বাংলাদেশ দেখার আমন্ত্রন জানিয়ে সকালে ওদের বিদায় জানালাম নিউ জলপাইগুড়িতে।ইতোমধ্যে ওদের গাড়ি চলে এসেছে আর আমিও পেয়ে গেছি সঞ্জয় দা'কে।ডিসকভারি ট্যুর এন্ড ট্রাভেলসের জলপাইগুড়ি শাখার ম্যানেজার এই ভদ্রলোক।দাদার দায়িত্ব ছিল আমাকে গ্যাংটক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার।দুপুর নাগাদ গ্যাংটক পৌঁছে গেলাম।উঠলাম আনন্দ লজে।দুপুরে খেয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম।বিকেলে বের হলাম শহরটা ঘুরে দেখতে।এদিকে হোটেল ম্যানেজার আমাকে বার বার বলে দিয়েছে তাকে রাত ৮টার মধ্যে জানাতে হবে আমি কোন দিকে যাব।নর্থ,সাউথ নাকি ওয়েস্ট।যদিও আমার উদ্দেশ্য নর্থে যাব।আবার ওয়েস্ট সিকিমের প্রধান আকর্ষন "পেলিং" দেখার লোভও সামলাতে পারছিনা।যেহেতু আমি ৩দিনের প্যাকেজ কিনেছি ওদের থেকে তাই আমাকে যেকোন একটা চুজ করতে হবে।শেষপর্যন্ত আমার কাঙ্খিত "ইয়ুমথাংকেই" বেছে নিলাম।গ্যাংটক থেকে ইয়ুমথাংয়ের দূরত্ব ১৩৪ কি:মি:।উত্তর সিকিমের যে সীমান্ত মিশে আছে চীনের সাথে পাহাড়ীয় আলিঙ্গনে আমার স্বপ্নময় যাত্রা সেখানেই।
খুব সকালে টাটা সুমোতে উঠে বসলাম।এবার সঙ্গী হিসেবে পেলাম জামশেদপুর এবং রাজস্থানের দুটি নিউলি মেরিড কাপল।অন্য একটা পরিবার আসছে যোধপুর থেকে।একটা তথ্য জানাল আমাদের ড্রাইভার প্লাস গাইড,গ্যাংটকের মতো ছোট্র শহরে প্রায় ৩ হাজার তরুন তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে টাটা সুমো চালিয়ে।
যাত্রা শুরু হতেই আমার কানে কেবলি ধ্বনিত হচ্ছিলঃ
পথহারা তুমি পথিক যেন গো সুখের কাননে
ওগো যাও,কোথা যাও...
চলছে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা
পাহাড়ের খাঁজ কেটে সাপের মতো এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া রাস্তা গুলো তার ভয়ংকর সুন্দর! সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে প্রতি মুহূর্তেই।এক পাশে আকাশ ছুঁয়ে গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে উদ্ধত পাহাড় অন্য পাশে কয়েক হাজার ফুট গভীর মৃত্যু খাদ।সুন্দরের এই বৈপরিত্য অবচেতন মনে যেন সৌন্দর্যের এক নতুন ভাষা হয়ে প্রকাশিত হল আমার কাছে।
দূরত্ব যতই বাড়ছিল ততই আমরা মেঘের কাছাকাছি পৌঁছুতে লাগলাম।মধূসুদন,আমাদের গাইড যখন জানাল আমরা এখন ভূপৃস্ঠ থেকে সাড়ে সাত হাজার ফুট উপরে,শুনেই একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতির স্বাদ পেলাম।যাত্রাপথে সেভেন সিস্টার্স নামে সাতটা ঝর্ণার দেখা পেলাম যার রুপের বর্ণনা দেওয়ার সাধ্য আমার কলম কিংবা কীবোর্ডের নেই।রুপের আগুন ছুঁতে হবে,জ্বলতে হবে-পুড়তে হবে সবশেষে নিজেকেই হারাতে হবে,হারাতেই হবে।
এমন পাহাড়ী নদীর স্বচ্ছ জলধারায় কে না হারাতে চায়?
“Drive slowly, someone is waiting for you”
“Passport Driving, Divorce thrilling
এরকম আরো অসংখ্য মজার এবং তাৎপর্য্যপূর্ণ লেখা সবার দৃষ্টি কাড়তে বাধ্য,যা চোখে পড়বে রাস্তার প্রতি বাঁকে বাঁকে।
আমাদের প্রথম গন্তব্য লাচুং।ওখানের একটা রিসোর্টে রাত্রিযাপন।পরদিন ভোরে ২২ কি:মি: দূরত্বের ইয়ুমথাং।
এই আমাদের রিসোর্ট,এখানেই রাত কাটালাম
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ সকাল ১১:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




