somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পড়াচ্ছি, শেখাচ্ছি না

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের মায়েদের নিয়ে হয়েছে এক বিপদ। বিপদটা হল তাদের সকল সন্তানদের ক্লাসে প্রথম হতে হবে! সবাই যদি প্রথম স্থান অধিকার করে বসে তাহলে মেধা যাচাইটা হবে কিভাবে? এই সব মায়েদের যুক্তি হল অন্যরা পারলে তাঁর সন্তান কেন পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বুঝিনা ক্লাসে প্রথম হয়ে কি হবে? এই মুখস্ত বিদ্যা আর তা প্রয়োজন অনুযায়ী উগরে দেয়া এ দিয়ে লাভটাই বা কি?

সন্তান সত্যিই বিকশিত হতে পারছে কিনা। তাঁর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে তাকে সহায়তা করছি কিনা সে চিন্তাটা আমরা একবারও করছি না।
যা পড়ছে তা বুঝতে পারছে কিনা কিংবা তাঁর প্রয়োগ সে বাস্তব জীবনে করছে কি না সেটাও ভেবে দেখছি না। যদি সে, সবার সুখে হাসব মোরা কাঁদব সবার দুখে………… আবৃত্তি করতে করতে গৃহ কর্মিকে পেটায় তাতে লাভটা কি হবে শুনি? বাস্তবে তো এমনটাই হচ্ছে।
সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী অজস্র ছেলে মেয়ে দেখেছি যারা একটি লাইন নিজে থেকে লিখতে পারে না। একটি বিষয়ে প্রশ্ন করলে পাঠ্য বইয়ের তত্ত্বকথাটিও নিজের ভাষায় বলতে পর্যন্ত পারে না। কি হয় এই শিক্ষা দিয়ে?

কিছুদিন আগে সুইডেন প্রবাসী Aminul Islam নামে একজন অধ্যাপকের ফেসবুকে দেয়া একটি পোষ্ট পড়ছিলাম। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন এভাবে-
গত দুই দিন ধরে ছাত্রদের ইন্টার্ভিউ নিচ্ছি। আমার এখানে যারা ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলো, তাদের ইন্টার্ভিউ। বাংলাদেশ থেকে মোট ১১ জন আবেদন করেছিলো। আমার এক সহকর্মী এদের ইন্টার্ভিউ নিয়েছে। ………… আমি আমার সহকর্মী’কে জিজ্ঞেস করলাম
-কেমন করলো আমার বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা?
-কেউ কেউ ভালো, কেউ আবার একদম খারাপ।
আমরা মূলত ছাত্র-ছাত্রীদের মোটিভেশন দেখছিলাম, তারা কেন এখানে পড়তে চায়; সেই সাথে ইংরেজি’র লেভে’টাও যাচাই করছিলাম। যা হোক, আমি আমার সহকর্মী’কে জিজ্ঞেস করলাম
-খারাপ বলতে কি বুঝাচ্ছ! মোটিভেশন ক্লিয়ার না, নাকি ইংরেজিতে সমস্যা?
-কয়েকজন তো আমার কোন প্রশ্ন’ই বুঝতে পারেনি। ইংরেজি’র লেভেল খুব’ই খারাপ।

যা হোক, শেষ পর্যন্ত ১১ জন বাংলাদেশির মাঝে ৬ জনকে এডমিশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। বাকী ৫ জন চান্স পায়নি, কারন এদের ইংরেজি এতো’ই খারাপ, কোন ভাবেই এদের এডমিশন দেয়া সম্ভব না। সব চাইতে অবাক করা ব্যাপার হলো এই পাঁচ জনের সবাই এসএসসি এবং এইচএসসি’তে জিপিএ ৫ পেয়েছে এবং এখন বাংলাদেশের নামকরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়ছে বা পড়েছে। আর যেই ৬ জন’কে আমরা শেষ পর্যন্ত এডমিশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এর মাঝে একজন ছাড়া কারো এসএসসি বা এইচএসসি’তে জিপিএ ৫ নেই। পাঁচ জন’ই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে বা পড়ছে আর একজন শুধু নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

আমি ঠিক জানি না, আমাদের পড়াশুনার মান আসলে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। অতি সাধারণ ইংরেজি, যেমনঃ তুমি এখানে কেন পড়তে আসতে চাইছ? তুমি এই দেশ সম্পর্কে কি কি জানো? এই পর্যন্ত তুমি কি পড়াশুনা করেছে? এই ইংরেজি প্রশ্ন গুলো তারা বুঝে না; উত্তরও দিতে পারে না। প্রশ্ন করা হয়েছে এক বিষয়ে; না বুঝে উত্তর দিচ্ছে আরেক বিষয়ে। তাও আবার সব’ও ভুল ইংরেজিতে! এর মাঝে একজন আবার বাংলাদেশে ইংরেজি পড়ায় স্কুলে! ভাবুন দেখি অবস্থা! ………………।

আমরা যারা দেশে আছি আমাদের অভিজ্ঞতা এর থেকেও খারাপ। নামকরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা সর্বচ্চ ডিগ্রীধারী দুজন অফিস সহকারীকে দেখি বাংলা শুদ্ধ উচ্চারনটা পর্যন্ত লিখতে পারে না। কখনো কখনো বাংলা নামের ইংরেজী লিখতে গিয়ে এমন সব অদ্ভুত শব্দ বানিয়ে ফেলে যা লজ্জার কারন হয়ে দাঁড়ায়। শুনেছি আজকাল সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরিতে শ্রেনি শিক্ষকগন গাইড বইকে বাইবেল বানিয়েছেন!

সত্যি আমরা শিখছি না কেবল মুখস্ত করছি। পবিত্র কুরআন মুখস্থ করছি বেহেশতের ফ্রি টিকেট পাওয়ার আশায়। আর পাঠ্য বই মুখস্থ করছি ফ্রি চাকরী লাভের আশায়!

বেহেশতের মালিক কিংবা চাকরী দাতা উভয়ের কাছেই যখন নিরাশ হয়ে ফিরতে হবে। তখন নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙ্গুলটি তুলব? কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি দাতার বিরুদ্ধে যখন একটি আঙ্গুল তুলব তখন বাকি চারটি আঙ্গুল আমার দিকে তাকিয়েই ভ্রুকুটি করবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৫
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×