুলে যায়, শত্রুকে বন্ধু ভেবে আবার গলায় ধরে। মাইয়া মানুষ অইলো গিয়া কাঁদা মাটি। যেমন খুশি নাড়াচাড়া কর, যা খুশি তৈরি কর, বাঁধা নাই। বাদ দে ঐসব কথা। আইচ্ছা, তুই কি রাসু ভাইকে নিয়া খোয়াব দেখস না?
রূপা ঃ কত দেখলাম, ট্রেনে উইঠা আমি ঢাকা শহরে................। ময়না, ঢাকা শহর কিযে সোন্দর, লালনীল বাত্তি, ইয়া উঁচা উঁচা দালান, রাস্তার মোড়ে মোড়ে কত দোকান, তাকে তাকে সাজানো আঙ্গুর, বেদানা, নাশাপাতি, যা ইচ্ছা খা.............. পরান ভইরা খা।
ময়না ঃ রূপা, আমার আবার বেশি বেশি খাওনের লোভরে.......... তুই ঢাকায় গেলে, আমি পাক্কা তিন মাস তোর বাসায় বইসা বইসা ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুইলা খামু আর খামু। তখন কিন্তু না করবার পারবি না।
রূপা ঃ আরে পাগল, ঢাকায় কি খাওনের অভাব আছে? ঢাকার মানুষগুলা--------- মাসাল্লা---- কি সুন্দর, চালচলন, আদব কায়দা...... মাথায় ২৪ ঘন্টা খালি একটাই চিন্তা.... রাসু কবে উকিল অইবো, আমার লগে বিয়া অইবো। বাজানতো হারাদিন রাসু রাসু কইরা মুখে ফেনা তুলে। বাজান মুখে হুইনতে হুইনতে আমারও একটাই খোয়াব.... ঢাকা....ঢাকা....ঢাকা।
ময়না ঃ হ, মাইয়া মাইনসের সব অইলো গিয়া কপাল। তয় আমার কোপালে কী আছে জানস রূপা? মরন।আমার মরন বিনে গতি নাই।
রূপা ঃ আমার মনে অয় তুই আমার কাছ থেকা কিছু একটা লুকাইতোছত।
ময়না ঃ আমার জীবনটাতো লুকোচুরির খেলা। আর ভালোবাসাটা? সেটা অইলো--- ভাং, ধুতরার নেশা, যতক্ষন নেশা থাকে ততক্ষন ভালোবাসাও থাকে। নেশাও শেষ, খেলাও শেষ। গত রাইতে, মরা মায়েরে খোয়াবে দেখলাম। মা আমারে ডাক দিয়া কয়, কিরে, আর কত টো টো কইরা ঘুইরা বেড়াইবি। সন্ধ্যা অইছে ঘরে ফিরা আয়।
রূপা ঃ তোরে একটা সোজা কথা কই ময়না, মনে কিছু নিস না। তুই শরাফতরে ছাড়ন দে। হে মানুষ বেশি সুবিধার না।
ময়না ঃ তুই ঠিকিই কইছন রূপা, তয় বড্ড দেরি হইয়া গেছে। ঐ যে কইছিলাম না, ধুতরার নেশা, নেশা যখন শেষ অইলো, নিজের দিকে যখন চোখ মেইলা দেখি বুঝতে পারলাম--- আমার সারা শরীরে শুধু বিষাক্ত ঘা। দুর্গন্ধযুক্ত রক্ত বইছে আমার শরীরে। (তলপেটে হাত দিয়ে) আচ্ছা রূপা, মা যদি মারা যায়, তবে কী পেটের বাচ্চাটাও......... মরনের যে কি কষ্ট সেটা যদি আজরাইল জানতো (মাথায় ঘুরে পড়ে)
রূপা ঃ ময়না ময়না (চিৎকার), দেখি দেখি, বাজান, মজনু কাকা, তোমরা কে কোথায় আছো, ময়না অজ্ঞান হইয়া গেছে।



মজনু ঃ মাষ্টার মাষ্টার, আমার সর্বনাশ অইছে। আমার সব শেষ অইয়া গেছে।
মাষ্টার ঃ কী অইছে কইবা তো (কানে কানে বলে) কও কি? সর্বনাশ। কেডা?
মজনু ঃ কেডা আবার, ঐ মাকড়সার বাচ্চা।
মাষ্টার ঃ এটা কি মগের মুল্লুক? আমরা শালিশ ডাকুম।
মজনু ঃ আমি এখন কি নিয়া বাচুম। আমারতো সব কিছু শেষ কইরা দিছে ঐ হারামজাদাটা। আমি ময়নার মায়ের কাছে চইলা যামু। আমি তো আর সহ্য করতে পারতাছি না।
মাষ্টার ঃ মজনু ভাই, মেরুদন্ড সোজা কইরা দাঁড়াও, শক্ত হও। এখন কান্দনের সময় নাই। মাইয়া আমাগো ঘরেও আছে। চল গেরামের হগলেরে জানাই। সবাইরে এক কইরা এর একটা বিহীত করতে অইবো। বইশা থাকোনের সময়

চেয়ারম্যান ঃ গেলো গেলো, আমার সব গেলো আমার মান সম্মান কিছুই রইল না। বাবা শরাফাত, আপনি আমার মান সম্মান সব ঢুবাইয়া দিয়াছেন। গেদু সাব আমি এখন কি করি। আপনিতো বহুত মাইনসের উপকার করছেন, এবারের মত আমার এই ঘটনা থেকে বাঁচাইয়া দেন। আমি সারা জীবন আপনার পায়ের তলায় থাকুম।
গেদু ঃ বুঝলা ডুগডুগি? ঘটনা যা শুনলাম, তাতো মনে অইতাছে, বিষয়টা অত্যান্ত মর্মান্তিক। দেশের রাজনৈতি, অর্থনিতি, বাজেট, সব কি করি নাই। কিন্তু গ্রামে আসিয়া, অতি সাধারণ কিন্তু অসাধারণ ঘটনার মুখোমুখি হইতে হইবে তা স্বপ্নেও ভাবি নাই।
চেয়ারম্যান ঃ আমি এখন কী করবো গেদু সাহেব। আমার মান সম্মানতো............
গেদু ঃ চ্যুইংগাম খাইয়াছেন কখনো? না খাইলেও নিশ্চই দেখিয়াছেন। ইহা হইল একপ্রকারের লেমনচুষ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ইহা চুষিয়া চুষিয়া খায়। মিষ্টি অইলেও আদলে ইহা একটি রাবারের ধলা। ইচ্ছা করিলে টানিয়া লম্বা করা যায়, আবার মুহুর্তে দুই আঙ্গু টিপা দিয়া ধলা মচড়া করিয়া আগের অবস্থায় আনা যায়। বুঝিয়াছেন?
চেয়ারম্যান ঃ না
গেদু ঃ আপনার ক্ষেত্রেও আমি চুইংগাম ফরমুলা প্রয়োগ করিবো। যদি মনে করি, টানিয়া লম্বা করার দরকার করিবো আবার যদি মনে করি, উহাকে গোলাকার পিন্ড অবস্থায় রাখা দরকার, রাখিবো। এইবার বুঝিয়াছেন। চলেন ডুগডুগি মুন্সি।
চেয়ারম্যান ঃ বাবা শরাফত, যাহা ঘটিবার ঘটিয়া গিয়াছে। শত চেষ্টা করিলেও ফিরাইবার পথ নাই। কাজেই সাহস নিয়া শালিশ মোকাবেলা করিবেন। গেদু সাহেব আমাগো পক্ষেই থাকবেন।কাজেই মনের মধ্যে কোন প্রকার দুর্বলতা ঠাই দিবেন না।
শরাফত ঃ মাষ্টার সাব কি শালিসে আইবো আব্বাজান?
চেয়ারম্যান ঃ বোধহয়। ক্যান বাজান।
শরাফত ঃ না উনি থাকলেতো আবার..........
চেয়ারম্যান ঃ ঢরের কিছুই নাই বাজান। আমরা তো সবাই আছি। আপনি পরিস্কার একটা কথা বলিবেন, ময়নার লগে আমার কোন সম্পর্ক আছিলো না। ঠিক আছে?
শরাফত ঃ জ্বি,
চেয়ারম্যান ঃ একটা কথা মনে রাখবেন, আমার টেকা আছে।ওগোর কিছুই নাই। টেকা দিয়া দুনিয়া কিনোন যায়। আর মাষ্টারতো কোন ছার। কি এবার সাহস হয়?
শরাফত ঃ হ আব্বা জান এইবার মনে সাহস হয়। কোন শালা আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
চেয়ারম্যান ঃ সাবাস আব্বাজান, সাবাস।

(শালিশের বৈঠকখানা, সবাই আগে থেকে বসা, গেদু ও ডুগডুগি ঢুকলেই সবাই দাঁড়িয়ে)
মাষ্টার ঃ আইজ এমন একটা বিষয় নিয়া আমরা শালিসে বইছি, যার যার লগে পুরো গেরামের মান সম্মান জড়িত। জড়িত আরও একজনের জীবন মরনের ব্যাপার। কই ময়নার বাপ কই?
মজনু ঃ এইতো আমি এখানে।
মাষ্টার ঃ বাদী আপনি, কাজেই সামনে আসেন।
ডুগডুগি ঃ মাষ্টার সাব, তার আগে আমার দুইখান কথা আছে। প্রথম কথা অইলো গিয়া শালিসের রায় উভয় পক্ষ মানতে রাজি আছে কি না?
মাষ্টার ঃ ন্যায্য হলে মানবো না ক্যান?
ডুগডুগি ঃ দুই নম্বর কথা অইলো গিয়া, এই সমস্ত শালিসে একজন মুরব্বি লাগে, আমাগো এলাকার কৃতী সন্তান গেদু সাহেব যেহেতু উপস্থিত আছেন আমার অনুরোধ এই দায়িত্বটা আমরা তেনার হাতে ছাড়িয়া দিই।
গেদু ঃ আসসলামুআলাইকুম, আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলো না, এ জাতীয় কোন ঘটনায় নিজেরে জড়াই। তবুও আসিয়া যখন পড়িয়াছি, কিছ্ ুএকটা হইবেই। আমি জানিতে চাই, শালিসের বিচারক হিসেবে আপ্নেরা আমারে মানেন কি না? না মানলেও আমার দায়িত্ব হবে আপনাদেরকে মানানোর। কারন, ইহার জন্য আমার হাতে নির্দিষ্ট ফরমুলা আছে। একা একা বিচার করিয়া শুনাম অথবা দুর্নামের ভাগিদার হইতে চাই না। আর তাই আরও দুই ব্যাক্তি শালিশ করিবেন। আপনারা নাম প্রস্তাব করেন।
জনৈক ঃ আমি একাব্বর মাষ্টারের নাম প্রস্তাব করিতেছি।
গেদু ঃ বোঝা গেলো ওনি একজন পপুলার ব্যক্তি, আমি রাগ দাগ নিয়া কথা বলি না, যাহা বলি স্পষ্ট বলি, পূর্ণগণতন্ত্রে আমার কোন আস্থা নাই বিধায় ২য় ব্যক্তি আমিই মনোনীত করিব। তিনি হলেন ডুগডুগি মুন্সি। আসেন ডুগডুগি মুন্সি।
চেয়ারম্যান ঃ শরাফত আপনাগো ছেলের মতই। বিশেষ করে মাষ্টার সাব তারে খুব ¯েœহ করেন।
মাষ্টার ঃ আমি আমার সব ছাত্র-ছাত্রীদের নিজের ছেলের মতই ¯েœহ করি। আপনার বক্তব্য শেষ?
ডুগডুগি ঃ ঠিক আছে। প্রথমে বাদী, কি নাম?
মাষ্টার ঃ ময়নার বাপ, সামনে আসেন ময়নার বাপ।
মজনু ঃ আমি আর কী কমু। আপনারা বেবাক জানেন। মা মরা মাইয়া আমার ময়না।
গেদু ঃ আমরা কিছুই জানি না। আপনি বলেন।
মজনু ঃ আমার মা মরা মাইয়াটারে ঐ সরাফত.............
মাষ্টার ঃ মনে কিছু না নিলে গেদু সাহেব আমি বলি। মজনু ভাই ফকির লাইনের মানুষ। সারাদিন মাজারে মাজারে ঘুইরা বেড়ায়। এ ঘটনায় খুব ভাইঙ্গা পড়ছে।ঘটনাটা অইলো গিয়া, শরাফত আর ময়না দুই দুইজন দুইজনরে ভালোবাসে। এখন ময়নার পেটে বাচ্ছা।
জনৈক ঃ এখন দুইজনে মিলা বিয়া পড়াই দেন ব্যাচ মামলা শেষ।
ডুগডুগি ঃ এত সহজে যদি সমাধান হত, তাহলে আইনের ওত প্যাচগোছ থাকিতো না।
জনৈক-২ ঃ প্যাচগোছতো মিয়া মানুষেই বানায়, সোজাসুজি কামটা সাইরা পালান।
গেদু ঃ আমি অসুন্তুষ্ট হইতাছি। আপ্নারা বিচারের কাজে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করিতেছেন।
ডুগডুগি ঃ এবার বিবাদী বলেন।
চেয়ারম্যান ঃ বাবা শরাফত আসেন, তয় গেদু সাহেব, আমার একখান কথা, শরাফত আমার একমাত্র পোলা, অন্যায় কারে কয় আমি শিখাই নাই। আল্লায় আপানাগো দশ জনের দোয়ায় বিষয় সম্পত্তি কম দেয় নাই। আমি মরলে বেবাক সম্পত্তির মালিক শরাফত। সে লোভে বহু মানুষ মাইয়া গোছাইয়া আমার পোলারে ফান্দে পালানোর চেষ্টা করছে। মাগার আল্লা বাঁচানোওয়ালা। কথাটা একটু খেয়ালে রাখবেন।
ডুগডুগি ঃ এবার শরাফত মিয়া বলেন, যাহা বলিবেন সত্য বলিবেন।
শরাফত ঃ আব্বা জানের কথাই ঠিক। সম্পত্তির লগে বহু মানুষ, মাইয়া গছানোর চেষ্টা করছে। কত রকমের জাদু টোনা করছে আমারে। সব সময় আপনাগো দোয়ায় বাইচা আছি।
জনৈক-২ ঃ এবার তোমার বাঁচন নাই।
শরাফত ঃ ঐ ময়নার চরিত্র খারাপ, বহুত চেষ্টা করছে আমারে বিয়া কইরতে, কিন্তু আমি হের ফান্দে পা দি নাই। আর এ জাতীয় কোন ঘটনাও ঘটাই নাই। কারন মানুষের জীবরেন সব চেয়ে বড় জিনিস হলো তার চরিত্র। আমি নির্দোষ।
গেদু ঃ কি ময়নার বাপ, শরাফততো অস্বীকার করে।
মজনু ঃ দোহাই আল্লার, দোহাই শাহ্ আলী বাবার, এত বড় জুলুম আল্লাহও সহ্য করবে না। আমার মা মরা মাইয়া টারে বিয়ার লোভ দেখাইয়া, তার সর্বনাশ করছে।
গেদু ঃ সর্বনাশের পক্ষে কোন তথ্য প্রমাণ আছে?
জনৈক-১ ঃ গত পুর্ণিমার রাইতে আমরা কয়জন গাং পাড়ে ময়না আর শরাফতরে অন্তরঙ্গ অবস্থায় কথা কইতে দেখছি।
জনৈক-২ ঃ গত ৭ তারিখে, রাইতের বেলায়, শরাফত ময়নার ঘরে ঢুকছিলো। পরে আমরা গ্রাম বাসিরা যখন লাঠিসোটা নিয়া আগাইয়া গেছি সরাফাত তখন স্যান্ডেল খুইলা পালাইছে। এ যে দেহেন তার স্যান্ডেল, কী শরাফত মনে আছে?
মাষ্টার ঃ যদি গেদু সাহেব অনুমতি দেন, তয় দুইটা কথা কই।
গেদু ঃ বলেন মাষ্টার সাব।
মাষ্টার ঃ বাবা শরাফত, ধর কথার কথা, যদি প্রমাণ হয় তুমি দোষি, তয় ময়নারে বিয়া করবা?
শরাফত ঃ দরকার হলে টাকা দিয়া প্রমানের মুখ বন্ধ করুম।
মাষ্টার ঃ তুমি যদি দোষে না কর, তয় টাকা দিয়া প্রমাণের মুখ বন্ধ করা লাগবো ক্যান? গেদু সাব, এ যে দেহেন, এইডা সরাফতের চিঠি। ময়নার পেটের বাচ্ছা নষ্ট করার লাইগা শরাফত ময়নারে চিঠি দিছিলো। আর তার হাতের লেখা প্রমাণের জন্য স্কুলের তার পুরান খাতাও নিয়ে আইছি।
শরাফত ঃ স্যার আমারে বাঁচান।
মাষ্টার ঃ সবার কথা বাদ দিলাম। আমি তো তোমার মাষ্টার, তুমি তো জান, তোমার বাপেরে আমি পছন্দ না করলেও তোমারে আমি ছেলের মতন জানি। ভুলতো মানুষেই করে। স্বীকার করতে দোষ কি?
শরাফত ঃ কয়টা দোষ স্বীকার করুম মাষ্টার সাব। দোষ তো আমার না, দোষ আমার রক্তের।
চেয়ারম্যান ঃ খবরদার, স্বীকার যাইবেন না আব্বাজান। তাহলে আমার মান সম্মান কিছুই থাকবো না। ঐ ফকিন্নির মাইয়ারে কিছুতেই আমি ঘরে বউ করে আনতে পারুম না
শরাফত ঃ (এই প্রথম দৃঢ়ভাবে মাথা উঁচু করে বাবার সমেন দাঁড়ায়) আব্বা জান, আমি ময়নারে বিয়া করুম।
(দৌড়ে উৎভ্রান্তের মত আসে রূপা)
রূপা ঃ আর বিয়া করার দরকার নাই। তেতুল গাছের আগায় ময়নার লাশ ঝুলতাছে। ময়নার গলায় ফাঁস পড়ছে।
(সবাই ছুটে যায়) বাজান, বাজান, আমি সব দেখছি। ময়নার কামড় খাওয়ার জ্বীব দেখছি, কুছকানো শরীর দেখছি, খিচুনি খাওয়ার চেয়াল দেখছি। ডেড়সের মত বাঁকা আঙ্গুল দেখছি। ময়নার ভিতরে আমি আজরাইলের সুরত দেখছি।
মাষ্টার ঃ চুপ কর, মা চুপ কর। তুই ঢরাইচস। মনে সাহস রাখ, মা সাহস রাখ।



রূপা ঃ বাজান, আমার কিছুই ভালো লাগে না। আমার মনে হয় ময়না সারাক্ষন আমার লগে ঘুর ঘুর করে। রাসু ভাই কবে আইবো?
মাষ্টার ঃ ঠিকি সাকাইয়া ধরছিলাম মাকড়সাটারে, মাঝখান দিয়া মাইয়াটা গলায় ফাস দিয়া সর্বনাশ ঘটাইলো।
রূপা ঃ সর্বনাশটা কার ঘটাইলো? বাজান। হের নিজের, না তোমাগো সবার। তোমরা কি একবারও ভাবো নাই, এতবড় কেলাংকারীর পর ময়না বাঁচতে পারে না, ময়নার মরনের কারণ শুধু শরাফত না, তোমরাও , তোমরাতো শালিস করতে যাওনি, গেছো যার যার স্বার্থ হাসিলের লাইগা, (ঢুকে গেদু এবং ডুগডুগি)।
ডুগডুগি ঃ মাষ্টার সাব, মাসআল্লা, গেদু সাহেব ময়নার দাপন আর জেয়াফতের জন্য নগদ ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা দান করেছেন। এটা কেডা?
মাষ্টার ঃ রূপা, আয় মা, গেদু সাব আমার একমাত্র মাইয়া রূপা। আপনারেতো কইছি, সামনের মাসে বিয়া।
গেদু ঃ আলহামদুলিল্লাহ, ছেলে যেন কী করে?
মাষ্টার ঃ ছেলে এবার ওকালতি পাশ করছে।
ডুগডুগি ঃ উকিল জামাই পাশে থাকলে আর চিন্তা কি?
গেদু ঃ আমি চেয়ারম্যানের পিছনে খামাখা সময় নষ্ট করছি, এই ঘটনার পর দেখি তার জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায়। পলিটিক্স একটা কথা আছে... কনডম মাল লইয়া টান হেচড়া করিতে নাই। কাজেই চেয়ারম্যান বাদ, নতুন রিকুইটমেন্ট, একাব্বর মাষ্টার। নামের শেষে দুঃখ দুঃখ ভাবটা চাঙ্গা করিলে আর ঠেকায় কে? তাই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত গ্রামের পরবর্তী চেয়ারম্যান, একাব্বর মাষ্টার।আপনার পরেই আমার ইলেকশান। গিভ এন্ড টেক আপনি অপনি অতি দ্রুত ইলেকশান বাজেট ঠিক করে আমার সাথে ঢাকায় দেখা করবেন।
মাষ্টার ঃ গেদু সাব, আমার সম্পত্তির বিষয়টা?
গেদু ঃ জামাই বাবাজি ফিরিয়া আসুক। একটা শক্ত করিয়া পিটিশান লিখিয়া দিবে, উকিল মানুষ, প্যাচগোছ ভালোই বুঝিবে। বাদ বাকী তদবীরের কাজ আমার হাতে ছাড়িয়া দেন। আচ্ছা চলি।

মাষ্টার ঃ সালার চেয়ারম্যান, মাকড়োসার বাচ্চা। এতদিন আমার পাকা ক্ষেতে শুয়োর চড়িয়েছিস, আইজ থেকে আমিও প্রতিশোধের চুরিতে সান দিবো।
জনৈক ঃ মাষ্টার, ডাক ফিয়ন একটা চিঠি দিয়া গেলো।
রূপা ঃ কার চিঠি বাব জান।
মাষ্টার ঃ কার আবার, রাসুর। আমাগো জামাই বাবাজির।
জনৈক ঃ মাষ্টার পড়, কি লিখছে রাসু? পড়।
মাষ্টার ঃ “আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন স্যার, প্রথমেই আমার অতি ভক্তিপূর্ণ সালাম নিবেন” দেখছো মিয়া, এরিই কয় আদাব। আমার ৪০ বছরের মাষ্টারি জীবনে আমি মানুষ চিনতে ভুল করি নাই।
জনৈক ঃ তুমি পইড়া যাও না।
মাষ্টা ঃ “গেরামের ময় মুরুব্বিদেরও আমার সালাম দিবেন। রূপারে আমার ..........” কিরে রূপা পড়–মু?
রূপা ঃ বাজান, তুমি খালি খালি মসকরা কর।
মাষ্টার ঃ আচ্ছা থাক “পর সমাচর এই যে, আমি ভালোভাবেই ওকালিত পাশ করিয়াছি। স্যার আপনার ঋণ আমি কখনো শোধ করিতে পারুম না। অনেক কষ্ট করে আপনি আমার লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। গ্রামে রাসু ঢাকা শহরে এসে কি শিখেছে জানি না। তবে তার আকাংখার পরিমাণ গগণ চুম্বি। দেশের গন্ডি ফেরিয়ে লন্ডনে ব্যারিষ্টারি ডিগ্রী এখন আমার একমাত্র স্বপ্ন। দোষ নিবেন না স্যার। আমি বহু বার বহুভাবে গ্রামের রাসুর আবিস্কারের চেষ্টা করছি, পারি নি। আপনারা গ্রামে যে রাসুরে চিনতেন, শহরে মানুষের ভিড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। জানি ক্ষমা পাবো না। তবুও বলছি, সম্প্রতি, আমি আমার এক সহপাঠিনিকে বিবাহ্ করেছি।
রূপা ঃ বাজান, তোমার মনে আছে, খুব ছোট বেলার কথা? কতইবা বয়স আমার। স্কুলের পড়া একদম মুখস্থ করতে পারতাম না। তা নিয়া তোমার সে কি রাগারাগি। তুমি আমারে কইছিলা, পড়া মুখস্থ করতে পারলে একটা ময়ূর পঙ্খী কিনা দিবা। সারা রাত আমি ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে মুখস্থ করলাম....... পাখি সব করে রব রাতি পোহাইলো, কাননে কুসুম কলি সকলিই ফুটিলো। সকালে ঘুম থেইকা উইঠা পড়ালাম..... পাখি সব করে রব রাতি পোহাইলো, কাননে কুসুম কলি, ঝরিয়া পড়িলো। ভুইলা গেছি সব খাইয়া বসে আছি। সেদিন তুমি আমারে খুব মারছিলা। দেখো পিঠে হাত দিয়ে দেখো, সে মাইরের দাগ এখনো আছে। আইজ ময়ূর পঙ্খী যদি না পাই, তয় তোমারেও আমি ছাড়–ম না। উত্তর দেও বাজান, উত্তর দেও। চুপ কইরা থাইকো না। তোমারে আগেই কইছিলাম, ওত খোয়াব আমারে দেখাইয়ো না।
মাষ্টার ঃ আমার ঘরে আমি আইজ মাকড়সা, কি করলে মাইনসের জীবন আরও দীর্ঘ হয়, জানি না। ৪০ বছরের মাষ্টারি জীবনে আমি মানুষ চিনতে ভুল করি নাই। কিন্তু আজ এত বড় ভুল আমি কেমনে করলাম। আমি আরও দীর্ঘ জীবন চাই। না হলে পুনঃজন্ম চাই। তখন না হয় আবারও একবার সাবধানে পা ফেলবো। (মাষ্টার কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায়। রূপা আস্তে আস্তে স্পটে গিয়া যাবে চিঠিটা হাতে তুলে দেখবে আবার চুড়ে ফেলে দিবে।)
রূপা ঃ (হামিং) এতদিন যে ছায়াটার লগে রাইত দিন সংসার করছি, সে ছায়াটা আজ মানুষ হইছে। আস্ত একটা মানুষ। সে মানুষটাই ছিড়া ছিড়া খাইছে আমার স্বপ্ন আর সুখ। যে মানুষটার আপন মাইনসের চেয়েও বেশি আপন মনে করছিলাম, সে যে একবারও মনে করলো না............ এ টা বিশ্বাস করি কেমনে?

রূপা? কে রূপা? আমার লগে তার কি সম্বন্ধ? ঐ রকম হাজার রূপারা জন্মায় আর মরে তাতে কী আসে যায়। রূপারা পুডি মাছ হইয়া জন্মায় আর বোয়াল মাছের খোরাক জন্মায়। মৌ-মাছিরে আগুনে না পোড়াইলেতো আর মধু খাওন যায় না। সবার দরকার মধু। কয়টা মৌমাছি আগুনে মরল, তার খবর রাখে কেডা? আমি আ নিজের আগুনে নিজেই পুইড়া মরতাছি।
কেউ বুঝলো না, আমার অন্তরে মধ্যখানে বইশা আরেকটা মানুষ কথা কয়। নরে চড়ে, তারে একবার বাহিরে আইনা জিজ্ঞাস করুম.......... কেন পাগল করছিলা আমারে? ভাবছো মাইয়া মানুষ। খুদ কুড়া দিলেই সন্তুষ্ট থাকে। তার মধ্য যে খোয়াব আছে সেটারে কেউ দাম দেয় না। বুঝেনা নারীর জন্মের সত্যটারে। তারও শরীলের ভিতর রক্তের মধ্যে পুতুলের লাহান আরেকটা মানুষ সবসময় কান্দে, আর সে মানুষটারে দুনিয়া দেখাইবার চায়। মা ডাক শুনবার চায়। তার বুকটা পুরুষ পুরুষ শরীলের দলা মোছড়ায় গুড়াগুড়া অইবার চায়। জীবনের জন্য মরনের ঘরে এক লগে পা রাখবার চায়।
নারী জন্মের কষ্টের কান্না থামাইবার কোন ঔষোধ কি আছে? সেটা সে জানে না। জানে না বলেই কান্দন আসলে ফুলে ফুলে কান্দে। সহজে থামাইতে পারে না কেউ। তারপরেও আমি মানুষ। আমার মধ্যে কান্দন আছে, মায়া আছে, বিশ্বাস আছে এতদিন খোয়াব আর বিশ্বাসের খোলসে যারে লালন করছি সে হইলো রাসু। আপনাগো কারো লগে যদি রাসুর দেখা হয়, খোয়াবে অথবা বাস্তবে তারে শুধু একটা কথাই জানাইয়া দিবেন........... একাব্বর মাষ্টারের মেয়ে তারে ক্ষমা কইরা দিছে।
চোখেরে আন্ধার কইরা আমি আর অপেক্ষায় থাকুম না। আমার কষ্ট, আমার বেদনা, আমার আশা, আমার ভালোবাসা, আমার পাপ, আমার যন্ত্রনা, সব, সব একাকার ঐ ফলবতী বৃক্ষের মতন। যে বৃক্ষ ছায়া দেয় সস্তি পায় না, ফল ধরায় রাখতে পারে না। ঐ মাকড়সার জালের মধ্যে একবার ধরা পড়লে আর বাঁচতেও পারে না............ কাঁদতে কাঁদতে হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যায়।


“সমাপ্ত”

সংরক্ষিত

বিঃদ্রঃ নিজ গ্রামের মঞ্চ নাটকের অনুলিপি ঠিক এই রকম। (প্রথমবার প্রথম পাতায় লিখার সুযোগ পাইয়া তাড়াহুড়ো করে লিখাতে গিয়ে বানান ভুল থাকতে পারে।)



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৯
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×