somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাকড়সার ফাঁদ

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



৩য় পর্ব এখানে

গেদু চলে যায়। সবাই পেছনে পেছনে চলে যায়। থাকে শুধু মাস্টার আর মজনু
মজনু: মাস্টার, তুমি যে কইলা, বুঝলা, কী বুঝলা?

মাস্টার: বুঝলাম, মাকড়সারে খাওনের লাইগা টিকটিকি হাজির হইয়া গেছে। খেলা শুরু হইয়া গেছে। খালি আমাগো রাসুরে একবার উকিল হইয়া আইতে দাও তার পরে ঐ গেন্দার কাছ থেকে তোমার জায়গা-জিরাত, ঘর বাড়ী, সব ফিরাইয়া লমু, তোমারে আমি কথা দিতাছি।

মজনু : কার কথা কও, রাসুর? আর কদিন লাগবো?

মাস্টার : বেশি দিন না। মনে আছে, মজনু ভাই? রাসুর বাপ মা রাসুরে ঝড়ের রাইতে নিম গাছের তলায় পালাইয়া গেছিলো, ভাবি ওরে কুড়াইয়া পাইছে। ঐদিকে রূপার মা, সন্তানের লাইগা আল্লার দরবারে আহজারি করতাছে। ভাবি রাসুকে রূপার মায়ের কোলে তুইলা দিছিলো। কত যত্ন কইরা তারে মানুষ করছে। হের ৫ বছর পর রূপার মা রূপারে জন্মদিতে গিয়া শহিদ অইছে। দুইজনেরে আমি কোলে পিঠে কইরা মানুষ কইরছি। আমার আদর্শ দিয়া রাসুরে গইড়া তুলছি।

মজনু: মাস্টার মনে আছে, সব মনে আছে। কি নিয়া ধৈর্য ধরতে কও? ঘর নাই, জমি-জিরাত নাই, ময়নার মা’ও নাই। তুমি যদি তোমার গোয়াল ঘরটা না ছাইড়া দিতা, মাইয়াটারে লইয়া আমি কই যাইতাম। মনের দুঃখ ভুলার লাইগা মাঝারে মাঝারে ঘুইরা বেড়াই।

মাস্টার: আমারও কী কম কষ্ট মজনু ভাই। ঐ যে চেয়ারম্যান- আমার বাব-দাদার সম্পত্তি দখল করছে। দাদা স্কুলের লাইগা জমি দিছিলো এক বিঘা, আর হেরা জাল কবলা কইরা নিছে ৫ বিঘা। ঐ যে চেয়ারম্যানের ইটের ভাটা, সেটাও আমাগো। ঐ ইটের ভাটায় শুধু আগুন জ্বলে না, আগুন জ্বলতাছে আমার অন্তরেও। উত্তরে সুপারি বাগান, সেটাও আমাগো, দক্ষিণে সরিষা ক্ষেত সেটাও আমাগো।তবুও চোখ বন্ধ কইরা মনেরে শক্ত কইরা বাঁধ দিছি। খালি রাসু একবার উকিল হোক, তারপর আমাগো সব হিসাব কড়ায় গন্ডায় বুইঝা লমু, চল বাড়ী চল।

চেয়ারম্যানের চরিত্রহীন একমাত্র পোলাই তার সম্ভল। যত প্রকার জাল-জালিয়াতি করছে সব পোলা শরাফতের জন্য। শরাফত চরিত্রহীন লম্পট। গ্রামের সহজ সরল মেয়েদের বুলিয়ে বালিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারিরিক সম্পর্ক করে সহজ সরল মেয়েদের পোয়াতি বানিয়ে কেটে পড়ে।

বাবার সম্পত্তি কোথায় কি আছে তার হিসেব শরাফাতের কাছে নেই, চেয়ারম্যান তার সহায় সম্পত্তি কোথায় কি আছে তা দেখানোর জন্য শরাফতকে ডেকে অানলো : কই বাবা শরাফত? অইলোডা কী আপ্নের? আইতাছেন না ক্যান?

শরাফত : এডা কোন জায়গায় আনলেন আব্বা? বনের ঝোপ-ঝাড়ে মাকড়সার জাল বুনছে। হে জাল লেপটাইয়া গেছে আমার চোখে মুখে।

চেয়ারম্যান: লক্ষনতো সুবিধার ঠেকতেছেনা, চোখ ভালো কইরা মুইছা পেলান। এবার দেখতাছেন?
শরাফত: জ্বি আব্বা জান।

চেয়ারম্যান: তো বাজান আইজ আপ্নেরে এখানে ক্যান নিয়া আইছি, বোধহয় জানেন না। বয়সতো আর কম অইলো না। আল্লায় না করুক আমার যদি কিছু একটা অইয়া যায়, এত বিষয় সম্পত্তি দেখবো কেডা? বাবা শরাফত।

শরাফত : জ্বি আব্বাজান।

চেয়ারম্যান: সব সময় মনে রাইখবেন- সম্পত্তি দখল করার থেকে সম্পত্তি রক্ষা করাই বড় কথা। আপ্নারে বলতে সরমের কিছু নাই। ঐ যে ইটা খোলা, সুপারির বাগান, সরিষা ক্ষেত, মগর এইসব কোনটাই আমাগো হক্কের না, কিন্তু এগুলো রক্ষা করতে অইবো। বিষয়িক চিন্তা ছাড়া অন্য কিছু আনছেন তো- সব শেষ।

শরাফত : আব্বাজান, আমারে ছাইড়া দেন। আপ্নে কোন চিন্তা কইরবেন না।
চেয়ারম্যান: চিন্তা কী খামাখা করি? আপনার যা মতি গতি দেখতাছি শুনতাছি আপনি একটু শক্ত হন। তাছাড়া সামনে আমার ইলেকশন।

শরাফত : আপনি তো জিত্তাই আছেন।

চেয়ারম্যান: জিত্তাই আছি? কেমনে?

শরাফত : ভোটের আগে আপ্নেরে নিয়া, সবার বাড়ী বাড়ী যামু। জিগামু, ভোট কারে দিবা? আপ্নারে দেখলে, হগ্গলেতো কইবো, আপ্নারে দিমু। ব্যাস, মামলা খতম। আমরা কমু আপ্নাগো ভোট বুঝিয়া পাইলাম। খালি খালি সেন্টারে যাওন দরকার নাই। তারপর সেন্টার যদি খালি থাকে তো আর কথাই নাই হা: হা: হা:।

চেয়ারম্যান: মাশআল্লা মাশাআল্লা। আল্লায় আপনারে বাঁচাইয়া রাখুক। সত্যি কথা বলতে কী, আপনি কাছে থাকলে আমার কোমরের জোর বাইড়া যায়।

শরাফত : কিন্তু আব্বা জান, গেরামের একটা কানাগোসা হুনলাম--

চেয়ারম্যান: কী?

শরাফত : একাব্বর মাস্টার সাহেবও নাকি এবার ভোটে খাঁড়াইতে পারে।
চেয়ারম্যান : মাস্টার কেমনে অয়? ও খাঁড়া-ই থাকবো, বহনের বুঝ হের কাছে নাই, হের আছেটা কী? থাকুনের মধ্যে আছে শুধু স্কুলের চাকুরীটা, আর সেটাতো আমার হাতের মুঠায়।

শরাফত: মাস্টার সাব কিন্তু খারাফ না আব্বা জান। দেখলেই কেমন জানি ভক্তি শ্রদ্ধা লাগে।মাস্টার সাব একটা কথা প্রায়ই বলেন--- জগতরে ফাঁকি দেওন যায়, কিন্তু নিজের মনেরে কখনো ফাঁকি দেওন যায় না। তার এই কথাটা আমার মনের মধ্যে গাঁইথা গেছে।

চেয়ারম্যান: বাবা শরাফত, বয়স আপ্নার অনেক কম। এই বয়সে মনে এসব দুর্বলতা আসা খারাপ লক্ষন। আপনি মাষ্টারের লগে বেশি মিলামেশা করবেন না।

শরাফত: কেন আব্বাজান?

চেয়ারম্যান: হাতি প্যাকে পড়নের কষ্টটা আমি বুঝি। মাস্টার ভাংবো কিন্তু মসকাইবো না। হেরে আমি ভালো কইরাই চিনি। চলেন আপনারে আমাগো সুপারির বাগানটা দেখাইয়া আনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×