somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এটা বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা নয়।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পঁচাত্তর পরবর্তী প্রায় পঁচিশটি বছর এ দেশে বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়াও অলিখিত ভাবে নিষিদ্ধ ছিল। এমন কি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নতুন নতুন গপ্প ফাঁদা হয়েছিল। জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর স্থানে বসানোর কত চেষ্টাই না করা হয়েছে। তাতে কি আসল সত্য ইতিহাস থেকে মুছে গিয়েছিল? মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি মুছে দিয়ে গণ্ডগোল শেখানো হয়েছে। অর্বাচীনের মত মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। ভুঁইফোঁড় নেতা হিসেবে জিয়াকে নিয়ে আসা হয়েছে। একটি ঘোষণাপত্র পাঠকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হয়েছে। তাতে কি লাভ হয়েছে? ষড়যন্ত্রের মেঘ ফুড়ে সত্যের আলোটাই শেষ পর্যন্ত উদ্ভাসিত হয়েছে।

দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের পরেও কি বঙ্গবন্ধু ইতিহাস থেকে মুছে গিয়েছিলেন, না তাঁর ভাবমূর্তির সামান্য তম ক্ষতি সাধন করা গেছে? বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য এ দেশের মানুষের মণিকোঠায় যে স্থানটি তাঁরা নিজেরাই স্থাপন করে গেছেন তাদের কর্মের মাধ্যমে তাঁরা তিলমাত্র স্থানচ্যুত করতে পারে নি। বঙ্গবন্ধুকে প্রকাশ্য স্থান থেকে লুপ্ত করে ফেলা হয়েছিল আর তাতে এ দেশ বাসির হৃদয়ের মণিকোঠায় তাঁর আশ্রয় আরও বেশী মজবুত হয়েছে।
অথচ কি আশ্চর্য আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকতেই বঙ্গবন্ধুর সম্মানহানি নিয়ে বেশী চিন্তিত! আজ আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমন আরম্ভর শুরু করা হয়েছে যে তাকে এখন আবার হৃদয়ের মণিকোঠা থেকে বেড়িয়ে সারম্ভর সভায় যোগ দিতে হচ্ছে। এটা আওয়ামীলীগের জন্য কতটা কল্যাণ বয়ে আনছে তা তারাই ভালো জানেন। তবে এটুকু বুঝতে পারি ভালোবাসার মানুষকে যদি কেউ ভালোবাসার জন্য পিড়াপিড়ি করে তাতে বিড়ম্বনাই বাড়ে।
দুই যুগ ধরে বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষরা হেয় করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তাঁরা ভেবেছিল তাঁরা তাদের অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছে গেছে। আর দুই যুগ পরে যখন সেই বঙ্গবন্ধুর নামেই আওয়ামীলীগ নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হল। তখন তাঁরা প্রমাদ গুনতে শুরু করল। এতদিন পরে এসে তাঁরা বুঝতে পারল ঐতিহাসিক সত্য পরিবর্তন করা যায় না। চাইলেই জাতির জনককে জাতির মন থেকে মুছে ফেলা যায় না।

আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের এতদিন পরে মনে হল, বঙ্গবন্ধুর ইমেজ রক্ষার জন্য আইন করতে হবে। অবশ্যই তাদের কাছে এর পক্ষে যুক্তি আছে। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ মানুষ। যারা সামান্য বুদ্ধি নিয়েই জীবন পার করে দেই তাদের প্রশ্ন হল-
যারা কোন লাভের আশায় নয় কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসেই তাকে নিয়ে গবেষণা করেন, তাকে চর্চা করেন, তার ছবি আঁকেন। তাঁরা কি মুক্তভাবে আর কাজটি করতে পারবেন? 'বঙ্গবন্ধু' একটি ইমেজের নাম। যা নষ্ট করার আসলে কোন সুযোগই নেই।

গবেষনাধর্মী এসব কাজ প্রত্যেকে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গিতেই করে থাকেন। সেটা সকলের কাছে তো ভাল নাও লাগতে পারে। এই ভাল না লাগা থেকে অথবা নিছকই রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কারণে যদি কেউ সেই গবেষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকার মানহানি মামলা করে দেয়। তাহলে কি হবে?
একটি শিশু বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকলে সে ছবি শিল্প বোদ্ধাদের বিচারে অসংখ্য ত্রুটিযুক্ত হতেই পারে, শিশুটি কিন্তু ছবিটা এঁকেছে তাঁর হৃদয় নিঃসৃত ভালবাসার তুলিতে, বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে, শ্রদ্ধার জায়গা থেকে। সেটা কি রাজনৈতিক ফটকাবাজরা বুঝতে পারবে বা বুঝতে চাইবে?
কোন শিশু একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণ আবৃত্তি করতে গিয়ে যদি অনিচ্ছাকৃত ভুল করে বসে আপনি কি সেই শিশু অথবা তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন? যদি তাই হয়, তাহলে আমি আমার সন্তানকে এই ভাষণটি মুখস্থ করতেই নিষেধ করব। নিষেধ করব কোন প্রতিযোগিতা বা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে। আমি কি তবে আমার সন্তানকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখতেও নিষেধ করব! প্রশ্ন হল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা বঙ্গবন্ধুর পরিবার কি তাই চান?

বঙ্গবন্ধুকে যে কেবল আওয়ালিগের নেতা কর্মী এক কথায় সুবিধা ভোগীরাই ভালবাসেন তা তো নয়। বরং তাদের থেকে সংখ্যায় অনেক বেশী মানুষ জাতির জনক হিসেবে তাকে ভালবাসেন, শ্রদ্ধা করেন নিঃস্বার্থভাবে। তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণের চেষ্টা করেন। এদের এই চর্চার ক্ষেত্রে কোন অনিচ্ছা কৃত ত্রুটিকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা উঠাতে যদি; যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়ার সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে তো এরপরে আর কেউ ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করবেন না। বঙ্গবন্ধুর চর্চা করবে না তার ছবি আঁকবে না। তাতে কি বঙ্গবন্ধুকে যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা হবে? বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হবে?
এটা তো বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসা নয় এটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহারের আরেকটি তরিকা অথবা আগামী প্রজন্মের মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার আরেকটি চক্রান্ত! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিষয়টি কি একটু ভেবে দেখবেন?

[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:০৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×