somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিশোর স্মৃতি

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সপ্তম শ্রেণির দ্বিতীয় শিফটের ১২.৩০ থেকে ক্লাশ শুরু হয়ে ৫.৩০ শেষ হতো। যথারীতি ক্লাশ শেষ করে পীচ ঢালা পথ ধরে অতি প্রিয় বাইসাইকেলের প্যাডেল চাপতে চাপতে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পাশ কেটে দুই একটা মটর বাইকের গতি দেখে মনে মনে ভাবতাম আমার সাইকেলটার গতিও যদি মটর সাইকেলের ন্যায় হতো!! তাহলে কতই না ভালো হতো। আগে আগে বাড়ী ফিরতে পারতাম, আগে আগে ক্লাশ ধরতে পারতাম।
ভালো অধ্যয়নের জন্য বাবা আমাকে অতি আগ্রহ নিয়ে গ্রামের বাড়ীর পার্শ্বের স্কুল বাদ দিয়ে শহরের স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। আর আমিও সাইকেল পাওয়ার লোভে রাজি হয়ে গেলাম যদিও পরবর্তীতে কয়েকদিন খারাপ লাগলো। প্রাথমিক শিক্ষা অধ্যয়ন কালে আমার সহপাঠি অনেকেই গ্রামের স্কুলে ভর্তি হয়েছে। প্রথম কয়েক দিন খারাপ লাগলেও পরবর্তীতে শহরের বন্ধূদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে মটর সাইকেল ওয়ালাদের দেখলে খুব হিংসে হতো। কখনো কখেনো স্প্রীড ব্রেকার আসলে মটর বাইক ওয়ালাদের সাথে পাঞ্জা দিতে ইচ্ছে হয়, চেষ্টাও করেছি কিন্তু তাতে করে আমার টিফিনের টাকা পথেই শেষ হয়ে যেতো, পাঞ্জা দিতে গিয়ে একটু পর পর আইসক্রিম খেতাম। মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করত মটর সাইকেল পিছনে ধরে রাখি যাতে আমিও তার মত দ্রুত যেতে পারি কিন্তু আমি পাঞ্জা দিয়েও টিকিনা ধরবো কেমনে? বাড়ী এসে বাবাকে বললামও বাবা আমাকে মটর বাইক কিনে দিতে বাবা বলল ভালো রেজাল্ট করে ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পরে দেখা যাবে এখন বাই সাইকেলেই যাও। এক ছেলে হিসেবে বাবা যথা সম্ভব আবদার রাখেন্। সামনেও রাখবেন মনে করে বাই সাইকেলটিকে আমি বাই পরিবর্তে মটর রেখে বাই সাইকেলটিকে মটর সাইকেল মনে করে আত্মতৃপ্তিতে রোজ আসা যাওয়া করে ক্লাশ করি।

সাইকেলের উভয় হ্যান্ড প্যাডেলে রাবারের রোলিং তার উপরে ফোমের আবরণ দিয়ে এক্সেলেটর বানিয়ে উহাকে এক্সেলেটর মনে করে সময়সুযোগ মত ব্যবহার করি। যখনই আমার সাইকেলের পায়ের প্যাডেল চাপি তখনেই আমার হ্যান্ড প্যাডেল দ্রুত মোড়াতে থাকি, আর বোম বোম করে মনে মনে কখনো উচ্চ স্বরে শব্দ করি, আঁহ্ মজাটা কেউ পাক আর না পাক আমি নিজেই পাচ্ছি!!

আত্মতৃপ্তি নিয়ে সাইকেল চালাচ্ছি পেছন থেকে আমাদের স্কুলের ইউনিফর্ম পড়া (যদিও মাথায় সিভিল ওড়না) একটি মেয়েকে দেখতে পাই সে হাঁটছে, তার বাসা থেকে বিপরীত দিকে যাচ্ছে। সে প্রথম শিফটের ছিলো অসময়ে স্কুল ইউনিফর্ম পরে বিপরীত দিকে যেতে দেখে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলি আরে তুমি প্রিমিয়া না? তুমি না সকালে ক্লাশ করলে, এখন অসময়ে ঐদিক কোথায় যাচ্ছো? তোমারতো বাসা ঐ দিকে না। আমার কথায় সে কোন কর্ণপাত না করেই হাঁটছে আমিও আমার সাইকেলটার এক্সেলেটর কমিয়ে তার সাথে একাই কথা বলছি, বার বার জিজ্ঞেস করছি কোথায় যাচ্ছ? সে কোন কথাই বলল না হাটতেই আছে। এক পর্যায়ে আমি সাইকেল থেকে নেমে অনেকটা আগ্রহের সাথে বলি সন্ধ্যা হয়ে আসছে তুমি কোথায় যাচ্ছো প্রিমিয়া? কোন কথাই বলে না। বার বার জিজ্ঞেস করার পর সে বলল তুমি কোথায় যাচ্ছো। আমি অবাক হয়ে বলি সে-কি তুমি আমায় চিনলে না! আমি তো তোমার ক্লাশমেট যদিও আমি দ্বিতীয় শিফটের। গত বৎসরে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় তুমি যেমন খুশি তেমন সাঁজোতে ফাস্ট হয়েছ। এবার সে মুখ খুলল আসলে আমি তোমাকে প্রথমে চিনতে পারি নাই। আমি আমার আম্মুর কাছে যাচ্ছি। তোমার আম্মু কোথায়? আর যেখানে সিএনজি বাস, অটো চলছে সেখানে তুমি হেঁটে যাচ্ছ কেন? আমি ভাবলাম আশ পাশে কোথাও তার আম্মুর কাছে যাচ্ছে পরে জানতে পারলাম তার আম্মু পোষ্ট অফিসে চাকুরী করে স্কুল থেকে পোষ্ট অফিসে তখন সিএনজি ভাড়া ছিলো ২৫ টাকা। আমি অবাক হয়ে বলি এত দূর পথ তুমি হাটছো কেন? এ গতিতে তুমি হাটলে রাত ৯ টা বাজবে তোমার আম্মুর কাছে যেতে। সে বলে আমার কাছে কোন টাকা নেই, নানুর সাথে ঝগড়া করে বের হয়েছি। তোমার আম্মু এতক্ষনে বাহির হয়ে যাওয়ার কথা, তুমি বাসায় যাও, তোমার আম্মুকে পাবে না এ সময় গেলে। সে যাবেই যাবে এমনকি হেঁটে যাবে আমি নিজ থেকে ভাড়া দেয়ার চেষ্টা করছি তাও নিতে রাজি না।এদিকে সন্ধ্যা ছুই ছুই অবস্থা আমি কি করব বুঝতে পারছি না।


........ চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×