
নামঃবিড়ালুর বিলাই ( বিল্লু)

বয়সঃছয় বছর।

জন্মঃআমাদের পাশের বাসার সানসেটে।

পেশাঃঘুরাফিরা, খাওয়া দাওয়া করা,তেলাপোকা ধরা আর ঘুমানো।

ভাই-বোনঃওরা ৪ভাই বোন ছিল। সবাই হারায় গেছে। ও শুধু আছে ঢং রঙের জোরে। আমাদের বাসার মানুষ ও আসার আগে বিলাই দেখতে পারতো না। কিন্তু ও এসে সবার মন জুগিয়েছে। ওর মাথায় এত বুদ্ধি সবার আগে পটিয়েছে আমার আম্মাজানকে।

কারণ জানে এই একটা মানুষ যে তাকে পারে আমাদের বাসায় ঠাই দিতে। প্রথম প্রথম ও বেশ ভদ্র সুসভ্য ছিল। সব সময় ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতো, কখনো ভিতরে ঢুকত না। কিন্তু তারপর আমার আম্মাজানরে হাত করে ডাইরেক্ট সোফাসেটে সে জায়গা করে নিয়েছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ একডেমিক সার্টিফিকেট না থাকলেও সে কিন্তু খুবই টেলেন্টেড। পিয়াজ নিয়ে কত সুন্দর করে দৌড় প্রতিযোগিতা করা যায় তা তারে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না।

বাসস্থানঃআমাদের বাড়ির যে কোন রুমে। তাই বলে কেউ ভেবো না ও যেন তেন জায়গায় ঘুমায়। সব থেকে সুন্দর জায়গা চিনে নিতে ওর কখনো দেরি হয় না। সোফাসেট ওর সব থেকে প্রিয় ঘুমানোর জায়গা।

এ ছাড়া ও কোথাও আয়রন করা কাপড় দেখলে দৌড়ে গিয়ে তার উপর শুয়ে পড়ে। এতে অবশ্য আমার আম্মাজান তার উপর খুবই বেজার হয়।

কিন্তু এতে তার কিছু আসে যায় না।

ফুড হেবিটঃ খাবারের ব্যাপারে সে নবাবজাদা! ভালো খাবার না হইলে সে মুখে দেয় না। দুধ তার সব থেকে প্রিয়। মাছে মধ্যে তেলাপিয়া আর ইলিশ। সে কিন্তু পচা মাছ একদম খায় না।

মাঝে মাঝে সে আমার ভাইয়ের রুমে গিয়ে তার একুরিয়ামের মাছের দিকে লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে আসে।

এতে আমার ভাইজান চক্ষু গরম করে হাতের মুষ্টি বদ্ধ করে তার দিকে তাকান।

তখন একদম মিনমিনা বিড়ালে পরিণত হয়। যেন ভাজা মাছ উল্টায় খেতে জানে না!

দৈহিক সৌন্দর্যঃ সে খুবই হেন্ডসাম! গায়ে কোথাও ময়লা লাগলে নিজেই চেটেচুটে পরিস্কার করে। অবশ্য কখনো বেশি ময়লা লাগলে সে বাড়ি লোকজন থেকে দূরে সরে থাকে। সে আবার গোসল করতে খুব ভয় পায়।

কিন্তু আমার আম্মাজান কিছু দিন পর পরই তাকে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করিয়ে দেন। এতে অবশ্য সে খুব রাগ হয়।

মিয়াউউউউউ মিয়াউউউউউউউউউউউ করে চিক্কুর দিয়ে অনেকক্ষণ বাসায় আসে না।

সে কখনোই প্রাকৃতিক কাজ আমাদের ঘরে করে না। সে করে আমাদের পাশের বাড়ির ছাদে।

তাই বলে কেউ ভেবো না সে অসভ্য বেড়াল। সে কাজ সেরে সুন্দর করে বালু দিয়ে ঢেকে দিয়ে আসে।

শখঃ তেলাপোকা মারা, ইঁদুর মারা। যখন ছোট ছিল তখন রান্না ঘর থেকে পিয়াজ এনে ঐটাকে ফুটবল বানায় সারা বাড়ি দৌড়ায় বেড়াত। অবশ্য সেই শখ এখন আর নাই। বুড়ো হয়ে গেছে তো!

বৈবাহিক অবস্থাঃ তার স্বভাব কিঞ্চিৎ খ্রাপই বলা চলে। এই নিয়া আমি তার কয়েকটা গার্ল ফ্রেন্ড দেখছি। একটারে বিবাহ পর্যন্ত করছিল, কিন্তু বাড়ির কাউরে জানায় নাই। কত্ত বড় বেয়াদব!!!


পরে তার বউ আমাদের বাড়ির সিড়ির নিচে কয়েকটা বাচ্চাও দিছিল। সেই সব বাচ্চা কারা যেন নিয়ে গেছে।
যাক আমরা বেঁচেছি। নয়ত আমাদের বাড়ি বিলাই হোমে পরিনত হত।

স্বভাবঃ বিল্লুর চরিত্র ফুলের চেয়েও পবিত্র। তবে এই ফুল হইল ধুতুরা ফুল। একবার সে কি করছে শুনো। সে একবার দেখি মুখে করে একটা ইলিশ এনে আমাদের রান্না ঘরে বসে খাচ্ছে। এটা দেখে তো আমার আম্মাজানের চোখ ছানা বড়া! আরে আমাদের বাসায় তো কেউ ইলিশ আনে নাই। তুই ইলিশ কই পাইলি?

বোঝা গেলো সে হয়ত আমাদের পাশে বাড়ি থেকে চুরি করে আনছে। আমার আম্মা তো লজ্জায় বাঁচে না! পাশের বাড়ির মহিলা জানলে না জানি কি ভাবব্বে! চোর থাকে এই বাড়িতে!
আমাদের বাড়িতে তার খাবার অভাব হয় না। তবুও কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। বিলাইয়ের স্বভাব পালটায় না। সে মাঝে মাঝে কই থেকে যেন মুখে কালি মেখে আসে। দেখেই বোঝা যায় জানালা দিয়ে কোন বাড়িতে গিয়ে হয়ত পাতিল সাবার করেছে।

আই কিউঃ সে প্রায় সুপার জিনিয়াসের কাছাকাছি। বাসার কলিংবেল বাজলে সে ধরে নেয় আমার আব্বাজান আসছে। আর আব্বাজান আসা মানেই তার জন্য মাছ কিনে আনা। সে কলিংবেলের শব্দ পাইলেই দোউড়ে যায় দরজার কাছে। তারপর শুরু হয় মিয়াউউউউউ মিয়াউউউউউউউউ রেডিও বাজানি। পারলে সে নিজে দরজা খুলে আব্বুর হাত থেকে মাছ নিয়ে খাওয়া শুরু করে। শুধু সাইজে ছোট বলে পারে না।
সব মিলায় এর থেকে বিচক্ষণ বিলাই খুব কমই আছে। কারো কাছে ওর জন্য যোগ্য পাত্রি থাকলে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা গেল।

উৎসর্গঃ সুমাইয়া বরকতউল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯