somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'একুশ আমাদের অস্তিত্বের অহংকার, একুশ আমাদের গর্ব...

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সবার মতামত আশা করছি...


"ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়?
ওরা কথায় কথায় ধমক মারে" শিকল পড়ায় আমার পায়"

-প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীত শিল্পী আব্দুল লতিফের।

বাঙ্গালীদের ভাষা আন্দোলন আর স্বাধীনতা যুদ্ধ জাতিকে এনে দিয়েছিল পরাধীনতার গ্লানিথেকে মুক্ত করে, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আর একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতির স্বীকৃতি।
.
একুশ মানে কারো কাছে মাথা নত না করাঃ-


পৃথিবীতে এমন ইতিহাস বিরল যে জাতিকে ভাষা ও স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে। প্রতিটি জাতি চায় নিজস্ব ভাষার স্বাধীনতা, প্রাণ খুলে কথা বলার অধিকার আর স্বাধীন ভূমিতে বসবাস করার স্বীকৃতি।


১৯৫০ সালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ও ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন পুনরায় ‘‘Urdu and Urdu shal be the state language of Pakistan’’ একই ঘোষণা দিলে, উপস্থিত ছাত্র-যুবকেরা সমাবেশেই No No No It can't be ধ্বনি তুলে তার সে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘোষণার সমুচিত জবাব দেয়। এই ঘোষণার ফলে ছাত্র-বুদ্ধিজীবী- পেশাজীবী ও সর্বস্তরের বাঙ্গালীদের মধ্যে দারুণ ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়। আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে, এই আন্দোলনের ফলেই ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়, একই দিনের জনসভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি’’ গঠন করা হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারি'কে ভাষা দিবস পালন করা ও দেশব্যাপী হরতাল আহবান করা হয়। উক্ত হরতালকে বানচাল করার
লক্ষ্যে তৎকালীন গবর্নর নুরুল আমীন সরকার ঢাকায় তার পূর্ব রাতে ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু সংগ্রাম পরিষদ ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে গণবিক্ষোভের আয়োজন করে এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ‘‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’’
স্লোগান তুলে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বর্বরোচিত আক্রমণের সম্মুখে পড়ে এবং পুলিশের
গুলীতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় রফিক, সালাম, বরকত, সাত্তার, জববার, রুমিসহ শহীদ হয় আরও অনেকে,
আহত হয় বহু সংখ্যক প্রতিবাদী। রাজ পথ রক্তে রঞ্চিত হয়ে ওঠে।


অবশেষে তীব্র বিক্ষোভের মুখে সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়এবং সাময়িকভাবে প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন ‘‘বাংলা’’কে অন্যতম জাতীয় ভাষা করার সুপারিশ সংবলিত একটি প্রস্তাব প্রাদেশিক পরিষদে
উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। অতঃপর ১৯৫৬ সালের সংবিধানের ২১৪ নং অনুচ্ছেদে
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয় এভাবে আমাদের ভাষার ও জাতির বিজয় অর্জিত হয়।
.
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৩৫৮ বাংলা ৮ই ফাল্গুন ভাষা যুদ্ধ এনে দিয়েছিল বাঙ্গালীদের
সেই কাঙ্ক্ষিত অর্জনখানি। এরই ধারাবাহিকতায় এসেছিল ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ও স্বাধীনতা


'একুশ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আলোক নিদের্শকঃ-

২১ আমাদের সংস্কৃতির কথা বলে, একুশ আসলেই জেগে উঠে প্রাণ। একুশের বই মেলা, বাংলা একাডেমী
কর্তৃক সারা দেশে কবিতা উৎসব, বাংলার হাটে ঘাটে বসে মেলা, বাউল করে গান-পালা বসে চলে রাতভর, ভাটিয়ালী, পল্লীগীতি, চাষী, কামার, জেলে, তাঁতী সমস্বরে গায় মেঘ বৃষ্টির গান। নবান্ন
শেষ হলেও এখানে শেষ হয় না পিঠা খাওয়ার ধুম।

একুশের শহীদ মিনারটির ৫২'র ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও জাতীয় শহীদ মিনার বাংলার বীর শহীদদের শির। ঐ দিন প্রত্যুষে খালি পায়ে বাংলা বর্ণমালা খচিত শাড়ি, ফতুয়া, পাঞ্জাবী,
ছেলোয়ার, কামিজ, উড়না, শার্ট, টি-শার্টে বাংলা হরফ একুশের তথা ভাষা আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দিনভর চলে একুশ নিয়ে আলোচনা, গল্প, নাটক, গান। তাই একুশ বার বার ফিরে আসে বাংলার দ্বারে দ্বারে জানাতে সম্মান সেই সব শহীদ ভাষা সৈনিক বীরদের, স্মরণ করিয়ে দেয় তাদের অবদান, অর্জনকে ধরে রাখার, মর্যাদার যেন ক্ষুণ্ণ না হয় বিন্দুমাত্র। রফিক, সালাম, বরকত, জববার, রুমি এবং অংশগ্রহণকারী সকল শহীদ/ জীবিত ভাষা সৈনিকদের, আমি তাদের চরণে জানাই হাজার সালাম।
.
একুশ আসে একুশ যায়, তবুও স্বীকৃতি মেলেনা তাদেরঃ-


ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পরেও আমাদের ভাষা শহীদদের নামের সুষ্ঠু তালিকা তৈরি হয়নি। যা অনেক পূর্বেই প্রস্তুত করা প্রয়োজন ছিল। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে
দিতে এই তালিকা অত্যন্ত গুরুপূর্ণ। প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি আসে এবং চলেও যায়। কিন্তু জীবনমানের পরিবর্তন হয় না ভাষা সৈনিক ও তাঁদের পরিবারের। এদের জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা ও সম্মান নিশ্চিত করার আহ্বান সকলের..!
.
ভাষা আন্দোলনে শরিক হওয়াদের অনেকেই এখন বেঁচে নেই। যারা বেঁচে আছেন তাঁরাও জীবন সায়াহ্নে।
যাঁদের জন্য আজ বাংলা ভাষায় অবাদে কথা, তাদের রীতিমতো ভুলতে বসেছে এ প্রজন্ম। শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারি এলেই কারো কারো খবর নেয় সংবাদ কর্মীরা। তবে বছরের বাকি সময় কেউই খোঁজ নেয় না তাদের।
.
পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাঃ-

সারাবিশ্বে বাংলা ভাষার স্থান ৭ম। পৃথিবীর প্রায় ২৮ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে।
জনসংখ্যার দিক দিয়েও বাংলা ভাষা কম সম্মানের আসনে নেই।

.
জাতিসংঘের প্রতিটি রাষ্ট্রে ভাষা দিবস উদযাপনের স্বীকৃতি, জাতীয় ও প্রশাসনের প্রতিটি
স্তরে সংবর্ধনাসহ সরকারি বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও প্রজ্ঞাপন সর্বোপরি হাইকোর্ট কর্তৃক ছয়টি বিচারের রায় বাংলায় প্রদান এবং জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলা ভাষারই বলিষ্ঠ দখলের বহিঃপ্রকাশ। বাংলা ভাষা আজ বিদেশীদের কাছেও যথেষ্ট সহজবোধ্য এবং আদৃত। তাই বিদেশীদের মুখেও যখন বাংলা বলতে শুনি তখন আসলেই বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকতায় নিজ ভাষার প্রভাব বিস্তারের প্রমাণ স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বাংলা ভাষা কতখানি
গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে।
.
এমনকি হাজার মাইল দূরের "সিয়েরা লিওন" বাংলা ভাষাকে দিয়েছে বিশেষ মর্যাদা! ভাবা যায়....
.
উপসংহারঃ-
মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের সংস্কৃতি বর্তমানে অবহেলিতই বলবো। আমাদের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বলিষ্ঠ ও মানসম্মত অনুষ্ঠান যেন এখন আর খুঁজে পাওয়া ভার। বাংলার আদর্শ গৃহিণীরা অবসরে দিনভর তাই প্রতিবেশী চ্যানেলে ডুবে থাকেন। এক্ষেত্রে আমাদের সংস্কৃতির মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। বাংলা ও বাঙালিদের নিজস্ব সংস্কৃতির দৈন্যদশা
প্রমাণ করে। আমরা নিজেদের সংস্কৃতিকে আর হারাতে চাই না। আমাদের সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলুক তা চাই না, যেমনই আছি, যেমনই থাকি, নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়েই বড় হতে
চাই। তাতেই হবে আমাদের মুক্তি, তাতেই আসবে আমাদের শান্তি।

[ছবি সংগ্রহঃ ইন্টারনেট থেকে]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৮
৩৮টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×