somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাকড়সার ফাঁদ

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চতুর্থ পর্ব

ময়না আর রুপা ছোট বেলা থেকেই বান্ধবী। একে অপরের সুখ-দুঃখের সাথি। একই বাড়ীতে থাকায় ময়না বেশিরভাগ সময় রুপার সাথে কাটায়। বেশ কিছু দিন হল ময়না রুপার কাছে কিছু একটা লুকাচ্ছে। সারাক্ষণ মন খারাপ থাকে, কথায় কথায় মরনের কথা কয়। এমনি একদিন ময়না: রাসু ভাই কবে আইবোরে---

রূপা: কি জানি, বাবাজানতো কয় সামনের গরমের বন্ধে।বাবাজান যে কি করে, সারাদিন রাসু ভাইরে লইয়া আমারে শুধু ক্ষেপায়। কি যে আনন্দ পায় বুঝি না।

ময়না: আইচ্ছা বিয়া অইলে তুই রাসু ভাইর লগে ঢাকায় চইলা যাবি, কথাটা মনে পড়লেই আমার কইলজার মধ্যে কেমন জানি চ্যাত কইরা উঠে।

রূপা: সারা বছর কী ঢাকায় থাকুম? মাঝের মধ্যে গেরামেও আসুম। তোরে আমার কাছে ঢাকায় বেড়াতে নিয়া যামু। তুই কী ভাবছোস, ঢাকায় গেলে তোরে আমি ভুইলা যামু। আইচ্ছা ময়না, ঢাকার কথা মনে অইলেই আমার সারাক্ষন খালি ডর ডর করে। ঢাকার চলন ফিরন নাকি আলাদা। যদি কোন ভুল টুল অয় রাসু কী ভাববে।

ময়না: আরে পাগল, থাকতে থাকতে সব শিক্ষাই যাবি।

রূপা: ঢাকা শহরে যাওনের লাইগা আমার মন খালি সারাক্ষন চটপট করতাছে, আইচ্ছা, শরাফত ভাইয়ের কথা যে কইচিলি হে মানুষটা আসলে কেমন?
ময়না: মাইনসে তো কয় ভালা। তয় বাপের মতন না। কিন্তু পুরুষ মাইনসের মন, পাল্টাতে কতক্ষন। আমাগোই বা কি আছে? ঘর নাই, জমি জিরাত নাই, বাপ ঘুইরা ঘুইরা বেড়ায়, থাকুনের মধ্যে আছে শুধু ভালোভাবে বাইচা থাকনের আশা। কি জানি হয়তবা খোয়াব। হেডাও যদি ভাইঙ্গা যায়, তয় বাঁচুম কি নিয়া? চোখের সামনে দেখতাছি পোকা খাওয়া জাম গাছটা ভাইঙ্গা পড়তাছে। তবু মন আশায় বুক বাইন্ধা কয় গাছটা যেন না পড়ে। এমন অনেক কথা, যা কওন যায় না।

রূপা: ময়না, এমনি কি কথা? যা তুই আমারে কইতে পারিস না? এত কি কষ্ট তোর?

ময়না: এই কষ্টতো ধরনও যায় না, চোয়নও যায় না। বুকের মধ্যখানে কেবল খাবলা খাবলা করে। যন্ত্রনা নামের পাখিটা একবার বুকের ডালে বাসা বাঁধলে, তারে কি আর উড়াইয়া দেওন যায়? যায় না। রূপা, আমার মনে হয় আমি এক অদৃশ্য মাকড়সার জালে আটকা পড়ছি। মাইয়া মাইনসের জীবনতো এমনি। ভালোবাসে অন্ধের মত, প্রতারিত হয়, বঞ্চিত হয়, কান্দে, আবার ভুলে যায়, শত্রুকে বন্ধু ভেবে আবার গলায় ধরে। মাইয়া মানুষ অইলো গিয়া কাঁদা মাটি। যেমন খুশি নাড়াচাড়া কর, যা খুশি তৈরি কর, বাঁধা নাই। বাদ দে ঐসব কথা। আইচ্ছা, তুই কি রাসু ভাইকে নিয়া খোয়াব দেখস না?

রূপা : কত দেখলাম, ট্রেনে উইঠা আমি ঢাকা শহরে গেলাম। ময়না, ঢাকা শহর কিযে সোন্দর, লালনীল বাত্তি, ইয়া উঁচা উঁচা দালান, রাস্তার মোড়ে মোড়ে কত দোকান, তাকে তাকে সাজানো আঙ্গুর, বেদানা, নাশপাতি, যা ইচ্ছা খা পরান ভইরা খা।

ময়না: রূপা, আমার আবার বেশি বেশি খাওনের লোভরে। তুই ঢাকায় গেলে, আমি পাক্কা তিন মাস তোর বাসায় বইসা বইসা ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুইলা খামু আর খামু। তখন কিন্তু না করবার পারবি না।

রূপা : আরে পাগল, ঢাকায় কি খাওনের অভাব আছে? ঢাকার মানুষগুলা মাসাল্লা কি সুন্দর, চালচলন, আদব কায়দা। মাথায় ২৪ ঘন্টা খালি একটাই চিন্তা রাসু কবে উকিল অইবো, আমার লগে বিয়া অইবো। বাজানতো হারাদিন রাসু রাসু কইরা মুখে ফেনা তুলে। বাজান মুখে হুইনতে হুইনতে আমারও একটাই খোয়াব ঢাকা....ঢাকা....ঢাকা।

ময়না : হ, মাইয়া মাইনসের সব অইলো গিয়া কপাল। তয় আমার কপালে কী আছে জানস রূপা? মরন।আমার মরন বিনে গতি নাই।

রূপা : আমার মনে অয় তুই আমার কাছ থেকা কিছু একটা লুকাইতোছত।

ময়না: আমার জীবনটাতো লুকোচুরির খেলা। আর ভালোবাসাটা? সেটা অইলো ভাং, ধুতরার নেশা। যতক্ষন নেশা থাকে ততক্ষন ভালোবাসাও থাকে। নেশা শেষ, খেলাও শেষ। গত রাইতে মরা মায়েরে খোয়াবে দেখলাম। মা আমারে ডাক দিয়া কয়, কিরে আর কত টো টো কইরা ঘুইরা বেড়াইবি। সন্ধ্যা অইছে ঘরে ফিরা আয়।

রূপা : তোরে একটা সোজা কথা কই ময়না, মনে কিছু নিস না। তুই শরাফতরে ছাড়ন দে। হে মানুষ বেশি সুবিধার না।
ময়না : তুই ঠিকিই কইছস রূপা, তয় বড্ড দেরি হইয়া গেছে। ঐ যে কইছিলাম না, ধুতরার নেশা, নেশা যখন শেষ অইলো, নিজের দিকে যখন চোখ মেইলা দেখি বুঝতে পারলাম, আমার সারা শরীরে শুধু বিষাক্ত ঘা। দুর্গন্ধযুক্ত রক্ত বইছে আমার শরীরে।

ময়না তলপেটে হাত দিয়ে কয়, আচ্ছা রূপা মা যদি মারা যায় তবে কী পেটের বাচ্চাটাও মারা যায়? মরনের যে কি কষ্ট সেটা যদি আজরাইল জানতো বলে মাথা ঘুরে পড়ে যায়।

রূপা : ময়না ময়না চিৎকার করে বাজান, মজনু কাকা তোমরা কে কোথায় আছো, ময়না অজ্ঞান হইয়া গেছে।

ময়না অজ্ঞান হওয়ার পরবর্তীতে সবাই অাঁচ করতে পেরেছে, শরাফতের কু-কর্মের ফসল ময়নার পেটে। উক্ত রূপ দেখে মজনু দিশেহারা হয়ে মাস্টার মাস্টার, আমার সর্বনাশ অইছে। আমার সব শেষ অইয়া গেছে।
মাস্টার: কী অইছে কইবা তো?

মজনু: কানের কাছে মুখ নিয়ে- চেয়ারম্যানের লম্পট পোলা শরাফত আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছে।

মাস্টার : এটা কি মগের মুল্লুক? আমরা শালিশ ডাকুম।

মজনু : আমি এখন কি নিয়া বাঁচুম। আমারতো সব কিছু শেষ কইরা দিছে ঐ হারামজাদাটা।আমি ময়নার মায়ের কাছে চইলা যামু। আমি তো আর সহ্য করতে পারতাছি না।


মাস্টার: মজনু ভাই, মেরুদন্ড সোজা কইরা দাঁড়াও, শক্ত হও। এখন কান্দনের সময় নাই। মাইয়া আমাগো ঘরেও আছে। চল গেরামের হগলরে জানাই। সবাইরে এক কইরা এর একটা বিহীত করতে অইবো। বইশা থাকোনের সময় নাই। ........ চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×