somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এগিয়ে যাক রামপাল - পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ চাই

২০ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রায় ২,৪০,০০,০০০ GWh (দুই কোটি চল্লিশ লাখ গিগাওয়াট-আওয়ার) বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদিত হয় প্রতিবছর; যার প্রায় ৪০% হয় কয়লা থেকে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মোট বিদ্যুতশক্তির যথাক্রমে ৭৮%, ৪৩% ও ৫৯% আসে এই কয়লা থেকে।
বেচারা বাংলাদেশ মাত্র ৫০,৫০০ GWh (পঞ্চাশ হাজার পাঁচশ' গিগাওয়াট-আওয়ার) বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করে প্রতিবছর; যা তামাম দুনিয়ায় উৎপাদিত বিদ্যুৎশক্তির মাত্র ০.২% বা ৫০০ ভাগের ১ভাগ। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা CIA-এর হিসেব মতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ৬,৩০০ মেগাওয়াট। সেখানে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন মানে অনেক বড় কিছু। এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জন্য খুবই দরকার। [উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে]

এবার পরিবেশের কথা বলি। উপরের হিসেব থেকে মিলিয়ে দেখুন, দেখবেন: সারা পৃথিবী যত কয়লা পোড়ায়, তার মাত্র ১,০০০ ভাগের ১ ভাগ (০.১%) বা তার চে'ও কম কয়লা পোড়ানো হবে রামপালে। রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট পৃথিবীর পরিবেশের যত ক্ষতি করবে, তার এক হাজার গুন বেশি ক্ষতি করছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র-ইন্ডিয়া-অস্ট্রেলিয়ার মত বড় দেশগুলো। অন্যদিকে তাদের পুরনো কেন্দ্রগুলোতে পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার করায় তা পরিবেশের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর; সেখানে রামপালে সর্বাধুনিক সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি অবলম্বন করা হবে বিধায় দূষণ হবে তুলনামূলকভাবে কম। বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ১৮০০গুন বেশি কয়লা পোড়ায় চীন, অথচ তারা জনসংখ্যায় বাংলাদেশের চেয়ে মাত্র ৯গুণ বড়। যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমান বাংলাদেশের চেয়ে ৩২ গুন বেশি।

দূষণের দায় বিষয়টা এভাবে ভাবা যাক: একটি গ্রামে ৭০০ জন মানুষ প্রতিদিন নিজেদের অপরিহার্য চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য উৎপাদন করে এবং তার ফলে পরিবেশদূষণকারী ১০০০ বালতি উচ্ছিষ্টও সৃষ্টি হয়, যা গ্রামের পুকুরে ফেলা হয় বলে সুন্দর পুকুরটি দিনদিন দূষিত হয়ে উঠছে। এখন ১৫ জন সদস্যবিশিষ্ট কোনো সচেতন পরিবারের লোকেরা যদি পুকুরের পানি দূষিত হবে বলে তাদের ১ বালতি উচ্ছিষ্ট সৃষ্টি না করার জন্য খাদ্যোৎপাদন বন্ধ করে দেয়, তবে তাদের ১৫জনকেই ভিক্ষুকে পরিণত হতে হবে,- অন্যদের বাড়িতে গিয়ে অদক্ষ ক্রীতদাসরূপে খাটতে হবে। বাকি ৬৮৫ জন মানুষ ৯৯৯ বালতি ময়লা ফেললে আমরা ১৫ জন মিলে ১বালতি ময়লা ফেলতে সমস্যা কী? (১জন = ১ কোটি, পুকুর = পরিবেশ)।

সুন্দরবন? আরে রাখেন আপনার সুন্দরবন! ভারতের মত গরিব দেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎশক্তির পরিমাণ ১,০০০ কিলোওয়াট; সেখানে আমরা গরিবের গরিব বাংলাদেশিদের মাথাপিছু বিদ্যুৎশক্তি ভারতের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ মাত্র! যেকোনো উন্নয়নের জন্য মৌলিক শর্ত হলো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন।
যে দেশে বিদ্যুতের অভাবে বাচ্চারা পড়তে পারে না, বয়স্কদের প্রাণ গরমে উষ্ঠাগত হয়, মিল-কারখানা বন্ধ থাকে, অপ্রতুলতা হেতু নতুন বিদ্যুৎসংযোগ পেতে ২০/৫০ হাজার টাকা ঘুষ লাগে, সে-দেশে সুন্দরবন অক্ষত রেখে কাজ কি? মাইনষের বাচ্চার যত্ন নাই, বাঘ-বানর-শুয়োরের বাচ্চা নিয়া যত্তসব লম্ফঝম্প! ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স? রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবন আগামী দশ বছরে ধ্বংস হয়ে যাবে, এমন তো না। পাওয়ার প্ল্যান্ট বনের যে ক্ষতি করবে, তার প্রায় সমান ক্ষতি করত ঐসব মানুষেরা, যাদেরকে বনাঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমিই উর্বর এবং সব অঞ্চলই ঘনবসতিপূর্ণ; এখানে ভারত বা অস্ট্রেলিয়ার মত লাখ লাখ একর অনুর্বর বিরানভূমি নেই যে, যেখানে কোনো পাওয়ার প্ল্যান্ট বসানো যাবে। তাই রামপালই উপযুক্ত স্থান বলে মনে হচ্ছে।

কোনোরকম স্টাডি না করেই কলা বিভাগের বামপন্থি কিছু ছেলে/লোক রামপাল ইস্যুতে একেবারে পিএইচডি ডিগ্রিধারী পরিবেশবিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে! হাস্যকর।
"প্ল্যান্ট থেকে এত টন কার্বন নিঃসৃত হবে, অত টন গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসৃত হবে" এসব হিসেব যে দেয়, তাকে জিজ্ঞেস করুন পৃথিবীর উন্নত ও সভ্য বলে স্বীকৃত দেশগুলোর মাথাপিছু গ্রিনহাউজ নিঃসরণের পরিমাণ কত। হ্যাঁ, রামপালে বেশকিছু গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসৃত হবে এবং পরিবেশের কিছু ক্ষতি হবে, এটা ঠিক; কিন্তু, এই নিঃসরণ ও ক্ষতি ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অসম্ভব। আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন না হলে বাংলাদেশের শিশুরা শিক্ষা পাবে না, যুবকেরা চাকুরী পাবে না, বছরের পর বছর বেকার হয়ে ঘুরবে, বৃদ্ধরা চিকিৎসা পাবে না, সামাজিক অপরাধ, অরাজকতা ও দুর্নীতি কমবে না, মানুষ আজীবন ফকির-মিসকিন হয়ে থাকবে, মধ্যপ্রাচ্যে দাসত্ব করতে গিয়ে আরবিদের লাথি খাবে, বিদেশিরা "oh, Bangladesh? beggars!" বলে গালি দেবে। ভেবে দেখুন।
গ্রিনহাউজ সিস্টেম রক্ষার দায়িত্ব আমাদের একার না। আমেরিকা-চীন-অস্ট্রেলিয়া আজ পৃথিবী শাসন করছে, তাদের জনগণ উন্নত জীবন যাপন করছে, কারণ তারা পরিবেশের চেয়ে আগে অর্থনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। উন্নত হবার পরেই পরিবেশ বাঁচানোর কথা বলছে। তারপরও এখনো তারা আমাদের চেয়ে অনেক অনেক অনেক গুণ বেশি ক্ষতি করছে পরিবেশের।

তাই সবদিক বিবেচনা করে আমি মনে করি, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রয়োজন! অতিদ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বৃহত্তর খুলনা ও বরিশাল এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হোক। তবে ভবিষ্যতে যেন পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

আমাদের উচিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে এবং ষড়যন্ত্রকারী ও বোকাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। তবে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করতে হবে; ভারত তো আবার প্রতিটি ব্যবসাতেই অংশীদারকে ঠকাতে ওস্তাদ। অতিমাত্রায় দেশপ্রেম মানুষকে অনেকসময় বাটোয়ার ও অপরাধী বানিয়ে দেয়, ভারত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

জয় রামপাল! :D
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩০
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×