somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরুনিমার গল্প

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অরুণিমার মন ভাল নেই। বইয়ের পোকা মেয়েটা বইয়ের পাতাই উলটে যায় একটি বর্ণও তার মাথায় ঢোকে না। মাথার মধ্যে শুধু সেই ছেলেটা ঘুরপাক খাচ্ছে। কি এক অজানা আশঙ্কায় মাঝে মাঝেই আঁতকে ওঠে সে?
আজ ক'দিন হল ছেলেটা গলির মোরে এসে দারায় না । কলেজের আশেপাশেও তার দেখাটি মিলছে না। না বাড়ির সামনে বা উল্টো গলির মুখে।
একসময় যেখানে আড়চোখেও তাকাত না অরুণিমা আজ সে সব স্থান সে তন্ন তন্ন করে খোঁজে। অথচ কেন এই খোজা তাও জানে না। অপরিচিত একটি ছেলে সর্বদা যে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকত। ভাষাহীন ঠোটের কোনে স্মিত হাসি। এটুকুই তার পরিচিতি। এমন একজন কোথায় গেল বা তার কি হল তা নিয়ে সেই বা কেন এত ভাবছে? নিজেকে বহুবার সে প্রশ্ন করেছে উত্তর মেলেনি।
এই বয়সে এসে কিশোরী ভাবনা তাকে মানায় না। এতটা প্রগলভা হওয়া উচিৎ নয় বলে নিজেকে শাসিয়েছে।
মন কি শাসন মানে?
ছেলেটা যে কবে কখন থেকে এভাবে পিছু নিয়েছিল তা অরুণিমা নিজেও জানে না। একদিন এক সহকর্মীর কথায় খেয়াল করল। সত্যিই তো ছেলেটাকে এর আগেও বেশ কবার দেখেছে। সে যে তাকেই অনুসরণ করে সেটা বুঝতে পারেনি। আর বুঝতে পেরেও কেন যেন ওর এই অনুসরণ করাতে কখনোই বিরক্ত লাগেনি।
প্রশ্রয় না দিলেও বিরক্ত হওয়ার মতো যদিও কোন কারণও ঘটে নি।
তবে কি কিছুটা শিহরিতও হত? আজ এতদিন পরে সে প্রশ্নটাই নিজে নিজেকে করছে।
একটু একটু করে নিজের অজান্তে কখন যে অনেকটাই দখল করে নিয়েছিল ছেলেটা অরুনিমা নিজেই টের পায়নি এতদিন। আজ যখন ওর বিবর্ণ চেহারাটা আশেপাশের মানুষগুলোর চোখে পড়তে শুরু করেছে যখন কলেজের অধ্যক্ষ ডেকে নিয়ে জানতে চাইলেন কিছুদিন ছুটির প্রয়োজন কিনা তখনই যেন ও আবিষ্কার করল সত্যিই এ ক'দিনে ভেতরে ভেতরে অনেকখানি ভেঙ্গে পড়েছে ও। আর সে কারনেই অরুনিমা আর না করল না। সত্যিই তো ওর বিশ্রাম প্রয়োজন। জীবনে এই প্রথম এতটা ক্লান্ত লাগছে।
অধ্যক্ষের অনেক প্রিয়, শান্ত স্নিগ্ধ একাগ্র এই নতুন প্রভাষকটি। অনেকটা নিজের মেয়ের মতই দেখেন ওকে। ভাবলেন নতুন চাকরি মেয়েটার মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিছু উপদেশ দিয়ে ওকে বাসায় চলে যেতে বললেন।
অরুনিমা হাটছে সেই পথ ধরে ছেলেটার দারনোর প্রতিটি বাক ওর মুখস্ত। ওর তৃষ্ণার্ত চোখ একটি অবয়বকেই খুঁজছে। একটা মানুষ এভাবে যে কখনো কাউকে দখল করে নিতে পারে ওর নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না। কম তো ঝেড়ে ফেলতে চায় নি মাথা থেকে। অথচ ভাবনা গুলো আরও বেশি করে যেন জেকে বসেছে।
একদিন দুদিন তো নয়, প্রায় বছর গড়াল একটি দিনের জন্য যে চোখের আড়াল হয়নি। আজ প্রায় এক মাস হতে চলল তার টিকিটিও চোখে পড়ছে না। কিছুতেই সুস্থির হতে পারছিল না অরুণিমা। অনেকটা আনমনেই এতটা পথ হেটে এসে বন্ধ ঘরের দরজার সামনে এসে ও যেন ভুত দেখল। নিমেষে শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেল।
অরুণিমার শুধু খেয়াল আছে পরে যেতে যেতে কেউ ওকে আলতো করে ধরে ফেলল। চোখ খুলে দেখল সেই ছেলেটা পরম মমতায় ধুলোবালির মধ্যেই পরম যত্নে ওকে আগলে ধরে আছে। উঠতে ইচ্ছে করছিল না দু'চোখের কোল বেয়ে অজান্তেই বয়ে চলল সূক্ষ্ম এক জলের ধারা।
মনে মনে বলল এতটা কষ্ট দিতে কই ছিলে এতদিন। কি আশ্চর্য ছেলেটা যেন অন্তর্যামী! ওর মনের কথাটা পড়েই যেন আপন মনে বলে উঠল। মাকে নিয়ে এতদিন হাসপাতালে ছিলাম তাই আসতে পারিনি।
অরুণিমা উঠল না, কিছু বলল না। পরম নিশ্চিন্তে শুধু শরীরের বাঁধনটুকু ছেড়ে দিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২০
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×